চেচনিয়া পরিচিতি
চেচনিয়া রুশ ফেডারেশনের অন্তর্গত
একটি মুসলিম স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল। চেচনিয়া রাশিয়ার উত্তর ককেসাস অঞ্চলে অবস্থিত।
চেচনিয়ার আয়তন ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ১৪ লাখ। চেচনিয়ার অধিকাংশ
জনগণ মুসলিম। চেচনিয়া বহু বছর ধরে স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে
রুশ আগ্রাসনের ইতিহাস প্রায় চারশ' বছরের। পিটার দি গ্রেট
থেকে শুরু করে বর্তমান মেদভেদেভ পর্যন্ত সব শাসকই চেচনিয়ার স্বাধীনতার দাবিকে অগ্রাহ্য
করে এসেছে।
চেচনিয়া বিদ্রোহের অতীত ইতিহাসঃ
রাশিয়া ও চেচনিয়ার ক্ষুদ্র
কোকেসিয়ান প্রজাতন্ত্রের দ্বন্দ্ব ৩ শতাব্দী পূর্বে প্রায় ঈসায়ী ১৭০০ সাল থেকেই চলে
আসছে, যখন সার পিটার দি গ্রেট তার
অভিযানের জন্য এই পাহাড়ী অঞ্চল ব্যবহার করত যা কিনা এশিয়া ও ইউরোপকে পৃথক করে রেখেছে।
রাশিয়ানদের প্রসারণনীতি এবং
কোসাকবাসীদের আগমণকে কেন্দ্র করে কোকেসাসের অধিকাংশ মুসলিম জনগণ মনসুর উসুরমা এর নেতৃত্বে
ঈসায়ী ১৭৮৫ থেকে ১৭৯১ সালে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
১৯শ শতাব্দীর প্রথমার্ধ্বে
চেচনিয়া ছিল কোকেসাসের স্বাধীনতার জন্য ইসলামিক বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু। মুসলমানেরা
এ সময় ১৮৩৪ থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত ইমাম শামাইল এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেন। পরবর্তীতে
১৮৭৭ থেকে ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত আবারও বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল।
১ম বিশ্ব-যুদ্ধের পরঃ
ঈসায়ী ১৯১৭ থেকে ১৯২৪ সালের
মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের পূর্বে চেচেনরা যুদ্ধের মাধ্যমে রাশিয়ান বলশেভিক ও শ্বেত
রাশিয়ানদেরকে হটানোর জন্য অন্য অঞ্চলের অধিবাসীদের সাথে যোগ দেয়। এ সময় দাজেস্তানের
নকশবন্দী মুসলমানেরা শেখ ও নাজমুদ্দীনের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয় এবং ১৯১৭ সালে উত্তর কোকেসাসে
ইসলামী রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়। সোভিয়েত শাসনের সময় চেচেন ও ইংগুস্তিয়ানকে স্বায়ত্ত্বশাসিত
অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয় ও পরে ১৯৩৪ সালে তারা একত্রিতভাবে একটিমাত্র অঞ্চলে পরিণত
হয়। এটি ১৯৩৬ সালে প্রজাতন্ত্রে রূপ নেয়।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ঃ
১৯৪০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে
হাসান ইসরাইলভ ও হুসাইন তারা দক্ষিণ-পূর্ব চেচনিয়ার পাহাড়গুলোতে গেরিলা বাহিনী গঠন
করে যারা সোভিয়েতের বিরুদ্ধে সামরিক আন্দোলনের জন্য গেরিলাদের সংগঠিত করছিল। ১৯৪০ সালে
ইসরাইলভের বিদ্রোহী বাহিনীর পরিধি দক্ষিন ও কেন্দ্রীয় চেচেন-ইঙ্গুস্তিয়ানে বিস্তার
লাভ করল। ১৯৪১ সালে জার্মান আক্রমণের সময় আন্দোলনে বহু সমর্থক যোগাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
অনেক অঞ্চলে প্রায় ৮০% মানুষ উনাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেন। কিন্তু সোভিয়েত বিদ্রোহীদের
দমনের জন্য বোমা নিক্ষেপণের পদক্ষেপ নিয়েছিল। বহু বেসামরিক মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
১৯৪২ সালে মাইরবেক শেরিপভ
নামক ব্যক্তি শাতই, খিমখক ও ইতুম-কেল অঞ্চলে বিদ্রোহ
বিস্তার করেছিলেন এবং ইসরাইলভদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। তারা একত্রে পশ্চিম দাজেস্তান
নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছিলেন। জার্মানি এ সময় ইসরাইলভের সাথে হাত মিলাতে চেয়েছিল,
কিন্তু ইসরাইলভ তা প্রত্যাখ্যান করে দেন। জার্মান
নাজি বাহিনী ও চেচেন বাহিনীর মধ্যে চিন্তা ধারায় ব্যাপক পার্থক্য ছিল। এছাড়া হাসান
ইসরাইলভ তিনি হিটলারকে অপছন্দ করতেন।
মুসলিম গণহত্যার ষড়যন্ত্র:
২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সোভিয়েত
কর্তৃপক্ষ মানুষদেরকে সেনাবাহিনীতে জোরপূর্বক অন্তর্ভুক্ত করছিল। কিন্তু চেচেন-ইঙ্গুশরা
এটার ব্যাপকভাবে বিরোধিতা করেছিল। ১৯৪২ সালে শীতকালে যখন কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে
ঢুকাচ্ছিল, তখন পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী
সেনাবাহিনীতে সক্ষম ১৪০০০ চেচেনদের মধ্যে মাত্র ৪৩৯৫ জনকে লিস্ট করা সম্ভব হয়েছিল,
আর ২৩৬৫ জন পালিয়ে গিয়েছিল। সোভিয়েত সরকার এ সময়
অনেক চেষ্টা করে ১৭৫০০ জন চেচেনকে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছিল, যার অনেকে পালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যে রেড আর্মি
থেকে পালিয়ে যাওয়া চেচেন ও ইঙ্গুশদের সংখ্যা ৫০০০০ এ পৌঁছেছিল এবং ১৪০০০ জন পাহাড়ে
পলায়নরত ছিলেন।
এরপরও ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়
৪০,০০০ চেচেন ও ইঙ্গুশ মানুষেরা সোভিয়েতের রেড আর্মির
পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন, তন্মধ্যে ৫০ জনকে
‘হিরো অব সোভিয়েত’ ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু এরপরও সোভিয়েত সরকার চেচেনদেরকে জার্মানি নাজী বাহিনীর সাথে সহায়তা করার
দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। কেননা নাজী বাহিনী ১৯৪২-৪৩ সালে শীতকালে চেচনিয়া-ইঙ্গুস্তিয়ার
পশ্চিমাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। এমন ষড়যন্ত্রমূলক দাবীও করা হয়েছিল যে, চেচেনরা নাকি নাজী বাহিনীকে আজারবাইজানের পাহাড় দেখিয়ে দিয়েছিল
যা কিনা তেল-ক্ষেত্র ছিল। আর ২য় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনীতে যোগ দেওয়া চেচেনদের সংখ্যা
তুলনামূলক কম ছিল।
চেচেন ও ইঙ্গুশ লোকজন নিজেরাই
স্বাধীনতার দাবী করছিল সোভিয়েতের বিরুদ্ধে। এ সময় ২য় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েতের পক্ষে অনেক
চেচেন-ইঙ্গুশ রেড আর্মিতে যুদ্ধ করলেও সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সোভিয়েত সরকার
চেচেন ও ইঙ্গুশদের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। তারই ফলশ্রুতিতে চেচেন ও ইঙ্গুশ মুসলমানদের গণহত্যার
পরিকল্পনা করে তারা।
অপারেশন লেন্টিলঃ
১৯৪৩ সালের ১৩ অক্টোবর ১,২০,০০০ মুসলমানকে চেচনিয়া-ইঙ্গুশতিয়াতে
ব্রিজ সংস্কারের জন্য পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর ১৯৪৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী ‘রেড আর্মি দিবস’-এ জোসেফ স্টালিনের অনুমতিক্রমে ল্যাভরেনটাই বেরিয়া তাদের সবাইকে পার্টি বিল্ডিং
এ ডেকে আনল এবং তাদের জানিয়ে দেওয়া হল যে, জার্মানিদেরকে সহায়তার অভিযোগে শাস্তিস্বরূপ তাদের সবাইকে নির্বাসিত করা হল। সমগ্র
জাতি থেকে ৫০০,০০০ মানুষকে সাইবেরিয়া,
কাজাখস্তান ও কিরগিস্তানে নির্বাসিত করা হয়েছিল।
নির্বাসিত এসব জনগণের মধ্যে ৪০-৫০% ছিল শিশু। নির্বাসিত করার পূর্বেই অনেককে শহীদ করা
হয়েছিল, অনেককে নির্বাসন যাত্রায় শহীদ
করা হয়েছিল, পরেও শহীদ করা হয়েছিল,
কিন্তু সেগুলো হিসেবে আসে নি। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত
নির্বাসিত এসব মুসলমান চেচনিয়াতে ফিরে যেতে পারেন নি। এই অপারেশনকে অপারেশন লেন্টিল
বলা হয়।
খাইবাখ মুসলিম গণহত্যাঃ
নির্বাসিত মুসলমানদের তাপ
নিরোধক কোন ব্যবস্থা ছাড়াই গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ফলে প্রতিকূল আবহাওয়ায় অনেকেই
যাত্রাপথেই ইন্তেকাল করেছিলেন। কিন্তু, ভয়াবহ ও পাশবিক এক ঘটনা ঘটে গেল খাইবাখ নামক অঞ্চলের নিকট। পথিমধ্যে প্রায় ৭০০
জন নারী ও শিশুসহ মুসলমান গ্রামবাসীকে সোভিয়েত কাফিরেরা তালাবদ্ধ করে দিয়ে তারা আগুন
জ্বালিয়ে দেয়। ফলে সকলে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে শাহাদতবরণ করেন। এমনকি যারা পালিয়ে যেতে চেষ্টা
করেছিলেন, উনাদেরকেও গুলি করে শহীদ করা
হয়েছিল। এমন ন্যাক্কারজনক কাজের জন্য ‘গেভেসিয়ানি’কে ‘ল্যাভরেন্টি বেরিয়া’ তাকে অভ্যরথনা জানায় (নাউযুবিল্লাহ)।
পরবর্তী গ্রীষ্মকালে চেচনিয়ার
অনেক অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করে রাশিয়ান নাম দেওয়া হয়। মসজিদ ও মাজার শরীফ ভেঙ্গে ফেলা
হয়। চেচেন মুসলমানদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক কিতাবাদি পুড়ে ফেলা হয়। চেচেন মুসলমানদের নাম-নিশানা
এ সময় ইতিহাস ও এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে মুছে ফেলা হয়। পরবরতীকালে ইতিহাসবিদগণ খাইবাখ
গণহত্যার নমুনা পুনরুদ্ধার করেন।
নির্বাসন মুক্তিঃ
নির্বাসিত জীবনে মুসলমানেরা
চরম কষ্টে দিনাতিপাত করেছিলেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয় সার্বক্ষণিক উনাদের যাতনা দিত।
মুসলমানদেরকে নির্বাসনে দেওয়ার এ সুযোগে চেচেন লাইব্রেরীগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
চেচনিয়ার মুসলিম জনপদকে গ্রোজনী অবলাস্টে রূপান্তরিত করা হল এবং অনেক জমি বিভিন্ন রাজ্যের
অংশ করে দেওয়া হল। এমনকি মুসলিম জনপদে শূন্য পড়ে থাকা বাড়িগুলোতে বিশ্বযুদ্ধে বাস্তুহারাদের
থাকার ব্যবস্থা কর হল। পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে শুধুমাত্র ইহুদী ও মেসখেতিয়ান তুর্কিদের
থাকতে দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই চেচনিয়ার মুসলিম জনপদ থেকে মুসলমানদের নাম নিশানা মুছে
ফেলার হীন ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল স্টালিন। অবশেষে ১৯৫৩ সালে জালিম স্টালিনের মৃত্যু হলে
১৯৫৭ সালে সোভিয়েতের তৎকালীন সরকার এ অধ্যাদেশ জারী করল যে, নির্বাসিত মুলমানেরা সোভিয়েত ইউনিয়নের যে কোন প্রান্তে পুনরায়
স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারবে। কিন্তু মুসলমানেরা তাদের আবাসভূমিতে ফিরে এলেও কাফিরেরা
আবারো নানা ছূতায় দাঙ্গা শুরু করে। ১৯৫৮ সালে এমনি এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল।
১৯৯০ সাল পর্যন্ত চেচেনিয়া ভাষার কোন স্কুল করতে দেওয়া হয় নি যাতে মুসলমানেরা জ্ঞানের
দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েন।
বর্তমান অবস্থাঃ
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন
ভেঙ্গে গেলে দীর্ঘকালের রুশ দুঃশাসনের কবল থেকে পরিত্রাণ লাভের প্রত্যাশায় স্বাধীনচেতা
চেচেনরা ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে গণভোটের আয়োজন করে। গণভোটে চেচনিয়ার অধিকাংশ জনগণ
স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু তৎকালীন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিন
চেচনিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং চেচনিয়ায় প্রেসিডেন্টের শাসন
জারি করে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। কিন্তু চেচেন স্বাধীনতাকামীদের প্রবল প্রতিরোধের
মুখে আগ্রাসী রুশ বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ অক্টোবর চেচনিয়ায় প্রেসিডেন্ট
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে সোভিয়েত বাহিনীর সাবেক জেনারেল জওহর দুদায়েভ
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং তিনি ২৪ নবেম্বর ১৯৯১ আনুষ্ঠানিকভাবে চেচনিয়ার স্বাধীনতা
ঘোষণা করেন। দুদায়েভের এ পদক্ষেপ রাশিয়ার শাসকগোষ্ঠী মেনে নিতে পারেনি।
১ম চেচেন যুদ্ধঃ
১৯৯৪ সালের ২৬ নবেম্বরের পর
রাশিয়া চেচনিয়ায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। আসলান মাশখাদভ নামক ব্যক্তির নেতৃত্বে
বিদ্রোহীরা গেরিলা অপারেশন চালাতে থাকে। বিদ্রোহীদের দমনে রাশিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট
বরিস ইয়েলেৎসিন চেচনিয়ায় ৪০ হাজার সৈন্য প্রেরণ করে। রুশ বাহিনীর আশা ছিল দ্রুত
বিদ্রোহীদের পরাস্ত করে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনীর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে। কিন্তু
পরাশক্তি রাশিয়া তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। অবশেষে দুই মাস ধরে তীব্র লড়াইয়ের
পর রুশ বাহিনী গ্রোজনী অধিকার করে। ফলে চেচেন স্বাধীনতাকামীরা গেরিলা যুদ্ধের আশ্রয়
গ্রহণ করে। গ্রোজনী দখলের দু'বছর পর যখন বেসামরিক
শহীদান নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ৫০,০০০ এ পৌঁছায়,
তখন রাশিয়া সেখান থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করে
নেয় এবং অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার এ প্রত্যাখ্যান সম্পন্ন হয় ১৯৯৭ সালে। তবে
চেচেন বিদ্রোহীরা এ অস্ত্রবিরতি প্রত্যাখ্যান করে রুশ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম
অব্যাহত রাখে।
সুসংবাদ এই যে, ইয়ান্দারবিভের প্লাটফর্ম প্রকাশ্যে একটি মুসলিম রাজ্য ছিল যেখানে
শরীয়াহ আইন জারী ছিল এবং বৈদেশিক নীতিও ইসলামের আদলেই হত। আসলান মাসকাদভ ১৯৯৭ সালে
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। এ সময় সে অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল।
চেচনিয়ান তুমুল বিদ্রোহের মুখে মাসকাদভ ১৯৯৮ সালে ‘ইচকারিয়া’তে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে
সম্মতি দেয় এবং শরীয়াহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়।
২য় চেচেন যুদ্ধঃ
১৯৯৯ সালের আগস্টে চেচেন ও
আরবীয়ান বিদ্রোহীগণ শামিল বাসায়েভ ও আমির খত্তাবের নেতৃত্বে দাজেস্তানে স্বাধীনচেতা
যুদ্ধ-বাহিনী গঠন করেন। চেচেন বিদ্রোহীদের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে তৎকালীন রাশিয়ার
নতুন প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন তাদের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালের ১লা অক্টোবর কঠোর সামরিক
অভিযান চালায়। রাশিয়ান বাহিনী চেচনিয়াতে ঢুকে পড়ে। ওই রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযানের পরও
বিদ্রোহীদের নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। বিদ্রোহীদের তৎপরতা অব্যাহত থাকে। আর ৯/১১ আমেরিকার
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আক্রমণের পর রাশিয়া চেচেনদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার
মোক্ষম সুযোগ পায়। ২০০৯ সালের এপ্রিলে রাশিয়া মুসলমান নিধনের এ সন্ত্রাসী আক্রমণের
সমাপ্তি ঘোষণা করে এবং বিদ্রোহী বাহিনীর নেতা আহমদ জাকায়েভ ২০০৯ সালের ১লা আগস্ট যুদ্ধবিরতির
ঘোষণা দেন।
এভাবেই চেচনিয়াতে বিভিন্ন
ষড়যন্ত্রের জাল ফেলে চলছে মুসলিম নিধন, মুসলমানদের উপর অকথ্য নির্যাতন এবং মুসলিম গণহত্যা। ১৯৯৪ সালেই ১ম চেচেন যুদ্ধে
প্রাক্কালে ডজনের মত গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। ২০০৮ সালের জুনে চেচনিয়াতে ৫৭টি গণকবর
নিবন্ধন করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালে ২য় চেচেন যুদ্ধের প্রাক্কালে ৫০০০ বেসামরিক শহীদানসহ
হাজার হাজার শহীদকে অনেক অজানা স্থানে কবর দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে গ্রোজনীতে ৮০০ শহীদের
এক বিরাট গণকবর খুঁজে পাওয়া যায় যা ১৯৯৫ সালে সংঘটিত হয়েছিল। চেচনিয়ান মুসলমানদের উপর
যুগের পর যুগ ধরে রাশিয়ান বর্বর কাফিরেরা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ নিপীড়িত মুসলমানদেরকেই দোষী সাব্যস্ত করছে কাফিরগোষ্ঠী।
আসুন, চেচনিয়ান অসহায় মুসলমানদের
উপর চালানো নির্যাতন, সম্ভ্রমহরণ, গণহত্যার ইতিহাস সকল মুসলমানের জেনে সেটার প্রতিবাদ করি এবং
এসব থেকে শিক্ষা নেই।
সূত্রঃ
১) http://www.smh.com.au/articles/2004/09/05/1094322627265.html?oneclick=true
২) http://en.wikipedia.org/wiki/Operation_Lentil_(Caucasus)
৩) http://en.wikipedia.org/wiki/Khaibakh_massacre
[বিঃদ্রঃ তথ্য প্রদানে কোন ভুল থাকলে দয়া করে মেইল করে জানাবেন]
[ট্যাগঃ পীর-মুরীদি (মুরিদি) ব্যবসাধারী ভন্ড-পীর সহ ধর্মব্যবসায়ীদের জম রাজারবাগ দরবার শরীফ, রাজারবাগী পীর সাহেব কিবলা আলাইহিস সালাম]