নোটিশ

বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১২

'ছলাতুত তাসবীহ' নামাযের ফযীলত ও হুকুম-আহকাম


'সলাতুত তাসবীহ' নামাযের ফযীলতঃ

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, একদা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার পিতা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, “হে আমার চাচা (হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)! আমি কী আপনাকে বলে দিব না, আমি কী আপনাকে দান করবো না, আমি কী আপনাকে বলবো না, আমি কী আপনার সাথে করবো না দশটি কাজ? অর্থাৎ শিক্ষা দিব না দশটি তাসবীহ? যখন আপনি তা আমল করবেন, আল্লাহ পাক প্রথম গুনাহ, শেষ গুনাহ, পুরাতন গুনাহ, নতুন গুনাহ, অনিচ্ছাকৃত গুনাহ, ইচ্ছাকৃত গুনাহ, ছোট গুনাহ, বড় গুনাহ, গোপন গুনাহ, প্রকাশ্য গুনাহ ইত্যাদি সকল গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। আপনি ছলাতুত তাসবীহ চার রাকায়াত নামায পড়বেন। যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন একবার এ নামায আপনি পড়বেন। যদি সম্ভব না হয় তাহলে সপ্তাহে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে বৎসরে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে জীবনে একবার এ নামায আপনি পড়বেন। (আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ, বায়হাক্কী ফী দাওয়াতিল কবীর, তিরমিযী, মিশকাত শরীফ)


'সালাতুত তাসবিহ' নামাযের নিয়মঃ

উল্লেখ্য, ‘ছলাতুত তাসবীহ নামাযের নিয়ম সম্পর্কে কিতাবে দুটি মত উল্লেখ আছে। একটি হানাফী মাযহাব অনুযায়ী অপরটি শাফিয়ী মাযহাব অনুযায়ী। এখানে হানাফী মাযহাবের নিয়মটিই উল্লেখ করা হলো-
প্রথমতঃ এই বলে নিয়ত করবে যে, ‘আমি ছলাতুত তাসবীহ-এর চার রাকায়াত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখী হয়ে আদায় করছি।
অতঃপর তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বেঁধে ছানা পাঠ করবে, ছানা পাঠ করে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে ১৫ বার নিম্নোক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
সুবহানাল্লাহি ওয়াল হাম্দুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অতঃপর সূরা ক্বিরায়াত পাঠ করে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ পাঠ করার পর ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। রুকু থেকে উঠে সিজদায় যাওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে ক্বওমার মধ্যে রব্বানা লাকাল হামদ পড়ার পর ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। অতঃপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। সিজদা থেকে উঠে দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার পূর্বে বসে অর্থাৎ জলছায় ১০বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। অতঃপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। এরূপভাবে প্রতি রাকায়াতে ৭৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
অতঃপর পরবর্তী রাকায়াতের জন্য দাঁড়াবে। দাঁড়িয়ে প্রথমে ১৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তারপর প্রথম রাকায়াতের মতোই উক্ত তাসবীহ আদায় করবে। অর্থাৎ চার রাকায়াত নামাযে মোট ৩০০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।

কতিপয় মাসয়ালাঃ

স্মরণীয়, ‘ছলাতুত তাসবীহ নামায আদায়কালীন হাতে তাসবীহ নিয়ে তাসবীহসমূহ গণনা করা মাকরূহ। আঙ্গুলি টিপে টিপে তাসবীহসমূহ গণনা করতে হবে।
কোনো স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ক্বওমা (রুকু থেকে দাঁড়ানোকালে) ও জলসায় (দুই সিজদার মধ্যবর্তীকালে) উক্ত তাসবীহ আদায় করা যাবে না। যেমন, সূরা-ক্বিরায়াত পাঠের পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে তা ক্বিরায়াতের পর আদায় করতে হবে। ক্বিরায়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকুতে আদায় করতে হবে। রুকুতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ ক্বওমায় আদায় না করে প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। ক্বওমায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা জলসায় আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। জলসায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে আদায় করে নিতে হবে। শেষ সিজদার তাসবীহ ভুলে গেলে সালাম ফিরানোর পূর্বে আদায় করে নিতে হবে। আর ভুলে যাওয়া তাসবীহ প্রত্যেক স্থানে নির্ধারিত তাসবীহ পাঠ করার পর পাঠ করতে হবে।