নোটিশ

শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১০

"হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ ব্যতীতই হিজরত করেছেন এবং গাছের নিকট আশ্রয় চেয়েছেন।" নাঊযুবিল্লাহ!-উক্ত আক্বীদা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত

আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো- ‘কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনও ইচ্ছাকৃত তো নয়ই বরং অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভুল করেননি।’ অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনোই কোন ভুলই করেননি। (‘শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ)।
অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সকলেই হলেন আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মনোনীত বান্দাহগণের অন্তর্ভুক্ত। উনারা প্রত্যেকেই ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।”

কুরআন শরীফ-এর একাধিক স্থানে ইরশাদ হয়েছে, “আমি (নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ : আয়াত শরীফ- ১০৯, সূরা নহল : আয়াত শরীফ- ৪৩, সূরা আম্বিয়া : আয়াত শরীফ- ৭)। অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক) পরিচালিত।আক্বাঈদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, “আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই মা’ছূম বা নিষ্পাপ।”

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি আরো বলেন, “আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শিরকী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! তিনি বলেন, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ভুল সম্পর্কে যারা বলে থাকে, আক্বাঈদ সম্পর্কে অজ্ঞতা ও সঠিক ইতিহাস না জানার কারণেই তারা তা বলে থাকে। যেমন আশুরা উপলক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে কেউ কেউ বলে থাকে যে, ‘আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ ব্যতীতই হিজরত করেছেন এবং গাছের নিকট আশ্রয় চেয়েছেন। তাই তিনি গযব স্বরূপ গাছের মধ্যে করাত দ্বারা দ্বিখণ্ডিত হয়েছেন।’ নাঊযুবিল্লাহ!

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মূলতঃ তাদের একথা সঠিক নয় বরং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। সঠিক ও প্রকৃত ঘটনা হলো- আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি যখন উনার ক্বওমের মধ্যে দ্বীন প্রচার করতে লাগলেন, তখন উনার ক্বওমের দুষ্ট লোকেরা মনে করলো যে, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি যদি এভাবে দ্বীন প্রচার করতে থাকেন তবে তাদের কোন অস্তিত্বই যমীনে থাকবে না। তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাও শেষ হয়ে যাবে। তাই তারা আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার পরিকল্পনা করলো।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, আল্লাহ পাক তিনি হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী করলেন যে, আপনি হিজরত করে অন্যত্র চলে যান। আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশে হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি অন্যত্র হিজরত করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।

উনার ক্বওম এটা জানতে পেরে উনার পিছনে পিছনে ছুটতে লাগল। এদিকে আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি যখন যাচ্ছিলেন তখন পশু-পাখি, গাছ-পালা, সকলেই হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার নিকট আরজু করছিল যে, হে হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম! আপনি আমাদের নিকট আসুন আমরা আপনার বিশ্রামের ব্যবস্থার মাধ্যমে খিদমত করে ধন্য হতে চাই। আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি আল্লাহ পাক উনার নির্দেশের অপেক্ষায় রইলেন। কারণ তিনি আল্লাহ পাক উনার নবী, কস্মিনকালেও তিনি মাখলুকাতের কথা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন না।

হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি চলতে লাগলেন হঠাৎ সামনে একটি বিশাল আকৃতির গাছ পড়লো, গাছটি দুই ভাগ হয়ে গেল এবং বললো হে আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম! আপনি আমার ভিতরে প্রবেশ করুন। আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেও নির্দেশ হলো, হে আমার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম! আপনি এ গাছের ভিতরে প্রবেশ করুন, তিনি সেই গাছের ভিতর প্রবেশ করলেন, গাছটি জোড়া লেগে গেল। ইবলিস উনার কোর্তা মুবারক বাহির থেকে কিছু অংশ ধরে রেখেছিল যার ফলে উনার কোর্তা মুবারকের কিছু অংশ বাহির থেকে দেখা যাচ্ছিল।

উনার ক্বওমের লোকেরা খুঁজতে খুঁজতে যখন সেখানে এসে পৌছল তখন ইবলিস মানুষের ছুরত ধারণ করে এসে বললো তোমরা যাঁকে খুঁজছ তিনি এ গাছের ভিতরেই আছেন। তারা বললো এর কি প্রমাণ রয়েছে? ইবলিস বললো, এই দেখুন উনার কোর্তা মুবারকের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।

তখন তারা বললো তাহলে এখন কি করা যায়? ইবলিস বললো এক কাজ করো, করাত এনে গাছটিকে উপর থেকে চিড়ে ক্বিখণ্ডিত করে ফেলো। তাহলেই হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি শহীদ হয়ে যাবেন। তখন তারা তাই করলো। করাত দিয়ে গাছের উপর থেকে চিড়তে চিড়তে যখন করাত হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার মাথা মুবারক স্পর্শ করলো, তখন তিনি একটু ‘উহ’ শব্দ করেছিলেন।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মূলতঃ তিনি ‘উহ’ শব্দ করেছিলেন এভেবে যে হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে কারো অসুখ হলে সে যদি ‘উহ’ ‘আহ’ করে তবে তার সেই উহ আহ তাসবীহ তুল্য হবে। অর্থাৎ অসুস্থতার সময় ‘উহ’ ‘আহ’ করা মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ। এ কারণেই তিনি ‘উহ’ শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন বলেন যে, হে আমার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম! আপনি আমার নবী; উহ শব্দ করা আপনার শানের খেলাফ! আল্লাহ পাক তিনি শুধু এতটুকু বললেন। হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা আল্লাহ পাক উনার আদেশ নির্দেশের প্রতি কতটুকু ইস্তিকামত! সুবহানাল্লাহ! করাত দিয়ে মাথা মুবারক থেকে পা মুবারক পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর মুবারক দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা হলো অথচ তিনি টু শব্দও করলেন না। সুবহানাল্লাহ!

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মূলতঃ উক্ত ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ পাক তিনি প্রমাণ করে দিলেন যে, আল্লাহ পাক উনার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নির্দেশ কতটুকু দৃঢ়তার সাথে পালন করেন। উনারা যে আল্লাহ পাক উনার আদেশ নির্দেশ ছাড়া কিছুই বলেন না ও করেন না এ ঘটনাই তার বাস্তব প্রমাণ। যদি তাই হয়; তাহলে একথা বলা কি করে জায়িয ও শরীয়তসম্মত হতে পারে যে, আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ ব্যতীতই হিজরত করেছেন এবং গাছের নিকট আশ্রয় চেয়েছেন। তাই তিনি গযবস্বরূপ গাছের মধ্যে করাত দ্বারা দ্বিখণ্ডিত হয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! বস্থতঃ এরূপ বলা বা এরূপ আক্বীদা পোষণ করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মূলকথা হলো- যারা আশুরা উপলক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ ব্যতীতই হিজরত করেছেন এবং গাছের নিকট আশ্রয় চেয়েছেন। তাই তিনি গযব স্বরূপ গাছের মধ্যে করাত দ্বারা দ্বিখণ্ডিত হয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের দৃষ্টিতে তাদের এ বক্তব্য ও আক্বীদা সম্পূর্ণভাবেই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং জাহান্নামী হওয়ার কারন। এরূপ কুফরী আক্বীদা থেকে তওবা করা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব। অন্যথায় ঈমানহারা হয়ে চিরজাহান্নামী হওয়া ব্যতীত কোন পথ থাকবে না।