নোটিশ

শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১১

‘লাইলাতুর রগায়িব’-এর মর্যাদা শবে বরাত, শবে ক্বদরের চেয়েও বেশি।”



যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্‌ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, মুর্শিদে আযম, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, লাইলাতুর রগায়িবহচ্ছে রজব মাসের পহেলা জুমুয়ার রাত্রি। এ পবিত্র রাত্রিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আম্মা হযরত আমিনা আলাইহাস্‌ সালাম-এর মুবারক রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ নেন। লাইলাতুর রগায়িব’-এর মর্যাদা শবে বরাত, শবে ক্বদরের চেয়েও বেশি।

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী এ মুবারক রাত্রির ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার উদ্ধৃতি পেশ করে বলেন, হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন ঘোষণা করলেন, ‘লাইলাতুল রগায়িব’-এর ফযীলত হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাত অর্থাৎ শবে ক্বদর, শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ রাত্রি অপেক্ষা বেশি।তখন সমসাময়িক ইমাম ও ফক্বীহগণ তাঁর নিকট জানতে চাইলেন, “হে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! লাইলাতুল ক্বদর এবং লাইলাতুল বরাতের ফযীলত সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু লাইলাতুর রগায়িব’-এর ফযীলত সম্পর্কে কোথাও বর্ণনা করা হয়নি। তাহলে আপনি কিসের ভিত্তিতে ঘোষণা (ফতওয়া) দিলেন যে, ‘লাইলাতুর রগায়িব’-এর ফযীলত উক্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রিগুলো অপেক্ষা বেশি?”

হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি জবাবে বললেন, “লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাত”-এর ফযীলত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে সত্যিই; কিন্তু লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ রাত্রির সৃষ্টি হয়েছে লাইলাতুর রগায়িবের উসীলায়। অর্থাৎ লাইলাতুর রগায়িবনা হলে লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাতসহফযীলতপূর্ণ কোন রাত্রির সৃষ্টিই হতো না। এ কারণেই এ রাত্রির ফযীলত সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রির চেয়ে বেশি।

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এর সূরা কাওছার’-এর ১ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি।

কাওছার’-এর ব্যাখ্যায় একাধিক অর্থ উল্লেখ করা হয়- প্রথমতঃ কাওছারবলা হয়েছে, হাউজে কাওছারকে। যা খাছ করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করেছেন এবং এটা পান করলে জান্নাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পানির পিপাসা লাগবে না।

দ্বিতীয়তঃ কাওছার-এর আরেকটি অর্থ হলো, খইরে কাছীর। অর্থ- যা অতি উত্তম, অনেক ভাল। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যা কিছু দিয়েছেন তা সর্বকালের জন্য, সর্বদিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম।

শুধু তাই নয়, এমনকি যা কিছু আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক সংস্পর্শে এসেছে সেটাও সবচেয়ে মহান হয়ে গেছে। যেমন, সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম একমত হয়েছেন অর্থাৎ ইজমা হয়েছে যে, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে রওযা শরীফ-এ তাশরীফ রেখেছেন সে রওযা শরীফ-এর যে মাটি মুবারক উনার পা মুবারকে বা শরীর মুবারকে স্পর্শ করে আছে; তার মর্যাদা আরশে আযীমের চেয়েও লক্ষ কোটি গুণ বেশি। (সুবহানাল্লাহ)

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, প্রকৃতপক্ষে মাটির কোন ক্বদর বা মূল্য ছিল না। কিন্তু শুধুমাত্র আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্পর্শের কারণে আরশে আযীমের চেয়ে মূল্যবান, ফযীলতপ্রাপ্ত ও সম্মানিত হয়েছে। ঠিক একইভাবে বাজারে অনেক তরিতরকারি রয়েছে দেশে বিদেশে। কোন তরিতরকারীর সাথে ঈমানের কোন সম্পর্ক নেই। তবে কদুর সাথে ঈমানের সম্পর্ক রয়েছে। তার কারণ হলো এই যে, স্বয়ং আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদুকে পছন্দ করেছেন ও খেয়েছেন। সেজন্য কুরআন-সুন্নাহ মুতাবিক ইমাম-মুজতাহিদগণ ফতওয়া দিয়েছেন, কেউ যদি বলে আমি কদুকে পছন্দ করি না, তাহলে সে কাট্টা কাফির হয়ে যাবে।

প্রকৃতপক্ষে কদুর কোন মর্যাদা ছিল না। একমাত্র আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কদুর সম্পর্কের কারণে কদু যেহেতু মর্যাদাবান, ফযীলতপূর্ণ হয়েছে সেহেতু কদুকে পছন্দ করা, মুহববত করা ঈমানের শর্ত হিসেবে আরোপ করা হয়েছে।

ঠিক একইভাবে লাইলাতুর্‌ রগায়িব’-এর ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্ব শবে ক্বদর, শবে বরাত ও অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ রাত্রের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণ হলো, ‘লাইলাতুর্‌ রগায়িব’-এর সম্পর্ক সরাসরি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে।

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী লাইলাতুর্‌ রগায়িব’-এ করণীয় আমল সম্পর্কে বলেন, লাইলাতুর রগায়িব এমন ফযীলতপূর্ণ রাত্রি, যে রাত্রিটি হচ্ছে তাসবীহ-তাহলীল, দোয়া-দুরূদ, ছলাত-সালাম, যিকির-আযকার, তওবা-ইস্তিগফার, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম, ছদকা-খইরাত, নামায-কালাম পাঠের রাত্রি। সর্বোপরি এ রাত্রিটি হচ্ছে রহমত, বরকত, সাকীনা ও মাগফিরাত হাছিল করার ও দোয়া কবুলের রাত্রি। যা আগামীকাল দিবাগত রাত্রে উদ্‌যাপিত হবে। আমরা ইনশাআল্লাহ আমাদের সুন্নতী জামে মসজিদে বাদ ইশা পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের পর বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করবো।

মুজাদ্দিদে আযম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী সকলকে লাইলাতুর রগায়িব’-এর ফাযায়িল-ফযীলত জেনে এর হাক্বীক্বী হক্ব আদায় করার এবং উক্ত বিশেষ দোয়া ও মুনাজাতে শরীক হওয়ার আহ্বান জানান।