নোটিশ

রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১১

রোযার কতিপয় মাসয়ালা-মাসায়িল


রোযা ফরয হওয়ার শর্তাবলী:
রোযা ফরয হওয়ার জন্য নিম্নবর্ণিত শর্তগুলো থাকা আবশ্যক-
১.         মুসলমান হওয়া।
২.         বালিগ হওয়া।
৩.         জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া।
৪.         সুস্থ হওয়া।
৫.         মুক্বীম হওয়া। অর্থাৎ মুসাফির না হওয়া, কেননা মুসাফিরের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকেনা। তবে মুক্বীম হওয়ার পর অবশ্যই ক্বাযা আদায় করতে হবে।




যার উপর রোযা আদায় করা ফরয নয়:
১.         মুসাফির এর জন্য রোযা আদায় করা ফরয নয়। তবে আদায় করাই উত্তম। মুক্বীম হওয়ার পর অবশ্যই ক্বাযা আদায় করতে হবে।
২.         অসুস্থ ব্যাক্তির উপর রোযা আদায় করা ফরয নয়। তবে সুস্থ হলে ক্বাযা আদায় করতে হবে।
৩.         মহিলাদের মাসিক স্বভাবিক মাজুরতা, সন্তান হওয়ার কারণে মাজুরতার সময় তাদের উপর রোযা ফরয নয় । তবে উভয় মাজুরতা থেকে পবিত্র হলে ক্বাযা আদায় করতে হবে।



বিঃ দ্রঃ বালিগ না হলেও ছোট ছেলে-মেয়ে যারা রোযা রাখতে পারবে তাদেরকে রোযা রাখিয়ে অভ্যাস করানো পিতা-মাতার দায়িত্ব-কর্তব্য।


যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না:
নিম্নোক্ত কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না-
১.         ভুলক্রমে কোন কিছু পানাহার করলে। অতঃপর শেষ সময় পর্যন্ত পানাহার না করলে।
২.         ভুলক্রমে নির্জনবাস করলে।
৩.         রোযার মধ্যে দিনে ঘুমালে এবং ঘুমের মধ্যে গোসল ফরয হলে।
৪.         আহলিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করার কারণে মনি নির্গত হলে।
৫.         তেল মালিশ করলে।
৬.         শিঙ্গা লাগালে।
৭.         চোখে সুরমা বা ওষুধ দিলে। উল্লেখ্য, ওষুধের স্বাদ গলায় অনুভূত হলে বা সুরমার রঙ থুথুর সাথে দেখা গেলেও রোযা ভঙ্গ হবে না।
৮.         আহলিয়াকে বুছা দিলে।
৯.         আপনা আপনি বমি করলে।
১০.       রোযাদারের গলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়া গেলে।
১১.        মুখে থুথু এলে বারবার না ফেলে গিলে ফেললে।
১২.       রোযা অবস্থায় নখ ও চুল কাটলে।
১৩.       রোযাদার ব্যক্তি স্বপ্নে কিছু খেলে বা পান করলে।
১৪.       রাস্তায় চলাচলের সময় গাড়ির ধোঁয়া, রান্না করার সময় রান্নার ধোঁয়া নাকে প্রবেশ করলে মাজূর বা অক্ষমতার কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না।
১৫.       রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি ওযূও ভঙ্গ হবে না।



যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় এবং শুধু ক্বাযা ওয়াজিব হয়:
নিম্নলিখিত কারণসমূহে রোযা ভঙ্গ হয় এবং তার জন্য শুধু ক্বাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। সেগুলো হচ্ছে:
১.         ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে।
২.         আহলিয়াকে বুছা বা স্পর্শ করার কারণে মনি নির্গত হলে।
৩.         কোন অখাদ্য বস্তু তথা পাথর, লোহার টুকরো, ফলের আঁটি ইত্যাদি গিলে ফেললে।
৪.         স্বাভাবিক স্থান ব্যতীত অন্যস্থানে মেলামেশায় মনি নির্গত হলে।
৫.         জোরপূর্বক রোযাদারকে কিছু খাওয়ানো হলে।
৬.         ভুলক্রমে কিছু খেতে আরম্ভ করে রোযা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে পুনরায় আহার করলে।
৭.         কুলি করার সময় পেটে পানি চলে গেলে।
৮.         প্রস্রাব -পায়খানার রাস্তায় ওষুধ বা অন্য কিছু প্রবেশ করালে।
৯.         রাত মনে করে ছুবহি ছাদিক্বের পর পানাহার করলে।
১০.       সন্ধ্যা মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বেই ইফতার করলে।
১১.        মুখে বমি এনে পুনরায় তা পেটে প্রবেশ করালে।
১২.       দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্য কণা বের করে খেয়ে ফেললে।
১৩.       শরীরের কোন ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগানোর ফলে তা ভেতরে প্রবেশ করলে।
১৪.       রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন, ইনসুলিন ইত্যাদি ব্যবহার করলে।
১৫.       নাকে বা কানে তেল বা তরল ওষুধ প্রবেশ করালে।
১৬.       আগরবাতির ধোঁয়া নাকে প্রবেশ করলে।
১৭.       রোযা রেখে পেস্ট, কয়লা, পাউডার, ছাই ইত্যাদি যে কোন প্রকার মাজন দ্বারা দাঁত মাজা মাকরূহ। এগুলোর সামান্য অংশও যদি গলায় প্রবেশ করে তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এছাড়া সর্বাবস্থায় গুল ব্যবহার করা হারাম। কারণ গুল মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত।
১৮.       রাত্রি বাকি আছে মনে করে ছুবহি ছাদিক্বের পর পানাহার করলে বা নির্জনবাস করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।



যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়:
নিম্নলিখিত কাজসমূহ দ্বারা রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব হয়। যথা:
১.         ইচ্ছাকৃত নির্জনবাস করলে।
২.         স্বেচ্ছায় পানাহার করলে।
৩.         স্বেচ্ছায় ওষুধ পান করলে।
৪.         শিঙ্গা লাগানোর পর রোযা নষ্ট হয়েছে মনে করে পানাহার করলে।
৫.         ধূমপান করলে।



কাফফারা আদায় করার নিয়ম:
কাফফারা হচ্ছে দু’মাস ধারাবাহিক রোযা রাখা অথবা ষাটজন মিসকীনকে দু’বেলা তৃপ্তিসহকারে খাদ্য খাওয়ানো অথবা কোন গোলাম আযাদ করা।


সন্তানসম্ভবা ও দুগ্ধদায়িনীর রোযা রাখার হুকুম:
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী যদি আশঙ্কাবোধ করে যে, রোযা রাখলে যথাক্রমে তাদের গর্ভস্থ ভ্রুণ ও দুগ্ধপানকারী সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাহলে তাদের জন্য রোযা না রাখা জায়িয হবে। পরে এর ক্বাযা আদায় করে নিবে। কাফফারা বা ফিদিয়া প্রদান করতে হবে না।


বয়ো-বৃদ্ধের রোযার হুকুম:
অতিশয় বৃদ্ধ যে রোযা রাখতে অক্ষম তার জন্য অনুমতি রয়েছে যে, সে রোযা ভঙ্গ করতে পারবে এবং প্রতিদিনের রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে তৃপ্তি সহকারে দু’বেলা খাওয়াবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ ফরমান: 
وعلى الذين يطيقونه فدية طعام مسكين

অর্থ: “যাদের রোযা রাখতে অতিশয় কষ্ট হয় তাদের কর্তব্য হলো এর পরিবর্তে ফিদিয়া তথা একজন অভাবগ্রস্তকে (মিসকীন) খাদ্য দান করা।”(সূরা বাক্বারা শরীফ)


তথ্যসূত্রঃ আহ্‌কামু শাহরি রমাদ্বান