নোটিশ

শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১১

শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোনো বিশেষ খাবার তৈরি করা শরীয়তে নাজায়িয তো নয়ই বরং জায়িয এবং খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, তারা বলে, কেবল আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্যেই আমরা তোমাদেরকে আহার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করিনা। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা মানুষকে খাদ্য খাওয়াও। শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরি করা ও মানুষকে খাওয়ানো শরীয়তে নাজায়িয তো নয়ই, বরং জায়িয ও শরীয়তসম্মত তো অবশ্যই; শুধু তাই নয়, সাথে সাথে খাছ সুন্নতেরও অন্তর্ভুক্ত। যারা এটাকে বিদয়াত বা নাজায়িয বলে থাকে তাদের কথা মোটেও শরীয়তসম্মত ও গ্রহণযোগ্য তো নয়ই বরং তা সম্পূর্ণরূপে কুফরী ও গুমরাহীতে পরিপূর্ণ যা সর্বতোভাবেই পরিত্যাজ্য।

যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আযম, আওলাদুর রসূল, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোনো বিশেষ খাবার তৈরি করা শরীয়তে নাজায়িয তো নয়ই বরং জায়িয এবং খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ করে আমাদের দেশ ও তার আশপাশের দেশসমূহে যে রুটি হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেস্তোরাঁ ইত্যাদি সর্বত্র ছিল না তখন মানুষ সাধারণত সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুছাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুছাফিরগণ তাদের ছফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণত সরাইখানা, মুছাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুছাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন তারাই মুছাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। বিশেষ করে মুছাফিরগণ শবে বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যবস্থা করতেন যাতে মুছাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়। আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশত-রুটি খাওয়া সুন্নত, সেহেতু তারা হালুয়া-রুটি বা গোশত-রুটির ব্যবস্থা করতেন। এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা আদ দাহর-এর ৮ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “তারা আল্লাহ তায়ালা উনার মুহব্বতে আহার করান অভাবগ্রস্ত ইয়াতীম ও বন্দিদেরকে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা আদ দাহর-এর ৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “তারা বলে, কেবল আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টির জন্যেই আমরা তোমাদেরকে আহার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।

আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।(তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, দারিমী)

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, কোনো আমলের ক্ষেত্রেই বদ রছম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়িয নেই। মূল কথা হচ্ছে- কেউ যদি শবে বরাত উপলক্ষে রছম রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা শুধুমাত্র জায়িয ও শরীয়তসম্মতই নয় বরং তা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্তও।

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি আরো বলেন, যদি কেউ তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোনো প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই সুন্নতের কারণে অশেষ নেকীর কারণ হবে। কেননা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর অসংখ্য স্থানে মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মানুষকে খাওয়ানোর জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং খাওয়ানোর বহু ফযীলত বর্ণনা করেছেন।

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা হজ্জ-এর ২৮ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক স্মরণ করে উনার দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করো। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুস্থ অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন, “অতঃপর সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় যেগুলো যবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করো অতঃপর যখন সেগুলো কাত হয়ে পড়ে তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও যে কিছু ........ করে না তাকে এবং যে ..... করে তাকে।

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মানুষকে খাওয়ানো অবশ্যই শরীয়তসম্মত ও ফযীলতের কাজ। শুধু তাই নয় বরং মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিলের মাধ্যম ও কারণ। এখন তা যখনই খাওয়াক বা যাই খাওয়াক না কেন। কেননা শরীয়ত মানুষকে খাওয়ানোর জন্য কোনো সময় ও প্রকার নির্ধারণ করে দেয়নি। যদি তাই হয়ে থাকে তবে এটাকে কী করে বিদয়াত বা নাজায়িয বলা যেতে পারে? তাছাড়া হাদীছ শরীফ-এ তো সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে, “যে ব্যক্তি ইসলামে কোন উত্তম (শরীয়তসম্মত) পদ্ধতি উদ্ভাবন করলো তার সে উদ্ভাবিত পন্থা যারা অনুসরণ বা আমল করবে তাদের সমপরিমাণ বদলা যে উদ্ভাবন করেছে সেও পাবে।কাজেই শবে বরাতে হালুয়া-রুটি তৈরি করাকে বিদয়াত বলা জিহালতি ও গুমরাহী এবং কুফরী বৈ কিছুই নয়।

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, তবে সতর্ক থাকতে হবে যে এই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম ও এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো শবে বরাতের ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো উল্লেখ্য যে, খাদ্য বিতরণ যেন আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়। মূল কথা হচ্ছে- শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোনো বিশেষ খাবার তৈরি করা ও মানুষকে খাওয়ানো শরীয়তে নাজায়িয তো নয়ই বরং জায়িয ও শরীয়তসম্মত তো অবশ্যই সাথে সাথে খাছ সুন্নতেরও অন্তর্ভুক্ত। যারা এটাকে বিদয়াত বা নাজায়িয বলে থাকে তাদের কথা মোটেও শরীয়তসম্মত ও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তাদের বক্তব্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ। কেননা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ মানুষকে খাদ্য খাওয়ানোর ব্যাপারে বিশেষভাবে তাকীদ করেছেন।