যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মূলত যে কোনো নেক আমলের বিনিময়ে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা। খালিছ ঈমানদার বা আল্লাহওয়ালা হতে হলে প্রথমত আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করতে হবে অর্থাৎ প্রতি ক্ষেত্রে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত প্রতি ক্ষেত্রে সুন্নতের ইত্তিবা তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে বর্ণিত নেক আমলগুলো করতে হবে।
আশূরা মিনাল মুহররম-এর সাথে আক্বীদা ও আমল দুটি বিষয়ই জড়িত রয়েছে। অথচ আশূরা শরীফকে কেন্দ্র করে অজ্ঞতার কারণে অনেকেই বক্তৃতা ও লিখনীতে বেশকিছু কুফরী আক্বীদার বিস্তার ঘটিয়ে থাকে। যেমন আক্বীদার বিষয় হলো- অনেকে কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহাম তথা কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে আশূরার আলোচনায় অনেক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সমালোচনা বা দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে থাকে। (নাঊযুবিল্লাহ)
যেমন- কেউ কেউ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেসহ অনেক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সমালোচনা করে থাকে। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো উনারা গুনাহখতা করেছেন, আল্লাহ পাক তিনি আশূরার দিনে উনাদেরকে ক্ষমা করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! আবার কেউ কেউ কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশিষ্ট ছাহাবী, কাতিবে ওহী, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেসহ অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কঠোর সমালোচনা করে, তিরস্কার করে, গালি-গালাজ করে। নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ছহীহ ও বিশুদ্ধ আক্বীদা হচ্ছে- সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা মা’ছূম অর্থাৎ সর্বপ্রকার গুনাহখতা, ভুল-ত্রুটি, লগজেস থেকে পবিত্র। এর খিলাফ আক্বীদা পোষণকারীরা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। অপরদিকে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমালোচনা করাও কাট্টা কুফরী। যারা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমালোচনা করে তারাও কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দৃষ্টিতে কাট্টা কাফির।
তারা বলে থাকে যে, আশূরার দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালামসহ অনেক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের গুনাহ-খতা মাফ করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ একথা বলা ও আক্বীদা পোষণ করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হচ্ছে- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা মা’ছূম বা নিষ্পাপ।” আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে, “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শিরকী এবং সমস্ত প্রকার অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” (আক্বাইদে নসফী)
আশূরার আলোচনায় অনেকে এও বলে থাকে যে, বিশিষ্ট ছাহাবী, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইয়াযীদকে ক্ষমতা দিয়ে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুধু ছাহাবীই নন বরং জলীলুল ক্বদর কাতিবে ওহী ও গুপ্তভেদ জাননেওয়ালা ছাহাবী। আর শরীয়তের ফতওয়া মতে- কোনো ছাহাবী উনাদের সমালোচনা করা, দোষারোপ করা কাট্টা কুফরী।
বর্তমানে আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশে নববর্ষ উপলক্ষে বছরের পহেলা দিন যেমন- পহেলা মুহররম, পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারিতে ভাল বা বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। অথচ এর মধ্যে আলাদা কোন ফযীলত বা বরকত নেই। আর এ দিন মুসলমানের জন্য কোন আনন্দ বা খুশি প্রকাশেরও দিন নয়। বরং যারা মজূসী বা অগ্নিউপাসক কেবল তারাই খাছ করে নওরোজ বা নববর্ষ পালন করে থাকে অর্থাৎ বছরের পহেলা দিন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে। সাথে সাথে হিন্দু ও বৌদ্ধরাও বছরের পহেলা দিন পূজা করে থাকে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা যেহেতু মজূসীদের খাছ রসম-রেওয়াজ, সাথে সাথে হিন্দু ও বৌদ্ধদেরও। তাই মুসলমানের জন্য এ দিনে আলাদাভাবে কোন খুশি প্রকাশ করা এবং আলাদাভাবে কোন ভাল বা বিশেষ খাবারের আয়োজন করা জায়িয নেই। বরং আয়োজন করা কঠিন কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
বর্ণিত রয়েছে- আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত ইমাম আবূ হাফছ্ কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “কেউ যদি নববর্ষ উপলক্ষে একটা ডিমও ব্যয় করে তাহলে তার অতীত জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।”
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়েই ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল ইহসানে’ দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে; তা পাঠ করে সবাইকে আক্বীদা বিশুদ্ধ করতে হবে।