নোটিশ

বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১০

খলীলুল্লাহ, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণের তা’যীম-তাকরীমের উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ

“যাঁরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ঈমান আনবে, তাঁকে তা’যীম করবে, তাঁর খিদমত করবে এবং তাঁর উপর অবতীর্ণ কুরআন শরীফকে অনুসরণ করবে তারাই হবে সফলকাম।” (সূরা আ’রাফ- ১৫৭)

হযরত আবূ মাহজুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মস্তক মুবারকের সম্মুখভাগে দীর্ঘ এক গুচ্ছ কেশ ছিল। তিনি যখন কোথাও উপবেশন করতেন তখন তা মাটিতে গিয়ে পড়ত। উনাকে সেই কেশ গুচ্ছ কেটে ফেলতে বলা হলে তিনি বলেন, তা সম্ভব নয়। কেননা নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্নেহ ভরে আমার মাথার এই অংশ স্পর্শ করেছিলেন।

হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর টুপি মুবারকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কয়েকটি কেশ মুবারক রক্ষিত ছিল। জিহাদের সময় উনার মাথা মুবারক থেকে টুপিটি পড়ে গেলে টুপিটি উদ্ধারের জন্য তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলেন। প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, আমার এই প্রাণপণ চেষ্টা অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, শুধু নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র কেশ মুবারক উদ্ধারের জন্য আমাকে এই সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়েছে, কেননা তাঁর পবিত্র কেশ মুবারক মুশরিকদের হাতে পড়ে অবহেলিত হবে তা আমার প্রাণে আদৌ সহ্য হবে না।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আদত মুবারক ছিল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদের মিম্বর শরীফের উপর যে স্থানে বসতেন সে স্থান মুবারকে হাত বুলিয়ে নিজ মুখমন্ডলে মালিশ করতেন।

বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মজলিসে তা’লীম দিতেন তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এমন তা’যীমের সাথে মজলিসে বসতেন, দেখে মনে হতো উনাদের মাথার উপর কোন পাখি বসে আছে, একটু নড়লেই তা উড়ে যাবে।

আরো বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এর তা’যীম-তাকরীম এত অধিক পরিমাণ ছিল যে, যখন আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অযু করতেন তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ অযুর পানি মুবারক মাটিতে পড়তে দিতেন না। অযুর পানি মুবারক গ্রহণ করার জন্য তাঁদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়ে যেত। নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থুথু মুবারক ও নাক মুবারক পরিষ্কার করবার সময় এইরূপ অবস্থার সৃষ্টি হত। দৌড়া-দৌড়ি আরম্ভ হয়ে যেত। প্রতিযোগিতা হত কে সর্বাগ্রে ও সর্বাধিক থুথু মুবারক ও নাকের পানি মুবারক ধরতে পারেন তা নিয়ে এবং উনারা তা গ্রহন করা মাত্রই তা নিজেদের মুখমন্ডলে ও শরীরে মালিশ করে নিতেন। এক কথায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর তা’যীম-তাকরীম ছিল কল্পনাতীত। নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কোন কথা বললে, কোন আদেশ-নির্দেশ মুবারক দিলে তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম মাথা নত করে কথা মুবারক শুনতেন এবং ব্যস্ত হয়ে পড়তেন আদেশ নির্দেশ মুবারক পালন করার জন্য। (সুবহানাল্লাহ)

উরওয়া ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, কসম আল্লাহ তায়ালার, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যে বেমেছাল তা’যীম-তাকরীম করেছেন, কোন বাদশাহকেও তার অনুচরবর্গ অনুরূপ তা’যীম প্রদর্শন করতে কোথাও কখনো শুনিনি বা দেখিনি। আমি রোম, পারস্য ও আবিসিনিয়ার বাদশাহদের দরবারে গিয়েছি, কিন্তু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণদের মত এমন বেমেছাল তা’যীম-তাকরীম কোথাও দেখিনি।

আল্লাহ পাক সূরা ফাত্‌হ- ৮ ও ৯ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন, আপনাকে (ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাক্ষী, সুসংবাদদাতা, এবং সতর্ককারী স্বরূপ প্রেরণ করেছি যেন তোমরা (হে মানুষ) আল্লাহ পাক-এর উপর এবং তাঁর রাসূল-পাক-এর উপর ঈমান আনয়ন করতে পার এবং তাঁর রাসূলের তা’যীম ও সম্মান করতে পার।

মহান আল্লাহ পাক নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদার বিকাশ ও মহিমা বৃদ্ধির জন্য সমস্ত কায়িনাতকে তাঁহার তা’যীমের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে বলেছেন। সে জন্যই আল্লাহ পাক নামাজ, আযান, একামত, তাশাহ্‌হুদ, সমস্ত খুতবাতে এক কথায় তাঁর ইবাদতের প্রতিটি ক্ষেত্রে নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে উনার তা’যীমের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।

আল্লামা জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মছনবী শরীফে উল্লেখ করেছেন,
“মোস্তফা আয়নায়ে জিল্লে খোদাস্ত,
মুনআকাছ দর ওয়ায় হামা খোয়ে খোদাস্ত”
অর্থাৎ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন খোদার নূরানী তাজাল্লী দর্শনের আয়না স্বরূপ। ঐ আয়নাতেই খোদার পবিত্র জাতের সবকিছু প্রতিবিম্ব ও প্রতিফলিত হয়। সুতরাং তোমরা উনার তা’যীম-তাকরীম ও স্মরণ যথাযথভাবে আদবের সাথে করো।

আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে যামানার মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আযম, আওলাদে রসূল, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর সূক্ষ্মাতী সূক্ষ্ম পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরন অনুকরন তথা পরিপূর্ণ আদব ও তা’যীম রক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ পাক এর হাবীব নূরে মুজাচ্ছাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী ও সন্তুষ্টি হাছিল করার তাওফিক দান করুন। (আমীন)