নোটিশ

বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১১

পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর এর ফযীলত ও সংশ্লিষ্ট ইবাদত-বন্দেগী


পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরঃ
‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত বা রজনী। আর ‘ক্বদর’ শব্দের অর্থ হলো মহিমান্বিত বা মর্যাদামন্ডিত। এ রাতটি আমাদের এ উপমহাদেশে ‘শবে ক্বদর’ হিসেবে মশহূর। এ রাতটির ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ ফরমান: 
ليلة القدر خير من الف شهر.

অর্থ: “লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে হাজার মাস থেকে উত্তম।” সুবহানাল্লাহ! (সুরা ক্বদর : আয়াত শরীফ ২) 

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে:
عن عائشة عليها السلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تحروا ليلة القدر فى الوتر من العشر الاواخر من رمضان.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ-এর শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ) 

শবে ক্বদর দুআ কবুলের পাঁচ রাত্রির মধ্যে অন্যতম রাত্রি। এই রাত্রিতে বান্দা আল্লাহ পাক উনার কাছে যা আরজি করে আল্লাহ পাক তাকে তাই দিয়ে থাকেন প্রয়োজন অনুসারে। বান্দার সকল দুআই এ রাত্রিতে আল্লাহ পাক তিনি কবুল করে থাকেন। কেননা আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন: 
ادعونى استجبلكم

অর্থ: “তোমরা আমার নিকট দুআ করো আমি তোমাদের দুআ কবুল করবো।”

তাই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, রমাদ্বান শরীফ-এর শেষ দশ দিনের প্রতি বিজোড় রাত্রিতে জাগ্রত থেকে লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর তালাশ করা। রাত্রিতে জাগ্রত থেকে বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার করে, ইবাদত-বন্দেগীতে কাটানো এবং সকল মুসলমানের জন্য দুআ করা। যার মনে  যতো আরজি রয়েছে তা আল্লাহ পাক উনার দরবারে পেশ করা। 

কেননা হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার নিকট চায় না বা দুআ করেনা আল্লাহ পাক তার উপর অসন্তুষ্ট হন।” কাজেই সকলের উচিত আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টির জন্য, ইসলামের উপর, ঈমানের উপর ইস্তিক্বামত থাকার জন্য সর্বোপরি দুনিয়া এবং আখিরাতের সর্বপ্রকার কল্যাণের জন্য অন্তর থেকে দুআ করা।
অবশ্যই আল্লাহ পাক তাকে এই মহিমান্বিত রাত্রির সম্মানার্থে তা দান করবেনই করবেন। এটা আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা। 

বিঃদ্রঃ ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ২৭শে রমাদ্বান শরীফ-এর রাত্রিকে অর্থাৎ ২৬ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে ক্বদর হিসেবে অধিক সম্ভাব্য বলার কারণে উনার মাযহাবের অনুসারীগণ যদিও ২৭ তারিখ রাতে বিশেষভাবে শবে ক্বদর তালাশ করে থাকেন তবে সুন্নত হলো পবিত্র রমাদ্বান শরীফ-এর শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতেই শবে ক্বদর তালাশ করা।


আমলসমূহঃ
লাইলাতুল ক্বদর-এ সুন্নত-নফল অনেক আমলই করা যায়। তবে বিশেষভাবে কয়েকটি আমল করা উচিত। তা হলো:
  • লাইলাতুল ক্বদর-এর নিয়তে ৪/৬/৮/১২ রাকাআত নামায পড়া।
  • দুরূদ শরীফ পাঠ করা।
  • ছলাতুত তাসবীহ-এর নামায আদায় করা।
  • যিকির-আযকার করা।
  • কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা
  • তাহাজ্জুদের নামায পড়া।
  • বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার এবং মুনাজাত করা। আল্লাহ পাক উনার কাছে  রোনাজারি-কান্নাকাটি করা।
  • মীলাদ শরীফ পাঠ করত দুআ-মুনাজাত করা।
লাইলাতুল ক্বদর-এর নামাযের নিয়তঃ

نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة اليلة القدر سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রকা’আতাই ছলাতিল লাইলাতিল ক্বদরি সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। 
অর্থ: আমি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে লাইলাতুল ক্বদর এর দু’রাকাআত সুন্নত নামাযের নিয়ত করছি- আল্লাহু আকবার।

তথ্যসূত্রঃ আহ্‌কামু শাহরি রমাদ্বান