ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রাএবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ঈদে মীলাদুন নবী পালনকারী ইরাকের ইরবাল শহরের বাদশাহ মুজাফফর
আবূ সাঈদ ছিলেন মূর্খ ও যিন্দীক। নাঊযুবিল্লাহ!
এর জাওয়াব হলো:- উলামায়ে
সূ’দের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থসমূহ
ও নির্ভরযোগ্য বহু কিতাবে উক্ত বাদশাহকে নেককার, পরহেযগার, আলিম হিসেবে উল্লেখ
করা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাফিযে হাদীছ হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয়
বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ “সিয়ারু আলাম আন নুবালা”-এর ২২তম জিঃ ৩৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেন, “বাদশাহ হযরত মালিক মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি
আলাইহি নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও উত্তম স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল
জামাআতের আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছগণকে অত্যন্ত ভাল বাসতেন।”
এ মহান বাদশাহর প্রশংসায়
উনার সমকালীন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ক্বাযী ইবনে হযরত খাল্লিক্বান রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান” গ্রন্থের ৪র্থ জিঃ
১১৯ পৃষ্ঠায় লিখেন-
وكرم الاخلاق كثير التواضع حسن العقيدة
سالم البطاقة شديد الميل الى اهل السنة والجماعة لاينفق عند من ارباب العلوم سوى الفقها
والمحدثين ومن عداهما لايعطيه شيأ الا تكلفا.
অর্থ: “বাদশাহ হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি
প্রশংসনীয় বা উত্তম চরিত্রের অধিকারী, অত্যধিক বিনয়ী ছিলেন। উনার আক্বীদা ও বিশ্বাস ছিল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। তিনি আহলে
সুন্নত ওয়াল জামাআতের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন।”
বিখ্যাত তাফসীরকারক ও ইতিহাসবেত্তা
আল্লামা হযরত ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”-এর ১৩তম জিঃ ১৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেন-
الملك المظفر بن زين الدين ابو سعيد كوكبرى
احد للاجواد السادات الكبراء والملوك الامجادلة اثر حسنة.
অর্থ: “বাদশাহ হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন আবূ সাঈদ কাওকাবারী
রহমতুল্লাহি আলাইহি অত্যধিক দানশীল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অন্যতম একজন ছিলেন। সাথে
সাথে তিনি সম্মানিত বাদশাহও ছিলেন। উনার বহু পুণ্যময় কাজের আলামত এখনও বিদ্যমান রয়েছে।”
এ মহান বাদশাহ বিশুদ্ধ আক্বীদা
ও উত্তম আমলের অধিকারী ছিলেন এবং তিনি যে তরতীবে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল উদযাপন করতেন
তা শরীয়তসম্মত ছিল বলেই সে যামানার প্রায় সকল আলিম-উলামা পীর-মাশায়িখ, ছূফী-দরবেশ, ক্বারী, ওয়ায়িজ উক্ত মীলাদ শরীফ-এর মাহফিলে উপস্থিত হতেন। সুবহানাল্লাহ!
আল্লামা হযরত ইমাম জালালুদ্দীন
সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বাদশাহ সম্বন্ধে উনার ‘হুসনুল মাক্বাছীদ ফী আমালিল মাওয়ালিদ’ কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিছ আল্লামা হযরত ইবনে কাছীর
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেন যে-
وكان شهما شجاعا بطلا عالما عادلا رحمه
الله واكرم مثواه.
অর্থ: ‘তিনি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, সাহসী, বীর্যবান,
আলিম ও ন্যায় বিচারক ছিলেন। আল্লাহ পাক উনার উপর
রহম করুন এবং উনাকে সম্মানিত বাসস্থান দান করুন।’
এমনিভাবে উক্ত বাদশাহর ছানা-ছিফত
ও প্রশংসার বিবরণ সীরাতে শামী, সীরাতে হালাবিয়াহ,
সীরতে নববিয়াহ ও যুরকানী ইত্যদি কিতাবে বর্ণিত
রয়েছে।
অতএব, উক্ত বাদশাহকে মূর্খ ও যিন্দীক অভিহিত করে শরীয়তের ফতওয়া মুতাবিক
উলামায়ে ছূ’রা নিজেরাই মূর্খ ও যিন্দীক
হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। কারণ, কেউ যদি কাউকে কোন
অপবাদ দেয়, সে যদি তার উপযুক্ত না হয়
তাহলে যে অপবাদ দিয়েছে সেটা তার উপরই বর্তাবে এবং উক্ত অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েই সে
মৃত্যুমুখে পতিত হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ
বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال
سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان العبد اذا لعن شيأ صعدت اللعنة الى السماء
فتغلق ابواب السماء دونها ثم تهبط الى الارض فتغلق ابوابها دونها ثم تأخذ يمينا وشمالا
فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذى لعن فاذا كان لذالك اهلا والا رجعت الى قائلها.
অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন কোন বান্দা কোন
বস্তুকে অভিসম্পাত করে তখন সেই অভিসম্পাত আকাশে উঠে, তখন আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন সেই অভিসম্পাত যমীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তখন যমীনের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডান দিকে ও বাম
দিকে যায় এবং যখন সেখানেও কোন রাস্তা না পায়, শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে,
যার উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে। যদি সে অভিসম্পাতের
উপযুক্ত হয়, তবে তার উপর পতিত হয়;
অন্যথায় অভিসম্পাতকারীর দিকেই ফিরে আসে।।”
(আবূ দাউদ শরীফ)
লিংকঃ http://shobujbanglablog.net/38174.html
লিংকঃ http://shobujbanglablog.net/38174.html