‘না’রায়ে’ অর্থ
ঘোষণা দেয়া,
উচ্চ কণ্ঠে
বলা, উচ্চ
আওয়াজে বলা,
বুলন্দ আওয়াজে
বলা, ধ্বনি
দেয়া ইত্যাদি। আর
‘রিসালাত’ অর্থ
পয়গাম, বাণী,
রসূল হওয়ার
শুভ সংবাদ,
রসূল হওয়ার
মর্যাদাপ্রাপ্ত ইত্যাদি।
অর্থাৎ কুল-কায়িনাতের
নবী ও
রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন,
নূরে মুজাসসাস,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম
উনার উম্মত
হওয়ার কারণে
যারপর নেই
উম্মত খুশি,
আনন্দিত ও
সন্তুষ্ট।
তাদের অতীব
খুশি, আনন্দ
ও সন্তুষ্টি
প্রকাশার্থে সংক্ষেপে ‘ইয়া রসূলাল্লাহ’ বলে
তারা উচ্চকণ্ঠে
আওয়াজ দিচ্ছে,
ধ্বনি দিচ্ছে
এবং এ
ব্যাপারে সকলকে
আহ্বানও করছে।
‘না’রায়ে রিসালাত-ইয়া রসূলাল্লাহ’ বলা আদৌ কুফরী নয়। বরং উক্ত বক্তব্য বলা বা উচ্চারণ করাটাকে যে কুফরী বলবে সেই কুফরী করে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হবে।
কেননা ‘না’রায়ে রিসালাত-ইয়া রসূলাল্লাহ’ বলে ধ্বনি দেয়ার উদ্দেশ্য হলো, কুল-কায়িনাতের যিনি নবী ও রসূল, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করার কারণে খুশি প্রকাশ করা, আনন্দিত হওয়া। ‘না’রায়ে তাকবীর- আল্লাহু আকবার’ বলে যেমনিভাবে খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার বড়ত্ব, মহত্ব বর্ণনা করা হয়, রুবুবিয়াত ও তাওহীদের স্বীকারোক্তি প্রকাশ করা হয় তদ্রুপ ‘না’রায়ে রিসালাত- ইয়া রসূলাল্লাহ’ বলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা-মর্তবা, শান-শুয়ূনাত, ছানা-ছিফত বর্ণনা করা হয় এবং উনার নুবুওওয়াত ও রিসালাতের স্বীকারোক্তি প্রকাশ করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম
উনারা নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে
‘ইয়া রসূলাল্লাহ’
বলে সম্বোধন
করেছেন; তাহলে
সেটা কুফরী
হবে কেন?
এছাড়া এখনও
মদীনা শরীফ-এ যারা
রওযা শরীফ
গিয়ে সালাম
দেন তারাও
‘ইয়া রসূলাল্লাহ’,
‘ইয়া হাবীবাল্লাহ’
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেই
সালাম দেন। এখন
কথা হলো,
মদীনা শরীফ
গিয়ে সেখানে
যদি ‘ইয়া
রসূলাল্লাহ’
বলে সম্বোধন
জায়িয হয়
তাহলে পৃথিবীর
অন্যান্য স্থান
থেকে জায়িয
হবে না
কেন?
কুরআন শরীফ কিংবা
হাদীছ শরীফ-এর কোথাও
নাজায়িয কিংবা
কুফরী বলা
হয়েছে কি?
যদি না
বলা হয়ে
থাকে তাহলে
যে ব্যক্তি
কুফরী বা
নাজায়িয বলবে
তার উপরই
কুফরীর ফতওয়া
বর্তাবে।
আশাদ্দুদ দরজার জাহিল,
ধর্মব্যবসায়ী, উলামায়ে ছূরা বুঝাতে চায়
যে, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি
তো হায়াত
মুবারক-এ
নেই এবং
কাছে হাযির
বা উপস্থিত
নেই তাহলে
উনাকে ইয়া
রসূলাল্লাহ বলে সম্বোধন কি করে
শুদ্ধ হতে
পারে? নাঊযুবিল্লাহ!
আর তাদের
মতে, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
হাযির ও
নাযির জানা
শিরক।
নাঊযুবিল্লাহ! তারা কারণস্বরূপ উল্লেখ করে,
একমাত্র আল্লাহ
পাক তিনিই
সর্বত্র হাযির
ও নাযির। সুতরাং
আর কাউকে
হাযির ও
নাযির জানাটা
শিরকের অন্তর্ভুক্ত। নাঊযুবিল্লাহ!
এসব জাহিলদের উদ্দেশ্যে
বলতে হয়,
আল্লাহ পাক
তিনি ব্যতীত
আর অন্য
কাউকে হাযির
ও নাযির
জানা ও
মানা যে
শিরক; এটা
তোমরা কোথায়
পেলে? এর
কোন দলীল
তোমাদের নিকট
আছে কি?
আসলে এর
কোন দলীল
নেই।
সঙ্গত কারণে এসব
জাহিলদের বলতে
হয়, তোমরা
যে তোমাদের
নামের সাথে
মাওলানা উপাধি
ব্যবহার করো;
এটা কী
শিরক
হয় না? কেননা ‘মাওলানা’ এ
উপাধি তো
স্বয়ং খালিক্ব,
মালিক, রব
আল্লাহ পাক
সুবহানাহূ ও তাআলা উনার।
তিনি নিজের
শানে তা
ব্যবহার করেছেন। যা
সূরা বাক্বারার
শেষ আয়াত
শরীফ-এ
ইরশাদ হয়েছে। তাহলে
সেই মাওলানা
উপাধি তোমরা
কি করে
নিজের নামে
ব্যবহার করতে
পারো? কই,
নিজেদের ব্যাপারে
তো শিরকের
ফতওয়া আদৌ
উচ্চারণ করলে
না? অথচ
যিনি ঈমান,
হিদায়েত, নাজাত
ও শাফায়াত
দানকারী উনার
শান মুবারক-এর বিরুদ্ধে
তোমাদের ফতওয়া। নাঊযুবিল্লাহ!
তোমরা কী
মুসলমান? না
মুনাফিক ও
মুরতাদ?
মুর্খের দল! আল্লাহ
পাক তিনি
যে হাযির
ও নাযির
সে মাসয়ালা
কি তোমরা
জানো? আল্লাহ
পাক তিনি
তো জিসিম
অর্থাৎ শরীর
বা দেহ
মুবারক হতে
এবং ছূরত
বা আকৃতি
মুবারক হতে
পবিত্র।
তাহলে তিনি
কিভাবে হাযির
ও নাযির?
মূলত আল্লাহ
পাক তিনি
জিসিম ও
ছূরত এ
দু’টির
কোন একটি
হিসেবে হাযির
ও নাযির
নন।
বরং তিনি
ছিফত-অর্থাৎ
ইলম ও
কুদরতের দ্বারা
এবং ছিফত-
মিছালী ছূরত
মুবারক হিসেবে
কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও
নাযির।
আর নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম
তিনি ছিফত-ইলম ও
মু’জিযা
দ্বারা এবং
ছিফত- নূর
ও রহমত
হিসেবে কায়িনাতের
সমস্ত স্থানে
হাযির ও
নাযির।
আর উনার
যেহেতু জিসিম
ও ছূরত
মুবারক রয়েছে
সেহেতু তিনি
যে জিসিম
মুবারক-এ
রওযা শরীফ-এ অবস্থান
করছেন উনার
ইখতিয়ার ও
ক্ষমতা থাকা
সত্ত্বেও তিনি
সেই জিসিম
মুবারক নিয়ে
কোথাও হাযির
হবেন না। আহলে
সুন্নত ওয়াল
জামাআতের মুজতাহিদ
ইমামগণ এ
বিষয়ে একমত
যে, তিনি
ওই জিসিম
মুবারক নিয়ে
রওযা শরীফ
থেকে উঠলে
ক্বিয়ামত হয়ে
যাবে।
তাই তিনি
উক্ত জিসিম
মুবারকের অনুরূপ
জিসিম ও
ছূরত মুবারক
ধারণ করে
এবং মিছালী
ছূরত মুবারক-এ কায়িনাতের
সমস্ত স্থানে
হাযির ও
নাযির থাকেন,
যে কারণে
উনার আশিকগণ
উনাকে স্বপ্নে,
মুরাক্বাবা-মুশাহাদার হালতে এমনকি জাগ্রত
অবস্থার মধ্যেও
দেখে থাকেন
এবং কথোপকথনও
করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
বুখারী শরীফ ও
মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত
রয়েছে, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ করেন-
انما انا قاسم والله
يعطى
অর্থ: “আল্লাহ পাক
তিনি হাদিয়া
করেন আর
নিশ্চয়ই আমি
হলাম (উক্ত
হাদিয়া) বণ্টনকারী।”
অর্থাৎ আল্লাহ পাক
উনার সর্বপ্রকার
নিয়ামত উনার
হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে
হাদিয়া করেছেন
আর হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
কুল-মাখলূক্বাতের
যাকে যতটুকু
ইচ্ছা তাকে
ততটুকু বণ্টন
করে দিয়ে
থাকেন।
সুবহানাল্লাহ!
এখন যিনি কুল-মাখলূক্বাতের জন্য
নিয়ামতের বণ্টনকারী
তিনি যদি
কুল-মাখলূক্বাতের
কাছে হাযির
বা উপস্থিত
না থাকেন
এবং তাদেরকে
নাযির বা
দেখে না
থাকেন তাহলে
তিনি তাদের
মাঝে কিভাবে
নিয়ামত বণ্টন
করবেন।
কাজেই, কায়িনাতের
সমস্ত সৃষ্টির
জন্য তিনি
যেহেতু নিয়ামতের
বণ্টনকারী সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখে
না তিনি
সবখানেই হাযির
ও নাযির।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির বা
উপস্থিত ও
সবকিছু নাযির
বা প্রত্যক্ষকারী। এ
প্রসঙ্গে হযরত
ইমাম তবারানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত নঈম
ইবনে উমর
রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে একখানা হাদীছ
শরীফ বর্ণিত
রয়েছে, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ করেন-
ان الله قد رفع
لى الدنيا فانا انظر
اليها والى ما هو
كائن فيها الى يوم
القيامة كانما انظر الى
كفى هذه
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ
পাক তিনি
এই পৃথিবীকে
আমার চোখের
সামনে এরূপভাবে
রেখেছেন যে,
আমি এ
সমগ্র পৃথিবীকে
এবং ক্বিয়ামত
পর্যন্ত তার
মধ্যে যা
কিছু সৃজিত
বা সংঘটিত
হবে তদসমূহকে
ওইরূপভাবে দেখি যেরূপ আমার হাত
মুবারকের তালু
মুবারককে দেখে
থাকি।
সুবহানাল্লাহ! (তবারানী, মিশকাত)
আর নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম
উনার তা’যীম বা
সম্মান কাছে-দূরে, উপস্থিত-অনুপস্থিত, বিছাল
শরীফ-এর
আগে-পরে
সর্বাবস্থায় একইরকম করতে হবে।
যেমন এ
প্রসঙ্গে প্রখ্যাত
মুহাদ্দিছ হযরত ক্বাযী আয়ায রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার
সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘শিফা’
গ্রন্থে বর্ণনা
করেন-
ان حرمة النبى صلى
الله عليه وسلم بعد
موته وتوقبره وتعظيمه لازم
كما حال حياته
অর্থ: “নিশ্চয়ই হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
বিছাল শরীফ-এর পর
উনার ইজ্জত,
সম্মান, প্রশংসা
করা তদ্রুপ
অপরিহার্য যেরূপ অপরিহার্য ছিল উনার
যমীনে অবস্থানকালে।
আশাদ্দুদ দরজার জাহিল
উলামায়ে ছূরা
দলীলবিহীনভাবে আরো বলে থাকে, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার
নিকট কোনকিছু
চাওয়া নাকি
শিরক।
নাঊযুবিল্লাহ! এর জাওয়াবে উক্ত জাহিলদের
বলতে হয়,
আল্লাহ পাক
তিনি যাঁকে
সমস্ত নিয়ামত
হাদিয়া করেছেন
এবং যিনি
হাদিয়াপ্রাপ্ত সমুদয় নিয়ামতের বণ্টনকারী; উনার
কাছে কি
উম্মত নিয়ামত
চাইতে পারে
না? আর
উম্মতের সেই
চাওয়াটা শিরক
হবে কেন?
উম্মত তো
আল্লাহ পাক
মনে করে
উনার কাছে
চাচ্ছে না
বরং উনাকে
নবী, রসূল
ও হাবীবুল্লাহ
মনে করেই
চাচ্ছে।
ধর্মব্যবসায়ী, অর্থ ও
পদলোভী উলামায়ে
ছূগং! তোমরা
যখন এমপি-মন্ত্রী, আমীর-উমারা, চেয়ারম্যান-মেম্বার, সম্পদশালীর
নিকট গিয়ে
কিছু খুদ-কুঁড়ার জন্য
আবদার করো;
সেটা কি
শিরক হয়
না? সেটা
যদি শিরক
না হয়
তাহলে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার
নিকট চাইলে
শিরক হবে
কেন?
উলামায়ে ছূগং আরো
বলে, ‘ইয়া
রসূলাল্লাহ’
বলা নাকি
নেদায়ে গইরুল্লাহ। নাঊযুবিল্লাহ!
জাহিল ও
জাহান্নামীদের দল! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
স্মরণ, অনুসরণ,
উনার প্রতি
ঈমান, হুসনে
যন (সুধারণা),
মুহব্বত ইত্যাদি
ব্যতীত কি
আল্লাহ পাক
উনার স্বরণ,
অনুসরণ, উনার
প্রতি ঈমান,
হুসনে যন,
মুহব্বত ও
সন্তুষ্টি আছে? যদি না থাকে
তাহলে উনার
সম্বোধন গইরুল্লাহ
হবে কেন?
সব ব্যাপারে
লুগাতি বা
আভিধানিক অর্থ
গ্রহণযোগ্য নয়। বরং ক্ষেত্রবিশেষে
তা কুফরীর
অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, সাবধান! নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার
ব্যাপারে কথা
বলতে হলে
মুখ সামলিয়ে
কথা বলতে
হবে।
অন্যথায় জাহান্নামের
কীট হওয়া
ব্যতীত গত্যন্তর
থাকবে না।