নোটিশ

বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১১

ছহিবুল কাওছার, ছহিবুল মাহশার, ছহিবু লিওয়ায়িল হামদ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আবাসস্থল মদীনা শরীফ-এর প্রতি আদব ও ফযীলত


আল্লাহ পাক যে সকল বস্তুকে সম্মানীত করেছেন, তাকে যে ব্যক্তি সম্মান করলো, এটা তার জন্য কল্যাণ বা ভালাইয়ের কারণ।” (সূরা হজ্ব-৩০)

পবিত্র মদীনা শরীফ-এর ফাযায়িল-ফযীলত বর্ণনা করা প্রকৃতপক্ষে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত আলোচনার একটা অংশ।
এ জন্য আল্লাহ পাক নিজেই সূরা কাওছার-এ বলেন, “আমি আপনাকে কাওছার হাদিয়া করেছি।” আর “কাওছার”-এর লক্ষ কোটি অর্থ রয়েছে। একটা অর্থ হচ্ছে, ‘খাইরে কাছীর’ তথা সমস্ত কল্যাণ দেয়া হয়েছে। আরেকটা অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবতের কারণে সব কিছুই উত্তম থেকে উত্তমতর হয়ে গেছে।

এ জন্য ইজমা হয়েছে তথা ইমাম মুজতাহিদগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, পবিত্র রওযা শরীফ-এর মাটি মুবারক যা আল্লাহ পাক উনার হাবীব, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শরীর মুবারক তথা জিসিম মুবারকে লেগে আছে তার মর্যাদা-মর্তবা আল্লাহ পাক উনার আরশে মুয়াল্লা হতে লক্ষ কোটি গুণ বেশি। (সুবহানাল্লাহ)

এজন্যই আল্লাহ পাক- উনার হাবীব, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফ-এর জন্য দোয়া করেছেন, “হে বারে ইলাহী! আমার অন্তরে মদীনা শরীফ-এর মুহব্বত পয়দা করে দিন। মক্কা শরীফ-এর সাথে যতটুকু মুহব্বত রয়েছে বরং তার চাইতে বেশি মুহব্বত পয়দা করে দিন।” (সুবহানাল্লাহ)

আল্লাহ পাক- উনার হাবীব, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফ-এর জন্য আরো দোয়া করেছেন, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছেন, “আয় আল্লাহ পাক! আপনি মক্কা শরীফ-এ যে বরকত দান করেছেন মদীনা শরীফ-এ এর দ্বিগুণ বরকত দান করুন।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত ২৬৩)

মদীনা শরীফ আল্লাহ পাক উনার শেয়ার তথা নির্দশনসমূহের অন্যতম নিদর্শন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন সমূহকে অবমাননা করোনা।”(সূরা মায়িদা-)

এ জন্যই হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মদীনা শরীফ হারাম (সম্মানীত) আইর থেকে সাওর পর্যন্ত। এর মধ্যে যে ব্যক্তি শরীয়ত বিরোধী কাজ করবে এবং শরীয়ত বিরোধী কাজকে প্রশ্রয় দিবে, তার ওপর আল্লাহ পাক, ফেরেশ্তা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আর তার কোন নফল ও ফরয ইবাদত কবুল হবে না।”(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম মক্কা শরীফকে সম্মানীত করে তা হারাম করেছেন, “আর আমি মদীনা শরীফকে, এর দু’ প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থলকে সম্মানীত করলাম যথাযোগ্য সম্মানে। এতে রক্তপাত করা যাবে না, যুদ্ধের জন্য অস্ত্র গ্রহণ করা যাবেনা এবং আলাফ ব্যতীত এখানে কোন গাছের পাতা ছিঁড়া যাবে না।” (মুসলিম, মিশকাত-২৬১২)

উল্লেখ্য, মদীনা শরীফকে সম্মান করা জুযয়ে ঈমান তথা ঈমানের অংশ। এজন্য মদীনা শরীফ-এর সংশ্লিষ্ট সমস্ত কিছুকেই অত্যন্ত মুহব্বত করতে হবে। অবমাননা করা যাবে না। অন্যথায় কঠিন গুণাহগার হতে হবে। সেটাই মালেকী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি ফতওয়া দিয়েছেন, “যে ব্যক্তি মদীনা শরীফ-এর মাটি নাপাক বলবে তাকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে এবং খালিছ তওবা-ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত তাকে বন্দি করে রাখতে হবে।”

মূলতঃ মদীনা শরীফ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ই আদবের অন্তর্ভুক্ত। আদব সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে, আদব স্বর্ণ-রৌপ্য হতে মহামূল্যবান। এ সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, “বেয়াদব আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত।”

কাজেই মদীনা শরীফ সম্পর্কে এমন কোন কথা বলা যাবে না যা আদবের খিলাফ হবে। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, আল্লামা সাঈদ হুসাইন আহমদ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এক বুযূর্গ ব্যক্তি মদীনা শরীফ-এ খাদ্য খাচ্ছিলেন। খাদ্যের মধ্যে ছিল দই। যা ছিল কিছুটা টক। সে দরবেশ ব্যক্তি এক পর্যায়ে বলে ফেলল যে, ‘মদীনা শরীফ-এর দই টক।' সেই রাতে দরবেশ সাহেব স্বপ্নে দেখলেন ‘তার ঘরে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত রাগান্বিত অবস্থায় তাশরীফ আনলেন এবং বললেন, “তুমি আমার মদীনা শরীফ-এর দইকে টক বলেছো, তুমি এখনই মদীনা শরীফ থেকে বের হয়ে যাও।’

মদীনা শরীফ সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ের সাথে এমন কোন আচরণ করা যাবে না যা আদবের খিলাফ। কারণ মদীনা শরীফ-এর সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক বিষয়ই আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং এর সম্মান-মর্যাদা ও আদব অনুরূপই।

স্মরণীয়, মদীনা শরীফ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহকে তা’যীম-তাকরীম, সম্মান-ইজ্জত, মর্যাদা-মর্তবা, আদব-শিষ্টাচার ইত্যাদি যথাযথ আদায় করতে হলে প্রয়োজন যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ তথা হক্কানী আওলিয়ায়ে কিরামগণ- উনাদের ছোহবত।

আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বর্তমান যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, ইমামে আ’যম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, আওলাদে রসূল ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাক্বীক্বী ছোহবতের মাধ্যমে মদীনা শরীফসহ সকল বিষয়ের প্রতি হুসনে যন (বিশুদ্ধ আক্বীদা)ও যথাযথ তা’যীম-তাকরীম প্রদর্শন করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)