নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহই গুমরাহী; প্রত্যেক গুমরাহ ব্যক্তি জাহান্নামী।’ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাহাজ্জুদ নামায ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। চাই রমাদ্বান শরীফ-এ হোক অথবা গায়িরে রমাদ্বান শরীফ-এ হোক। এর উপরই ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাজেই যারা তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে আদায় করবে তারা বিদয়াতী ও গুমরাহদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদুর রসূল, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুনা, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, কোনো মুসলমান মনগড়া কোনো আমল করতে পারবে না। তার মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত, হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত তাকে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী আমল করার কোশেশ করে যেতে হবে। এর বাইরে এক কদমও ফেলা তার জন্য জায়িয হবে না। কারণ, আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের মূলভিত্তি বা দলীলই হলো এই চারটি।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, আজকাল কোনো কোনো স্থানে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়তে দেখা যায়। বিশেষ করে রমাদ্বান শরীফ-এ বেশি দেখা যায়। অথচ আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া অনুযায়ী তাহাজ্জুদ নামায ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। চাই রমাদ্বান শরীফ-এ হোক অথবা গাইরে রমাদ্বান শরীফ-এ হোক। এর উপর মুসলমানদের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, ‘রমাদ্বান শরীফ-এ যে নফল নামায জামায়াতে পড়ার আদেশ রয়েছে তা হলো- তারাবীহর নামায।’ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি রমাদ্বান শরীফ-এর রোযাকে ফরয করেছেন আর ক্বিয়ামুল লাইলকে অর্থাৎ তারাবীহর নামাযকে নফল করেছেন।’ আর অন্য হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, তিনি তারাবীহর নামাযকে সুন্নত করেছেন। অর্থাৎ সুন্নতে মুয়াক্কাদা করেছেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি ‘ফতওয়ায়ে আলমগীরী, খোলাসাতুল ফতওয়া, বাহরুর রায়িক, মিনহাতুল খালিক্ব, শরহে মুনিয়া’ কিতাবের বরাত দিয়ে বলেন, “নিশ্চয়ই ঘোষণা দিয়ে নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়া মাকরূহ তাহরীমী।” ছদরুশ শহীদ তার ‘কিতাবুল আসল’-এ উল্লেখ করেন যে, যদি আযান ও ইক্বামত ব্যতীত মসজিদের কোনো এক কোণায় নফল নামায জামায়াতে আদায় করে, তবে মাকরূহ হবে না। এর ব্যাখ্যায় শামসুল আইম্মাহ (হালওয়ানী) রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যদি ইমাম ব্যতীত তিনজন মুক্তাদী হয়, তবে মাশায়িখদের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। সহীহ মত হলো- ইমাম ব্যতীত চারজন মুক্তাদী হলে অবশ্যই মাকরূহ তাহরীমী হবে।’
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি ‘হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ’ কিতাবের বরাত দিয়ে বলেন, “তারাবীহ ব্যতীত সর্বপ্রকার নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত বিতর নামায জামায়াতে না পড়াই উত্তম।” শামসুল আইম্মাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ। সুতরাং যদি একজন অথবা দু’জন ইমামের সাথে ইক্তিদা করে, তবে মাকরূহ হবে না। কিন্তু তিনজন হলে মতবিরোধ রয়েছে তবে যখন চারজন ইক্তিদা করবে, তখন সকলের নিকটে মাকরূহ তাহরীমী।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি ‘মাবছূত লিস সারাখসী, মাছাবাতা’ কিতাবের বরাত দিয়ে বলেন, হযরত শায়েখ আবুল কাসেম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি মিসরের উলামায়ে মুতাআখখিরীনদের অন্তর্ভুক্ত তিনি বলেন, নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা এটা যদি মুস্তাহাব হতো এবং পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের ন্যায় ফযীলতপূর্ণ হতো, তবে যারা রাত্রে তাহাজ্জুদ নামায পড়েন। তারা ফযীলত অর্জনের লক্ষ্যে জামায়াতে তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন। সুতরাং যেহেতু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে এরূপ আমল (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া) পরিলক্ষিত হয় না, সেহেতু বোঝা গেল যে, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ার মধ্যে কোনই ফযীলত নেই (বরং মাকরূহ তাহরীমী)।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি ‘মাকতুবাতে ইমাম রাব্বানী কিতাবের বরাত দিয়ে বলেন, আফসুস শত আফসুস এজন্য যে, যে সকল বিদয়াতের চিহ্ন পর্যন্ত অন্যান্য সিলসিলায় দেখা যায় না, তা এই নকশবন্দিয়া তরীক্বার কারো কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, এলাকার আনাচে-কানাচে থেকে লোক একত্রিত হয়ে বড় জামায়াতের সাথে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে থাকে, যেটা মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে ফতওয়ায়ে সিরাজিয়া, গিয়াছিয়া, শাফিয়াহ, নেহায়া, কিতাবুজ জিয়া, শরহে শামায়েল ইত্যাদি কিতাবেও রয়েছে। এছাড়া ফতওয়ায়ে রশীদিয়া, ফতওয়ায়ে রহীমিয়া কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, ‘ক্বিয়ামুল লাইল’ অর্থ তারাবীহর নামায। যারা ক্বিয়ামুল লাইলকে তাহাজ্জুদ নামায বলে থাকে তাদের কথা শুদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে হিদায়া, ফতহুল ক্বাদির, মাবছূত, বাদায়েসহ বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবসমূহে উল্লেখ রয়েছে, ‘হযরত মুহাদ্দিসীনে কিরামগণ উনারা ‘ক্বিয়ামুল লাইল’ দ্বারা তারাবীহকে বুঝিয়েছেন।’
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মূলকথা হলো- আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো, রমাদ্বান শরীফ-এ তারাবীহর নামায জামায়াতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে ক্বিফায়া। বিতর নামায রমাদ্বান শরীফ-এ জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব। রমাদ্বান শরীফ-এর বাইরে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তানযীহী এবং ছলাতুল কুসূফ (সূর্যগ্রহণ), ছলাতুত ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) রমাদ্বান শরীফ-এ হোক অথবা গাইরে রমাদ্বান শরীফ-এ হোক জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে যায়িদা। এটা ব্যতীত সকল নফল নামায যেমন- তাহাজ্জুদ, চাশত, আওয়াবীন, শবে ক্বদর ও শবে বরাত ইত্যাদি নামায ঘোষণা দিয়ে ইমাম ব্যতীত চারজন মুছল্লীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবঈ তাবিয়ীন, ইমাম মুজতাহিদীনগণ উনাদের কেউ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়েছেন বলে কোনো প্রমাণ কেউ পেশ করতে পারবে না। এ সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১৩তম সংখ্যায় অসংখ্য দলীল পেশ করা হয়েছে।