ক্লিনিক বলতে সাধারণভাবে বুঝায় একটি
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান যেখানে মূলত: রোগীদের প্রাথমিক ও জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। ক্লিনিকের সংজ্ঞানুযায়ী ক্লিনিকে হাসপাতালের মতো রোগী
ভর্তি করা হয় না এবং কোন জটিল চিকিৎসাও করা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে বেশ কিছু ক্লিনিক হাসপাতালের মতো বড় পরিসরে গড়ে উঠেছে যেসব ক্লিনিকে নিয়মিত রোগী ভর্তি
করা হয় এবং সব জটিল রোগের চিকিৎসা করা
হয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সব বড় বড় শহরে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক। সরকারি ক্লিনিকগুলো মূলত পল্লী অঞ্চলের জনগণকে প্রাথমিক চিকিৎসা, গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুর পরিচর্যা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সেবা প্রদান করে থাকে। বর্তমান সময়ে তাই ক্লিনিক বলতে আমরা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোকেই বুঝি।
ক্লিনিকের প্রকারভেদ
রাজধানী ঢাকা ও বড় বড় শহরগুলোতে যেসব ক্লিনিক
রয়েছে সেগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা-
- জেনারেল ক্লিনিক: এসব ক্লিনিকে জেনারেল প্র্যাকটিশনারগণ রোগীদেরকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।
- মনোরোগ ক্লিনিক: এসব ক্লিনিকে মনোবিদগণ মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করে থাকেন।
- ফিজিও থেরাপী ক্লিনিক: এসব ক্লিনিকে ফিজিও থেরাপিস্টগণ রোগীদের ফিজিও থেরাপী দিয়ে থাকেন।
- রেনাল ক্লিনিক: রেনাল ক্লিনিকে মূলত: কিডনী ও মূত্রনালীর বিভিন্ন প্রদাহের চিকিৎসা করা হয়।
- অর্থোপেডিক ক্লিনিক: এসব ক্লিনিকে শুধমাত্র অর্থোপেডিক সমস্যাসমূহ যেমন- হাঁড় ভাঙ্গা, মচকানো ইত্যাদির চিকিৎসা করা হয়।
- মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র: এসব ক্লিনিকে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজনীয় ওষুধ ও কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে মাদকাসক্তির নিরাময়মূলক চিকিৎসা দেয়া হয়।
- লেজার ট্রিটমেন্ট ক্লিনিক: এসব ক্লিনিকে অত্যাধুনিক লেজার প্রযুক্তির সাহায্যে নারী ও পুরুষের শরীর ও মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করা হয়।
- ডায়্যাগনস্টিক ক্লিনিক: এসব ক্লিনিকে শুধুমাত্র ডায়্যাগনস্টিক ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
- ম্যাটারনিটি ক্লিনিক: এসব ক্লিনিকে বিশেষত: গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা সেবা, প্রসবকালীন কর্মকাণ্ড ও নবজাতক শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।
- আই ক্লিনিক: আই ক্লিনিকে শুধুমাত্র চোখের চিকিৎসা করা হয়।
সরকারি/বেসরকারি ক্লিনিকে সেবার মান ও সুযোগ
সুবিধা
সরকারি ক্লিনিকগুলোতে সেবা অপ্রতুল ও সেবার মান
অনুন্নত তবে অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিকে
চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু মানদণ্ড বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধাগুলো নিম্নরুপ-
- এসব ক্লিনিকে যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হয়।
- সার্বক্ষনিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রোগীদের চিৎকিসা করা হয়।
- দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবক-সেবিকাদের দ্বারা রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবা দেয়া হয়।
- অধিকাংশ ক্লিনিকেই বর্তমানে নিজস্ব ওষুধের দোকান রয়েছে যেগুলো ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে।
- অনেক প্রাইভেট ক্লিনিকেই জটিল অস্ত্রোপাচারের আধূনিক সুযোগসুবিধা বিদ্যমান।
- এসব ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক লিফট ও জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে।
- অনেক ক্লিনিকেরই নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস রয়েছে।
- রোগীর সাথে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনদের সুবিধার জন্য এসব ক্লিনিকে ছোট-খাটো ক্যান্টিন বা ফুড কর্ণার থাকে।
চিকিৎসা ব্যয়
পল্লী অঞ্চলের সরকারি ক্লিনিকগুলোতে প্রায়
বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া গেলেও বড় শহরের আধূনিক প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী। এসব ক্লিনিকে প্রত্যেকটি সেবার জন্য
আলাদা বিল পরিশোধ করতে হয়।
ক্লিনিকে ভর্তিকৃত একজন রোগীকে জেনারেল ওয়ার্ডে
অথবা কেবিন অবস্থান করতে হয়।
- জেনারেল ওয়ার্ডের ভাড়া সাধারণত ৬০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
- কেবিনের ভাড়া এসি/নন-এসি ভেদে ১২০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- এছাড়া প্রতিবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরিদর্শন ফি ১০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়।
- এর বাইরে অ্যাডমিশন ফি, ওষুধ, সিরিজ, গজ, ব্যান্ডেজ সবকিছুর মূল্য আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হয়।
বিবিধ
- প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো।
- প্রত্যেকটি ক্লিনিকেই অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রয়েছে।
- ক্লিনিকগুলোর সামনে সাধারণত পার্কিং স্পেস যাকে।
- সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘন্টা এসব ক্লিনিক রোগীদের সেবা দিয়ে থাকে।
ঢাকা শহরে অবস্থিত ক্লিনিকগুলোর তালিকা
নিম্নে দেওয়া হলঃ
নাম
|
থানা
|
এলাকা
|
খিলক্ষেত
|
খিলক্ষেত বাজার
|
|
রমনা
|
মগবাজার
|
|
গুলশান
|
গুলশান ২
|
|
গুলশান
|
গুলশান ২
|
|
গুলশান
|
বনানী
|
|
ধানমন্ডি
|
ধানমন্ডি
|
|
গুলশান
|
মহাখালী
|
|
উত্তরা
|
সেক্টর ১১
|
|
কাফরুল
|
সেনপাড়া পর্বতা
|
|
শাহবাগ
|
এলিফ্যান্ট রোড
|
|
গুলশান
|
গুলশান ২
|
|
ধানমন্ডি
|
ধানমন্ডি
|
|
পল্টন
|
শান্তিনগর
|
|
উত্তরা
|
সেক্টর ৯
|
|
পল্লবী
|
মিরপুর ১১
|
|
উত্তরা
|
সেক্টর ৪
|
|
উত্তরা
|
সেক্টর ০৭
|
|
গুলশান
|
বারিধারা
|
|
গুলশান
|
গুলশান ১
|
|
তেজগাঁও ইন্ডাষ্ট্রিয়াল
|
তেজগাঁও ইন্ডাষ্ট্রিয়াল
|
|
তেজগাঁও
|
ফার্মগেট
|
|
গুলশান
|
গুলশান ১
|
|
রমনা
|
নিউ ইস্কাটন
|
|
উত্তরা
|
সেক্টর ১১
|
|
রমনা
|
নিউ ইস্কাটন
|
|
ধানমন্ডি
|
ধানমন্ডি
|
মেটার্নিটি ক্লিনিকঃ
গর্ভবতী
মহিলা/মা, সদ্যজাত শিশু এবং মহিলাদের বিভিন্ন রকম
মেয়েলি অসুখের চিকিৎসা ও অপারেশন করা হয় মেটারনিটি ক্লিনিকে। সার্বক্ষণিক মহিলা ডাক্তার,
সেবিকা এবং উন্নতমানের সেবা রোগীনিদের মানসিক ও
শারিরীকভাবে দৃঢ়তা প্রদান করে। রোগীনিদের থাকার জন্য রয়েছে এসি/নন এসি/নরমাল কেবিন ও সাধারণ
ওয়ার্ড। রাতে রোগীদের সাথে ১ জন করে আত্মীয় থাকতে পারে।
সাধারণ সেবা ও ফি
বহি:বিভাগে
রোগী দেখা ও গর্ভবতীর অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য মেডিক্যাল অফিসারের ফি – ৫০ টাকা ও কনসালটেন্টের ফি – ১০০ টাকা। প্রেগনেন্সী টেস্ট – ১০০ টাকা এবং ব্যাথামুক্তভাবে বাচ্চাদের মুসলমানি ২,২০০ টাকায় করা হয়।
এছাড়া ৫০০ টাকায় করা যায়
আলট্রাসনোগ্রাম।
প্রসবকালীন নানা দিক
সাধারণত
দুইভাবে গর্ভবতী মহিলাদের প্রসব করানো হয়। (এক) নরমাল ডেলিভারী, (দুই) সিজারিয়ান অপারেশন। মেডিক্যাল
অফিসারের নিকট ডেলিভারী করলে খরচ হয় ১৫০০ টাকা। আর কনসালটেন্ট এর নিকট ডেলিভারী করলে প্রয়োজন হয় ২,০০০ টাকার। নরমাল ডেলিভারীতে রোগীনিকে ১২ ঘন্টা
ক্লিনিকে থাকতে হয়। যেসব মহিলাদের নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে সন্তান প্রসব সম্ভব নয় তাদেরই সিজার
করতে হয়। ডাক্তারের
ফি, সহকারী ও ওটির প্যাকেজ খরচ ৬,৫০০ টাকা। এছাড়া সর্বমোট ৪,০০০ টাকার ঔষধ লাগে।
বিভিন্ন অপারেশন
এম
আর, ডি এন্ড সি, হার্নিয়া, জরায়ু
সহ নানা ধরনের অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে মেটার্নিটি ক্লিনিকে। নরমাল এম আর করতে খরচ হয় ৫০০ টাকা,
ব্যাথামুক্ত MR করতে ১,৮০০ টাকা এবং কনসালটেন্ট দ্বারা MR করতে খরচ হয় ২,০০০
টাকা। D&C অপারেশন নরমাল ৭৫০
টাকা, ব্যাথামুক্ত ২.৫০০
টাকা এবং কনসালটেন্ট দিয়ে
করলে ৩,০০০ টাকা খরচ হয়।
এছাড়া জরায়ু অপারেশন করতে ৯,০০০
টাকা, হার্নিয়া ৬,০০০ টাকা, হাইড্রেসিল ৬,০০০
টাকা, কিডনী পাথুরী ১১,৫০০ টাকা, পিত্ত পাথুরী ১০,৫০০
টাকা, মুত্রপাথুরী ও
এপেনডিসাইটিস অপারেশন করতে খরচ পরে ৭,০০০
টাকা। বিশেষজ্ঞ মহিলা ডাক্তাররাই এসব অপারেশন করে থাকে।
থাকার ব্যবস্থা
মেটার্নিটি ক্লিনিকে সিঙ্গেল এসি
ও নন
এসি কেবিন, ডবল কেবিন এবং সাধারণ
ওয়ার্ড রয়েছে।
সিঙ্গেল এসি কেবিন ১,৫০০ টাকা এবং নন এসি
কেবিন ১,০০০ টাকা, ডবল কেবিন ৭৫০ টাকা এবং ওয়ার্ডের সিট
৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে ভাড়া পাওয়া যায়।
বিবিধ
মাত্র
১০ টাকার কার্ড বানিয়ে গর্ভবতী মা/মহিলাদের টিটেনাস, ধনুষ্টংকারের টিকা ও শিশুদের BCh, ডিপথেরিয়া,
হাম, টিটেনাস, পোলিও
সহ সবধরনের টিকার ডোজ নেওয়া যায়। বিনোদন সুবিধাসহ প্রায় ৪০ জনের বসার মতো ওয়েটিং রুম
রয়েছে। সকল খরচের
সাথে শতকরা ৩ ভাগ ভ্যাট দিতে হয়। এছাড়া নিজস্ব জেনারেটর ও পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে।
ঢাকা শহরে অবস্থিত কিছু মেটার্নিটি ক্লিনিকের তালিকা নিম্নরূপঃ
নাম
|
থানা
|
এলাকা
|
ঢাকা
|
মেটার্নিটি ক্লিনিক
|
|
রমনা
|
সিদ্ধেশ্বরী
|
|
পল্লবী
|
সেকশন ২
|
|
তেজগাঁও
|
গ্রীন রোড
|
|
লালবাগ
|
আজিমপুর
|
তথ্যসূত্রঃ অনলাইন ঢাকা (ক্লিনিক)