নোটিশ

বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১১

বাররাকুল জাবীন, বাসিতুল ইয়াদাইন, বালিগুল বয়ান, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা


সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবতের মধ্যেই রয়েছে সর্বাধিক মর্যাদা-মর্তবা। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবতের মহান সৌভাগ্যশালী হওয়ার কারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দুনিয়ায় থাকতেই যিনি খালিক্ব-মালিক আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দীর সুসংবাদ অর্জন করেন।


যেমন, মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন-
رضى الله عنهم ورضوا عنه
অর্থ: “আল্লাহ পাক উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের) উপর সন্তুষ্ট; উনারাও যিনি খালিক্ব-মালিক আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা মায়িদা-১১৯, সূরা মুজাদালাহ-২২, সূরা বাইয়্যিনাহ-৮)

হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা একদিকে যেমন ছাহাবীয়াগণের অন্তর্ভুক্ত, অন্যদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইহকাল ও পরকালীন জীবনসঙ্গিনী হওয়ারও সুমহান সৌভাগ্য অর্জন করেন। যার কারণে অন্যান্য পরহিযগার-মুত্তাক্বী মহিলাগণের থেকে উনাদেরকে অসংখ্য-অগণিত নিয়ামত, মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত প্রদান করা হয়েছে। যা স্বয়ং আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদান করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই অন্যান্য নারীদের উপরে উনাদের মর্যাদা।

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন-
يا نساء النبى لستن كاحد من النساء
অর্থ: “হে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার যারা আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম; আপনারা অন্য নারীদের মতো নন।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩২)

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরের কিতাব “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اى ليست كل واحدة منكن او المعنى لم توجد جماعة واحدة من جماعات النساء مثلكن فى الفضل قال ابن عباس اى ليس قدركن عندى مثل قدر غيركن من النساء الصالحات انتن اكرم على وثوابكن اعظم لدى. هذه الاية تدل على فضلهن على سائر النساء.
অর্থ: “হে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সহধর্মিণী হওয়ার কারণেই মর্যাদা, মর্তবা, ফযীলতের দিক থেকে কোনো মহিলাই আপনাদের সমকক্ষ নয়। .... হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায়) বলেছেন, আপনাদের মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল, ফযীলত অন্যান্য সতী-সাধ্বী মহিলাগণের মতো নয়। বরং আপনাদের সম্মান-মর্যাদা, ফাযায়িল-ফযীলত, অধিক পুণ্য ও প্রতিদান আমার নিকটে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন, অনেক ঊর্ধ্বে। এ আয়াত শরীফ-এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত মহিলাগণের উপরে আপনাদের অধিক মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল, ফযীলত রয়েছে।” (অনুরূপভাবে তাফসীরে খাযিন ৫ম খণ্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বাগবী ৫ম খন্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত তানযীল ৩য় খণ্ডের ৪৬৫ পৃষ্ঠা এবং অন্যান্য সকল নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে আলোচনা রয়েছে।)

আল্লাহ পাক স্বয়ং উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে আহলে বাইত হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং পূত-পবিত্রা করেছেন।
আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি বলেন-
انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا
অর্থ: “হে আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩৩)

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قال عكرمة ومقاتل اراد باهل البيت نساء النبى صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, আয়াত শরীফ-এ ‘আহলে বাইত’ দ্বারা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।”

“তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এর ৩য় খণ্ডের ৭৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
نص فى دخول ازواج النبى صلى الله عليه وسلم فى اهل البيت ههنا لانهن سبب نزول هذه الاية.
অর্থ: “এ আয়াত শরীফটি এটাই প্রমাণ করে যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত।”

আয়াত শরীফ-এ উম্মুল মু’মিনীন উনাদের সাথে উনাদের সন্তান-সন্ততিগণও আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। যেমনটি হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে। ‘তাফসীরে মাযহারী’-এর ৭ম খণ্ডের ৩৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাবিয়ীনগণের একটি বিরাট দল হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ বলেন: আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন- হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম।

“ছহীহ মুসলিম শরীফ”-এ বর্ণিত রয়েছে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “একদা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চাদরাবৃত হয়ে ঘরের ভিতর উপস্থিত হলেন। চাদরটির উপরে ছিলো উটের পশমের নকশা আঁকা। একটু পরে সেখানে উপস্থিত হলেন হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম। আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে চাদর দ্বারা ঢেকে নিলেন। এরপর এলেন হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম। তিনি উনাকেও চাদরে ঢেকে নিলেন। এরপর এলেন উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম। তিনি উনাকেও টেনে নিলেন চাদরের ভিতর। শেষে এলেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকেও জড়িয়ে নিলেন চাদরের ভিতর। তারপর পাঠ করলেন এই আয়াত শরীফ, “হে আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (অনুরূপভাবে তাফসীরে ইবনে কাছীর, আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, মিশকাত শরীফ এবং অন্যান্য হাদীছ শরীফ-এর কিতাবসমূহে হাদীছ শরীফটি বর্ণিত আছে।)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ, তাফসীর এবং হাদীছ শরীফ-এর দলীল থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ঐকমত্যে, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এবং সমস্ত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন আহলে বাইত।

উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা কোনো মুসলমানের জন্য জায়িয নেই; যেহেতু উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া তথা উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম।

মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে তিনি ইরশাদ করেন-
ولا ان تنكحوا ازواجه من بعده ابدا ان ذلكم كان عند الله عظيما.
অর্থ: “উনার অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য জায়িয নেই। আল্লাহ পাক উনার কাছে এটা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৫৩)

“তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এর ৩য় খণ্ডের ৮০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
ولهذا اجمع العلماء قاطبة على ان من توفى عنها رسول الله صلى الله عليه وسلم من ازواجه انه يحرم على غيره تزوجها من بعده لانهن ازواجه فى الدنيا والاخرة وامهات المؤمنين.
অর্থ: “সমস্ত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা ইজমা করেছেন যে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার কোনো আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা অন্য কারো জন্য জায়িয নেই বরং হারাম। কেননা, উনারা ইহকালে উনার (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) সহধর্মিণী ছিলেন পরকালেও সহধর্মিণী হিসেবে থাকবেন। আর উনারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মু’মিনগণের সম্মানিত মাতা।”

তাফসীরে মাযহারী-এর ৭ম খন্ডের ৩৭২, ৩৭৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনু আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনু যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “একদা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে সংবাদ পৌঁছলো যে, এক ব্যক্তি বলেছে: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল মুবারক-এর পর আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বিবাহ করবো। এ প্রেক্ষিতে উক্ত আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়।”

হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মুয়াম্মার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা নিষিদ্ধতার হুকুম আসার পূর্বে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আলিয়া বিনতে যুবইয়ান’ নামের এক আহলিয়াকে তালাক দিয়েছিলেন। পরে তিনি জনৈক ব্যক্তির সহধর্মিণী হন এবং কয়েকজন সন্তান-সন্ততির জননীও হন।

হযরত ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওই সকল আহলিয়াগণ বিবাহ নিষিদ্ধ আইনের বিধানের বাইরে যারা উনার সাথে নির্জন অবস্থানের সুযোগ পাননি।

এক বর্ণনায় এসেছে- “হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে আশয়াছ ইবনে কায়েস নামীয় এক আরবীয় ব্যক্তি হযরত মুস্তায়িযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বিবাহ করেছিলেন। হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ খবর জানতে পেরে আশয়াছ ইবনে কায়েসকে প্রস্তর নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যা করতে মনস্থ করলেন। কারণ হযরত মুস্তায়িযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া। কিন্তু পরে তিনি যখন জানতে পারলেন যে, হযরত মুস্তায়িযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সঙ্গে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্জন অবস্থান হওয়ার আগেই তিনি উনাকে পরিত্যাগ করেছিলেন। তখন তিনি আশয়াছ ইবনে কায়েসকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করেন।” (তাফসীরে বাইযাবী, শায়খ যাদাহ, হাশিয়াতুশ শিহাব, তাফসীরে বাগবী, খাযিন, মাদারিকুত তানযীল ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থেও এ সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।)

হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হওয়ার কারণেই উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা হারামঃ

তাফসীরে মাযহারী-এর ৭ম খণ্ডের ৩৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اى ذنبا عظيما قلت وجاز ان يكون ذلك لاجل ان النبى صلى الله عليه وسلم حى فى قبره ولذلك لم يورث ولم يتئم ازواجه عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى على عند قبرى سمعته ومن صلى على نائبا ابلغته
অর্থ: “(হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম) উনাদেরকে বিবাহ করা বড় গুনাহ। আমি বলি: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বিবাহ করা হারাম এজন্যই যে, যেহেতু তিনি উনার রওযা শরীফ-এ জীবিত আছেন, তিনি হায়াতুন নবী। সে কারণে উনার সম্পত্তির কোন ওয়ারিস নেই এবং উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালামগণও বিধবা নন।”

হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমার রওযা শরীফ-এর নিকটে এসে ছলাত ও সালাম দিবে আমি তা সরাসরি শুনি। আর যে আমার নিকট দূরদেশ থেকে ছলাত ও সালাম পাঠাবে তা আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।”(বাইহাক্বী ফী শুয়াবুল ঈমান)

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণেই আল্লাহ পাক উনার থেকে উনাদেরকে নিয়ামত প্রদানঃ
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-
ومن يقنت منكن لله ورسوله وتعمل صالحا نؤتها اجرها مرتين واعتدنا لها رزقا كريما.
অর্থ: “আপনাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অনুগত হবেন ও সৎকার্য করবেন উনাকে আমি পুরস্কার দিবো দুইবার এবং উনার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক রিযিক।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩১)

তাফসীরে মাযহারী-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, দ্বিগুণ পুরস্কারের অর্থ হচ্ছে-
প্রথমত: উনারা দ্বিগুণ পুরস্কার লাভ করবেন আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত বা আনুগত্যতার জন্য।
দ্বিতীয়ত: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দী অর্জনের জন্য। অল্পে তুষ্ট হয়ে উত্তম জীবনযাপনের জন্য।

হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনাদের প্রতিটি পুণ্যের প্রতিদান দেয়া হবে দশগুণ করে। এটা হচ্ছে আম বদলা। আর খাছ বদলা হচ্ছে অসংখ্য, অগণিত। কারণ দাতা আল্লাহ পাক হচ্ছেন অসীম আর উনার হাবীব হচ্ছেন উনার কুদরত-এর অধীন।

তাফসীরে মাযহারী-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اى جليل القدر وهو الجنة زيادة على اجرها قلت وذالك لانهن يرزقن بمتابعة النبى صلى الله عليه وسلم مايرزق النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “(হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালামগণ) উনাদেরকে সম্মানজনক রিযিক প্রদান করা হবে। তা হচ্ছে জান্নাত। যা সবচেয়ে বড় প্রতিদান। আমি বলি: উনারা উত্তম রিযিক পাবেন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই। তাই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য যে রিযিক উনাদের জন্যও সে রিযিক ধার্য হবে।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর, কুরতুবী, আহকামুল কুরআন খাযিন, বাগবী, মাদারিক ইত্যাদি তাফসীরগুলোতে আরো বিশদভাবে আলোচনা রয়েছে।)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর ইত্যাদি কিতাবের উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে-

(১) আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মর্যাদা অন্যান্য সকল নারীর উপরে।

(২) উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যেমন ইহকালে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া; তদ্রূপ বেহেশতও উনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হিসেবেই থাকবেন।

(৩) উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত।

(৪) অন্যান্য মানুষের থেকে উনাদের আমলের প্রতিদান দ্বিগুণ-বহুগুণে প্রদান করা হবে।

(৫) পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে-পরে, যে কোনো কালে যারাই অনেক মর্যাদাশালী হয়েছেন; তারাই আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণেই মর্যাদাময় হয়েছেন। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা।

আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি, রেযামন্দী অর্জনের মূল মাধ্যম হচ্ছে ছোহবত। এজন্য ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবত অর্জন করাকে ফরযে আইন ফতওয়া দিয়েছেন। তাই বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, আওলাদুর রসূল, গাউসুল আ’যম, হাবীবুল্লাহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার হাক্বীক্বী ছোহবত অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম এবং সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি যথাযথ সম্মান-মর্যাদা, তা’যীম-তাকরীম ও সুধারণা রাখার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

- মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ বিশেষ সংখ্যা-১৪৩২ হিজরী