নোটিশ

বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১১

ছাহিবে শাফায়াতে কুবরা, ছাহিবে মাক্বামে মাহমূদ, ছাহিবে ঈমান, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহব্বতের অনুপম দৃষ্টান্ত


لا يؤمن احدكم حتى يكون الله ورسوله احب اليه من نفسه وماله وولده ووالده والناس اجمعين
অর্থ: “তোমরা ততোক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবেনা যতোক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের নিকট আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা তোমাদের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ হতে বেশি প্রিয় না হবেন।”

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত বাণীর সত্যতা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম নিজেদের আমল দিয়ে এমনভাবে প্রমাণ করেছিলেন; যা বিশ্বের ইতিহাসে শুধু বিস্ময়কর নয় বরং কল্পনাতীত। নিচে কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো-


(১) উহুদ যুদ্ধের ঘটনা: কাফিররা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করেছিলো। তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু এতোটুকু বললেন যে, কে আছো যে আমার ঠিক সম্মুখে দাঁড়াতে পারো? একথা শ্রবণ করা মাত্র একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মুখে এসে দাঁড়ালেন আর দুশমনের নিক্ষিপ্ত তীরগুলো আপন বুকে পেতে নিলেন। যুদ্ধ শেষে দেখা গেলো উনার দেহে ৮০টি তীর নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কিন্তু একটিও পৃষ্ঠদেশে বা পাঁজরে নিক্ষিপ্ত হয়নি বরং সবই উনার দেহের সম্মুখভাগেই নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

(২) বদর যুদ্ধের সময় হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলে কাফিরদের পক্ষ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিলো। অবশ্য পরে তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি কথা প্রসঙ্গে উনার পিতা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আব্বাজান! বদর রণাঙ্গনে আমি কয়েকবার আপনাকে হাতের মুঠোয় পেয়েও কতল করিনি, যেহেতু আপনি আমার পিতা তাই তা থেকে বিরত থেকেছিলাম। তখন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি তোমাকে বদর রণাঙ্গনে দেখিনি। যদি দেখতাম তবে নিজ হাতে কতল করতাম। কেনোনা তুমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিলে। এভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমস্ত জীবনটাই ছিলো নবী প্রেমের নিদর্শনে ভরপুর।

(৩) উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম (কুরাইশ সরদার হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কন্যা) তিনি যখন উনার স্বামীসহ আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন তখন ঘটনাক্রমে উনার স্বামী ইন্তিকাল করেন। পরবর্তীতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম উনার শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয় স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে। এদিকে ৬ষ্ঠ হিজরীতে সন্ধির পর হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মদ্বীনায় এলে সরাসরি উনার মেয়ে হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম উনার ঘরে গিয়ে উঠলেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম আপন পিতাকে দেখে ফরাশ তুলে ফেললেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালম উনার এ আচরণ দেখে উনার পিতা উনাকে জিজ্ঞেস করলেন: আপনি আমাকে দেখে ফরাশ তুলে ফেললেন কেনো? হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম বললেন: এই বিছানায় বিশ্রাম গ্রহণ করেন আমাদের হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। আপনি আমার পিতা ঠিকই আছেন কিন্তু আপনি কাফির। তাই আপনাকে উনার পবিত্র বিছানায় বসতে দেইনি।

(৪) মক্কা বিজয়ের দিন দশ হাজার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা শরীফ অভিমুখে রওয়ানা হলেন। আনছার মুহাজিরদের কিশোর ও যুবকরা আনন্দে “আল্লাহু আকবর” ধ্বনিতে সকলে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন। এ সময় অতি আনন্দের কারণে হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দ্বিতীয় পুত্র হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে চলে গিয়েছিলেন। পুত্রের এ দৃশ্য দেখে হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে পুত্রকে সজোরে ধাক্কা দিলেন এবং বললেন: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগে আগে যাচ্ছো কেনো? কিন্তু পিতার ধাক্কায় পুত্র পাথরের উপর পড়ে গেলেন ও উনার একটি পা ভেঙেও গেলো। তবুও তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগে আগে হাঁটা পছন্দ করলেন না।

(৫) তাবুকের যুদ্ধের সময় হুযূর পুর নূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহ পাক উনার পথে দান করতে আহ্বান করলেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহ্বানে উনার সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিজেদের সাধ্য-সামর্থ্যরে চেয়ে বেশি সম্পদ দান করলেন। কিন্তু হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুব্বে নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। তিনি ঘরের সেলাইয়ের সুতা থেকে এমনকি চুলার ছাই পর্যন্ত সমস্ত কিছু এনে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারক-এ পেশ করলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞেস করলেন: আপনি ঘরে কিছু রেখে এসেছেন তো? জবাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন: ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত রেখে এসেছি। ইহাই আমার পরিবারের জন্য যথেষ্ট।

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যে অসাধারণ মুহব্বত এবং আনুগত্যতা ছিলো তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আয় আল্লাহ পাক! আমাদের সকলকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণ-অনুকরণ করে উনার খাছ মুহব্বত হাছিল করার এবং উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহের পরিপূর্ণ মিছদাক হওয়ার তাওফিক দান করুন। (আমীন)

- মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ বিশেষ সংখ্যা-১৪৩২ হিজরী