আসাম পরিচিতিঃ
আসাম ভারতের একটি উত্তরপূর্বাঞ্চলীয়
রাজ্য। খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে কামরূপ নামে এই অঞ্চলের পরিচিতি ছিল। এই অঞ্চলে
আহোম সাম্রাজ্য (১২২৮-১৮২৬) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে এই রাজ্য "আসাম" নামে
পরিচিত হয়। আসামের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভূটান এবং বাংলাদেশের
সঙ্গে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই আসামে অধুনা বাংলাদেশ (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান)
থেকে শরণার্থীরা আসতে শুরু করে।
১৯৬১ সালে আসামের তৎকালীন সরকার বিধানসভায় একটি বিল
পাশ করে, যার দ্বারা সমগ্র আসামে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসাবে অসমীয়াকে
স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে আসামের কাছাড় অঞ্চলের বঙ্গভাষীদের ভাষা আন্দোলনের
পরে বিলটি প্রত্যাহৃত হয়।১) নীল ম্যাসাকারের নামক মুসলিম গণহত্যার সূত্রপাতঃ
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে
আসামের ব্রমপুত্র নদের অববাহিকায় বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদের এক জনপথ গড়ে উঠে। এ
অভিবাসী নতুন না। দেশ বিভাগের আগে এ উপমহাদেশে এটা হয়ে এসেছে বারবার। কখনো বাংলাদেশ
থেকে ইন্ডিয়ায়, কখনো ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে বা পাকিস্তান থেকে ইন্ডিয়াতে
অথবা ইন্ডিয়া থেকে পাকিস্তানে অভিবাসি হয়ে এসেছেন অনেকজন।ভারতের জ্যোতি বসু, সুচিত্রা সেন, সমরেশ মজুমদার, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট
মোশারফ, বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ মাইগ্রেট করে আসার অন্যতম
উদাহরণ। সেই একই ধারাবাহিকতার ব্রমপুত্র নদের অববাহিকায় আবাস গড়ে উঠে কয়েক হাজার
বাংলাদেশীর। যারা আসামে অনেকদিন ধরেই বসবাস করে আসছিলেন।
১৯৭৯ সালের শুরুর দিকে, আসামে নির্বাচন কমিশন ৪৫ হাজার বিদেশী ভোটারকে ভোটের অধিকার দেন । ঘটনার শুরুটা
এখানেই। অল আসাম স্টুডেন্ট ফোরাম ঘোষণা করে বিদেশীদের ভোটার হিসাবে এদের অন্তর্ভুক্ত
করলে আসামে রক্তের হলী খেলা বয়ে দেয়া হবে। শুরু হয় বাংলাদেশী খেদাও আন্দোলন। সাথে
যোগ দেয় আরও কিছু রাজনৈতিক সংগঠন। গঠন হয় All Assam Gana Sangram Parishad (AGSP)।AGSP বাংলাদেশী খেদাও আন্দোলনে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত প্রায়
৩০০ এর মত খুন দেড় হাজার এর বেশী মানুষ আহত, জ্বালাও পোড়াও সহ অনেক
ঘটনা ঘটে।
কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৮৩
সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন গোষনা করেন। এ নির্বাচন আদালত পর্যন্ত
গড়ায়। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস নেত্রী ইন্দ্রাগান্ধীর হস্তক্ষেপে নির্বাচনের আয়োজন হয়।
সেই দিন থেকেই আসাম অগ্নিগর্ভ ধারণ করে। AGSP নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা
দেয়। কংগ্রেস সহ কিছু দল নির্বাচনের পক্ষেও মিছিল বের হয়। জনতা নির্বাচনের দাবিতে
মিছিল করেন। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে তারা জোড় দাবিতে সোচ্ছার
হন।
সারা আসামে রিউমার ছড়ানো
হয় হাজার হাজার বাংলাদেশী বাংলাদেশ থেকে এসে ভোটে অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশীদের শিক্ষা
দেয়ার জন্য AGSP শপথ নেয়। গঠন করা হয় আলাদা আরেকটি ফোরাম। এদিকে ভোট গ্রহন
চলছিলো। আসামের মরিগণ জেলার একটা অংশের কথা। সেখানে মোহাম্মাদ হোসেন নামের এক স্বতন্ত্র
প্রার্থী হেমান্দ্র নারায়ণ নামের এক প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। হেমান্দ্র
নারায়ণ ২৫ বছর ধরে ঐ এলাকা শাসন করে আসছিলেন। এতে করে আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠা AGSP। প্রতিশোধ নেশায় পাগল হয়ে
যায়।
মুসলিম গণহত্যার নির্মম ঘটনাঃ
Nellie Massacre হয়েছিল আসামে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ সালে। এটি ৬ ঘণ্টা স্থায়ি
হয়েছিল। এই হত্যা যজ্ঞে ৫০০০ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল যার মধ্যে ৩৫০০-ই ছিল শিশু(মুসলিম)।
এ হত্যাকান্ডের এখনো একটিরও বিচার হয়নি। গণহত্যার মূল শিকার ছিল ৭১ এর যুদ্ধে ভারতে
পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশী মুসলমানরা। আসামের ১৪ টি গ্রামে এই হত্যা যোগ্য চালানো হয়
গ্রাম গুলো সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হয়,তার মধ্যে একটি ছিল Nellie । গণহত্যা যে ১৪টি গ্রামের
উপর চালানো হয়েছিল, সেগুলো হল- আলিসিঙ্গা, খুলাপাথার, বাসুন্ধরি, বাগদুবা বিল,
বাগদুবা হাবি, বরজোলা, বুতুনি, ইন্দুরমারি,
মাটি-পর্বত, মুলাধারি, মাটি-পর্বত নং-৮, সিলভেটা, বরবুরি এবং নওগা জেলার নীল গ্রাম। এই হত্যার কারন ছিল মুলত
আসামের বিরোধী দলের দাবী। তারা দাবী করে যদি অবৈধ আধিবাসিদের সরানো না হয় তবে তারা
নির্বাচনে অংশ নিবে না। তাদের এই দাবির প্রেক্ষিতে ভারতের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী RSS এই হত্যা যোগ্য পরিচালনা করে।
এই নির্মম হত্যার পর ভারত
সরকার জুলুমের শিকারদের মাত্র ৫০০০ টাকা ধরিয়ে দেয়। ৩১০ টি মামলা হয় এই জঘন্য হত্যাকারিদের
কিন্তু কোনটিরই পরে মিমাংশা হয়নি এবং অপরাধীরা কোন শাস্তি পায়নি।
১৯৭১-এ পাকিস্তনিদের নির্মম
পাশবিক হত্যাযজ্ঞের জন্য আমরা তাদের হায়না, পিশাচ ইত্যাদি উপাধি দিয়েছি।কিন্তু
এই নিষ্পাপ শিশুদের যারা হত্যা করেছে তাদের আমরা কি উপাধি দিব? ভারত তাদের নিজেদের স্বার্থে আমাদের সাহায্য করেছে।পাকিস্তান ছিল তাদের বড়
শত্রু। তাদের শ্ত্রুকে ধ্বংস করে দিতেই তারা আমাদের সাহায্য করেছিল।বলা হয় ১৯৭১ সালে
ভারতীয় সৈন্যরা এদেশের বদনা পর্যন্ত লুটে নিয়েছিল ।
সেই ন্যক্কারজনক ঘটনা যাতে
বিশ্ববাসী না জানতে পারে তাই ভারতীয় পশুরা উইকিপিডিয়া থেকে সব ছবি মুছে দিয়েছে।
সূত্রঃ ১) http://www.tehelka.com/story_main41.asp?filename=Ne140309an_untold.asp
২) http://twocircles.net/2009feb20/genesis_anti_foreigners_movement_assam.html
৩) http://en.wikipedia.org/wiki/Nellie_massacre
৪) http://twocircles.net/2009feb22/nellie_1983_crime_no_punishment.html
৫) http://www.somewhereinblog.net/blog/ushra91/29498460Assam
agitation:
৬) http://www.milligazette.com/Archives/2005/16-31Jan05-Print-Edition/163101200549.htm
২) কোকড়াঝড় গণহত্যা (২০১২ ঈসায়ী):
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়
রাজ্য আসামের কোকড়াঝড় শহরে আবারো মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। ভূমির মালিকানা
নিয়ে বোদো সম্প্রদায়ের সন্ত্রাসীরা মুসলিম বিরোধী এ দাঙ্গা শুরু করে। বিভিন্ন মিডিয়ায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৪৩ জন নিহত ও কমপক্ষে শত শত আহত হওয়ার খবর প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে মৃতের
সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। গত ইয়াওমুস সাবতি শনিবার কোকড়াঝড় শহরে সহিংসতা শুরুর পর
সেখানে কারফিউ দেয়া হয়েছে এবং রাজ্যের কিছু অংশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
জুলাইয়ের শুরুর দিকে দুই
অভিবাসী মুসলিম নিহত হওয়ার পর দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর গত
১৯ জুলাই আরো দুইজন নিহত হয়। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় মুসলিমদের
মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
খবরে বলা হয়, দুরামারি এলাকায় গুলিতে শাহাদাত হোসেইন (৬০) নামে এক ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন চার জন। এছাড়া নারাবাড়িতে জাকির আলি নামে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরকে
পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে। গৌহাটির পুলিশ কর্মকর্তা এসএন সিং জানায়, “সংঘর্ষের শুরু হয় ইয়াওমুল জুমুয়াতি শুক্রবারে। সেদিন সন্ত্রাসী বোদো আক্রমণকারীরা
স্থানীয় মুসলমানদের একজনকে হত্যা তরে। এরপর কোকড়াঝড় এলাকার প্রায় আধ ডজন গ্রামে
সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে কমপক্ষে ৭ হাজার লোক বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং শরণার্থী
শিবিরে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে সেনা সদস্যরা দাঙ্গা উপদ্রুত অঞ্চলে টহল দিচ্ছে।”
সংঘর্ষে নিহত হওয়া ছাড়াও
কোকড়াঝড়ের প্রায় ৫’শটি ক্ষুদ্র গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে
হাজার হাজার লোক তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এ দাঙ্গার কারণে আসামের সাম্প্রতিক
ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ গৃহহীন হয়েছে। কর্মকর্তাদের হিসাবে সবচেয়ে বেশি
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া কোকরাঝার, চিড়ং ও ধুব্রি জেলায় এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে
১২৮টি আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নিয়েছে।
[বিঃদ্রঃ তথ্য প্রদানে কোন
ভুল থাকলে দয়া করে মেইল করে জানাবেন]
[ট্যাগঃ পীর-মুরীদি (মুরিদি) ব্যবসাধারী ভন্ড-পীর সহ ধর্মব্যবসায়ীদের জম
রাজারবাগ দরবার শরীফ, রাজারবাগী পীর সাহেব কিবলা আলাইহিস সালাম]