নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা (হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আশূরার আমলগুলো করে) আশূরা মিনাল মুহররমকে সম্মান করো।
প্রত্যেক বান্দা-বান্দি ও উম্মতের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে-আশূরা উপলক্ষে দুটি রোযা রাখা, রোযাদারকে ইফতারি করানো, আশূরার দিন আশূরার সম্মানার্থে গোসল করা, চোখে সুরমা দেয়া, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো, ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্তকে পানাহার করানো আশূরার অন্যতম ফযীলতপূর্ণ আমল। এর উসীলায় বান্দা-বান্দি ও উম্মত ইহকালে সর্বপ্রকার মুছিবত থেকে নাজাত লাভ করবে এবং পরকালে জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভ করে জান্নাত লাভ করবে। তাই প্রত্যেক বান্দা-বান্দি ও উম্মতের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য হলো- উল্লিখিত আমলগুলো করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিলের কোশেশ করা।
১) আশূরার একটি অন্যতম আমল হচ্ছে আশূরার রোযা, অর্থাৎ ১০ই মুহররম উপলক্ষে দুটি রোযা রাখা। অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ। শুধু ১০ তারিখ রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ এদিন ইহুদীরাও রোযা রেখে থাকে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা আশূরা উপলক্ষে রোযা রাখো তবে ইহুদীদের খিলাফ করো। তোমরা আশূরার দিন এবং এর পূর্বে অথবা পরে আরেকটি রোযা রাখো।” অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ রোযা রাখো।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, রমাদ্বান শরীফ-এর পর সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ রোযা হচ্ছে- মুহররম তথা আশূরার রোযা।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আশূরার রোযার ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এটা বিগত এক বৎসরের গুনাহর কাফফারাস্বরূপ।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি আশূরার রোযা রাখবে, আল্লাহ পাক তিনি এর বিনিময়ে তার আমলনামায় ষাট বছর দিনে রোযা রাখার ও রাতে ইবাদত করার ফযীলত লিখে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!
২) পবিত্র আশূরার দিন পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আশূরার দিন তার পরিবারবর্গকে ভালো খাদ্য খাওয়াবে ও পরাবে আল্লাহ পাক সারা বছর তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (‘তাবারানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী, মাসাবা বিস্ সুন্নাহ, মু’মিনকে মাহ ওয়া সাল ও আ’মালী’)
পবিত্র আশূরার দিন ভালো খাদ্য খাওয়া, খাওয়ানো, পরিধান করা ও পরিধান করানো সুন্নত-মুস্তাহাব। দিনে যেহেতু রোযা রাখতে হবে, তাই ভালো খাদ্য খাওয়ানোর ব্যবস্থা সন্ধ্যা রাতে ও সাহরীতে ব্যবস্থা করতে হবে। আল্লাহ পাক সকলকে তা নছীব করুন।
৩) আশূরার দিনে বেশকিছু আমলের কথা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে- তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, আশূরার দিন গোসল করা, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আশূরার দিন (আশূরার নিয়তে) গোসল করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ১ বৎসরের জন্য রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত তার কঠিন কোনো রোগ হবেনা এবং সে অলসতা ও দুঃখ কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
৪) আশূরার আরেকটি আমল হচ্ছে- চোখে সুরমা লাগানো। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আশূরার দিন চোখে মেশক মিশ্রিত সুরমা লাগাবে তার চোখে ওই দিন থেকে ১ বৎসরের জন্য কোন কঠিন রোগ হবে না। সুবহানাল্লাহ!
এখন কারো কাছে যদি মেশক মিশ্রিত অর্থাৎ ‘ইছমিদ’ সুরমা না থাকে তবে যে সুরমা পাবে সেটাই লাগাবে। এবং এর ফযীলতের জন্য আরজু করবে। আশা করা যায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি এর মধ্যেই সেই বরকত দিবেন।
৫) আশূরার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে- ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো এবং ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্তদেরকে পানি পান করানো। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি আশূরার দিন কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাবে, ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াবে এবং পিপাসার্তকে পানি পান করাবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাতের দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং জান্নাতের ‘সালসাবীল’ নামক ঝরনা থেকে পানি পান করাবেন। সুবহানাল্লাহ!
৬) ‘মু’মিন কে মাহ ওয়া সাল’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, “আশূরার দিন যে ব্যক্তি আহলে বাইতের গরিব-মিসকীনগণকে পেট ভরে খাদ্য খাওয়াবে সে ব্যক্তি বিদ্যুৎ বেগে পুলছিরাত পার হবে।” সুবহানাল্লাহ!
৭)হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আশূরার দিন যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে যেনো সমস্ত উম্মতে হাবীবীকে ইফতার করালো।” সুবহানাল্লাহ!
এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, ইফতারি করানোর উক্ত ফযীলত লাভ করার জন্য সকলেই চাইবে ইফতারি করাতে তাহলে কে ইফতারি করাবে আর কে ইফতারি করবে? এর সহজ এবং সুন্দর ফায়ছালা হলো- যে প্রথমে দাওয়াত দিবে তার দাওয়াতই কবুল করতে হবে। আর যে দাওয়াত খেতে যাবে সে তার সাধ্য অনুযায়ী কিছু ইফতারি সাথে নিয়ে যাবে এবং দাওয়াত প্রদানকারীর ইফতারির সাথে মিশিয়ে একত্রিত করে সকলে মিলে ইফতারি করবে। তাহলে সকলেই ইফতারি করানোর ফযীলত পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন।” সুবহানাল্লাহ!
খালিক্ব, মালিক আল্লাহ রব্বুল আলামীন উনার দেয়া এই রিযিক যারা হালাল পন্থায় দান করেন, এ দ্বারা অপরকে তৃপ্ত করেন, এমন ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তায়ালা খুবই ভালোবাসেন।
হাদীছ শরীফ-এর কিতাব ‘মিশকাত শরীফ’-এ বর্ণিত আছে, “ওই সমস্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক ভালোবাসেন, যারা মানুষদেরকে খাওয়ায় এবং পরিচিতি-অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়।”
মূলকথা হলো- আশূরার দিন আশূরার সম্মানার্থে গোসল করা, চোখে সুরমা দেয়া, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো, ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্তকে পানাহার করানো আশূরার অন্যতম ফযীলতপূর্ণ আমল। এর উসীলায় বান্দা-বান্দি ও উম্মত ইহকালে সর্বপ্রকার মুছিবত থেকে নাজাত লাভ করবে এবং পরকালে জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভ করে জান্নাত লাভ করবে।
তাই প্রত্যেক বান্দা-বান্দি ও উম্মতের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য হলো- উল্লিখিত আমলগুলো করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিলের কোশেশ করা।