নোটিশ

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১১

হুসনুল খুলুক্ব, হুলুওউল কালাম, হামিলু লিওয়ায়িল হামদ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ ধন্য কিছু জিনিস মুবারক-এর বেমেছাল মর্যাদা ও ফযীলত প্রসঙ্গে


لئن شكرتم لازيدنكم
অর্থ: “যদি তোমরা আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করো তবে অবশ্যই আল্লাহ পাক তোমাদের নিয়ামত বৃদ্ধি করে দিবেন।” (সুরা ইবরাহীম : আয়াত শরীফ ৭)

আল্লাহ পাক প্রদত্ত যাবতীয় নিয়ামতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলেন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, মর্যাদা-মর্তবার প্রতি যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করত সেই সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে সদা সচেষ্ট থাকতেন। উনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ ধন্য যে কোনো জিনিস মুবারককে অতীব বরকতময় মনে করে সেগুলোর প্রতি বেমেছাল তা’যীম-তাকরীম প্রদর্শন করতেন এবং তা থেকে বরকত হাছিল করতেন।

বুখারী ও মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালমা আলাইহাস সালাম উনার নিকট হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিছু চুল মুবারক সংরক্ষিত ছিলো। কেউ যখন অসুস্থ হয়ে পড়তো তখন পানিতে উক্ত চুল মুবারক দু-একবার ডুবিয়ে নিতেন। রোগী সেই পানি পান করে এর বরকতে আরোগ্য লাভ করতো। সুবহানাল্লাহ! এছাড়া হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার নিকট হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি জুব্বা মুবারক ছিলো। যেটা ধুয়ে উক্ত ধৌত পানি রোগীকে সেবন করালে রোগী সুস্থতা লাভ করতো।

রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বিনীত আরযুর প্রেক্ষিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় মুবারক কোর্তা দান করলে তা দিয়ে মুনাফিক সরদার উবাই ইবনে সুলুলকে কাফন পরিয়ে দাফন করা হয়। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরবর্তীতে আরয করলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কোর্তা মুবারক-এর বরকতে মুনাফিক সরদার উপকৃত হবে কি?” তার জাওয়াবে রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যতোক্ষণ পর্যন্ত এ কোর্তার একটি সুতা বাকি থাকবে ততোক্ষণ সে কবর আযাব হতে নিরাপদ থাকবে।” (স্মর্তব্য, আল্লাহ পাক উনার কুদরতে তাকে দাফন করার পর উক্ত কোর্তা মুবারক গায়েব হয়ে যায়।)(মকতুবাতে সাদী)

উল্লেখ্য, সাইফুল্লাহ হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজের টুপির মধ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কয়েকটি পবিত্র চুল মুবারক সংরক্ষণ করতেন। কাফিরদের বিরুদ্ধে কোনো এক যুদ্ধের সময় উনার ওই টুপি মাটিতে পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ তিনি উক্ত টুপি হস্তগত করার জন্য তুমুল জিহাদ শুরু করে দিলেন। কাফিররাও প্রচ- বাধা সৃষ্টি করলে অনেক মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেন। পরে উনাকে প্রশ্ন করা হলো- সামান্য একটি টুপি উদ্ধারের জন্য আপনি এতো ক্ষয়-ক্ষতি স্বীকার করলেন কেনো? তিনি বললেন, “এ জিহাদ কেবল টুপি উদ্ধারের জন্য নয় বরং এ জিহাদ করা হয়েছে হযরত রসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র কেশ মুবারক-এর সম্মান রক্ষার্থে, যা রক্ষিত ছিলো ওই টুপির মধ্যে।” বলাবাহুল্য, টুপির মধ্যে রক্ষিত উক্ত চুল মুবারক-এর বরকতে তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদে অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দিতেন।

মূলত হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ, পোশাক-পরিচ্ছদ ও তবারকসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তা থেকে সীমাহীন বরকত হাসিলের এরূপ অসংখ্য ঘটনাবলী হাদীছ শরীফ এবং সীরাত গ্রন্থসমূহে বর্ণিত রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ ধারাবাহিকতায় অনুসরণীয়, অনুকরণীয়, আওলাদে রসূলগণও অনন্য অনুষঙ্গ।

তাই মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকেও সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রক্ত মুবারক যাঁর ধমনীতে প্রবাহমান, সেই মহান আওলাদুর রসূল আমাদের মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনাকে অনুসরণের মাধ্যমে সে নিয়ামত নসীব করুন।
{দলীল : বুখারী, মুসলিম, শিফা কাজী আয়াজ, খাসায়িসুল কুবরা, মাদারিজুন নবুয়ত, মকতুবাতে সাদী ইত্যাদি}

- মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ বিশেষ সংখ্যা-১৪৩২ হিজরী