ورفعنا لك ذكرك
অর্থ: “হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার যিকিরকে বুলন্দ করেছি।” (সূরা আলাম নাশরাহ : আয়াত শরীফ ৪)
শাফিউল উমাম, রউফুর রহীম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অস্তিত্ব মুবারক-এর প্রতিটি মুহূর্ত অসংখ্য মু’জিযা দ্বারা সমৃদ্ধ। শুধু তাই নয়, উনার মুবারক বিলাদতের রাত্রেই লক্ষ-কোটি মু’জিযা সংঘটিত হয়েছে। নিম্নে তার যৎকিঞ্চিত আলোকপাত করা হলো-
(১) হযরত ইবনু আবুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন- আমার মা আমাকে বলেন যে, যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার গৃহে রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ঘরের চারদিক নূরের আলোকে উদ্ভাসিত হয়। তারকারাজি এমনভাবে ঝুঁকে পড়ছিলো, মনে হচ্ছিল যেনো আমার উপর আছড়ে পড়বে। বিলাদত শরীফ-এর সময় হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার শরীর মুবারক থেকে একটি নূর বিচ্ছুরিত হয়ে সমগ্র গৃহকে আলোকোজ্জ্বল করে তোলে। সুবহানাল্লাহ! (বায়হাকী, তিবরানী, আবু নয়ীম)
(২) সাইয়্যিদুল কাওনাইন, খাইরুল বাশার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর সময় বছরা পর্যন্ত সমস্ত কিছু আলোকিত হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! (হাকিম, বায়হাকী, ফয়জুল কাদীর, শরহে জামিউস সগীর ৩য় জিলদ ৭৬৮ পৃষ্ঠা)
(৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন: সাইয়্যিদুল খালায়িক, রহমতে আলম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রেহেম শরীফ-এ ধারণ করার পর বিলাদত শরীফ পর্যন্ত আমার ব্যথা-বেদনা হয়নি। বিলাদত শরীফ-এর সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাত মুবারক দিয়ে মাটিতে ভর দেন এবং সিজদা অবস্থায় যমীনে তাশরীফ আনেন। সুবহানাল্লাহ! (উমদাতুন নুকুল, নূরে হাবীবী)
(৪) আফদ্বালুল কায়িনাত, হাবীবে আ’যম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতের সময় উপস্থিত হলে আল্লাহ পাক উনার আদেশে সকল ফেরেশতা আল্লাহ পাক উনার সামনে হাজির হন। শয়তানকে সত্তরটি শিকল পরানো হয়। তাকে কাস্পিয়ান সাগরে উপুড় করে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সকল দুষ্ট ও অবাধ্য মাখলুককেও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। সূর্যকে সেদিন অসাধারণ আলো প্রদান করা হয় এবং তার প্রান্তে শূন্য পরিম-লে সত্তর হাজার হুরকে দাঁড় করানো হয়, যারা উনার বিলাদত শরীফ-এর অপেক্ষায় ছিলেন। আল্লাহ পাক সে বছর উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতের সম্মানার্থে সকল নারীর পুত্র সন্তান নির্ধারণ করে দেন। এটাও ঠিক করেন, কোনো বৃক্ষ ফলহীন থাকবে না। অশান্তির স্থানে শান্তি স্থাপিত হবে। সুবহানাল্লাহ! (আবু নয়ীম, খাছায়িছুল কুবরা ১ম খ- পৃষ্ঠা ৯০)
(৫) ছাহিবে বাহর ওয়া বার, মুত্তালা আলাল গাইব যে রাত্রে বিলাদত শরীফ লাভ করেন সেদিন আল্লাহ তায়ালা হাউজে কাউছারের কিনারে সত্তর হাজার মেশক আম্বরের বৃক্ষ স্থাপন করেন। সুবহানাল্লাহ!
(৬) সকল প্রতিমা উপুড় হয়ে ভেঙে পড়ে।
(৭) বায়তুল্লাহ শরীফ থেকে এ আওয়াজ কয়েকদিন পর্যন্ত ভেসে আসতে থাকে, এখন পূর্ণ চন্দ্র এসেছে, এখন আমার জিয়ারতকারীরা আসবে। বায়তুল্লাহ শরীফ-এর ভূ-কম্পন তিনদিন ও তিনরাতে শেষ হয়।
(৮) বিলাদত শরীফ-এর সেই মুবারক রাতে দুনিয়ার সকল বাদশাহদের সিংহাসন ভেঙে যায় এবং সকলেই বোবা হয়ে যায়।
(৯) হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম বিলাদত শরীফ-এর সময়ের ঘটনাবলী বর্ণনায় বলেন, সূর্যের মতো উজ্জ্বল মুখম-লবিশিষ্ট তিন ব্যক্তি আগমন করলেন, একজন উনার হাতে রুপার পাত্র যা হতে মেশকের খোশবু আসছিলো, দ্বিতীয় জন উনার হাতে পান্নার চতুষ্কোণ প্লেট, যার প্রতি কোণে একটি সাদা মোতি জড়ানো ছিলো। কেউ বললো, এটা সারা বিশ্ব; পূর্ব-পশ্চিম, জল-স্থল। হে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি এটি ধারণ করুন! যেদিক দিয়ে ইচ্ছা। তিনি মাঝখানে ধরলেন, আওয়াজ এলো? কা’বার কছম! মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কা’বা ধারণ করেছেন। আল্লাহ পাক উনার জন্য কা’বাকে ক্বিবলা এবং বাসস্থান করেছেন। তৃতীয় জনের হাতে উত্তমরূপে ভাঁজ করা সাদা রেশমী বস্ত্র থেকে সুন্দর একটি আংটি বের করলেন।
অতঃপর আংটিটি লোটার পানিতে সাতবার ধৌত করে সুলত্বানুন নাছীর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুই কাঁধ মুবারক-এর মাঝখানে মোহর এঁকে দিলেন।
(১০) বিলাদত শরীফ-এর বর্ণনায় হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সেই রাত্রে আমি প্রতিমার ভিতর থেকে আওয়াজ শুনেছি, নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পয়দা হয়েছেন। বাদশাহরা লাঞ্ছিত হয়েছে। গোমরাহী ও শিরক মিটে গেছে।
(১১) বিলাদত শরীফ রাত্রের বর্ণনায় সম্রাট নাজ্জাশী বলেছে: সে রাত্রে স্বপ্নে দেখে, হঠাৎ মাটি ভেদ করে একটি গ্রীবা ও মাথা বের হয়ে বললো; হস্তী বাহিনী ধ্বংস হয়েছে। ..... নবী মক্কী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি) বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন, এখন যে উনাকে মেনে চলবে, সে কামিয়াব আর যে অবাধ্য হবে.... এতটুকু বলে সে অদৃশ্য হয়ে যায়।
(১২) যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বিলাদত শরীফ লাভ করেন তখন শয়তানের তিন আকাশে প্রবেশাধিকার রহিত হয়। আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করলে শয়তানের জন্যে সাত আকাশের দরজাই বন্ধ করে দেয়া হয়।
আল্লাহ পাক যেনো আমাদেরকে সেই সম্মানিত রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদ, যিনি যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম উনার উসীলায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী মর্যাদা-মর্তবা উপলদ্ধি করার এবং উনার পরিপূর্ণ ইত্তিবার মাধ্যমে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খালিছ সন্তুষ্টি খাছভাবে নসীব করেন। আমিন।
(নি’মাতুল কুবরা, তিবরানী শরীফ, আবু নাঈম, ফয়জুল ক্বাদীর, উমদাতুল নুকুল, নূরে হাবীবী, খাছায়িছুল কুবরা, হাকিম)
- মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ বিশেষ সংখ্যা-১৪৩২ হিজরী