নোটিশ

শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৩

বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায সহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত


তারাবীহ নামায কত রাকায়াত পড়তে হবেমূলতঃ তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াতই পড়তে হবে। কারণনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাহিমুস সালাম উনারাসহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা  চার মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ২০ রাকায়াত তারাবীহ আদায় করেছেন।

হাদীছ শরীফ  ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তেন বিতর নামায ব্যতীত। অর্থাৎ তারাবীহ বিশ রাকায়াত এবং বিতর তিন রাকায়াত মোট তেইশ রাকায়াত” (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা)


হাদীছ শরীফ  ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালামহযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম এবং অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে বর্ণিততারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত” (তিরমিযী শরীফ)

ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যেহযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালামহযরত উছমান যূন নুরাইন আলাইহি সালামহযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনারা সকলেই বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায আদায় করেছেন।

হযরত ইয়াযীদ ইবনে রূমান রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহি সালাম উনার খিলাফতকালে হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তারাবীহ নামায  বিতর নামাযসহ ২৩ রাকায়াত পড়তেন।” (মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক)

হযরত আব্দুর রহমান সুলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম কুরআন শরীফ এর জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে ডেকে একত্রিত করে একজনকে ইমামতি করার নির্দেশ দিয়ে বললেনতারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত পড়াবেন।” (বায়হাক্বী শরীফ)

হযরত আবুল হাসান রহমতুল্লাহি উনার থেকে বর্নিত আছে, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম একজন সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইমাম নিযুক্ত করে উনাকে নির্দেশ দিলেনতারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত পড়াবেন।” (মুছান্নাফ-ইবেন আবী শায়বা)

হযরত যায়িদ ইবনে ওহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ নামায পড়াতেন। হযরত মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেনহযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তিনি বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়াতেন এবং তিন রাকায়াত বিতর পড়াতেন।

হাদীছ শরীফ  ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেননিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তেন বিতর নামায ব্যতীত। অর্থাৎ তারাবীহ বিশ রাকায়াত এবং বিতর রাকায়াত মোট তেইশ রাকায়াত” (মুছান্নাফইবনে আবী শায়বা)

হাদীছ শরীফ  আরো ইরশাদ হয়েছে, “হাফিযুল হাদীছইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহিইমাম রাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেননিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লোকদের সাথে দুরাত্রি বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়লেন। যখন তৃতীয় রাত্রি আসলোতখন লোকজন একত্রিত হলোকিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট আসলেন না। অতঃপর বললেনআমারা আশংকা হচ্ছে যেএটা আপনাদের উপর ফরয যায় কিনা। আর যদি এটা ফরয হয়ে যায়তাহলে আপনারা তা আদায় করতে সক্ষম হবেন না।” এই হাদীছ শরীফ খানা সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে সকলেই একমত। (তালখীছুল হাযির ফি তাখরীজে আহাদীছির রাফিয়িল কাবীরঅনুরূপ লামিউদদুরারী শরহে ছহীহিল বুখারীমিরকাত শরহে মিশকাত)

হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিততিনি বলেন, “আমরা আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়েছি  বিতর নামায পৃথক আদায় করেছি।” (সুনানুল মারিফাহ লিল বায়হাক্বীতালীকুল হাসানলাউস সুনানতাহাবী শরহে মায়ানিয়িল আছার)

হযরত ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিতনিশ্চয়ই হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি এক ব্যক্তিকে সকল লোকদের নিয়ে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবালাউস সুনানফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছারফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম)

মুহম্মদ ইবনে কা রহমতুল্লাহি উনার থেকে বর্ণিততিনি বলেন, “লোকেরা (হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমআমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার যামানায় (খিলাফতকালেরমাদ্বান শরীফ মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়েন।” (ক্বিয়ামুল লাইলপৃষ্ঠা-৯১)

হযরত আবুল হাসানা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিততিনি বলেন, “নিশ্চয়ই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি এক ব্যাক্তিকে সকলকে নিয়ে পাঁচ তারবীহা অর্থাৎ বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামাযপড়ার নির্দেশ দেন।” (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বীঅনুরূপ মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবাআল জাওহারুন নক্বীকানযূল উম্মাললাউস সুনানউমদাতুল ক্বারীআইনী শরহে বুখারী)

হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিততিনি বলেন, “লোকেরা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তেন। অনুরূপ হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম  হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাদের খিলাফতকালে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়া হতো।” (আইনী শরহে বুখারীউমাদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম)

হযরত আব্দুল আযীয ইবনে রফী’ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিততিনি বলেন, “হযরত উবাই ইবনে কা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফ- রমাদ্বান শরীফ মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ  তিন রাকায়াত বিতর নামায পড়েন।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবাঅনুরূপ আছারুস সুনানতালীকুল হাসানলাউস সুনানফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছারফতহুল মুলহিম শরহে মুসলিমবজলুল মাজহুদ শরহে আবী দাউদ)

হযরত আবূ খছীব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিততিনি বলেন, “হযরত সুয়াইদ ইবনে গাফলাহ রহমতুল্লাহি তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে আমাদেরকে নিয়ে পাঁচ তারবীহা অর্থাৎ বিশ রাকায়াত নামায পড়েন।” (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বীমুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবাআল্‌ জাওহারুন নক্বীআছারুস সুনানলাউস সুনানবজলুল মাজহুদশরহে আবূ দাউদ)

হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার এক সাথী হযরত শুতাইর ইবনে শেকাল রহমতুল্লাহি আলাইহি রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ  তিন রাকায়াত বিতর নামায পড়েন (সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বীমুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবাআল জাওহারুন নক্বীমিরক্বাত শরহে মিশকাত)

হযরত সায়িদ ইবনে উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই হযরত আলী ইবনে রুবাইয়াহ রমাদ্বান শরীফ মাসে লোকদের নিয়ে বিশ রাকায়াত তারাবীহ  তিন রাকায়াত বিতর নামায পড়েন।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবাঅনুরূপ আছারুস সুনানফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছারলাউস সুনানবজলুল মাজহুদ শরহে আবূ দাউদ)

হযরত আতা ইবনে আবী রিবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি লোকদের এরূপ অবস্থায় পেয়েছি যেউনারা বিতরসহ তেইশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়েন।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবাঅনুরূপ আছারুস সুনানক্বিয়ামুল লাইললাইলুল আওতারফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছারফাতহুল বারী শরহে বুখারী)

হযরত ইমাম নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হযরত ইবনে আবী মুলাইকাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিরমাদ্বান শরীফ মাসে আমাদেরকে নিয়ে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়েন।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবাঅনুরূপ আছারুস সুনানফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছার)

হযরত আবু ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হারিস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, “তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে লোকদের ইমামতি করাতেন  বিশ রাকায়াত তারাবীহ  তিন রাকায়াত বিতর নামায পড়াতেন।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা)

হযরত আবুল বুখতারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত, “তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে পাঁচ তারবীহা অর্থাৎ বিশ রাকায়াত তারাবীহ  তিন রাকায়াত বিতর নামায পড়তেন।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা)

হাফিযুল হাদীছইবনে আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেনহারিছ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবু জুবার রহমতুল্লাহি আলাইহিহযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিততিনি বলেন, “আমীরুল মুমিনীনহযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময়তেইশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়া হতো। হযরত আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেনউহার তিন রাকায়াত বিতর নামায” (আইনী শরহে বুখারী)

হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাহযরত উবাই ইবনে কা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইমামতিতে যে তারাবীহ নামায আদায় করেনজমহুর আলিমগণ উনাদের প্রসিদ্ধ মতেতা দশ সালামে বিশ রাকায়াত আর উহা মূলতঃ পাঁচ তারবীহাত। প্রত্যেক চার রাকায়াতে এক তারবীহা যা দুই সালামে আদায় করেন বিতর ব্যতীত। আর বিতর হলো তিন রাকায়াত।” (ইরশাদুল সারী শরহে ছহীহিল বুখারী)

আল্লামা ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেনসাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই একমত যেতারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত।

তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত  বিষয়ে কোন সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বিমত পোষণ করেন নি। হযরত উবাই ইবনে কা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কথা বর্ণনা করেছেন- বিশ রাকায়াত তারাবীহ এটাই সহীহ বর্ণনা। (উমাদুল ক্বারীশরহে বুখারী)

উপরোক্ত দলীলগুলো দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত যেরমাদ্বান শরীফ  তারাবীহ নামায ২০ রাকায়াত