নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর মহিমান্বিত দিনটিই সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে মহান ও সবচেয়ে বড় ঈদের দিন। এ ঈদ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা সকলের জন্যেই ফরযে আইন তো অবশ্যই ফরযে আকবারেরও অন্তর্ভুক্ত
الحمد لله رب العلمين والصلاة والسلام على سيد الانبياء والـمرسلين وعلى ازواجه الـمطهرات واهل بيته الـمطهرين واصحابه الـمرضيين واله الـمكرمين و اولاده الشيخ الامام الـمجدد الاعظم واهل بيته الـمعظمين.
ঈদ মুবারক! ঈদ মুবারক!! ঈদ মুবারক!!!
আল্লাহ পাক তিনি মাসসমূহের মধ্যে রবীউল আউয়াল শরীফকে, তারিখসমূহের মধ্যে ১২ই শরীফকে এবং দিনসমূহের মধ্যে সোমবার শরীফকে উনার প্রিয়তম হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর জন্য পছন্দ করেছেন। তাই উক্ত মুবারক মাস, মুবারক তারিখ, ও মুবারক দিনটি আল্লাহ পাক উনার নিকট যেরূপ সবচেয়ে প্রিয়, পবিত্র, শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত তদ্রূপ বান্দা ও উম্মতের জন্যও তা সবচেয়ে প্রিয়, পবিত্র, শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। আর একারণে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ মুবারক দিনটি বান্দা ও উম্মতের জন্য সবচেয়ে খুশির, সবচেয়ে আনন্দের, সবচেয়ে মহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদের দিন হিসেবে সাব্যস্ত ও গণ্য হয়েছে। কারণ এ মুবারক দিনটি যদি উনার বিলাদত শরীফ তথা শুভাগমনের অন্তর্ভুক্ত না হতো তাহলে শবে ক্বদর, শবে বরাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, জুমুয়াহ,আরাফাহ ইত্যাদি ফযীলতপূর্ণ কোন দিন-রাতেরই আগমন ঘটতো না। শুধু তাই নয়, কুরআন শরীফ নাযিল হতো না, দ্বীন ইসলাম আসতো না, কোনো মু’মিন মুসলমান এবং কোনো বান্দা উম্মতেরও অস্তিত্ব থাকতো না। ফলে, শরীয়ত এ মুবারক দিনটিকে নির্ধারণ করেছে সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে মহান ও সবচেয়ে বড় ঈদের দিন হিসেবে যাকে আরবীতে ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদুল ঈদিল আ’যম ও সাইয়্যিদুল ঈদিল আকবার বলা হয় এবং এ ঈদ পালন করাকে ফরযে আইন সাব্যস্ত করেছে।
খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি কুরআন শরীফ-এর একাধিক আয়াত শরীফ-এর মাধ্যমে এবং কুল-কায়িনাতের যিনি নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবূল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বহু হাদীছ শরীফ-এর মাধ্যমে বান্দা ও উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যমীনে আগমন বা বিলাদত শরীফ, বিছাল শরীফ এবং উনাদের বিশেষ ঘটনা অর্থাৎ উনাদের মুবারক শান বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশার্থে যেসব ঘটনা যে দিনগুলিতে সংঘটিত হয়েছে সে দিনগুলি রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিল ও হাছিলের দিন এবং সে দিনগুলি ঈদ বা খুশি প্রকাশের দিন। এ সম্পর্কে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস থেকে দলীলসমূহ নিম্নেবর্ণনা করা হলো।
এক
হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ ও প্রসিদ্ধ কিতাব- মুয়াত্তা মালিক, ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, উনার যমীনে আগমন ও উনার বিছাল শরীফ জুমুয়ার দিন সম্পন্ন হয়েছে। যার কারণে এ জুমুয়ার দিনটিকে স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে ঈদের দিন ঘোষণা করেন এবং এ দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করার জন্য নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, এ দিনটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক সম্মানিত দিন হিসেবে ঘোষণা দেন। এমনকি এ দিনটিকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এ দুই ঈদের দিন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত বলে ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ ও প্রসিদ্ধ কিতাব আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, আছ ছহীহাহ ১ম খ-৮৮ পৃষ্ঠা, কানযুল উম্মাল ১১ খ- ৪৫৫ পৃষ্ঠা ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করা না হলে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেসহ কোনো কিছুই সৃষ্টি করা হতো না।
স্মরণীয় যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, যমীনে আগমন ও বিদায়ের কারণে জুমুয়ার দিন যদি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত হয় তাহলে যিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করা না হলে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেসহ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি করা হতো না এবং উনাদের বিশেষ কোন ঘটনাও সংঘটিত হতো না, শুধু তাই নয়, আসমান-যমীন, লওহো-কলম, আরশ-কুরসী,জিন-ইনসান, ফেরেশতা, বেহেশত-দোযখ, এককথায় কায়িনাতের কোনো কিছুই সৃষ্টি করা হতো না উনার যমীনে আগমন তথা বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ কতো মহান, কতো বড় খুশি বা ঈদের দিন হবে তা ফিকির করতে হবে।
দুই
আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
وسلم عليه يوم ولد ويوم يموت ويوم يبعث حيا .
অর্থ: “উনার প্রতি সালাম (শান্তি বা অভিবাদন) যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন।” (সূরা র্মাইয়াম : আয়াত শরীফ ১৫)
এ আয়াত শরীফ-এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন খুশির দিন বা ঈদের দিন। কেননা সেদিন রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিল ও হাছিলের দিন।
স্মরণীয় যে, অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন যদি ঈদ বা খুশির দিন হয় এবং রহমত, বরকত, সাকীনা, নাযিল ও হাছিলের দিন হয় তাহলে যিনি নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন কতো লক্ষ কোটি গুণ বেশি খুশির দিন বা ঈদের দিন হবে এবং কতো বেশি রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিল ও হাছিলের দিন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তিন
হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ ও প্রসিদ্ধ কিতাব বুখারী, মুসলিম, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম যে দিনটিতে উনার ক্বওমসহ ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন এবং লোহিত সাগর পার হয়েছিলেন সে দিনটিকে তিনি শুকরিয়াস্বরূপ রোযা রেখে পালন করেছেন এবং উনার ক্বওমকেও পালন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেদিনকে ইয়াওমুন আযীম বা মহান দিন হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছেন। শুধু এতটুকুই নয়, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও সেদিনকে ইয়াওমুন আযীম বা মহান দিন ও খুশির দিন হিসেবে কবুল করে শুকরিয়াস্বরূপ সেদিন রোযা রেখে পালন করেন ও স্বীয় উম্মতদেরকেও রোযা রেখে পালন করতে বলেন।
স্মরণীয় যে, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমসহ লোহিত সাগর পার হওয়ার দিনটি যদি মহান দিন এবং শুকরিয়া ও খুশি প্রকাশের দিন হিসেবে ক্ববূল বা গৃহীত হয় তাহলে যাঁর ওসীলায় কুল-কায়িনাত সৃষ্টি হলো এবং যিনি কুল-মাখলূক্বাতের জন্য রহমত ও নিয়ামত হিসেবে যমীনে তাশরীফ নিলেন, যিনি আগমন না করলে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিসহ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সৃষ্টিই হতেন না উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন কতো মহান, কতো বেশি শুকরিয়া প্রকাশের ও কতো বেশি খুশি বা ঈদ পালনের তা ফিকির করতে হবে।
চার
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি একদা-
اليوم اكملت لكم دينكم و اتممت عليكم نعمتى و رضيت لكم الاسلام دينا
অর্থ: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম এবং এতে সন্তুষ্ট রইলাম।” এ আয়াত শরীফখানা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন উনার নিকট এক ইহুদী বসা ছিলো সে বলে উঠলো, যদি এই আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো তাহলে আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদ বলে ঘোষণা করতাম।” (তিরমিযী,ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
উল্লেখ্য, আলোচ্য আয়াত শরীফ সম্পর্কে ইহুদী সম্প্রদায়ের বক্তব্য হলো, তাদের প্রতি যদি এ আয়াত শরীফ নাযিল হতো তাহলে তারা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করতো। যদিও তাদের জানা ছিলো না যে,আসলে মুসলমানদের দুই ঈদের দিনেই উক্ত আয়াত শরীফখানা নাযিল হয়েছে- এক. জুমুয়ার দিন, দুই. আরাফার দিন।
কিন্তু যে বিষয়টি এখানে স্মরণযোগ্য তা হলো, সূরা মায়িদা-এর কেবল উক্ত ১খানা আয়াত শরীফই নয় বরং উক্ত আয়াত শরীফসহ প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে ৬,৬৬৬খানা আয়াত শরীফ ও ১১৪টি সূরা শরীফসহ সমগ্র কুরআন শরীফ নাযিলের যিনি কারণ, যিনি আগমন না করলে সেই কুরআন শরীফই নাযিল হতো না, উনার আগমন তথা বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিনটি তাহলে কতো বড় ঈদের দিন হবে তা সহজেই অনুধাবণীয়।
পাঁচ
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি উনার উম্মতের আরজু বা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক উনার কাছে দু‘আ করেছিলেন-
اللهم ربنا انزل علينا مائدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا واية منك وارزقنا وانت خير الرازقين. قال الله انى منزلها عليكم فمن يكفر بعد منكم فانى اعذبه عذابا لا اعذبه احدا من العالمين .
অর্থ: “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশ্তী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। আল্লাহ পাক তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবেনা বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি সারা কায়িনাতের অপর কাউকে দিবো না।” (সূরা মায়িদা : আয়াত শরীফ ১১৪, ১১৫)
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উক্ত দু‘আর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক তিনি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করেছিলেন। আর খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনটিকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উম্মতদেরকে নিয়ে ঈদ বা খুশির দিনরূপে পালন করেছিলেন।
স্মরণীয় যে, সামান্য খাদ্যসহ এক খাঞ্চা নাযিলের দিনটি যদি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং উনার উম্মতের জন্য খুশির দিন হয়ে যায় এবং সে দিনটিকে খুশির দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির যোগ্য হয়, তাহলে যিনি সৃষ্টির মূল, যিনি সারা আলমের জন্য রহমত, যাকে সৃষ্টি না করলে কোনো কিছুই সৃষ্টি করা হতো না উনার বিলাদত শরীফ-এর দিনটিকে কিরূপ খুশির দিন হিসেবে পালন করা উচিত এবং সেদিন উপলক্ষে যদি কেউ খুশি প্রকাশ না করে তাহলে সে কতো কঠিন শাস্তির যোগ্য হবে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোনো লোকের সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে খুশি হয়, বিবাহ-শাদীতে খুশি হয়, চাকরি পেলে খুশি হয়,ব্যবসায় লাভ হলে খুশি হয়, বিপদ থেকে বেঁচে গেলে খুশি হয়, সুন্দর করে ঘর-বাড়ি করতে পারলে খুশি হয়, জায়গা-জমি কিনতে পারলে খুশি হয়, কোনো মর্যাদা কিংবা পদ লাভ করলে খুশি হয়, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ বা বের হলে খুশি হয়,বিশেষ করে মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার যেদিন ফল প্রকাশ হয় সেদিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রী ও তার অভিভাবক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন খুশি হয়ে মিষ্টি কিনে বিতরণ করে থাকে ও খেয়ে থাকে। তারা এতো খুশি প্রকাশ করে যে, সেদিন মিষ্টির দোকানের সমস্ত মিষ্টি শেষ হয়ে যায়। দুনিয়াবী ক্ষণস্থায়ী সামান্য নিয়ামত লাভে খুশি প্রকাশের দৃষ্টান্ত যদি এই হয়, তাহলে যিনি আগমন না করলে কুল-কায়িনাতের কিছুই সৃষ্টি হতো না, সৃষ্টি হতো না কোন পিতা-মাতার, না কোন সন্তানের সেক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমন বা বিলাদত শরীফ-এর দিন উপলক্ষে কতো বেশি খুশি প্রকাশ করতে হবে, মিষ্টি দিয়ে, মাল দিয়ে, না জান দিয়ে তা ফিকির করতে হবে।
কারণ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
لايؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده و ولده والناس اجمعين وفى رواية من ماله و نفسه
অর্থ: “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে।” অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তার মাল ও জান অপেক্ষা বেশি মুহব্বত না করবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
এ হাদীছ শরীফ থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয় যে, মানুষের জীবনে যতো রকম খুশি প্রকাশের বিষয় রয়েছে সমস্ত খুশির বিষয় থেকে লক্ষ-কোটি গুণ বেশি খুশি প্রকাশের উপলক্ষ হলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমন বা বিলাদত শরীফ-এর দিনটি।
তাই, শরীয়ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর মহিমান্বিত দিনটিকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও সাইয়্যিদে ঈদে আকবার বলে ঘোষণা করেছে এবং এ ঈদ পালন বা উদযাপন করাকে বান্দা ও উম্মতের জন্য ফরযে আইন করে দিয়েছে।
বিশ্ব সমাদৃত ‘আননি’মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, যখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর পবিত্র দিনটি আগমন করলো। শরীয়তে সূর্যাস্তের পর থেকে দিন শুরু হয় অর্থাৎ আগে রাত পরে দিন এসে থাকে। সে পবিত্র রাতটির অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে স্বয়ং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, ‘এটা ছিলো চন্দ্রের আলোয় আলোকিত রাত। চারপাশে কোন প্রকার অন্ধকার ছিলো না। সে সময় হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সন্তানাদিদের নিয়ে হারাম শরীফ-এর দিকে যান বাইতুল্লাহ শরীফ-এর ভাঙা দেয়াল মেরামত করার জন্য। ফলে সে সময় আমার নিকট কোন নারী বা পুরুষ কেউই ছিলেন না। আমার নিঃসঙ্গতার জন্য কান্না পাচ্ছিলো। হায়! কোন মহিলাই আমার খিদমতে নেই। আমার জন্য কোন একান্ত সাথীও নেই, যিনি আমাকে সান্ত¡না দিবেন। কোন দাসীও নেই, যে আমার মনোবল অটুট রাখবে।’ অতঃপর তিনি বলেন, ‘আমি তাকালাম বসত বাড়ির এক কোণায়। সহসাই তা উন্মোচিত হলো এবং চারজন সুউচ্চ মহিলা বের হয়ে এলেন।’
উক্ত চারজন মহীয়ষী এমন উজ্জ্বল ছিলেন যেনো উনারা চন্দ্র। উনাদের চারদিকে আলো আর আলো। আবদে মানাফ বংশের সহিত সাদৃশ্য রাখেন উনারা। অতঃপর উনাদের প্রথমজন এগিয়ে এলেন এবং তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনার মতো কে আছেন? আপনি যে রবীয়া ও মুদ্বার গোত্রের সাইয়্যিদ উনাকে রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন। অতঃপর তিনি আমার ডান দিকে বসলেন। তখন আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, ‘আমি হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম। মানবজাতির মাতা।’ অতঃপর দ্বিতীয়জন এগিয়ে এলেন। তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনার মতো কে আছেন? আপনিতো রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন পূতঃপবিত্র জ্ঞান-ভা-ারের রহস্যকে, রত্মরাজির সাগরকে, নূরের ঝলককে, সুস্পষ্ট তত্ত্বজ্ঞানী উনাকে। অতঃপর তিনি বাম দিকে উপবেশন করলেন। তখন আমি উনাকে বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, ‘আমি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া হযরত সাররাহ আলাইহাস সালাম। অতঃপর তৃতীয়জন এগিয়ে এলেন এবং বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনারতো কোন তুলনাই হয় না। আপনি যে চিরপ্রত্যাশার হাবীব, হাবীবে খোদা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন, যিনি প্রশংসা ও ছানা-ছিফতের লক্ষ্যস্থল। অতঃপর তিনি আমার পিঠের দিকে বসলেন। আমি বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, ‘আমি হযরত আছিয়াহ বিনতে মুসাহিম আলাইহাস সালাম।’ এরপর চতুর্থজন এগিয়ে এলেন। তিনি অন্যদের তুলনায় বেশি উজ্জ্বলতার অধিকারিণী ছিলেন। তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনার সমকক্ষ কেউই নেই। আপনি রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন অকাট্য দলীলের অধিকারী সত্ত্বা যিনি উনাকে, যিনি মু’জিযা, আয়াত ও দালায়িলের অধিকারী। যিনি যমীন ও আসমানবাসীদের সাইয়্যিদ। উনার উপর আল্লাহ পাক উনার সর্বোত্তম ছলাত এবং পরিপূর্ণ সালাম। তারপর তিনি আমার নিকটে বসলেন আর আমাকে বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম! আপনি আমার উপর হেলান দিন। আমার উপর পূর্ণ আস্থা রাখুন। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম। আপনি কে? তিনি বললেন, ‘আমি হযরত র্মাইয়াম বিনতে ইমরান আলাইহাস সালাম। আমরা আপনার সেবিকা এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গ্রহণকারিণী।’
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, উনাদের উপস্থিতিতে আমার একাকীত্ব দূর হলো। আর আমি দেখতে লাগলাম, দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট জনেরা আমার নিকট দলে দলে আসছেন। আমি আমার গৃহের দিকে তাকালাম, এখানে নানান ভাষায় বৈচিত্রপূর্ণ দুর্বোধ্য কথা আমি শুনতে পেলাম। আমি সে সময় লক্ষ্য করলাম, দলে দলে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার ডানে-বামে উড়ছেন। তখন আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ করলেন, হে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম! রূহসমূহকে ‘শারাবান তহূরা’ পাত্রের নিকট শ্রেণীবদ্ধ করুন। হে হযরত রিদ্বওয়ান আালাইহিস সালাম! জান্নাতের নবোদ্ভিন্না যুবতীগণ উনাদেরকে নতুন সাজে সজ্জিত করুন। আর পবিত্র মেশকের সুগন্ধি ছড়িয়ে দিন। সারা মাখলূক্বাতের যিনি শ্রেষ্ঠতম রসূল, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আবির্ভাব উপলক্ষে।” হে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম! বিছিয়ে দিন নৈকট্য ও মিলনের জায়নামায সেই মহানতম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য, যিনি অধিকারী নূরের, উচ্চ মর্যাদার এবং মহা মিলনের। হে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম! দোযখের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশ্তা হযরত মালিক আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ করুন তিনি যেনো দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করেন। জান্নাতের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশ্তা হযরত রিদ্বওয়ান আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন, তিনি যেনো জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করেন। হে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম! হযরত রিদ্বওয়ান আলাইহিস সালাম উনার অনুরূপ পোশাক পরিধান করুন এবং যমীনের বুকে গমন করুন সুসজ্জিত হয়ে কাছের ও দূরের সকল ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সহকারে। অতঃপর আসমান-যমীনের চারপাশে ঘোষণা দিন, সময় ঘনিয়ে এসেছে, মুহিব ও মাহবূবের মিলনের, ত্বালিব ও মাত্বলূবের সাক্ষাতের। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার হাবীবে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে মি’রাজ হবে তার সময় নিকটবর্তী হলো উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর মাধ্যমে।” সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম তিনি হুকুম বাস্তবায়ন করলেন, যেমনটি আল্লাহ পাক জাল্লা শানূহূ তিনি হুকুম করলেন। এক জামায়াত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মক্কা শরীফ-এর পাহাড়ে দায়িত্ব দিলেন। উনারা হারাম শরীফ-এর দিকে নজর রাখলেন। উনাদের পাখাসমূহ যেনো সুগন্ধিযুক্ত সাদা মেঘের টুকরা। তখন পাখিসমূহ তাসবীহ পাঠ করতে লাগলো এবং উন্মুক্ত প্রান্তরে বনের পশুগুলো সহানুভূতির ডাক, আশার ডাক দিতে লাগলো। এ সবকিছুই সেই মহান মালিক জলীল জাব্বার আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার আদেশ মুতাবিক হলো।
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তিনি আমার চোখের পর্দা অপসারিত করলেন। আমি দেখতে পেলাম, শাম দেশের বছরা নগরীর প্রাসাদসমূহ। আমি দেখলাম, তিনটি পতাকা। একটি পতাকা পূর্ব প্রান্তে,আরেকটি পতাকা পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কা’বা শরীফ-এর ছাদে। আমি আরো দেখলাম, পাখিদের একটি দল, যে পাখিদের চক্ষুগুলো স্বর্ণাভ, ডানাগুলো বৈচিত্র্যময় রঙ-বেরঙের ফুলের মতো। সেগুলো আমার কক্ষে প্রবেশ করলো মণিমুক্তার মতো। এরপর উক্ত পাখিগুলো আমার চারপাশে আল্লাহ পাক-উনার ছানা-ছিফত করতে লাগলো। আমি উম্মীলিত রইলাম এ অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার নিকট দলে দলে আসতে লাগলেন। আর উনাদের হাতে ছিলো ‘আগরদান’ স্বর্ণাভ ও রৌপ্য নির্মিত। আর উনারা সুগন্ধি ধূম্র ছড়াচ্ছিলেন। সেই সাথে উনারা উচ্চকণ্ঠে মহাসম্মানিত ও মর্যাদাবান নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করছিলেন। উনাদের কণ্ঠে সৌজন্যতার ও মহানুভবতার ভাব স্পষ্ট ছিলো।
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, চন্দ্র আমার মাথার উপর চলে এলো, তাঁবু মাথার উপর থাকার মতো। আর তারকারাজি আমার মাথার উপর সদৃশ্য মোমবাতির ন্যায়। সে অবস্থায় আমার নিকট ছিলো দুধের ন্যায় শুভ্র সুগন্ধিময় পানীয়, যা ছিলো মধুর চেয়ে মিষ্ট এবং বরফের চেয়ে বেশি ঠা-া। তখন আমার খুব পিপাসা লাগছিল। আমি তা গ্রহণ করলাম ও পান করলাম। এর চেয়ে অধিক কোন সুপেয় পানীয় আগে কখনো পান করিনি। অতঃপর আমা হতে প্রকাশিত হলো এক মহিমান্বিত নূর।
উক্ত বর্ণনা থেকে প্রতিভাত হলো, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ কালে স্বয়ং খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি খুশি প্রকাশ করেন এবং উনার হুকুম বা নির্দেশে খুশি প্রকাশ করেছিলেন ফেরেশ্তাকুল আলাইহিমুস সালাম, খুশি প্রকাশ করেছিলেন জান্নাতের অধিবাসীগণ, এমনকি খুশি প্রকাশ করেছিলো বনের পশু-পাখিরাও। খুশি প্রকাশ করে ছানা-ছিফত বর্ণনা করেছিলেন এবং পাঠ করেছিলেন ছলাত-সালাম ও তাসবীহ তাহলীল। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, বান্দা ও উম্মতের প্রতিও আল্লাহ পাক উনার সে একই নির্দেশ হলো যে, তারা যেনো হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে।
যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ ফরমান-
قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون .
অর্র্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সে কারণে তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস : আয়াত শরীফ ৫৮)
এ হুকুম বা নির্দেশের কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। খুশি প্রকাশ করে উনারা তাবারুকের ব্যবস্থাসহ মাহফিলের আয়োজন করেন এবং স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই মাহফিলে উপস্থিত হয়ে রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও শাফায়াতের সুসংবাদ প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ!
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك .
অর্র্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু- উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তান-সন্ততি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী,পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে সমবেত করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস, এই দিবস অর্র্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন তখন সমবেত সবাই দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে মাহফিল করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আপনাদের জন্য রহমতের দরজা উš§ুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা আপনাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও রহমত ও মাগফিরাত এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى .
অর্র্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজ গৃহে ছাহাবীগণ উনাদেরকে সমবেত করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার শানে ছলাত-সালাম (দুরূদ শরীফ) পাঠ করছিলেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন তখন সমবেত সবাই দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে মাহফিল করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।”(কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ব্যয় করার আহকাম ও ফযীলত
প্রত্যেক ঈমানদার বান্দা ও উম্মতের দায়িত্ব কর্তব্য হলো, আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট ও মুহব্বত করা। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
والله ورسوله احق ان يرضوه ان كانوا مؤمنين
অর্থ: যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তারা যেনো আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করে। কেননা উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার সমধিক হক্বদার। (সূরা তওবা:৬২)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
احبونى لحب الله
অর্থ: তোমরা আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত হাছিল করার জন্য আমাকে মুহব্বত করো।(তিরমিযী, মিশকাত)
উল্লেখিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রত্যেক মু’মিন মুসলমানের জন্য আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট ও মুহব্বত করা ফরযে আইন। আরো প্রমাণিত হয়েছে যে,আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করতে হলে ও সন্তুষ্ট করতে হলে প্রথমে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করতে ও মুহব্বত করতে হবে। অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত ও সন্তুষ্টি ব্যতীত আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত ও সন্তুষ্টি হাছিল করা সম্ভব হবে না।
উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কিরূপ মুহব্বত করতে হবে সে প্রসঙ্গে তিনি নিজেই ইরশাদ করেন-
لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين وفى رواية من ماله ونفسه.
অর্থ: তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তার মাল ও জান অপেক্ষা বেশি মুহব্বত না করবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
এ হাদীছ শরীফ-এর বাস্তব প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে। উনারা উনাদের সবকিছু থেকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করেছেন। উনার খিদমতে উনারা উনাদের সর্বস্ব কুরবানী করে দিয়েছেন, একদিকে মাল আরেকদিকে জীবন উৎসর্গ করতে উনারা কোনরূপ দ্বিধা করেননি।
তিরমিযী, আবূ দাউদ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করার জন্য নির্দেশ করলেন, সৌভাগ্যবশত: সে সময় আমার কাছে পর্যাপ্ত সম্পদ ছিলো। আমি (মনে মনে) বললাম, দানের প্রতিযোগিতায় যদি কখনো হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর জয়ী হতে পারি তাহলে আজকের দিনেই জয়ী হবো। তাই আমি আমার সমস্ত সম্পদের অর্ধেক নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে উপস্থিত হলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,আপনি আপনার পরিবার পরিজনের জন্য কি পরিমাণ রেখে এসেছেন? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ অর্থাৎ যে পরিমাণ নিয়ে এসেছি অনুরূপ পরিমাণ রেখে এসেছি। অতঃপর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সমুদয় সম্পদ নিয়ে উপস্থিত হলে নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, পরিবার-পরিজনের জন্য আপনি কি রেখে এসেছেন? জাওয়াবে তিনি বললেন, আমি উনাদের জন্য আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বতটুকু রেখে এসেছি। সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপভাবে প্রত্যেক ছাহাবাযে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের সর্বোচ্চ তাওফীক্ব অনুযায়ী জিহাদ কিংবা অন্যান্য নেক কাজে দান করেছেন।
মুসনাদে আহমদ, মিশকাত, মাছাবীহুস সুন্নাহ ইত্যাদি হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন তাবূক জিহাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বীয় জামার আস্তিন ভর্তি করে এক হাজার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলেন এবং দীনারগুলি উনার কোল মুবারকে ঢেলে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি দেখলাম, নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুদ্রাগুলি উলট-পালট করছেন এবং বলছেন, আজকের পর থেকে হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কোনো ক্ষতি করবে না- তিনি যে আমলই করেন না কেনো। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দানের বিষয়ে আরো বর্ণিত রয়েছে, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে একবার মদীনা শরীফ-এ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন বাইতুল মালেও কোন খাদ্য ছিলো না। ঠিক সেই মুহূর্তে হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটি বাণিজ্য কাফেলা এক হাজার উট বোঝাই করা খাদ্য নিয়ে সিরিয়া থেকে মদীনা শরীফ-এ উপস্থিত হলো। ব্যবসায়ী লোকজন উনার নিকট আসতে লাগলো খাদ্য কিনে নেয়ার জন্য। কেউ স্বাভাবিক দামে, কেউ দ্বিগুণ, তিনগুণ, চারগুণ দামেও খাদ্য কিনতে প্রস্তুত। তবুও তিনি উনাদের কারো নিকট খাদ্য বিক্রি করতে রাজি হলেন না। তিনি উনার সমস্ত খাদ্য-দ্রব্য আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টির জন্য বাইতুল মালে দান করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর খলীফার তরফ থেকে সমস্ত খাদ্য-দ্রব্য মদীনা শরীফ-এর অধিবাসীদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া হয়। এতে দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে যায়।
হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যেদিন এই দান করলেন সেই রাতে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বপ্নে দেখতে পেলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবুজ রং এর খুব দামী পোশাক পরিধান করতঃ বোরাকে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন। তা দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন, তুমি কি জানো না আজকে হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মদীনা শরীফবাসীকে যে একহাজার উট বোঝাই খাদ্য দান করেছেন যার কারণে মদীনা শরীফ-এর দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেছে; তাই উনার দানে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি আজকে বেহেশতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেছেন। আমি সেই মেহমানদারীতে শরীক হওয়ার জন্য যাচ্ছি। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উক্ত দানসমূহ ছিলো দ্বীন ইসলাম বা উম্মতের কল্যাণ সাধনে। এখন উম্মতের উদ্দেশ্যে ব্যয় করলে যদি আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এতো খুশি হয়ে থাকেন তাহলে আল্লাহ পাক উনার যিনি হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য, উনার মীলাদ বা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ব্যয় করলে উনারা কত বেশি খুশি হবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
যেমন এ প্রসঙ্গে বুখারী, মিশকাত, মাছাহাবীহুস সুন্নাহ ইত্যাদি হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
¬¬¬لاتسبوا اصحابى فلو ان احدكم انفق مثل احد ذهبا ما بلغ مد احدهم ولا نصيفه
অর্থ: “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তোমরা গাল-মন্দ, সমালোচনা বা দোষারোপ করো না। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করো, তবুও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমার খিদমতে এক মুদ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মুদ (৭ ছটাক) গম হাদিয়া করে যে ফযীলত অর্জন করেছেন তার সমপরিমাণ ফযীলত তোমরা অর্জন করতে পারবে না।”
প্রতিভাত হলো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের হাদিয়া বা ব্যয় করার ফযীলত যে কতো বেশি তা কেবল আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই সম্যক অবগত আছেন।
কাজেই, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য হাদিয়া করে যে বেমেছাল ফযীলত হাছিল করেছেন পরবর্তী উম্মত যদি সেই ফযীলতের অনুরূপ ফযীলত হাছিল করতে চায় তাহলে তাদের কর্তব্য হলো- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে সর্বোচ্চ তাওফীক্ব বা সাধ্য সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করা।
হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের খিলাফতকালে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং এ উপলক্ষে ব্যয় করার ফযীলতও বর্ণনা করেছেন
যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
من انفق درهما على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة .
অর্র্থ: “যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
من انفق درهما على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة بدر وحنين .
অর্র্থ: “যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম খরচ করলো, সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ)
“মুজাদ্দিদ আ’যম উনার তাজদীদ পেয়ে আশিকে রসূল পূর্ণ উদ্যমে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ ঈদে মীলাদুন নবী পালন করিছে ভবে”
হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও উনাদের যামানায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং এ উপলক্ষে ব্যয় করার ফযীলতও বর্ণনা করেছেন
যেমন বিশিষ্ট তাবিয়ী, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
وددت لو كان لى مثل جبل احد ذهبا فانفقته على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم .
অর্র্থ: ‘আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ব্যয় করতাম।’ সুবহানাল্লাহ!
মাযহাবের ইমামগণ উনারাও উনাদের যামানায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং এ উপলক্ষে ব্যয় করার ফযীলতও বর্ণনা করেছেন
শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
من جمع لمولد النبى صلى الله عليه وسلم اخوانا وهيا طعاما واخلى مكانا وعمل احسانا وصار سببا لقرائته بعثه الله يوم القيامة مع الصديقين والشهداء والصالحين ويكون فى جنات النعيم .
অর্র্থ: ‘যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে লোকজন একত্রিত করলো, খাদ্য তৈরি করলো, জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো, তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে মাহফিলের আয়োজন করা এবং সে উপলক্ষে ব্যয় করার বেমেছাল ফযীলতের কথা জেনে ছয়শ’ হিজরীতে আরবলের পরহেযগার ও দানশীল বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতেন এবং ঈদে বিলাদত বা মীলাদ শরীফ মাহফিলে আগত সকলকে রাষ্ট্রিয়ভাবে আপ্যায়ন করতেন, গরীব মিসকীনদেরকে খাদ্য খাওয়াতেন, দান-খয়রাত করতেন। সুবহানাল্লাহ!
যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ কিতাবের ১৩তম জিলদ ১৩৭ পৃষ্ঠায় লিখেন-
كان يصرف على المولد كل سنة على ثلاثة الف دينار.
অর্থ: বাদশা মুজাফফরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতি বছর মীলাদ শরীফ মাহফিল উপলক্ষে তিন লক্ষ দীনার(স্বর্ণমুদ্রা) ব্যয় করতেন। সুবহানাল্লাহ!
অনুসরণীয় ইমাম ও মুজতাহিদ ও আওয়িায়ে কিরাম প্রত্যেকেই উনাদের যামানায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং এ উপলক্ষে ব্যয় করার ফযীলতও বর্ণনা করেছেন
যেমন এ উপমহাদেশে যিনি হাদীছ শাস্ত্রের প্রচার-প্রসার করেছেন, যিনি ক্বাদিরিয়া তরীক্বার বিশিষ্ট বুযুর্গ, ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
من عظم ليلة مولد النبى صلى الله عليه وسلم بما امكنه من التعظيم والاكرام كان من الفائزين بدار السلام .
অর্র্থ: “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করবে, সে জান্নাতে বিরাট সফলতা লাভ করবে।”
অনুরূপভাবে পৃথিবীতে মুসলমানদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি কিতাব লিখেছেন, যিনি উনার যামানার মুজাদ্দিদ এবং সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
ما من بيت او مسجد او محلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم الا حفت الـملائكة ذلك البيت او الـمسجد او المحلة صلت الـملائكة على اهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان واما الـمطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكائيل واسرافيل وعزرائيل عليهم السلام فانهم يصلون على من كان سببا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فاذا مات هون الله عليه جواب منكر ونكير ويكون فى مقعد صدق عند مليك مقتدر .
অর্র্থ: “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় খুশি প্রকাশ করে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা হয়, সে স্থান অবশ্যই আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর উনারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক উনাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা, অর্থাৎ হযরত জিবরায়ীল, মীকায়ীল, ইসরাফীল ও আযরায়ীল আলাইহিমুস সালামগণ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। যখন উনারা ইনতিকাল করেন তখন আল্লাহ পাক তিনি উনাদের জন্য মুনকার-নাকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর উনাদের অবস্থান হয় আল্লাহ পাক উনার সন্নিধানে ছিদক্বের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ!
অতএব, বান্দা ও উম্মত যদি সত্যিই আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তরফ থেকে রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও সুপারিশ লাভ করতে চায়, সর্বোপরি উনাদের সন্তুষ্টি হাছিল করতে চায় তাহলে অবশ্যই তার অবস্থা ও তাওফীক্ব অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ওয়াজ শরীফ, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ-এর মাহফিলের আয়োজন করা কিংবা তাতে শরীক থাকা উচিত।
এক্ষেত্রে দেশের প্রধান থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত প্রত্যেককে যার যার অবস্থা অনুযায়ী খুশি প্রকাশ করে মীলাদ শরীফ মাহফিলের আয়োজন করা উচিত এবং এ উপলক্ষে ব্যয় বা খিদমত করা উচিত। বিশেষ করে এ উপলক্ষে দেশের প্রধান,প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা প্রতিষ্ঠানের মালিকের জন্য মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ পুরো মাসব্যাপী অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা উচিত।
উল্লেখ্য, যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদ আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশার্থে উনার দরবার শরীফ-এ সুদীর্ঘ দেড় মাসব্যাপী প্রতিযোগিতা, ওয়াজ শরীফ, মীলাদ শরীফ, সামা শরীফ, দু’আ বা মুনাজাত মাহফিলের আয়োজন করেন এবং এই রহমত, বরকত, মাগফিরাত, নাজাত ও সাকীনাপূর্ণ মাহফিলে শরীক ও উপস্থিত হওয়ার জন্য বিশ্বের সকলকে দাওয়াত করেন।
এজন্য পৃথিবীর সমস্ত দেশ থেকে পঠিত একমাত্র আন্তর্জাতিক পত্রিকা দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত,পোষ্টার, হ্যান্ডবিল, মাইকিং, ব্যানার, টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেটের মাধ্যমে দাওয়াত পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অত্যন্ত জওক, শওক ও ব্যাপক সমারোহে উদযাপিত ও পালিত হবে এ মহানতম ঈদ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষ দ্রষ্টব্য: অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর আলোকে মীলাদ শরীফ পাঠের পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন উদ্দেশ্য হলো, যাতে করে উম্মতের পক্ষে অল্প সময়ে শরীয়তসম্মত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, বিলাদত শরীফ সংক্রান্ত ঘটনাসমূহ বর্ণনা এবং উনার মুবারক শানে ছলাত ও সালাম পেশ করতে পারে।
মীলাদ শরীফ পাঠের উক্ত পদ্ধতিটি জানার জন্য গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ থেকে প্রকাশিত “মীলাদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীমার্থে ক্বিয়াম শরীফ সুন্নত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ” কিতাবখানা পাঠ করুন।