নোটিশ

বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১০

নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুনিয়াবী হায়াত মুবারকের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

পবিত্র মক্কা শরীফে:

১। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ রজব মাসের প্রথম জুমুয়ার রাতে (লাইলাতুর রাগাইব) নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা হযরত আমিনা আলাইহাস্‌ সালাম-এর রেহেম শরীফে তাশরীফ আনেন।


২। হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্‌ আলাইহিস্‌ সালাম-এর বিছাল শরীফের ৬ মাস পরে, ৫৭০ খ্রীঃ ২৯শে আগস্ট পারস্যের সুবিখ্যাত সম্রাট নওশেরওয়াঁর রাজত্বের চতুর্বিংশ বৎসরে আছ্‌হাবে ফীল্‌-এর ঘটনার ৫৫ দিন পরে, পবিত্র রবিউল আউয়াল শরীফের ১২ই শরীফ তারিখে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফে (সর্বাধিক মশহুর মত) সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পূর্বে, ইমামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল কাওনাইন, নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ্‌ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুনিয়াতে তাশ্‌রীফ আনেন।

৩। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্‌ সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর তৃতীয় দিনে তাঁকে মক্কা শরীফে নিয়ে যান এবং নাম মুবারক রাখেন ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এর পূর্বে কারো নাম ‘মুহম্মদ’ ছিল না।

৪। বিলাদত শরীফ-এর পর তাঁর সম্মানিতা আম্মা আমিনা আলাইহাস্‌ সালাম-এর দুগ্ধ পান করেন।

৫। দু’দিন পর হযরত ছূওয়াইবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর দুগ্ধ পান করেন।

৬। অতঃপর ভাগ্যবতী হযরত হালিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁকে নিয়ে যান। ২ বৎসর প্রতিপালনের পর
মক্কা শরীফে নিয়ে আসেন। কিন্তু মহামারি থাকার কারণে আবার নিয়ে যান এবং মোট ৬ বৎসর হযরত হালিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ঘরে ছিলেন। এর মধ্যে একবার সিনা মুবারক চাক করা হয়।

৭। ৬ বৎসর বয়স মুবারকেই তাঁর সম্মানিতা আম্মা হযরত আমিনা আলাইহাস্‌ সালাম বিছাল শরীফ লাভ করেন।

৮। এরপর পিতামহ হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্‌ সালাম-এর তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন। ৮ বৎসর বয়স মুবারকে পিতামহ বিছাল লাভ করলে, পিতৃব্য আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন।

৯। ১০ বৎসর বয়স মুবারকে ছাগল চড়ায়েছেন।

১০। ১২ বৎসর বয়স মুবারকে সিরিয়ায় বাণিজ্যার্থে গমন। এ সময় বিভিন্ন আশ্চর্য আশ্চর্য ঘটনা সংঘটিত হয়
এবং বোহাইরা নামক পাদ্রী নবী হওয়ার ভবিষ্যত বাণী করেন এবং সাক্ষ্য দেন।

১১। ১৩/১৪ বৎসর বয়স মুবারকে দ্বিতীয়বার সিনা মুবারক চাক করা হয়।

১২। বয়স মুবারক যখন ১৪/১৫, তখন ‘হরবুল ফুজ্জারে’ পিতৃব্যদের সাথে গমন করেন।

১৩। ৫৯৫ খিস্টাব্দে ১৪ বৎসর বয়স মুবারকে ‘হিলফুল ফুজুল’ গঠন করেন।

১৪। ১৭ বৎসর বয়স মুবারকে পিতৃব্য হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সঙ্গে বাণিজ্যার্থে ইয়েমেন যান।

১৫। ২০ বৎসর বয়স মুবারকে বিভিন্ন রকম স্বপ্ব দেখতেন এবং ফিরিস্তাদের আওয়াজ শ্রবণ করতেন। আবু তালিব স্বপ্বের ঘটনা শুনে মনে করতো কোন অশুভ আছর হয়েছে, তাই বৈদ্য ডেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করলে বৈদ্য বলেছিল, আপনার ভাতিজার কোন রোগ হয়নি বা আছর করেনি, বরং তাঁর শিরার বিভিন্ন লক্ষণে মনে হচ্ছে, ইনি একজন মহান ব্যক্তিত্ব হবেন।

১৬। ২৪ বৎসর বয়স মুবারক হতে হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ব্যবসা পরিচালনা করেন।

১৭। ২৫ বৎসর বয়স মুবারকে হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা শাদী মুবারকের প্রস্তাব দেন এবং শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়। তখন হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বয়স মুবারক ছিল ৪০ বৎসর। শাদী মুবারকের মোহ্‌রানা ছিল ৫০০ দেরহাম (রৌপ্য মুদ্রা)।

১৮। ২৫ হতে ৩৫ বৎসর বয়স মুবারক পর্যন্ত বিশেষভাবে জনকল্যাণে নিয়োজিত থাকেন ও বিপন্ন মানুষকে আর্থিক সাহায্য করেন।

১৯। ৩৫ বৎসর বয়স মুবারকে পবিত্র ক্বাবা শরীফ সংস্কারে বিভিন্ন গোত্রের কলহ দূর করেন এবং হজরে আস্‌ওয়াদ নিয়ে যে ফিৎনা হয়, সেটাও সমাধা করেন।

২০। ৩৫ থেকে ৪০ বৎসর বয়স মুবারক পর্যন্ত হিরা গুহায় বিশেষভাবে ইবাদতে মশগুল হন। তিনি মাঝে মাঝে খাওয়ার জন্য বাড়ী আসতেন কিন্তু অধিকাংশ সময় হযরত খাদিজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা খাবার দিয়ে আসতেন।

২১। ৪০ বৎসর বয়স মুবারকে তৃতীয়বার সিনা মুবারক চাক করা হয়, ওহী নাযিল হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ঘোষণা করা হয়।

২২। নুবুওওয়াত প্রাপ্তির তৃতীয় বৎসর পর্যন্ত ভিতরে ভিতরে ইসলাম প্রচার করেন।

২৩। ৪৩ বৎসর বয়স মুবারকে প্রকাশ্যে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানান। আবু লাহাব তখন বিরোধিতা করেছিল, ফলে ‘সুরা লাহাব’ নাযিল হয়।

২৪। নুবুওওয়াতের ৫ম বৎসরে কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে আল্লাহ পাক-এর নির্দেশে ১৬ জন, কোন কোন মতে ১৫ জন নারী-পুরুষ নিয়ে আবিসিনিয়ায় প্রথম হিজরত করেন।

২৫। নুবুওওয়াতের ৬ষ্ট বৎসরে হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন হতে প্রকাশ্যে ক্বাবা শরীফে নামাজ পড়া শুরু হয়। তখন মুসলমানের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪০/৫৭ জন।

২৬। নুবুওওয়াতের ৭ম বৎসরে চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করেন।

২৭। নুবুওওয়াতের ৭ম হতে ১০ম বৎসর পর্যন্ত শিয়াবে আবু তালিবে অবস্থান করেছিলেন। এর দুই মাস পর আবু তালিবের মৃত্যু হয়, তার তিন মাস পর হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-বিছাল শরীফ লাভ করেন। এ দশম বৎসরকে বলা হয়, ‘আমুল হুযন’ অর্থাৎ শোকের বৎসর।

২৮। নুবুওওয়াতের এ ১০ম বছরের শেষের দিকে হযরত খাদিজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার পর, হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত আয়েশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (বয়স মুবারক ছিল ৬ বৎসর)-এর সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়।

২৯। নুবুওওয়াতের এ দশম বৎসরেই তায়েফ গমন করেন ও প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময় জ্বীন সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণ করে।

৩০। নুবুওওয়াতের দশম বৎসরের শেষে মদীনা শরীফ থেকে লোকজন আগমন করেন ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

৩১। নুবুওওয়াতের একাদশ বৎসরে প্রথম আকাবা হয়।

৩২। নুবুওওয়াতের একাদশ বৎসরে স্বশরীরে মি’রাজ শরীফ সংঘঠিত হয়।

৩৩। নুবুওওয়াতের দ্বাদশ বৎসরেই হযরত মাসআব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে দ্বীনের তালিমের জন্য মদীনা শরীফে পাঠান।

৩৪। নুবুওওয়াতের ত্রয়োদশ বৎসরে বাইয়াতে উকবা সংঘঠিত হয়। এ বছরেই মুসলমানগণ মদীনা শরীফে হিজরত করেন। এ বৎসরেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নিয়ে হিজরত করেন এবং ছাওর গুহায় অবস্থান করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ঘটনা সংঘঠিত হয়।


পবিত্র মদীনা শরীফে:
প্রথম হিজরীঃ হিজরতের সময় পথিমধ্যে বরিদা বিন হাসিব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করতে এসে নিজেই ৭০জন বাহিনীসহ ইসলাম গ্রহণ করে। অতঃপর কুবায় ১৪দিন অবস'ান করেন এবং সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন। মদীনা শরীফ গমনকালে বতনে ওয়াদি নামক স'ানে ১০০ জন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে নিয়ে জুময়ার নামাজ আদায় করেন এবং সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন। মদীনা শরীফে প্রবেশ করে ৭/৮ মাস হযরত আবু আইউব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গৃহে অবস্থান করেন। এ সময় মসজিদে নববী ও উম্মুল মু’মিনীনগণের কক্ষসমূহ নির্মাণ করা হয়। এরপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখান হতে নিজ অবস্থানে যান। এ সকল কক্ষের প্রত্যেকটি দৈর্ঘ্য ১০ হাত, প্রস্থ ৬ হাত এবং উঁচু একজন মানুষ দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে স্পর্শ করতে পারতো। এরপর আযানের প্রবর্তন হয়।
দ্বিতীয় হিজরীঃ ক্বিবলা পরিবর্তন, শাবান মাসে ক্বিবলা পরিবর্তনের আয়াত শরীফ নাযিল হয়। রমজান মাসে বদর যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এ যুদ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। আর কাফিরদের সংখ্যা এক হাজার। এ বৎসর যিলহজ্ব মাসে হযরত ফাতেমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৎসরই রোজা ফরজ হয়, ফিৎরা দেয়া ওয়াজিব হয়, জামায়াতের সাথে ঈদুল ফিৎরের নামায শুরু হয়।
তৃতীয় হিজরীঃ
ওহুদ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়, হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত হাফসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে শাদী মোবারক সুসম্পন্ন হয়। উত্তরাধিকার আইন জারি হয়। এ বৎসর মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম করা হয়। হযরত জয়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয় এ বৎসরই।
চতুর্থ হিজরীঃ
হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিলাদত লাভ করেন। এ বৎসরই মদ্য পান হারাম হয়, চোরের হাত কাটার দন্ডবিধি জারী হয়। হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে হিব্রু ভাষা শিক্ষার জন্য প্রেরণ। রাজির যুদ্ধ, বীরে মাউনা যুদ্ধ, বদরের দ্বিতীয় যুদ্ধ, সারিয়ায়ে বনী ছালমা, সারিয়ায়ে ইবনে উনাইছ ইত্যাদি সংঘটিত হয়। হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সাথে এ বৎসরই শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়।
পঞ্চম হিজরীঃ
এ বৎসর মহিলাদের জন্য পর্দা ও তৎসংক্রান্ত অন্যান্য বিধান চালু হয়। যিনার শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত জারী হয়। হদ্‌ কায়েম-এর বিধান জারী হয়, তায়াম্মুমের বিধান এ বৎসরই জারী হয়। এ বৎসরই দওমাতুল জান্দালের যুদ্ধ, বনু কুরায়জার যুদ্ধ, পরিখার যুদ্ধ ইত্যাদি সংঘটিত হয়।
ষষ্ট হিজরীঃ
হুদাইবিয়ার সন্ধি, এস্তেসকার নামায, জাতুরিকার যুদ্ধ, বনু লাহিয়ান যুদ্ধ বিভিন্ন দেশের বাদশাদের নিকট দূত প্রেরণ, বাদশা নাজ্জাসির নিকট দূত প্রেরণ, হেরাকিয়াসের নিকট দূত প্রেরণ, বাইয়াতে রিদওয়ান, হযরত উম্মে হাবিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়।
সপ্তম হিজরীঃ
হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইসলাম গ্রহণ। নখর (হিংস্র) বিশিষ্ট পাখী খাওয়া নিষিদ্ধ, হিংস্র জন্তু খাওয়া হারাম, গাদা ও খ"চর খাওয়া হারাম, মু’তা বিবাহ হারাম, স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিণিময়ে তদপেক্ষা বেশী স্বর্ণ ও রৌপ্য গ্রহণ করা হারাম হওয়ার বিধান জারী হয়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বৎসরই বিষ পান করানোর চেষ্টা করা হয়। এ বৎসরই উম্‌রাতুল কাজা আদায় করেন, হযরত মায়মুনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত সুফিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন করেন।
অষ্টম হিজরীঃ
মক্কা শরীফ বিজয়, মু’তার যুদ্ধ, হুনাইনের যুদ্ধ, মিম্বর নির্মাণ, তায়েফের যুদ্ধ, আওতাসের যুদ্ধ, সুদ হারাম হওয়ার বিধান এ বৎসরই জারী হয়।
নবম হিজরীঃ
যাকাত ফরজ হয়, হজ্ব ফরজ হয়, তাবুকের যুদ্ধ, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হজ্ব যাত্রা (আমিরে হজ্ব) এবং বিভিন্ন কবিলার লোকদের দলে দলে ইসলাম গ্রহণ। মুনাফিকরা এ বৎসর মসজিদে যেরার তৈরী করে।
দশম হিজরীঃ
হাজ্জাতুল বিদা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হজ্ব আদায়, বনু হারিছ ও বনু কায়াবদের ইসলাম গ্রহণ, কতিপয় খ্রীষ্টানদের সাথে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথোপকথন, নবম ও দশম হিজরীতে লোকগরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেন। এ সমস্ত গোত্রের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০টি। এভাবে অল্পসময়ের মধ্যেই সমুদয় আরববাসী, অগ্নি উপাসক, খ্রীষ্টান ও ইহুদীরা স্বেচ্ছায় আগ্রহের সাথে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নুবুওওয়াত লাভের তিন বৎসর পর হতে প্রায় ৬ষ্ট হিজরী পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১৬টি বৎসর স্বীয় জাতি, আত্মীয়-স্বজন, বর্হিশত্রু কতর্"ক আক্রমন সত্বেও, পৃথিবীর বুকে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আরবের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ও পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিকে দ্বীনের পরম বন্দনে আবদ্ধ করে তাদের মধ্যে ঐক্যের বীজ বপন করেন। আরবদের অধর্ম, অনাচার তাঁরই মহিমাময় মহান চারিত্রিক মাধুর্যে ও ব্যবহারে চিরকালের জন্য বিলুপ্ত হয়।
একাদশ হিজরীঃ
মুসাইলামাতুল কাজ্জাবের নবী দাবী ও তাকে নিস্তানাবুদ করা, এ বৎসর ২৬শে সফর সোমবার উসামা ইবনে যাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নেতৃত্বে ওবনা নামক স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সৈন্যগণ তৈরী হচ্ছিলেন কিন্তু ২৯শে সফর বুধবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তথাপী তিনি সৈন্য বাহিনী পাঠিয়ে দিলেন।
২৯শে সফর বুধবার সকালে অসুস্থ হলেন, ঐ দিনই বিকালে একটু সুস্থ হলেন, এতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ খুশি হয়ে যাঁর যাঁর সামর্থ অনুযায়ী আল্লাহ্‌ পাক-এর রাস্তায় দান-খয়রাত করলেন আর এ দিনটিই সারাবিশ্বের মুসলমানগণ ‘আখিরী চাহার শোম্বা’ হিসেবে পালন করেন।
ঐদিন বিকালে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন, এ অসুস্থতা ৯ই রবিউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত চললো। ৯ই রবিউল আউয়াল শরীফ অসুস্থতা আরো বৃদ্ধি পেল, ফলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে যেতে পারেননি। এ সময় ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত মোট ১৬ কি ১৭ ওয়াক্ত নামাযের ইমামতি করেন, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
অতঃপর ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ রোজ সোমবার শরীফ (ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি) আল্লাহ্‌ পাক-এর আহবানে সাড়া দিলেন এবং পর্দার অন্তরে চলে গেলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জিসিম মুবারক মঙ্গলবার পর্যন্ত মাটির উপরেই ছিল।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে দাফন মুবারক সম্পন্ন করা হয়। ৬৩ বৎসর বয়স মুবারকে আল্লাহ্‌ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌ পাক-এর সান্নিধ্যে চলে যান।