যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আ’ইম্মাহ, কুতুবুল আলম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেছেন, কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের সংখ্যা ৬৬৬৬টি। এটাই মশহুর ও ছহীহ। সম্প্রতি কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের সমষ্টি নিয়ে বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন প্রচারণার প্রতিক্রিয়ায় গতকাল রাজারবাগ শরীফে তিনি এ কথা বলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, কুরআন শরীফের আয়াতসমূহের সংখ্যা নিয়ে যে সমস্ত মত বর্ণিত রয়েছে তার প্রত্যেকটিই ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য। কোনটিই ভুল কিংবা অগ্রহণীয় নয়।
বিভিন্ন বর্ণনায় আয়াত সংখ্যা কম-বেশি করা প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, “রাবীগণের মত পার্থক্য অর্থাৎ যারা বেশি বলে উল্লেখ করেছেন তারা একটি দীর্ঘ আয়াত শরীফকে অনেকগুলো ছোট আয়াত শরীফে ভাগ করেছেন। আর যারা কম বলে উল্লেখ করেছেন তারা অনেকগুলো ছোট আয়াত শরীফকে একটি বড় আয়াত শরীফ হিসেবে গণ্য করেছেন। আবার কেউ কেউ তাসমিাহ অর্থাৎ বিসমিল্লাহির রহমানির রহীমকে আলাদা আয়াত শরীফ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। ফলে সঙ্গত কারণেই আয়াতের সংখ্যা কম-বেশি হয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, কুফাবাসীগণ হযরত আলী কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণনা উল্লেখ করে বলেছেন, “কুরআনুল কারীমের আয়াত শরীফের সংখ্যা “ছয় হাজার দু’শত ছত্রিশ।” এ মতটি মুখতার ও তরজীহ্প্রাপ্ত। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতে, “ছয় হাজার দু’শত ষোল।” এটা বছরীগণের মত। শামদেশীয়গণের মতে, “ছয় হাজার দু’শত পঞ্চাশ।” ইসমাঈল ইবনে জাফর মাদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণনায়, “ছয় হাজার দু’শত চৌদ্দ।” এটি ইরাকিগণের মত। মক্কাবাসীগণের মতে, “ছয় হাজার দু’শত বার।” হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতে, “ছয় হাজার দু’শত আঠারো।” উম্মুল মু’মিনীন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম বর্ণনা করেন, “ছয় হাজার ছয়শত ছেষট্টি।”
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী “তাফসীরে কাশ্শাফ, হাশিয়ায়ে মারাকিউল ফালাহ্, হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার” ইত্যাদি কিতাবের বরাত দিয়ে বলেন, “কুরআন শরীফের মধ্যে মোট “ছয় হাজার ছয় শত ছেষট্টি” আয়াত আছে। তার এক হাজার আয়াত ওয়াদাপূর্ণ, এক হাজার আয়াত ভয়সূচক, এক হাজার আয়াত আদেশসূচক, এক হাজার আয়াত নিষেধসূচক, এক হাজার আয়াত কাহিনীমূলক, এক হাজার আয়াত সু-সংবাদপূর্ণ, পাঁচশত আয়াত হালাল-হারাম সম্পর্কে, একশত আয়াত দোয়া ও তাছবীহ্ বিশিষ্ট এবং ছেষট্টি আয়াত নাসেখ-মনসুখ।” আর এ মতটিই “আয়াতে আ’ম্মাহ” বা সর্ব সাধারণের গ্রহণীয় ও মশহুর মত।
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, রাবীগণের উল্লিখিত প্রতিটি বর্ণনা ও মতই ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য। তবে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যে মতটি বর্ণনা করেছেন অর্থাৎ “ছয় হাজার দু’শত ছত্রিশ,” কুফাবাসীগণ তা গ্রহণ করার কারণে তা কুফী মত হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং এ মতটি মুখতার ও তরজীহ্প্রাপ্ত মত বলে উল্লেখ করা হয়। আর হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম যে মতটি বর্ণনা করেছেন অর্থাৎ “ছয় হাজার ছয়শত ছেষট্টি,” তা সর্বসাধারণের নিকট মশহুর মত হিসেবে গৃহীত হয়।
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, উল্লিখিত রাবীগণের বর্ণনাকে প্রচার করা কারো নতুন কোন তাজদীদ (সংস্কার) কিংবা ইজতিহাদ নয়। বরং তা আগে থেকেই বর্ণিত ও প্রচারিত হয়ে আসছে। যেমন, ছয় হাজার দু’শত ছত্রিশটি আয়াত শরীফের সংখ্যা, এটা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন এবং এ বর্ণনাকে কুফাবাসীগণ নিজেদের মত হিসেবে উল্লেখ করেন। এ মতটিই মুখতার ও তারজীহ্ প্রাপ্ত মত বলে গ্রহণ করা হয় এবং মাছহাফে উসমানীতে এটাই লক্ষ্য করা যায়। আর ছয় হাজার ছয় শত ছেষট্টি আয়াত শরীফের সংখ্যা এটা হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম বর্ণনা করেছেন এবং এ বর্ণনাটি রাবীগণের জামানা থেকে অদ্যাবধি সর্বসাধারণের নিকট মশহুর (প্রসিদ্ধ) মত হিসেবে প্রচার ও গৃহীত হয়ে আসছে। আর এ বর্ণনার ক্ষেত্রে বড় আয়াতগুলোকে অনেকগুলো ছোট ছোট আয়াতে বিভক্ত করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত “ছয় হাজার দু’শত ছত্রিশ” এবং হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম হতে বর্ণিত “ছয় হাজার ছয় শত ছেষট্টি” এ মত দু’টি যথাক্রমে মুখতার, তরজীহ্প্রাপ্ত এবং মশহুর ও আম বা সর্বসাধারণের মত হিসেবে সাব্যস্ত হলেও অন্যান্য ছাহাবী ও রাবীগণের বর্ণিত মতগুলো ভুল কিংবা অশুদ্ধ নয়। সেগুলোকে ভুল বলা হলে রাবী তথা ছাহাবীগণের বর্ণনাকে ভুল সাব্যস্ত করা হয় যা তাঁদেরকে দোষারোপ করার সামীল।
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, ছাহাবীগণকে দোষারোপ করা কুফরী। এর পরিণাম সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,“নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য দুনিয়া এবং আখিরাতে আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আহ্যাব/৫৭)
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, কুরআন শরীফের আয়াতের সংখ্যা বর্ণনার ক্ষেত্রে যে বিভিন্ন মত তা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইজতিহাদ এবং তাঁদের যামানা থেকেই তা বর্ণিত হয়ে এসেছে। সে সমস্ত বর্ণনা থেকে একেকজন একেক বর্ণনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন ও গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেউই কোন বর্ণনাকে অস্বীকার করেননি বা ভুল বলে অভিহিত করেননি। শুধু আয়াত শরীফের সংখ্যা বর্ণনার ক্ষেত্রেই নয়, সূরা ও শব্দের সংখ্যা বর্ণনার ক্ষেত্রেও রাবী বা ছাহাবীগণের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের সংখ্যা ছয় হাজার দু’শত ছত্রিশ কেবল এ মতটি সঠিক। আর ছয় হাজার ছয় শত ছেষট্টি, ছয় হাজার দু’শত আঠার, ছয় হাজার দু’শ পঞ্চাশ, ছয় হাজার দু’শত চৌদ্দ, ছয় হাজার দু’শত বার ইত্যাদি মতগুলো ভুল এ বক্তব্য পেশ করা কুফরী। আর কুরআন শরীফের কোন বিষয় সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা অথবা কুরআন শরীফে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমর্জন ইত্যাদি করা হয়েছে- এ আক্বীদা পোষণ করা কুফরী। মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে কুরআন শরীফ সম্পর্কে যাবতীয় কুফরী আক্বীদা ও আমল থেকে হিফাযত করুন।