وتقلبك فى السجدين
অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনার স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টিও ছিলো সিজদাকারীগণের মাধ্যমে।” (সুরা শুয়ারা : আয়াত শরীফ ২১৯)
আলোচ্য আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে আল্লামা হযরত ইমাম ইবনে হিববান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
لازال نوره صلى الله عليه وسلم ينقل من ساجد الى ساجد.
অর্থ: “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূর মুবারক সিজদাকারীগণের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছিলো।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৪৫)
ان اباء النبى صلى الله عليه وسلم كانوا مؤمنين.
অর্থ: “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষগণ সকলেই ঈমানদার ছিলেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৪৫)
উক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
نبى الى نبى حتى اخرجتك نبيا وفى رواية اخرى مازال النبى صلى الله عليه وسلم يقلبك فى اصلاب الانبياء حتى ولدته امه.
অর্থ: “আল্লাহ পাক তিনি বলেন, (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমি আপনার অজুদ মুবারককে নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করে নবী হিসেবে আপনার প্রকাশ ঘটিয়েছি।”
অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পৃষ্ঠ মুবারক থেকে স্থানান্তরিত হয়ে উনার আম্মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ আনেন।” (বাযযার শরীফ, তিবরানী শরীফ, খাছায়িসুল কুবরা- ১/৩৮, দালাছিলোল নুবুওয়াত ১/১৬৬, সীরাতুল হালবিয়া ১/৪৪, মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ, শরহু আল্লামাতিয যারকানী ১/১২৮)
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, আশরাফুল আউলিয়া, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, “আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক যাঁদের মাধ্যম দিয়ে স্থানান্তরিত হয়ে দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন উনারা অনেকেই ছিলেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। আর যাঁরা নবী-রসূল ছিলেন না উনারা ছিলেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নায়িব বা স্থলাভিষিক্ত। সে যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল। সর্বশ্রেষ্ঠ পরহিযগার। সকল গুণে গুণাম্বিত। আদর্শ ও অনুসরণীয় ব্যক্তি। এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বা বিশ্বাস। কাজেই এর বিপরীত চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।”
মূলত যারা কাফির। যাদের অন্তর গালিজেপূর্ণ। যাদের অন্তরে নিফাকী (কপটতা) রয়েছে, যারা ভিন্ন চিন্তা করে তারাই কাট্টা কাফিরে পরিণত হয়।
উল্লেখ্য কুরআন শরীফ-এ রয়েছে যে, “ইহুদীরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু। অতঃপর মুশরিক।” (সূরা মায়িদা : আয়াত শরীফ ৮২) ইহুদীরা শত্রুতাবশত সবসময়ই ফিকির করে, কি করে মুসলমানদের কাফির বানানো যায়? তাদের সেই অব্যাহত কোশেশ ও দুরভিসন্ধির একটি রূপ হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বংশের মধ্যে কলঙ্কের ছাপ অঙ্কন করা। নাঊযুবিল্লাহ! পূর্বেও করেছিলো, বর্তমানেও করছে, ভবিষ্যতেও করবে। তবে তাদের মতাদর্শের কিংবা সমমনাদের ছাড়া কাউকে সেই ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ করতে পারবেনা। কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই তাদের সেই জাওয়াব দিয়েছেন। স্বীয় পবিত্রতম বংশগত মর্যাদা-মর্তবার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি একদিন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখন কুরাইশগণ পরস্পর মিলিত হয় তখন তারা একজন অন্যজনের সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে সাক্ষাৎ করে। আর যখন আমাদের সাথে সাক্ষাৎ হয় তখন তাদের চেহারা এমন সঙ্কুচিত হয় যে, তাদেরকে চেনা যায়না।
এটা শুনে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। অতঃপর বললেন, ওই আল্লাহ পাক উনার কছম! যাঁর কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে। কোনো ব্যক্তির অন্তরে ততোক্ষণ পর্যন্ত ঈমান প্রবেশ করবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পূর্ণরূপে মুহব্বত করবে।”
অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কুরাইশরা পরস্পর বসে যখন তাদের বংশধরদের নিয়ে আলোচনা করে তখন আপনার সম্পর্কে বলে যে, আপনি নাকি অনুর্বর যমীনে উৎপাদিত খজুর। অর্থাৎ গোবরে পদ্ম ফুলের মতো। নাঊযুবিল্লাহ!
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক যেদিন সমস্ত মাখলুকাত সৃষ্টি করলেন সেদিন আমাকে সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। অতঃপর যখন তাদেরকে বিভক্ত করলেন তখন আমাকে সর্বোত্তম ভাগে মনোনীত করলেন। যখন তাদেরকে গোত্রে বিভক্ত করলেন তখন আমাকে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠালেন। তারপর যখন পরিবার সৃষ্টি করলেন তখন আমাকে সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবারে পাঠালেন। কাজেই আমি বংশগতভাবে তোমাদের থেকে শ্রেষ্ঠ এবং পরিবারের দিক থেকেও তোমাদের থেকে সর্বোত্তম।” (ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, কিতাবুল মানাকির, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, ১/১৬৮)
অপর বর্ণনায় এসেছে,
فانا خيركم نفسا وخيركم ابا.
অর্থ: “আমি ব্যক্তি হিসেবে বা আত্মার দিক দিয়ে তোমাদের সকলের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং মাতা-পিতার দিক দিয়ে সকলের থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ।” (বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ, দালাছিলোন্ নুবওওয়াত- ১/১৭৫)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন- আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেছেন যে, আমি পূর্ব-পশ্চিম ঘুরে দেখেছি কিন্তু আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাউকে পাইনি এবং বনি হাশিমের চেয়েও সর্বোত্তম কাউকে পাইনি।” (বাইহাক্বী শরীফ, তিবরানী শরীফ, খাসায়িসুল কুবরা- ১/৩৮, সীরাতুল হালাবিয়া ১/৪১)
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আবুল বাশার হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টির দু’হাজার বছর পূর্বে ‘কুরাইশ’ আল্লাহ পাক উনার সামনে একটি নূরের আকারে ছিলো। এই নূর যখন তাছবীহ পাঠ করতো তখন ফেরেশতারাও তার সাথে সাথে তাছবীহ পাঠ করতো।
আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে এই নূর উনার পিঠ মুবারক-এ রেখে দিলেন। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, এরপর আল্লাহ পাক তিনি আমাকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যম দিয়ে পৃথিবীতে পাঠালেন। তারপর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যম দিয়ে স্থানান্তরিত করলেন। এমনিভাবে আল্লাহ পাক আমাকে অতি সম্মানিত বান্দাগণ উনাদের মাধ্যমে এবং পবিত্রা নারীগণ উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করতে থাকেন। অবশেষে আমার পিতা-মাতার ঘরে তাশরীফ নিয়েছি। আমার পূর্ব-পুরুষগণ কেউ কখনও চারিত্রিক দোষে দোষী ছিলেন না।” (খাসায়িসুল কুবরা ১/৩৯, সীরাতুল হালাবিয়া ১/৪৬, নাসীমুর রিয়াদ শরহে শিফা ২/১৪৪)
জাহিলিয়াতের অশালীন কার্যকলাপ উনাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি। সুবহানাল্লাহ! আর তা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? যেখানে সকলে একমত যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারক-এর স্পর্শ পাওয়ার কারণে রওযা শরীফ-এর মাটি মুবারক আরশের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা সম্পন্ন হয়েছে।
সেক্ষেত্রে উনার অজুদ বা নূর মুবারক যাঁদের পৃষ্ঠ মুবারক-এ অবস্থান নিয়েছেন তারা কি করে অপবিত্র থাকতে পারেন? উনারা ছিলেন সবাই পূত-পবিত্র। ঈমানদার তো বটেই। জান্নাতী তো অবশ্যই বরং স্বয়ং জান্নাতই উনাদের পাওয়ার জন্য লালায়িত। উনাদের প্রবেশের কারণে জান্নাতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কাজেই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বংশ মর্যাদা সম্পর্কে যারা প্রশ্ন উত্থাপন করে, তাদের অন্তরে জাররা পরিমাণ ঈমান প্রবেশ করতে পারেনি। তারা কাফির।
- মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ বিশেষ সংখ্যা-১৪৩২ হিজরী