ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের তৃতীয় হচ্ছে যাকাত। যাকাত আর্থিক ইবাদত সমূহের মধ্যে অন্যতম। প্রত্যেক ধনী মুসলমানের উপর যাকাত আদায় করা ফরয। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
خذ من اموالهم صدقة تطهرهم وتزكيهم بها وصل عليهم ان صلوتك سكن لهم.
অর্থ: “আপনি তাদের সম্পদ হতে ছদক্বা (যাকাত) গ্রহণ করবেন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র ও ইছ্লাহ করবেন। আপনি তাদের জন্য দুআ করুন। নিশ্চয়ই আপনার দুআ তাদের জন্য পরম প্রশান্তির কারণ।” (সূরা তওবা-১০৩)
যাকাত না দেয়ার পরিণতিঃ
যাকাত আদায় না করার পরিণতি সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত উমর ইবনুল খত্ত্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, স্থলে এবং পানিতে যেখানেই কোন সম্পদ ধ্বংস হয়, তা হয় কেবল যাকাত আদায় না করার কারণে।” (তবারানী শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি যাকাত প্রদান করেনা, তার নামায কবুল হয়না।” (বুখারী শরীফ)
যাকাত এর সংজ্ঞাঃ
যাকাত শব্দটি আরবী। অর্থ পবিত্রতা বা বৃদ্ধি। শরীয়তের পরিভাষায় যাকাত হল কোন মুসলমান স্বাধীন বালেগ বালেগাহ-এর নিকট হাওয়ায়েজে আছলিয়াহ বা নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, মাল-সামানা, বাদ দিয়ে কর্জ ব্যতীত নিজ মালিকানাধীনে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্য যদি পূর্ণ এক বছর থাকে তবে শতকরা ২.৫ টাকা যাকাতের নিয়তে আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে শরীয়তের নির্দেশ মুতাবিক যাকাত গ্রহণের উপযোগী কোন মুসলমানের অধিকারে দিয়ে দেয়া।
এ স্থলে দাতা গ্রহিতা থেকে বিনিময়স্বরূপ কোন ফায়দা হাছিল করতে পারবে না। কোন সুবিধা হাছিল করলে বা হাছিলের আশা রাখলে তার যাকাত আদায় হবে না।
এ স্থলে দাতা গ্রহিতা থেকে বিনিময়স্বরূপ কোন ফায়দা হাছিল করতে পারবে না। কোন সুবিধা হাছিল করলে বা হাছিলের আশা রাখলে তার যাকাত আদায় হবে না।
যাকাত এর নিছাবঃ
নিছাব বলা হয় শরীয়তের নির্ধারিত আর্থিক নিম্নতম সীমা বা পরিমাণকে অর্থাৎ কোন মুসলমান স্বাধীন বালেগ বালেগাহ-এর নিকট হাওয়ায়েজে আছলিয়াহ বা নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, মাল-সামানা, বাদ দিয়ে কর্জ ব্যতীত নিজ মালিকানাধীন সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্য পূর্ণ এক বছর থাকা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় একেই ‘নিছাব’ বলে। মালের প্রকৃত ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন মালের নিছাব বিভিন্ন।
যাকাত ফরয হওয়ার শর্তাবলীঃ
নিম্ন বর্ণিত দশ প্রকার গুণ সম্পন্ন লোকের উপর যাকাত ফরয-
(১) মুসলমান হওয়া।
(২) বালেগ হওয়া।
(৩) জ্ঞানবান হওয়া।
(৪) স্বাধীন হওয়া।
(৫) নিছাব পরিমান মালের পূর্ণ মালিক হওয়া।
(৬) যাকাতের মালের পূর্ণ মালিকানা থাকা।
(৭) নিছাব কর্যমুক্ত হওয়া।
(৮) নিছাব পরিমান মাল হাওয়ায়েজে আছলিয়ার অতিরিক্ত হওয়া।
(৯) মাল বর্ধনশীল হওয়া।
(১০) নিছাবের মালের বৎসর শেষ হওয়া।
(১) মুসলমান হওয়া।
(২) বালেগ হওয়া।
(৩) জ্ঞানবান হওয়া।
(৪) স্বাধীন হওয়া।
(৫) নিছাব পরিমান মালের পূর্ণ মালিক হওয়া।
(৬) যাকাতের মালের পূর্ণ মালিকানা থাকা।
(৭) নিছাব কর্যমুক্ত হওয়া।
(৮) নিছাব পরিমান মাল হাওয়ায়েজে আছলিয়ার অতিরিক্ত হওয়া।
(৯) মাল বর্ধনশীল হওয়া।
(১০) নিছাবের মালের বৎসর শেষ হওয়া।
(দলীলসমূহ: (১) আলমগীরী, (২) আইনুল হিদায়া, (৩) বাহরুর রায়িক, (৪) ফতওয়ায়ে আমিনীয়া ইত্যাদি।)
কম্পিউটারে যাকাতের সঠিক হিসাবের জন্য ভিজিট করুন:www.ahkhamuzzakat.com
যে সব খাতে যাকাত দেয়া ফরযঃ
নিম্নলিখিত ৮টি খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা ফরয:
পবিত্র কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “যাকাত কেবল ফকীর, মিসকীন ও যাকাত আদায়কারীর কর্মচারীদের জন্য, যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের জন্য অর্থাৎ নও মুসলিম, দাস মুক্তির জন্য, ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির জন্য, আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদকারী এবং মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নির্ধারিত বিধান এবং আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তওবা: আয়াত শরীফ: ৬০)
পবিত্র কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “যাকাত কেবল ফকীর, মিসকীন ও যাকাত আদায়কারীর কর্মচারীদের জন্য, যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের জন্য অর্থাৎ নও মুসলিম, দাস মুক্তির জন্য, ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির জন্য, আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদকারী এবং মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নির্ধারিত বিধান এবং আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তওবা: আয়াত শরীফ: ৬০)
১. ফকীর: ফকীর ওই ব্যক্তি যার নিকট খুবই সামান্য সহায় সম্বল আছে।
২. মিসকীন: মিসকীন ওই ব্যক্তি যার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং আত্মসম্মানের খাতিরে কারও কাছে হাত পাততে পারে না।
৩. আমিল: যাকাত আদায় ও বিতরণের কর্মচারী।
৪. মন জয় করার জন্য নও মুসলিম: অন্য ধর্ম ছাড়ার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে। অভাবে তাদেরকে সাহায্য করে ইসলামের উপর সুদৃঢ় করা।
৫. ঋণমুক্তির জন্য: জীবনের মৌলিক বা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য সঙ্গত কারণে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত প্রদান করা।
৬. দাসমুক্তি: কৃতদাসের মুক্তির জন্য।
৭. ফী সাবীলিল্লাহ বা জিহাদ: অর্থাৎ ইসলামকে বোল-বালা বা বিজয়ী করার লক্ষ্যে যারা কাফির বা বিধর্মীদের সাথে জিহাদে লিপ্ত সে সকল মুজাহিদদের প্রয়োজনে যাকাত দেয়া যাবে।
৮. মুসাফির: মুসাফির অবস্থায় কোন ব্যক্তি বিশেষ কারণে অভাবগ্রস্ত হলে ওই ব্যক্তির বাড়িতে যতই ধন-সম্পদ থাকুক না কেন তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে।
২. মিসকীন: মিসকীন ওই ব্যক্তি যার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং আত্মসম্মানের খাতিরে কারও কাছে হাত পাততে পারে না।
৩. আমিল: যাকাত আদায় ও বিতরণের কর্মচারী।
৪. মন জয় করার জন্য নও মুসলিম: অন্য ধর্ম ছাড়ার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে। অভাবে তাদেরকে সাহায্য করে ইসলামের উপর সুদৃঢ় করা।
৫. ঋণমুক্তির জন্য: জীবনের মৌলিক বা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য সঙ্গত কারণে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত প্রদান করা।
৬. দাসমুক্তি: কৃতদাসের মুক্তির জন্য।
৭. ফী সাবীলিল্লাহ বা জিহাদ: অর্থাৎ ইসলামকে বোল-বালা বা বিজয়ী করার লক্ষ্যে যারা কাফির বা বিধর্মীদের সাথে জিহাদে লিপ্ত সে সকল মুজাহিদদের প্রয়োজনে যাকাত দেয়া যাবে।
৮. মুসাফির: মুসাফির অবস্থায় কোন ব্যক্তি বিশেষ কারণে অভাবগ্রস্ত হলে ওই ব্যক্তির বাড়িতে যতই ধন-সম্পদ থাকুক না কেন তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে।
যেসব খাতে যাকাত প্রদান করা যাবেনাঃ
নিম্নলিখিত খাতে বা ব্যক্তিদের যাকাত দেয়া যাবেনা:
১. উলামায়ে ছূ’ পরিচালিত মাদরাসা যারা জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ব্যাপারে বদ-আক্বীদা পোষণকারী এবং উনাদের শান-মানের বিরোধিতাকারী, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াছের বিরোধিতাকারী, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বিরোধিতাকারী ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত মাদরাসাতে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না।
২. নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৩. উলামায়ে মুতাক্বদ্দিমীন উনাদের মতে, কুরাঈশ গোত্রের বনু হাশিম-এর অন্তর্গত হযরত আব্বাস, হযরত জাফর, হযরত আকীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বংশধরদের জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে উলামায়ে মুতাআখখিরীনগণের মতে বৈধ।
৪. অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৫. যে সমস্ত মাদরাসায় ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহ বোডিং আছে সেখানে যাকাত দেয়া যাবে এবং যে সমস্ত মাদরাসায় লিল্লাহ বোডিং নেই সেখানে যাকাত দেয়া যাবে না।
৬. দরিদ্র পিতা-মাতাকে, সন্তানকে, স্বামী বা স্ত্রীকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৭. প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা, লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৮. উপার্জনে সক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।
৯. বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ কর্মচারী, কর্মচারীনী বা কাজের পুরুষ ও মহিলাদেরকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না।
১০. কোন জনকল্যাণমূলক কাজ বা এরূপ ফান্ডে বা এরূপ প্রতিষ্ঠানে যাকাত ও ফিতরার টাকা কোনটিই দেয়া যাবে না।
বিঃ দ্রঃ যাকাত আদায় করার জন্য অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। এটা ফরয ইবাদত, এর নিয়ত করাও ফরয। মুখে উচ্চারণ করা বা যাকাত গ্রহণকারীকে শুনিয়ে বলা প্রয়োজন নেই। তবে মনে মনে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে যে,‘আমি যাকাত আদায় করছি’ অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না। তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে।
১. উলামায়ে ছূ’ পরিচালিত মাদরাসা যারা জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ব্যাপারে বদ-আক্বীদা পোষণকারী এবং উনাদের শান-মানের বিরোধিতাকারী, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াছের বিরোধিতাকারী, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বিরোধিতাকারী ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত মাদরাসাতে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না।
২. নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৩. উলামায়ে মুতাক্বদ্দিমীন উনাদের মতে, কুরাঈশ গোত্রের বনু হাশিম-এর অন্তর্গত হযরত আব্বাস, হযরত জাফর, হযরত আকীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বংশধরদের জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে উলামায়ে মুতাআখখিরীনগণের মতে বৈধ।
৪. অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৫. যে সমস্ত মাদরাসায় ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহ বোডিং আছে সেখানে যাকাত দেয়া যাবে এবং যে সমস্ত মাদরাসায় লিল্লাহ বোডিং নেই সেখানে যাকাত দেয়া যাবে না।
৬. দরিদ্র পিতা-মাতাকে, সন্তানকে, স্বামী বা স্ত্রীকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৭. প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা, লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৮. উপার্জনে সক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।
৯. বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ কর্মচারী, কর্মচারীনী বা কাজের পুরুষ ও মহিলাদেরকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না।
১০. কোন জনকল্যাণমূলক কাজ বা এরূপ ফান্ডে বা এরূপ প্রতিষ্ঠানে যাকাত ও ফিতরার টাকা কোনটিই দেয়া যাবে না।
বিঃ দ্রঃ যাকাত আদায় করার জন্য অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। এটা ফরয ইবাদত, এর নিয়ত করাও ফরয। মুখে উচ্চারণ করা বা যাকাত গ্রহণকারীকে শুনিয়ে বলা প্রয়োজন নেই। তবে মনে মনে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে যে,‘আমি যাকাত আদায় করছি’ অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না। তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে।
যাকাত নিয়ে ইহুদী-মুশরিকদের ষড়যন্ত্রঃ
যাকাত ইসলামের মৌলিক স্তম্ভসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয়। দুনিয়াতে বান্দা যা কিছু উপার্জন করে, ভোগ করে তার সবই দিয়ে থাকেন মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন এবং তা উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে সকলের মাঝে তা বণ্টন করে দেন। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক দিয়ে থাকেন আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বণ্টন করেন।”
আল্লাহ পাক তিনিই একমাত্র রিযিক্বদাতা। তাই উনার দেয়া মাল সম্পদ তিনি যেভাবে বলেছেন সেভাবে খরচ করাই একজন মু’মিন-মুসলমান মাত্র তার দায়িত্ব-কর্তব্য। সামাজিক ভারসাম্যতা, পারস্পরিক সহনশীলতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি প্রকাশের জন্য, অর্জিত সম্পদের নিরাপত্তার জন্য, পবিত্রতার জন্য, সর্বোপরি তা আল্লাহ পাক উনার প্রদর্শিত পন্থায় ব্যয় করে উনার এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই যাকাত ফরয করা হয়েছে। তাই এই যাকাত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে, সতর্কতার সাথে, সঠিক পরিমাণে, সঠিক নিয়মে, সঠিক খাতে উপযুক্ত বস্তু দ্বারা প্রদান করাই সকলের একান্ত কর্তব্য এবং নিজ স্বার্থেই অবশ্য করণীয়। কেননা এটা তার ইহকাল-পরকালের কামিয়াবী হাছিলের সহায়ক হবে। আর তাই যাকাত এর গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলার জন্য আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেছেন,
তোমরা নিজেদের জন্য যা পছন্দ করবেনা অর্থাৎ যে দ্রব্য বা কাপড় অথবা ফসল, ফলাদি বা প্রাণী তা যাকাত দেয়ার জন্য নির্ধারিত করোনা। আল্লাহ পাক গণী এবং অভাবমুক্ত।
অর্থাৎ যাকাত যে মাল বা বস্তু দ্বারা আদায় করবে তা অবশ্যই স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হতে হবে। তা সকলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হতে হবে। এক কথায় সর্বোত্তম বস্তু দ্বারা যাকাত প্রদান করতে হবে।
অথচ বর্তমানে কাফির-মুশরিক, বে-দ্বীন, বদ-দ্বীনদের একটি হীন চক্রান্ত লক্ষ্য করা যায় যাকাতকে ঘিরে। তা হলো, দেখা যায় দেশের বিভিন্ন দোকান-পাটে, মার্কেটে সাইনবোর্ড, ব্যানারে বড় করে লিখা হয় ‘এখানে সুলভমূল্যে যাকাতের কাপড় পাওয়া যায়।’ নাঊযুবিল্লাহ! যা কিনা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ যাকাত কে সূক্ষ্মভাবে হেয়, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। কেননা এসব দোকানে কম দামে অতি নিম্নমানের কাপড়-বস্ত্রাদি বিক্রয় করা হয়, যে কাপড় যাকাত প্রদানকারী তার এবং তার পরিবারে জন্য কখনোই পছন্দ করবেনা। যাকাত-এর জন্য ইসলামে তো আলাদা বস্তুর কথা বলা হয়নি। যাকাত প্রদানকারী যা ব্যবহার করে, যা পছন্দ করে তার মত তো অবশ্যই বরং তার চেয়ে উত্তম বস্তু দিতে হবে। কেননা এটা আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য প্রদান করতে হয়। যাকাত-এর নামে কম দামি, নিম্নমানের বস্তু প্রদান করলে তা হবে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার সাথে চরম ধৃষ্টতা। যা কিনা ঈমানহারা হওয়ার কারণ।
কাজেই প্রত্যেককে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যেন এরূপ হীনকর্মকা- যাকাতকে ঘিরে কেউ ঘটাতে না পারে। সকল মুসলিম দেশের জনগণ এবং সরকারকে এরূপ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ আহ্কামু শাহরি রমাদ্বান