নোটিশ

বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১২

খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হন নি; বরং উনারা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক মনোনীত ছিলেন


হাদীছ শরীফ-এ এসেছেনিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস্ সালামফারূকে আযম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালামহযরত উছমান যুন নূরাঈন আলাইহিস্ সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেনউনারা আমার পরে খলীফা।

সুতরাং খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিম্সু সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাস্সামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক খলীফা মনোনীত হয়েছেন। উনারা গণতান্ত্রিত ভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হননি। যারা বলে থাকে উনারা গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হয়েছেনতাদের এই বক্তব্য ভুলঅশুদ্ধ এবং কুফরীমূলক হয়েছে। তাদেরকে খালিছ তাওবা ইস্তিগফার করতে হবে। আর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা যেহেতু খিলাফত পরিচালনা করেছেন। তাই মুসলমানদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে হারাম গণতন্ত্র ছেড়ে দিয়ে খিলাফতের জন্য কোশেশ করা।


কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছেআয় আল্লাহ পাক! আপনি হচ্ছেন সমস্ত কায়িনাতের মালিক। আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে এই কায়িনাতের মালিকানা বা খিলাফত হাদিয়া করে থাকেন। আর হাদীছ শরীফ-এ এসেছে নূরে মুজাস্সামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেনযখন মহান আল্লাহ পাক তিনি কাউকে খিলাফতের জন্যখলীফা হিসেবে সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তখন তিনি উনার ডান হাত মুবারক উক্ত মহান খলীফা উনার কপাল মুবারকে বুলিয়ে দিয়েছেন।

আলোচ্য আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যেখলীফাগণ মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাস্সামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক মনোনীত। তাহলে কি করে এই কথা বলা জায়িয হতে পারে যেহযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূলনূরে মুজাস্সামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক খলীফা মনোনীত হননিবরং গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) উনারা গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হয়েছেনএই কথা বলার অর্থই হচ্ছেউনারা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক খলীফা মনোনীত হননি। নাঊযুবিল্লাহ!
সুতরাং যারা বলে থাকে যেহযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের এই বক্তব্য ভুলঅশুদ্ধ। আর কুরআন শরীফহাদীছ শরীফইজমাকিয়াসের খিলাফ হওয়ায় কুফরীমূলক হয়েছে।

হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, হযরত হুযায়ফাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেননূরে মুজাস্সামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেনআপনারা আমার পর আফদ্বালুন নাস বাদাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস্ সালাম এবং ফারূকে আযম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস্ সালাম উনাদের ইক্বতিদা করবেন। অর্থাৎ উনাদের ইতায়াতঅনুসরণ-অনুকরণ করবেনউনাদের মুবারক দিক-নির্দেশনা মুতাবিক চলবেন। (মুসনাদে আহমদতিরমিযী শরীফইবনে মাজাহ শরীফ ইত্যাদি)

হযরত সাফীনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস্ সালামখলীফাতুল মুসলিমীনফারূক্বে আযম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস্ সালামএবং খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উছমান যুন নূরাঈন আলাইহিস্ সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “উনারা আমার পরে খলীফা। (আছ ছওয়াইক্বুল মুহরিক্বাহ ১ম জিলদ ৭০ নং পৃ:)

অন্য হাদীছ শরীফ-এ এসেছেনূরে মুজাস্সামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি ইরশাদ করেনআমার উম্মতের মধ্যে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস্ সালাম তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে দয়ালুফারূকে আযম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস্ সালাম তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধের ব্যাপারে সবচেয়ে দৃঢ়হযরত উছমান যুন নূরাঈন আলাইহিস্ সালাম তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে অমায়িক ও শালীন এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে ন্যায় বিচারক।

অন্য হাদীছ শরীফ-এ তিনি ইরশাদ করেন, “যদি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস্ সালাম তিনি খলীফা মনোনীত হনতাহলে উনাকে আপনারা দুনিয়ার ব্যাপারে বীতশ্রদ্ধ এবং পরকালের ব্যাপারে আগ্রহী পাবেন। যদি ফারূকে আযম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস্ সালাম সালাম তিনি খলীফা মনোনীত হনতাহলে আপনারা উনাকে অত্যন্ত দৃঢ় ও নির্ভরযোগ্য হিসেবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি অর্জনের পথে যে কোনো সমালোচনার প্রতি অমনোযোগী হিসেবে পাবেন। আর যদি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা মনোনীত হনতাহলে আপনারা দেখবেন তিনি সঠিক পথের অনুসারী এবং আপনাদেরকেও তিনি সঠিক পথে পরিচালিত করবেন। (গুনিয়াতুত ত্বলিবীন)

হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা যে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হননিবরং উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক খলীফা মনোনীত হয়েছেন- এর অসংখ্য অগণিত দলীল আদিল্লাহ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ বিদ্যমান রয়েছে। শুধু তাই নয়উনাদের মধ্যে কার পরে কে খলীফা হবেন এই বিষয়টিও কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা রয়েছে।

যেমন ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদমুজাদ্দিদে যামানশায়েখ মুহিউদ্দীন হযরত আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব গুনিয়াতুত ত্বালেবীন-এ সূরা ফাতহের ২৯নং আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেনউল্লেখিত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম জাফর ছাদিক আলাইহিস সালাম তিনি উনার পিতা হযরত ইমাম বাকের আলাইহিস সালাম উনার বরাতে বলেন যে, ‘আল্লাযীনা মাআহু দ্বারা বলা হয়েছে খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার কথা। যিনি সবসময়দায়িমীভাবে নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতের আনজাম দিয়েছেন। আশিদ্দাউ আলাল কুফফার কালাম দ্বারা ইঙ্গিত হয়েছেখলীফাতুল মুসলিমীনআমীরুল মুমিনীনফারূক্বে আযম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার দিকে। রুহামাউ বাইনাহুম দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেন তৃতীয় খলীফাখলীফাতুল মুসলিমীনআমীরুল মুমিনীন হযরত উছমান যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম তিনি।
আর রুক্কা আন সুজ্জাদান কালাম দ্বারা বলা হয়েছে চতুর্থ খলীফাখলীফাতুল মুসলিমীনআমীরুল মুমিনীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা। (গুনিয়াতুত ত্বালিবীন)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর হুবহু অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেনরঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব তাফসীরে ইবনে আব্বাস-এ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি এই আয়াত শরীফ-এর মাধ্যমে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক খলীফা মনোনীত হয়েছেন এবং উনাদের কার পরে কে খলীফা হবেন সেই বিষয়টি সমস্ত কায়িনাতবাসীকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়হাদীছ শরীফেও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন যেনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়ার যমীন হতে ততক্ষণ পর্যন্ত বিদায় গ্রহণ করেননি তথা বিছাল শরীফ লাভ করেননিযতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি আমার নিকট হতে এই প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন যেনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর প্রথম খলীফা হবেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালামতারপর ফারূকে আযম হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালামঅতঃপর হযরত উছমান যুন নূরাঈন আলাইহিস সালামঅতঃপর আপনি তথা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম। (গুনিয়াতুত ত্বলিবীনমাকতুবাত শরীফ)

সুতরাং উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যেহযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক খলীফা মনোনীত হয়েছেন। উনারা গণতান্ত্রিকভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হননি। যারা বলে থাকে যে, ‘হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভূল এবং কুরআন শরীফহাদীছ শরীফইজমা ও ক্বিয়াসের চরম খিলাফ। যা কাট্টা কুফরী ও চিরজাহান্নামী হওয়ার কারণ। তাদের প্রত্যেকের উচিত এই কুফরীমূলক বক্তব্য পরিত্যাগ করা। আর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা যেহেতু খিলাফত পরিচালনা করেছেন তাই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে হারাম গণতন্ত্র ও ভোট নির্বাচন ছেড়ে দিয়ে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অনুসরণ করে খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওওয়াহ-এর জন্য কোশেশ করা। তবেই এদেশবাসী এবং সমগ্র বিশ্ববাসী প্রকৃত সুখ-শান্তি লাভ করতে পারবে। অন্যথায় তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে রয়েছে অত্যান্ত কঠিন পরিণতি। মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে ছহীহ সমঝ দান করুন। (আমীন)

লেখকঃ মুহম্মদ আল আমীন।