মুক্বাদ্দিমাতুল কিতাব
الحمد لله رب العلمين
والصلاة والسلام على سيد
الانبياء والمرسلين محمد وعلى اله
الطيبين وازواجه المتطهرين واصحابه
المرضين وعلى اولاده الشيح
المجدد الاعظم وامام الشريعة
والطريقة والاولياء الكاملين.
ولاتحسبن
الذين قتلوا فى سبيل
الله امواتا بل احياء
عند ربهم يرزقون.
অর্থ: ‘যাঁরা আল্লাহ
তায়ালার রাস্তায়
শহীদ হন
তাঁদেরকে কখনও
মৃত মনে
করো না। বরং
তাঁরা নিজেদের
রব তায়ালার
নিকট জীবিত
ও রিযিকপ্রাপ্ত।’ (সূরা
আলে ইমরান-১৬৯)
হযরত ইমাম হুসাইন
আলাইহিস সালাম
উনার শাহাদাত
নিঃসন্দেহে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে
হৃদয় বিদারক
ঘটনা।
নূরে মুজাস্সাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম
উনার হায়াত
মুবারকে ও
উনার বিছাল
শরীফ-এর
পরে আরো
অনেক মর্মবিদারক
শাহাদাতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু
হযরত ইমাম
হুসাইন আলাইহিস
সালাম উনার
শাহাদাতের ন্যায় এত দীর্ঘস্থায়ী ও
এত ব্যাপক
শোক, কান্না
ও আহাজারি
মুসলিম জাতি
আর কোন
শাহাদাতের জন্য করেনি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,
নূরে মুজাস্সাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম
উনার হায়াত
মুবারকে হযরত
হামযা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু
উনার শাহাদাত,
তাঁর কলিজা
চিবানো, হযরত
ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু
উনার পরিবারের
মর্মান্তিক শাহাদাত, বীরে মাঊনায় ৭০
জন এবং
ইয়ামামার যুদ্ধে ৩০০ জন কুরআনে
হাফিযের শাহাদাত,
হযরত খুবাইব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও তাঁর
সঙ্গীদের শাহাদাত
তৎকালীন মুসলিম
সমাজের বুকে
শেলের মত
বিঁধেছিল।
স্বয়ং আখিরী
রসূল, নূরে
মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম হযরত
হামযা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু
উনার শাহাদাতে
নিদারুণভাবে শোকাহত হয়েছিলেন। তারপর
চারজন খলীফার
মধ্যে হযরত
আলী র্কারামাল্লাহু
ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ তিনজন
খলীফাই শহীদ
হয়েছেন মর্মান্তিকভাবে। জামাল
(উষ্ট্রের) যুদ্ধ ও সিফ্ফীন যুদ্ধের
ন্যায় দু’টি গৃহযুদ্ধে
বহু মূল্যবান
প্রাণ, বিশেষতঃ
আশারায়ে মুবাশ্শারার
অন্তর্ভুক্ত কয়েকজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমও শহীদ
হয়েছেন।
এসব শাহাদাতে
মুসলমানদের শক্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির
অপূরণীয় ক্ষতি
হলেও শোক
ও আবেগের
দিক দিয়ে
হযরত ইমাম
হুসাইন আলাইহিস
সালাম উনার
শাহাদাত ঐসব
শাহাদাত থেকে
অধিক মর্মান্তিক। এমনকি
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস
সালাম উনার
বড় ভাই
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুকেও
বিষ প্রয়োগে
শহীদ করা
হয়েছিল।
কিন্তু সেই
শাহাদাত নিয়েও
সারা দুনিয়াব্যাপী
এত দীর্ঘস্থায়ী
শোক ও
বিলাপ হয়নি,
যেমনটি সাইয়্যিদুনা
হযরত ইমাম
হুসাইন আলাইহিস
সালাম উনার
শাহাদাতে হয়েছিল
এবং হচ্ছে।
মোট কথা, হযরত
ইমাম হুসাইন
আলাইহিস সালাম
উনার শাহাদাত
এমন এক
অসাধারণ ও
অদ্বিতীয় শাহাদাত এবং এমন এক
হৃদয় বিদারক
ঘটনা, আগের
এবং পরের
যুগে যার
কোন নজীর
নেই।
ইয়াযীদের মসনদ দখল
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত
মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার বিছাল শরীফ-এর পর
ইয়াযীদ সিংহাসনে আরোহন
করলো এবং আরোহন
করার সাথে সাথেই
তার মনের মধ্যে
সীমাহীন অহঙ্কার ও
গর্ববোধের সৃষ্টি হলো।
যার ফলে এমন
কাজ-কর্ম শুরু
করলো, যা মহান
দ্বীনী শরীয়তের সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রায়
মানুষ-ই ক্ষমতার মোহে
বিভোর হয়ে ধরাকে
সরা জ্ঞান করে।
যেমন; ফিরআউন প্রথমে
গরীব ছিল, কিন্তু
ভাগ্যক্রমে বাদ্শা হয়ে
সিংহাসনে আরোহন করার
সাথে সাথে এমন
অহঙ্কারী হয়ে বসলো
যে, শেষ পর্যন্ত নিজেকে
খোদা বলে ঘোষণা
করলো। (নাঊযুবিল্লাহ) সে
বলতে লাগলো, ‘আমি
তোমাদের সবচেয়ে বড়
খোদা’। আমার
পূজা, আরাধনা কর।
সে-ই রক্ষা
পাবে যে আমার
পূজা করবে। আর
যে আমার পূজা
করতে অস্বীকার করবে,
তাকে আমি খতম
করবো। একমাত্র এ
কারণেই সে অনেক
লোকের গর্দান দ্বিখন্ডিত করেছিল। তাঁদের
অপরাধ ছিলো, তাঁরা
তার পূজা করতেন
না এবং তাকে
মা’বূদ মানতে
অস্বীকার করেছিলেন। তদ্রুপ
ইয়াযীদও যখন সিংহাসনে বসলো,
সে ক্ষমতায় আরোহন
করার পর পরই
হযরত ইমাম হুসাইন
আলাইহিস সালাম, হযরত
আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর
রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, হযরত
আব্দুল্লাহ বিন উমর
রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু প্রমুখ
থেকে বাইয়াত তলব
করলো। একেতো উনারা
ছিলেন ছাহাবী, বিশেষ
সম্মানিত ব্যক্তি এবং
উনারা বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বংশধর
ছিলেন। তাই তাঁরা
কিভাবে ফাসিক-ফাজির
ইয়াযীদের হাতে বাইয়াত করতে
পারেন? সুতরাং তাঁরা
অস্বীকার করলেন এবং
এটা তাঁদের মর্যাদাগত সদাচরণই ছিল।
অস্বীকার করার পর
হযরত আব্দুল্লাহ বিন
উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত আব্দুল্লাহ বিন
যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
মদীনা শরীফ থেকে
মক্কা শরীফে চলে
গেলেন।
হযরত ইমাম
হুসাইন আলাইহিস সালাম
মদীনা শরীফ-এর
গভর্নর ওয়ালীদের আহবানে
তার দরবারে তাশরীফ
নিয়ে গেলেন। তার
সঙ্গে আলোচনা করলেন।
মদীনা শরীফ-এর
গভর্নর বললো, ইয়াযীদ আপনার
বাইয়াত তলব করেছেন। তিনি
বললেন, ‘আমি ইয়াযীদের হাতে
বাইয়াত করতে পারি
না। ইয়াযীদ হলো
ফাসিক-ফাজির, এ
ধরণের অনুপযুক্ত লোকের
হাতে আমি বাইয়াত করতে
পারি না। আমি
কোন অবস্থাতেই তার
হাতে বাইয়াত করতে
রাজী নই।’ তিনি
সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করলেন।
এটা তাঁর মর্যাদাগত সদাচরণই ছিল।
উল্লেখ্য, তিনি
যদি বাইয়াত করতেন,
তাহলে নিজের প্রাণ
বাঁচতো, পরিবার-পরিজন
বাঁচতো, হয়তো এমনও
হতো যে, অগাধ
সম্পত্তির মালিকও তিনি
হয়ে যেতেন। কিন্তু
ইসলামের আইন-কানুন
ছত্রভঙ্গ হয়ে যেত
এবং কিয়ামত পর্যন্ত ফাসিক-ফাজিরের আনুগত্য বৈধ
হয়ে যেত এবং
তাদের কাছে হযরত
ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম
উনার আনুগত্য প্রধান
দলীল হিসেবে পরিগণিত হতো।
লোকেরা বলতো, হযরত
ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম
যখন ফাসিক-ফাজিরের আনুগত্য স্বীকার করেছেন,
তাহলে নিশ্চয়ই তা
জায়িয।
তথ্যসূত্রঃ কারবালার হৃদয় বিদারক ইতিহাস