يايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون .
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে; যেরূপ ফরয করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর। এর মাধ্যমে অবশ্যই তোমরা তাক্বওয়া হাছিল করতে পারবে।” (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ১৮৩)
স্মরণীয়, ‘তাক্বওয়া’ হচ্ছে সমস্ত আমলের মূল। তাই আল্লাহ পাক তিনি তাক্বওয়া হাছিল করার জন্য বান্দাদের আদেশ করেছেন-
تزودوا فان خير الزاد التقوى
অর্থ: “তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া। (সূরা বাক্বারা শরীফ : আয়াত শরীফ ১৯৭)
‘তাক্বওয়া’ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহ ভীতি। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে উনার নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ হতে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার নাম তাক্বওয়া। আর রমাদ্বান শরীফ মাসের রোযার দ্বারা সেই তাক্বওয়া হাছিল হয়ে থাকে। এ মর্মে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আদম সন্তানের প্রত্যেক নেক আমল দশ গুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়ে থাকে। আল্লাহ পাক বলেন, রোযা ব্যতীত। কেননা, রোযা একমাত্র আমারই জন্য রাখা হয় এবং তার প্রতিফল আমি নিজেই (যত ইচ্ছা) দান করব। সে (বান্দা) আমারই জন্য আপন প্রবৃত্তি ও খাদ্য-পানীয় হতে বিরত থাকে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ নামায, হজ্জ, যাকাত, ফিতরা, কুরবানী ইত্যাদি অনেকে লোক দেখানোর জন্য করতে পারে। কিন্তু রোযা কেউ লোক দেখানোর জন্য করতে পারেনা। কেননা গোপনে পানাহারের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একমাত্র আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে সে পানাহার থেকে বিরত থাকে।
রমাদ্বান শরীফ-এর ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। হাদীছ শরীফ-এ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে রমাদ্বান শরীফ-এর রোযা রাখবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে রমাদ্বান শরীফ-এর রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে আর যে ব্যক্তি ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে ক্বদর রাত্রি ইবাদতে কাটাবে, তারও পূর্বকৃত গুণাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
হাদীছে শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি রমাদ্বান শরীফ-এ শুরু হতে শেষ পর্যন্ত রোযা রাখবে, সে ওই দিনের মত নিষ্পাপ হবে যেদিন তার মা তাকে (নিষ্পাপরূপে) জন্মদান করেছেন।” (মুসলিম শরীফ)
অপর এক হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “রমাদ্বান শরীফ-এর প্রত্যেক রাত্রির শেষভাগে প্রত্যেক রোযাদার উম্মতে হাবীবীকে ক্ষমা করা হবে।” (আহমদ)
অপর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “রোযাদারের ঘুম ইবাদতের শামিল, রোযাদারের নিশ্চুপ থাকা তাসবীহ পাঠের মধ্যে পরিগণিত, রোযাদারের দুআ নির্ঘাত কবুলযোগ্য এবং রোযাদারের আমলের ছাওয়াব দ্বিগুণ হতে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়।” (কানযুল উম্মাল)
অতএব, যে ব্যক্তি এ মাসের হক্ব আদায় করবে সে আল্লাহ পাক উনার রহমত, মাগফিরাত ও নাযাত হাছিল করবে। আর যে ব্যক্তি হক্ব আদায় করবে না সে কোনটিই হাছিল করতে পারবে না। উপরন্তু তার জন্য কঠিন পরিণতি রয়েছে। যে সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “হালাকি বা ধ্বংস ওই ব্যক্তির জন্য যে রমাদ্বান শরীফ-এর মাস পেল অথচ সে তার গুনাহখতা ক্ষমা করাতে পারলোনা।” (আহমদ)
আয় আল্লাহ পাক! আমাদের সকলকে মাহে রমাদ্বান শরীফ-এর যথাযথ হক্ব আদায় করতঃ তার রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত, নাজাতের পরিপূর্ণ হিস্যাহ দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন!
তথ্যসূত্রঃ আহ্কামু শাহরি রমাদ্বান