নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি যদি আশূরার দিনে তার পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ায়-পরায় তাহলে আল্লাহ পাক তিনি তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা মুহররম হোক, পহেলা বৈশাখ হোক, পহেলা জানুয়ারি হোক তাতে ভালো বা বিশেষ খাবার গ্রহণে আলাদা কোনো ফযীলত বা বরকত নেই। প্রকৃতপক্ষে মুসলমানের জন্য ভালো ও বিশেষ খাবারের দিন হচ্ছে ১০ই মুহররম, যা আশূরার দিন হিসেবে মশহুর এবং হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি যদি আশূরার দিনে তার পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ায়-পরায় তাহলে আল্লাহ পাক তিনি তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন।” (ত্ববারানী শরীফ)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াকিয়া বর্ণিত রয়েছে, এক ব্যক্তি ছিল গরিব ও আলিম। একবার অসুস্থতার কারণে তিনি তিন দিন যাবৎ কাজ করতে পারলেন না। চতুর্থ দিন ছিল আশূরার দিন। তিনি আশূরার দিনে ভালো খাওয়ার ফযীলত সম্পর্কে জানতেন। তখন ছিল কাজীদের (বিচারক) যুগ। কাজী ছাহেব ধনী ব্যক্তি ছিলো। তার কাছে আশূরার ফযীলতের কথা বলে এবং নিজের অসুস্থতা ও পরিবারের অভুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে দশ সের আটা, দশ সের গোশত ও দুই দিরহাম চাইলেন যে, ‘এই পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য হাদিয়া অথবা কর্জ হিসেবে দিন।’ কাজী ছাহেব তাকে যোহরের সময় আসতে বললো। যোহরের সময় কাজী ছাহেব বললো, আছরে আসতে। এরপরে আছরের সময় মাগরিব, মাগরিবের সময় ইশা এবং ইশার সময় সরাসরি না করে দিলো। তখন গরিব আলিম ব্যক্তি বললেন, হে কাজী ছাহেব! আপনি আমাকে দিতে পারবেন না সেটা আগেই বলতে পারতেন, আমি অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু তা না করে আমাকে সারাদিন ঘুরিয়ে এই শেষ মুহূর্তে না করছেন? কাজী ছাহেব সেই গরিব আলিম ব্যক্তির কথায় কর্ণপাত না করে দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল।
মনের দুঃখে লোকটি তখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। পথে ছিল এক খ্রিস্টানের বাড়ি। একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে কাঁদতে দেখে উক্ত খ্রিস্টান উনাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু বিধর্মী বিধায় খ্রিস্টানকে প্রথমে তিনি কিছু বলতে চাইলেন না। অতঃপর খ্রিস্টানের অধীর আগ্রহের কারণে তিনি আশূরার ফযীলত ও তার বর্তমান দুরবস্থার কথা ব্যক্ত করলেন। খ্রিস্টান ব্যক্তি তখন উৎসাহী হয়ে তাকে আশূরার সম্মানার্থে দশ সের আটা, দশ সের গোশত, দুই দিরহাম এবং অতিরিক্ত আরো বিশ দিরহাম দিল এবং বললো যে, আপনাকে আমি আশূরার সম্মানার্থে প্রতিমাসে এ পরিমাণ হাদিয়া দিব। ওই ব্যক্তি তখন তা নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং খাবার তৈরি করে ছেলে-মেয়েসহ আহার করলেন। অতঃপর দোয়া করলেন, ‘আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আমাকে সন্তুষ্ট করলো, আমার ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফোটালো, আল্লাহ পাক! আপনি তার দিল খুশি করে দিন, তাকে সন্তুষ্ট করে দিন।’
ওই রাতে কাজী ছাহেব স্বপ্ন দেখলো, স্বপ্নে কাজী ছাহেবকে বলা হচ্ছে, হে কাজী! তুমি মাথা উত্তোলন করো। মাথা তুলে কাজী ছাহেব দেখতে পেলো যে, তার সামনে দুটি বেহেশতের বালাখানা। একটি স্বর্ণের আরেকটি রৌপ্যের। কাজী ছাহেব বললো, ‘আয় আল্লাহ পাক! এটা কি?’ গায়িবী আওয়াজ হলো, ‘এ বালাখানা দুটি তোমার ছিল। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরিব আলিম লোকটি আশূরা উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন তাকে তুমি সাহায্য করনি। এজন্য এ বালাখানা দুটি এখন ওমুক খ্রিস্টান লোকের হয়েছে।’ কারণ, খ্রিস্টান লোকটা গরিব আলিমকে আশূরা উপলক্ষে সাহায্য করেছে। অতঃপর কাজী ছাহেবের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে ওযূ ও নামায আদায় করে সেই খ্রিস্টানের বাড়িতে গেলো। খ্রিস্টান কাজী ছাহেবকে দেখে বিস্ময়াভূত হলো। কারণ কাজী ছাহেব খ্রিস্টানের পড়শি হওয়া সত্ত্বেও জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো সময় তার বাড়িতে আসতে দেখেনি।
অতঃপর খ্রিস্টান কাজী ছাহেবকে বললো, ‘আপনি এত সকালে কি জন্য এলেন?’ কাজী ছাহেব বললো, ‘হে খ্রিস্টান ব্যক্তি! তুমি গত রাতে কি কোন নেক কাজ করেছ?’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, আমার খেয়ালে আসেনা যে, আমি কোনো উল্লেখযোগ্য নেক কাজ করেছি। তবে আপনি যদি জেনে থাকেন তাহলে আমাকে বলতে পারেন। তখন কাজী ছাহেব বললো, তুমি গত রাতে আশূরা উপলক্ষে এক গরিব আলিমকে দশ সের আটা, দশ সের গোশত, দুই দিরহাম এবং তার সাথে আরো বিশ দিরহাম হাদিয়া করেছো এবং প্রতি মাসে তাঁকে এ পরিমাণ হাদিয়া দেয়ার ওয়াদা করেছো। খ্রিস্টান ব্যক্তি তা স্বীকার করলো। কাজী ছাহেব বললো, ‘তুমি তোমার এই নেক কাজ এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও এবং তুমি উনার সাথে প্রত্যেক মাসে যে ওয়াদা করেছ আমি তাঁকে তা দিয়ে দিব।’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হে কাজী ছাহেব! আপনি কি জন্য এই সামান্য হাদিয়া করার বিনিময়ে আমাকে এক লক্ষ দিরহাম দিবেন সেটা স্পষ্ট করে বলুন? তখন কাজী ছাহেব তার স্বপ্নের কথা খুলে বললো যে, এই গরিব আলিম আশূরা উপলক্ষে আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলো আমি তাকে সাহায্য করিনি। যার কারণে রাতের বেলা আমাকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের দ্বারা তৈরি বেহেশতের দুটি বালাখানা স্বপ্নে দেখিয়ে বলা হচ্ছে, হে কাজী ছাহেব! ‘এ বালাখানা দুটি তোমার ছিল। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরিব আলিম লোকটি আশূরা উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন তাকে তুমি সাহায্য করনি। এজন্য এ বালাখানা দুটি এখন ওমুক খ্রিস্টান লোকের হয়েছে।’ কারণ খ্রিস্টান লোকটা গরিব আলিমকে আশূরা উপলক্ষে সাহায্য করেছে। কাজী ছাহেব বললো, তুমি তো খ্রিস্টান। তুমি তো এই বালাখানা পাবে না। কারণ ইসলাম আসার পরে পূর্ববর্তী সমস্ত ধর্ম বাতিল হয়ে গেছে। কাজেই সেই ধর্মের উপর যারা থাকবে তারা জান্নাত লাভ করতে পারবে না। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, আমি যদি ইসলাম গ্রহণ করি তাহলে কি এই বালাখানার মালিক হতে পারবো? তখন কাজী ছাহেব বললো, হ্যাঁ, তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ করো তাহলে বালাখানা লাভ করতে পারবে। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হে কাজী ছাহেব! আপনি সাক্ষী থাকুন আমি এক্ষণি কালিমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, এখন ফিকিরের বিষয় যে, মুহররম মাস তথা আশূরাকে সম্মান করার কারণে আল্লাহ পাক তিনি উক্ত খ্রিস্টানকে ঈমান দিয়ে দিলেন এমনকি জান্নাত নছীব করলেন। সুবহানাল্লাহ! তাই আশূরার দিন ভালো খাওয়ার মধ্যে আলাদা ফযীলত রয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশে নববর্ষ উপলক্ষে বছরের পহেলা দিন যেমন- পহেলা মুহররম, পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারিতে ভালো বা বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। অথচ এর মধ্যে আলাদা কোনো ফযীলত বা বরকত নেই। আর এ দিন মুসলমানের জন্য কোনো আনন্দ বা খুশি প্রকাশেরও দিন নয়। বরং যারা মজুসী বা অগ্নিউপাসক কেবল তারাই খাছ করে নওরোজ বা নববর্ষ পালন করে থাকে অর্থাৎ বছরের পহেলা দিন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে। সাথে সাথে হিন্দু ও বৌদ্ধরাও করে থাকে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা যেহেতু মজুসীদের খাছ রসম-রেওয়াজ তাই মুসলমানের জন্য এ দিনে আলাদাভাবে কোনো খুশি প্রকাশ করা এবং আলাদাভাবে কোনো ভালো বা বিশেষ খাবারের আয়োজন করা জায়িয নেই।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, বর্ণিত রয়েছে- আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত ইমাম আবূ হাফস কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “কেউ যদি নববর্ষ উপলক্ষে একটা ডিমও ব্যয় করে তাহলে তার পঞ্চাশ বৎসরের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ অতীত জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, তাই কাফির-মুশরিক, বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা গ্রহণ ও পালন করা হতে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।
পৃষ্ঠাসমূহ
- যামানার ইমাম
- আজকের ক্বওল শরীফ
- সুন্নাহ শরীফ
- মুসলিম নির্যাতন
- বাতিল ফিরকা
- চিকিৎসা সহায়তা
- প্রথম-পাতা
- ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে যুক্তিহীন বিতর্কের অবসান
- বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক আইন
- সামরিক প্রযুক্তি
- আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও নানা শাখা-প্রশাখা
- মুসলমানদের সামনে চ্যালেঞ্জ
- সন্তানদের শিক্ষাদান পদ্ধতি
- পবিত্র আল-বাইয়্যিনাত শরীফ উনার সূচী মুবারক
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সকলে আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও।’ (সূরা ইমরান-৭৯)