নোটিশ

শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১২

মুসলিম নির্যাতন (৯)- ভারতের হায়দারাবাদে মুসলিম নির্যাতনের নির্মম ইতিহাস

হায়দারাবাদে মুসলিম নির্যাতনঃ

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী হায়দারাবাদ ও সানগারেড্ডি শহরে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা চলছে। ২৯ মার্চ ২০১২ ঈসায়ী তারিখ হতে শুরু হওয়া এই দাঙ্গায় মুসলমানদের বহু মসজিদ ও বাড়িঘর পুড়ানো হয়েছে, লুটপাট করা হয়েছে মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে মুসলিম স্থাপনা। তবে মুসলমানের আহত হওয়ার কথা প্রকাশ করলেও নিহতের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো।

দেশটির পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চসাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিভাগর একটি সূত্র জানিয়েছে, “কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা, অন্ধ্র প্রদেশ সরকারের হুইপ এবং সানগারেড্ডি শহর থেকে বিধানসভার সদস্য, টি জয়প্রকাশ রেড্ডি এই দাঙ্গা সৃষ্টির মূল হোতা। সেই হিন্দু মৌলবাদী উগ্র সন্ত্রাসীদেরকে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করতে লেলিয়ে দেয়।
পুলিশের সূত্র জানায়, “রেড্ডির দিকেই মূল সন্দেহের তীর। তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ যোগাড় করা হয়েছে। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কিরন কুমার রেড্ডির সাথে তার সু-সম্পর্কের কারণে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
খবরে বলা হয়, দাঙ্গার সূচনা হয় গত মার্চ মাসের ২৯ তারিখ সানগারেড্ডি শহরে। ঐ শহরে এক সাইবার ক্যাফেতে কম্পিউটারের স্ক্রীন সেভারে মৌলবাদী হিন্দুরা একটি ছবি সেভ করে। সেখানে দেখানো হয়, “রাম একটি মুসলিম স্থাপনা ধ্বংস করছে। এই বিষয়টি মুসলমানদের দৃষ্টিগোচর হলে তারা তৎক্ষণাত তার প্রতিবাদ করে। হিন্দুরা এই প্রতিবাদ শুনে জড়ো হয় এবং মুসলমানদের উপর চরম আক্রশে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মৌলবাদী হিন্দু সন্ত্রাসীরা মুসলমানদের ঘরবাড়ি ভাংচুর করে ও পুড়িয়ে দেয়।
পরিস্থিতি পর্যায়ক্রমে উত্তপ্ত আকার ধারণ করতে থাকে। গত ৬ই এপ্রিল ছিল হিন্দুদের হনুমান জয়ন্তী এ সময় পুলিশ দাঙ্গা এড়াতে উগ্রবাদী হিন্দুদের সংগঠন বিশ্বহিন্দু পরিষদর নেতা প্রাভিন টোগাডিয়াকে ঐ এলাকায় না যেতে বার বার অনুরোধ করে। কিন্তু সে এরপরও ঐ এলাকায় যায় এবং র্যারলির মধ্যে মুসলিমবিরোধী উত্তেজক বক্তব্য প্রদান করে।
এরপর পরিস্থিতি বিপর্যয়কর রূপ ধারণ করে। এর একদিন পরেই ৭ই এপ্রিল হায়দারাবাদে একটি মন্দিরে সবুজ কাপড়ে মুড়ানো গরুর গোশত পাওয়া গিয়েছে এমন অজুহাতে হায়দারাবাদে নিরীহ মুসলমানদের মসজিদ ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় মৌলবাদী হিন্দু সন্ত্রাসীরা। ৭-৮ এপ্রিল দুই দিন এই দাঙ্গা তীব্র আকার ধারণ করে। পুলিশ ঐ এলাকায় কারফিউ জারি করলেও মুসলমানদের উপর আক্রমণ থেমে থাকেনি। ১৩ এপ্রিল তারিখেও আক্রমণ চলে মুসলমানদের উপর। মুসলমানরা এই দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উল্টো মুসলমানদেরই ধরপাকড়-গণগ্রেফতার করা হচ্ছে।
এদিকে উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-এর আন্তর্জাতিক প্রেসিডেন্ট জি রাগহাবা রেড্ডি মুসলমানদের উপর দোষ চাপিয়ে বলেছে, “আমরা অবশ্যই তাদের উপর প্রতিশোধ নেব
চলতি ২০১২ সালের মার্চ মাসের প্রথম মঙ্গলবার কলকাতা ও হাওড়ার উর্দুভাষী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাক সার্কাস, মেতিয়াবুরুজ, ডক এবং পিলখানাতে ব্যাপক হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত সংবাদ কলকাতার মিডিয়াগুলো প্রচার করেনি। অথচ এসব দাঙ্গায় মুসলমানদের জান-মাল, সম্ভ্রম-এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করা হয়।
ভারত মূলত হিন্দু নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র। এরা ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে ধোঁকা দেয়। এর ফলে ভারতীয় মুসলমানগণ আজ নানা ভাবে নীরবে নিপীড়নে পিষ্ট হচ্ছে। রাজনীতির ময়দানে মাঝে মধ্যে এসব পিষ্ট মানুষের কিছু ক্রন্দন শোনা যায়, প্রতিবাদও উঠে। কিন্তু তাতে সে দুঃখের বোঝা নামে না। মুসলমানেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে সামনে এগুবে সে পথও খোলা নেই। আলীগড়, মুরাদাবাদ, আহমদাবাদ, এলাহাবাদ বা মোম্বাইয়ের মতো কিছু কিছু শহরের মুসলমানেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে যে সামনে এগুলেও হঠাৎ দাঙ্গা বাধিয়ে তাদের সারা জীবনের সম্বলকে মুহুর্তের মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয় বা লুট করে নেয়া হয়। সে দুর্ভোগ নিয়েও ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় কোনো লেখালেখি নেই। সরকার মাঝেমধ্যে ঘটা করে কমিটি করে মুসলমানদের সমস্যা জানার জন্য। রিপোর্টও বের হয়। তাতে সুপারিশও থাকে। কিন্তু সেগুলো কখনোও কার্যকর করা হয় না।
ভারতে মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ হলেও সরকারী চাকুরীতে তাদের ৩ ভাগও নিয়োগ দেয়া হয় না। এমনকী নিকটতম পশ্চিমবঙ্গেও একই অবস্থা যদিও সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী মুখে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে। কিন্তু কার্যত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক নিয়োগে ৮৩৪ জনের মধ্যে মুসলমান নেয়া হয়েছে মাত্র ১৬ জন। অর্থাৎ শতকরা ৩ ভাগেরও কম।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “সব মুসলমান মিলে একটা দেহের ন্যায়। দেহের এক স্থান আঘাত পেলে তা সারা দেহেই সঞ্চালিত হয়। সে হিসেবে ভারতের মুসলমানদের প্রতি এত অবর্ণনীয় অত্যাচার নিপীড়নে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণ কেউ চুপ করে বসে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণসহ সরকারকেও প্রতিবাদে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হতে হবে। ভারতের প্রতি চাপ প্রয়োগ করতে হবে। সেখানে মুসলমানদের প্রতি নিপীড়ন বন্ধে ও হক্ব আদায়ের ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সূত্রঃ
১) http://al-ihsan.net

[বিঃদ্রঃ তথ্য প্রদানে ভাষাগত কোন ভুল থাকলে দয়া করে মেইল করে জানাবেন। নির্যাতনের ঘটনাসমূহ সংগ্রহে থাকলে দয়া করে রেফারেন্সসহ মেইল করবেন।]


[ট্যাগঃ পীর-মুরীদি (মুরিদি) ব্যবসাধারী ভন্ড-পীর সহ ধর্মব্যবসায়ীদের জম রাজারবাগ দরবার শরীফ, রাজারবাগী পীর সাহেব কিবলা আলাইহিস সালাম]