নোটিশ

বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১০

সাইয়্যিদুল কাওনাইন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পুর নূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বরকতপূর্ণ হুলিয়া মুবারকের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

হযরত জাবের বিন ছামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদা আমি চন্দ্র রাত্রিতে হুযূর পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তাকালাম। তখন তিনি চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত ছিলেন। এমতাবস্থায় আমি কখনো চাঁদের দিকে তাকাতাম আবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তাকাতাম। অতঃপর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাঁদের তুলনায় বহুগুণে সুন্দর ও উজ্জ্বল। (সুবহানাল্লাহ) (শামায়েলে তিরমিযী)

আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ছিরত মুবারক, ছূরত মুবারক, আকার মুবারক, আকৃতি মুবারক ও সৌন্দর্য সম্পর্কে অসংখ্য
হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। মূলতঃ সাইয়্যিদুনা নবী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক সৌন্দর্যে সমস্ত কিছু সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়েছে। সেই পবিত্রতম সৌন্দর্য মুবারকের উৎস হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকৃত সৌন্দর্য পেশ করার কোন ক্ষমতাই কোন মাখলুক তথা মানুষ রাখে না। তবু মানসপটে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটা দৃষ্টান্তমূলক অবয়ব পরিস্ফুটিত করার লক্ষ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কিছু উপমা পেশ করেছেন।

হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পবিত্র চেহারা মুবারক সূর্যের ন্যায় উদ্ভাসিত হতো। (তিরমিযী শরীফ)

আফদ্বালুন নাস বাদাল আম্বিয়া, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পবিত্র চেহারা মুবারক যেন দীপ্তমান চন্দ্র।” (আল ইনসানুল কামিল)

আল্লামা কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমাদের সামনে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিপূর্ণ মুবারক সৌন্দর্য প্রকাশ করা হয়নি, যদি উনার
 পূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশ করা হতো, তবে আমাদের চক্ষু নূর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখার শক্তি রাখত না।” (শামায়িলে তিরমিযী)

নিম্নে হাদীছ শরীফ-এর আলোকে নূরে মুজাস্‌সাম, মুহম্মদ মুস্তফা, আহমদ মুজতবা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আকার মুবারক, আকৃতি মুবারক, ছিরত মুবারক, ছূরত মুবারক ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করা হলো-
দৈহিক গঠন: সাইয়্যিদুর রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দৈহিক গঠন সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মধ্যম আকৃতির দেহ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। খুব লম্বাও ছিলেন না আবার বেটেও ছিলেন না, তিনি খুবই সুন্দর চেহারা মুবারকের অধিকারী ছিলেন। উনার চুল মুবারক অধিক কোঁকড়ানোও ছিল না আবার একেবারে সোজাও ছিল না, (সামান্য কোঁকড়ানো ছিল) শরীর মুবারক-এর রং ছিল- গোধূলী অর্থাৎ গন্দম রং-এর ন্যায়। তিনি হাঁটার সময় সামনের দিকে একটু ঝুঁকে হাঁটতেন। (শামায়িলে তিরমিযী)চক্ষু মুবারক: বরকতময় মুবারক ছিল বড়, আকর্ষণীয় নয়নাভিরাম। চোখের মনি মুবারক ছিল গাঢ় কালো এবং মনির পার্শ্বেই সাদা অংশে হালকা লাল রেখা প্রতিভাত হতো। তিনি অভূতপূর্ব দৃষ্টি শক্তির অধিকারী ছিলেন।

আল ইনসানুল কামিল নামক কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনের আলোতে যেরূপ দেখতেন, রাতের আঁধারেও তদ্রূপ দেখতেন এবং পিছনেও অনুরূপ দেখতেন, যেরূপ দেখতেন সামনে।”
মাথা মুবারক: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পবিত্র মাথা মুবারক ছিল (মানানসই) সাধারণের চেয়ে একটু বড়। তবে উহা উনার দেহ মুবারকের জন্য মানানসই ছিল।কপাল মুবারক: আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশস্ত কপাল মুবারক-এর অধিকারী ছিলেন।
নাসিকা মুবারক:  
উনার নাসিকা মুবারক কিছুটা উঁচু ছিল এবং তাতে নূর চমকাতো।
দন্ত মুবারক:
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দন্ত মুবারক ছিল সরু, মনোরম, সুমসৃণ, উজ্জ্বল ও চকচকে। সামনের দন্ত মুবারকে কিঞ্চিৎ ফাঁক ছিল, হাসি দিলে তা মুক্তার মত চমকাতো। কথা বলার সময় তা থেকে নূরের আলোক ছটা বের হতো।দাড়ি মুবারক: উনার দাড়ি মুবারক ছিল ঘন, কালো এবং উভয় চোয়াল মুবারক পরিপূর্ণ, যা খুবই সুন্দর দেখাত।চুল মুবারক: উনার মাথার চুল মুবারক ছিল সামান্য কোঁকড়ানো এবং বাবরী, যা কানের লতি পর্যন্ত ঝুলানো ছিল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ৬৩ বছর হায়াত মুবারকে মোট চুল মুবারক-এর মাঝে প্রায় ১৪-২৮টি চুল মুবারক পেকেছিল।
গর্দান মুবারক:
গর্দান মুবারক ছিল পুরু, গোশতযুক্ত। উভয় স্কন্ধের মধ্যবর্তী স্থান চওড়া ছিল।
পেট ও বক্ষদেশ মুবারক: পেট মুবারক ও বক্ষদেশ সমতল ছিল। কিন্তু বক্ষদেশ সুপ্রশস্ত ছিল। বক্ষ হতে নাভী মুবারক পর্যন্ত হালকা পশম বিদ্যমান ছিল।
হাত ও পা মুবারক: উনার উভয় হাত ও পা মুবারকে গোশত পরিপূর্ণ ছিল। হাত মুবারক মোটামুটি (মানানসই) দীর্ঘ ছিল। পা মুবারক-এর তলদেশ বেশ গভীর ও মসৃণ ছিল। হাঁটার সময় সামনের দিকে একটু ঝুঁকে হাঁটতেন।মহরে নুবুওওয়াত মুবারক: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ঘাড় মুবারক-এর উপর কবুতরের ডিমের সমতুল্য এক খণ্ড গোশত ছিল, যার রং মুবারক ছিল হালকা লাল। আর উহার চার পাশে কাল তিলের মত দেখা যেত। ইহাকে মহরে নুবুওওয়াত বলা হয়। (সুবহানাল্লাহ)

পরিশিষ্ট: পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন মানুষের পক্ষে আল্লাহ পাক-উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রকৃত ছিরত মুবারক, ছূরত মুবারক বর্ণনা করা সাধ্যের বাইরে। তথাপি যে সমস্ত বর্ণনা আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সংক্ষিপ্ত কলেবরে তা বর্ণনা করা সম্ভব হলো না।
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন-উনার কাছে বিনীত প্রার্থনা আমাদেরকে প্রিয় হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকৃত দর্শন লাভে ধন্য করুন।
বিঃদ্রঃ উল্লিখিত বর্ণনাসমূহ নির্ভরযোগ্য ছিরতগ্রন্থ এবং শামায়েলে তিরমিযী থেকে চয়ন করা হয়েছে।