নোটিশ

বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১০

নূরে আউয়াল, নূরে কায়িনাত, নূরে মুজাস্‌সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকের ফযীলত

আল্লাহ পাক-এর অনেক সুন্দরতম নাম মুবারক রয়েছে। সে সমস্ত নাম মুবারকের মাধ্যমে আল্লাহ পাককে ডাক।” (সূরা আরাফ-১৮০)
এ আয়াত শরীফের তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরও অনেক সুন্দর সুন্দর নাম মুবারক রয়েছে; সে সমস্ত নাম মুবারকের মাধ্যমে তোমরা উনাকে স্মরণ কর।”


মূলতঃ সমস্ত প্রশংসার মালিক মহান আল্লাহ পাক, যিনি তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সবকিছুই বিশেষভাবে তাৎপর্যমন্ডিত করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারককেও তিনি করেছেন অনুপম বৈশিষ্ট্য-মন্ডিত। যার হাক্বীক্বত উপলদ্ধি করা কেবল তাঁর আখাছছুল খাছ আশিকদের পক্ষেই সম্ভব।
স্মর্তব্য যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় ও রহমতপূর্ণ নামসমূহ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক এবং তা কেবল একটি দু’টি নয় বরং অগণিত ও অসংখ্য।

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক ব্যক্ত হয়েছে কুরআন শরীফে, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে এবং উলামায়ে আরিফীনগণের কিতাবে। কুরআন শরীফে বিবৃত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনেক নাম মুবারকের মাঝে- মুহম্মদ, আহমদ, ইয়াসীন, ত্বাহা, মুয্‌যাম্মিল, মুদ্দাছ্‌ছির, আব্দুল্লাহ, রহমাতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এখানে স্মর্তব্য যে, হযরত গউছুল আ’যম, বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেক রাসিখুনা ফিল ইল্‌ম্‌ বা সাবিকুন (যাঁরা নিজেদের রূহানীয়তের সম্মৃদ্ধি হেতু স্বয়ং রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও হিকমত জেনে নিতে সক্ষম) তাঁদের মতে, কুরআন শরীফে উল্লেখিত হুরূফে মুকাত্তায়াতগুলোতে যেমন রয়েছে তাওহিদের গুঢ় তত্ত্ব, তদ্রুপ রয়েছে রিসালতের নিগুঢ় ইঙ্গিত এবং অন্যান্য বিষয়ের ইঙ্গিত। তার সাথে রয়েছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা-মর্তবার গুপ্ত রহস্যসহ নাম মুবারক-এর অন্তর্ভুক্তি।

মুলতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকের যাহির এবং বাতিন দু’টি দিক রয়েছে। উলামায়ে আরিফীনগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকের যাহিরী ও বাতিনীগত দিকের অর্থ প্রকাশ করেছেন।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সকল নাম মুবারকের মাঝে ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ নাম মুবারক দু’টি বিশেষরূপে খাছ। এ নাম মুবারক দু’টিরও রয়েছে যাহিরী ও বাতিনী পরিচয়।

উল্লেখ্য, “মুহম্মদ” নামের মাঝে রয়েছে- দু’টি ‘মীম’। এর ব্যাখ্যা অনেক। যেমন একটি ‘মীম’ দ্বারা মুহিব্বিয়াত (মুহব্বতকারী)। অপর ‘মীম’ দ্বারা মাহবূবিয়াতের (যাকে মুহব্বত করা হয়) ইঙ্গিত প্রকাশ পায়।
এর প্রথম ‘মীম’ দ্বারা মালিক তায়ালা বা আল্লাহ পাক এবং দ্বিতীয় ‘মীম’ দ্বারা মাখলূক্বাত বা সৃষ্টি জগতের ইশারার প্রকাশ ঘটে।
আবার প্রথম মীম দ্বারা মুরীদ (ইচ্ছাকারী) এবং দ্বিতীয় মীম দ্বারা মুরাদ (যাকে ইচ্ছা করা হয়)-এর ইশারাও অনেকে ব্যক্ত করেছেন।
মূলকথা- এর দ্বারা বুঝা যায় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম স্বরূপ অথবা আল্লাহ পাক-এর সাথে মানুষ ও মাখলুক্বাতের সম্পর্ক তৈরি করনেওয়ালা এবং সৃষ্টিকর্তার তরফ হতে সৃষ্টির প্রতি প্রেরিত ও সৃষ্টির তরফ হতে সৃষ্টিকর্তার নিকট ওসীলা স্বরূপ।

উলামায়ে আরিফীনগণ উল্লেখ করেছেন, “যাহির হিসেবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং বাতিন হিসেবে তাঁর নাম মুবারক ‘আহমদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আর ‘মুহম্মদ’ নামের মত ‘আহমদ’ নামেরও অনেক গুপ্তভেদ রয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক-এর এক নাম মুবারক ‘আহাদ’ আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক ‘আহমদ’। ‘আহমদ’ নাম মুবারকে মধ্যস্থিত মীম দ্বারা মাখলুকের ইশারা প্রকাশ পায় অর্থাৎ মাখলুকের মধ্যে তিনি আহাদ বা একা, তাঁর কোন তুলনা নেই এবং মীম দ্বারা মাহবুবিয়াতের পূর্ণতার দিকেও ইশারা প্রকাশ পায়। এছাড়া এই মীম অক্ষর দ্বারা আল্লাহ পাক-এর দিকে ইশারা করা হয়। মূল কথা- আল্লাহ তায়ালার সাথে তিনি একা অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালার সাথে তাঁর সম্পর্কই সর্বদা বিদ্যমান।

‘মুহম্মদ’ নাম মুবারকের অর্থ সর্বোত্তম প্রশংসিত আর ‘আহমদ’ নাম মুবারকের অর্থ সর্বোত্তম প্রশংসাকারী।
মূলতঃ এ উভয় মুবারক নামই আল্লাহ পাক-এর কাছে চরম, পরম পছন্দনীয়। যে কারণে এই নামে যাঁদের নামকরণ করা হয়েছে বা হবে তারাও আল্লাহ পাক-এর কাছ থেকে অশেষ রহমত, বরকত ও ফযীলত প্রাপ্ত হবেন। যেমন- এ প্রসঙ্গে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, প্রাণের আঁক্বা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক-এর দরবারে দু’ ব্যক্তিকে দন্ডায়মান করানো হবে, আর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর হুকুম দিবেন। এতে বিস্মিত হয়ে উক্ত দু’ ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার কাছে আরয করবেন, হে বারে ইলাহী! কোন জিনিস আমাদেরকে জান্নাতের অধিকারী ও উপযোগী করলো? আপনার রহমত দ্বারা জান্নাতে যাবো, এ ধরনের আশা করা ছাড়া আমরা তো আর কোন নেক আমল করিনি। তাঁদের কথা শুনে রব্বুল ইজ্জত বলবেন, “যাও তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। কেননা আমি স্বয়ং জাতের কসম দ্বারা আমার উপর অবশ্য কর্তব্য করে দিয়েছিলাম যে, আমি ঐ ব্যক্তিকে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করাবনা, যার নাম হবে ‘আহমদ’ বা ‘মুহম্মদ’।” (হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
হযরত জা’ফর ইবনে মুহম্মদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রেওয়ায়েত করেছেন যে, ক্বিয়ামতের দিন, ইয়া মুহম্মদ বলে ডাকা হবে। তখন যে সমস্ত ব্যক্তির নাম মুহম্মদ ছিল, তারা সকলে মাথা উঠাবে। আল্লাহ পাক বলবেন, “তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-এর নাম মুবারক-এর সাথে যাদের নাম মিল রয়েছে তাদের প্রত্যেককে আমি ক্ষমা করলাম।” (হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)

আর শুধু পরকালেই নয়, দুনিয়াতেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক-এর অনুকরণে নাম করণের ফযীলত বহুমুখী। নুজহাতুল মাজালিস ও তাফসীরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ আছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, “যদি কারো সন্তান হবার সম্ভাবনা থাকে এবং সে যদি নিয়ত করে যে, তার ছেলে হলে তার নাম মুহম্মদ রাখা হবে, তবে তার ছেলেই হবে। এমনি করে যার সন্তান বাঁচে না সে যদি নিয়ত করে যে, ছেলে বাঁচলে তার নাম মুহম্মদ রাখা হবে, তবে তার সন্তান বেঁচেই থাকবে।’ উল্লেখ্য এরকম আরো অনেক ফযীলতের কথা উল্লেখ রয়েছে। মূলতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুকরণে নাম রাখা দুনিয়ায় যেমন রহমত, বরকত ও ফযীলতের কারণ, আখিরাতেও তেমনি শাফায়াত, নাযাত ও বরকতের কারণ।
অতএব, অর্থহীন, খারাপ অর্থযুক্ত এবং বিধর্মী ব্যক্তিদের অনুকরণে সন্তানের নাম রাখা পরিত্যাগ করে আমাদের সকলেরই মুসলমান হিসেবে আমাদের প্রিয় রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকের অনুকরণে নাম রেখে ফযীলত ও বরকত হাছিলে প্রবৃত্ত হওয়া কর্তব্য।