বাতিল পন্থীরা রমাদ্বান শরীফ মাসে তারাবীহ নামায আট রাকায়াতের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে নিম্নোক্ত জইফ হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে যা মূলতঃ তাহাজ্জুদ নামাযকে বুঝানো হয়েছে। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে যে, মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী, ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ উনার থেকে, তিনি ঈসা ইবনে জারিয়া হতে, তিনি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে আট রাকায়াত নামায পড়েছেন এবং বিতর নামায আলাদা আদায় করেছেন। (ক্বিয়ামুল লাইল)
নিচে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামায যে একই নামায নয়, তার প্রমাণ তুলে ধরা হলোঃ
প্রথমতঃ
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ দ্বারাই স্পষ্ট প্রমাণিত যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামায একই নামায নয়।
১) তারাবীহ শব্দের তাহ্ক্বীক্বী অর্থঃ
রমাদ্বান শরীফ মাসে (তারাবীহ নামাযে) প্রতি ৪ রাকায়াত পর মুসল্লীদের বিশ্রাম দেওয়াকে “তারবীহাতুন” বলে। প্রতি ৪ রাকায়াত পর মুসল্লীরা বিশ্রাম নেয় বলেই এটাকে তারাবীহ নামায বলে।
আর “তারাবীহ” বহুবচন হলো “তারবীহাতুন”-এর। (লিসানুল আরব ১ম জিলদ্, পৃষ্ঠা ১৭৬৮) অনুরূপ কামূস আল মুহীত–এও উল্লেখ আছে।রমাদ্বান শরীফ মাসে (তারাবীহ নামাযে) প্রতি ৪ রাকায়াত পর মুসল্লীদের বিশ্রাম দেওয়াকে “তারবীহাতুন” বলে। প্রতি ৪ রাকায়াত পর মুসল্লীরা বিশ্রাম নেয় বলেই এটাকে তারাবীহ নামায বলে।
“তারাবীহ” বহুবচন হলো “তারবীহাতুন”-এর। যার অর্থ হলো বসা, অর্থাৎ রমাদ্বান শরীফ মাসে (তারাবীহ নামাযে) ৪ রাকায়াত পর বিশ্রাম নেয়ার জন্য বসা। প্রত্যেক ৪ রাকায়াত নামাযকে “তারবীহাতুন” বলে। আর পুরো ২০ রাকায়াত নামাযকে “তারাবীহ” বলে, যা রমাদ্বান শরীফ মাসে পড়া হয়।(মিছবাহুল লোগাত, পৃষ্ঠা ৩২২) অনুরূপ আল মুনজিদ–এও উল্লেখ আছে।
“‘তারাবীহ’
শব্দের অর্থ হলো বিশ্রাম দেওয়া, ঐ ২০ রাকায়াত সুন্নত নামায, যেটা ইশার পর ও বিতর নামাযের পূর্বে পড়া হয়। যেহেতু প্রত্যেক ৪ রাকায়াত পর পর কিছু বিলম্ব এবং বিশ্রাম নিতে হয়, তাই এটাকে “তারাবীহ” নামায বলে।”(ফিরুযুল লোগাত, পৃষ্ঠা ৩৫৩)
অর্থাৎ “তারাবীহ” শব্দটি হলো বহুবচন। তার একবচন হলো “তারবীহাতুন”। মুহাদ্দিছীন রহ্মতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মত হলো ৪ রাকায়াত নামাযকে এক “তারবীহাতুন” বলে, এরূপ ৫ “তারবীহাতুন”-এ ১ “তারাবীহ”। অর্থাৎ ৪X৫=২০, অতএব ২০ রাকায়াতে ১ “তারাবীহ”।
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ-এর বিখ্যাত শরাহ্ “উমাদুল ক্বারী” তে উল্লেখ আছে যে, “প্রতি ৪ রাকায়াত নামাযকে “তারবীহাতুন” বলা হয়, আর উহা মূলতঃ বিশ্রাম নেওয়ার জলসা।”
অর্থাৎ প্রতি ৪ রাকায়াত নামাযের পর বিশ্রাম নেওয়া হয় বলেই এটাকে “তারবীহাতুন” বলে। আর এরূপ ৫ “তারবীহাতুন”-এ যে ২০ রাকায়াত নিম্নোক্ত বর্ণনা দ্বারা তা স্পষ্টই প্রমাণিত হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,“নিশ্চয়ই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি এক ব্যক্তিকে আমাদেরকে নিয়ে ৫ “তারবীহাত” অর্থাৎ ২০ রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন।” (বায়হাক্বী, কানযুল উম্মাল)
অর্থাৎ প্রতি ৪ রাকায়াত নামাযের পর বিশ্রাম নেওয়া হয় বলেই এটাকে “তারবীহাতুন” বলে। আর এরূপ ৫ “তারবীহাতুন”-এ যে ২০ রাকায়াত নিম্নোক্ত বর্ণনা দ্বারা তা স্পষ্টই প্রমাণিত হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,“নিশ্চয়ই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি এক ব্যক্তিকে আমাদেরকে নিয়ে ৫ “তারবীহাত” অর্থাৎ ২০ রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন।” (বায়হাক্বী, কানযুল উম্মাল)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, ৫ তারবীহাতুন-এ ২০ রাকায়াত, অর্থাৎ ২০ রাকায়াতে ১ “তারাবীহ”। অতএব, তারাবীহ শব্দের অর্থ দ্বারা ২০ রাকায়াত নামাযকে বুঝায়।
২) তাহাজ্জুদ শব্দের তাহ্ক্বীক্বী অর্থঃ
“তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ হলো রাত্রের নামায, আর রাত্রে ঘুম হতে উঠে নামায আদায়কারীকে বলে মুতাহাজ্জিদ। আযহারী বলেন আরবী ভাষায় রাত্রে শয়নকারীকে হাজিদ বলে, আর ঘুম হতে উঠে নামায আদায়কারীকে মুতাহাজ্জিদ বলে।” (মিছবাহুল লোগাত, পৃষ্ঠা ৯৭৭) অনুরূপ লিসানুল আরব, কামূস আল মুহীত ও আল মুনজিদ–এও উল্লেখ আছে।
“তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ হলো রাত্রের নামায, আর রাত্রে ঘুম হতে উঠে নামায আদায়কারীকে বলে মুতাহাজ্জিদ। আযহারী বলেন আরবী ভাষায় রাত্রে শয়নকারীকে হাজিদ বলে, আর ঘুম হতে উঠে নামায আদায়কারীকে মুতাহাজ্জিদ বলে।” (মিছবাহুল লোগাত, পৃষ্ঠা ৯৭৭) অনুরূপ লিসানুল আরব, কামূস আল মুহীত ও আল মুনজিদ–এও উল্লেখ আছে।
“‘তাহাজ্জুদ’
শব্দের অর্থ হলো রাত্রে জাগ্রত হওয়া, ঐ নামায যা অর্ধ রাত্রে উঠে পড়া হয়।” (ফিরুযুল লোগাত, পৃষ্ঠা ৩৯৩)
অতএব, “তারাবীহ” ও “তাহাজ্জুদ” শব্দদ্বয়ের তাহ্ক্বীক্বী বা বিশ্লেষণ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, “তারাবীহ” ও “তাহাজ্জুদ” নামায একই নামায নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন নামায। কারণ তারাবীহ নামায যেমন ইশার পর পর আদায় করলেও হয়, তদ্রুপ মধ্য ও শেষ রাত্রে অর্থাৎ ইশার নামাযের পর হতে সুব্হে সাদিকের আগ পর্যন্ত যে কোন সময় তারাবীহ নামায আদায় করা যায়। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথম রাত্রে, মধ্য রাত্রে ও শেষ রাত্রেও তারাবীহ নামায আদায় করেছেন। আর তাহাজ্জুদ নামায মধ্য রাত্রের পূর্বে আদায় করলে ওটা তাহাজ্জুদ নামায হিসেবে গণ্য হবে না। বরং ওটা রাত্রের নফল নামায হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাযের সময় হলো মধ্য রাত্রের পর হতে সুব্হে সাদিকের আগ পর্যন্ত। তবে তাহাজ্জুদ নামায মধ্য রাত্রে পর হতে উঠে আদায় করাই আফদ্বল বা উত্তম।
মূলতঃ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উম্মতে মুহম্মদীর ইহ্সানের জন্য ও উম্মতে মুহম্মদীকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহ্ হতে হিফাজতের জন্য অর্থাৎ পরবর্তী উম্মতে মুহম্মদীর জন্য ঘুম হতে উঠে আদায় করা সম্ভব নাও হতে পারে, যদি তারা ঘুমের কারণে উহা আদায় করতে না পারে, তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহে গুণাহ্গার হবে, তাই তিনি তারাবীহ নামাযকে ইশার পর পর নিয়ে আসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেন, “তোমরা যে সময় ইবাদত বা ঘুমিয়ে থাক, সে সময় হয়ে ঐ সময়টুকু উত্তম, যে সময় তোমরা নামায পড়। (হযরত আব্দুর রহ্মান রহ্মতুল্লাহি আলাইহি বলেন) উত্তম সময় বলতে তিনি শেষ রাত্রকেই বুঝিয়েছেন, কেননা তখন (হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময়) লোকেরা প্রথম রাত্রেই তারাবীহ নামায পড়তেন।” (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ তারাবীহ নামায শেষ রাত্রে পড়াই উত্তম ছিল, কিন্তু হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উম্মতে মুহম্মদীর ইহ্সানের জন্য তারাবীহ নামাযকে প্রথম রাত্রে ইশার নামযের পর নিয়ে আসেন।
অতএব, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময় হতেই নিয়মিতভাবে ইশার নামাযের পর তারাবীহ নামায আদায় হয়ে আসছে এবং বর্তমানেও সেই সুন্নত তরীক্বাই চালু রয়েছে।
অতএব, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময় হতেই নিয়মিতভাবে ইশার নামাযের পর তারাবীহ নামায আদায় হয়ে আসছে এবং বর্তমানেও সেই সুন্নত তরীক্বাই চালু রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ
তারাবীহ নামাযে ঘোষণা দেওয়া জায়িয। অর্থাৎ তারাবীহ নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করা হয় বরং তারাবীহ নামায জামায়াতের আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। আর তাহাজ্জুদ নামায অর্থাৎ ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে আদায় করা মাক্রূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্, চাই উহা রমাদ্বান শরীফ মাসে হোক অথবা গায়েরে রমাদ্বানে হোক।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “ঘোষণা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী। আর ঘোষণা ব্যতীত একা তাহাজ্জুদ আদায়কারীর পিছনে যদি ঘটনাক্রমে উর্দ্ধে তিনজন লোক ইক্তেদা করে, (মতবিরোধ রয়েছে,কেউ বলেন, মাহরূহ হবে, কেউ বলেন, হবে না) তবে মাকরূহ হবে না। কিন্তুচারজন ইক্তেদা করলে (সর্বসম্মতিক্রমে) মাকরূহ তাহ্রীমী হবে। অনুরূপ বর্ণনা দুরার ও দুররুল মুখতার কিতাবেও রয়েছে। আল্লামা ফাযিল চলপী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি শরহে বিকায়ার হাশিয়ায় উল্লেখ করেন যে, তাহাজ্জুদ নামায যেটা নফল নামাযের অন্তর্ভূক্ত, এটা জামায়াতে আদায় করা বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।”(মজ্মুয়ায়ে ফতওয়ায়ে সা’দিয়াহ)
সুতরাং এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ নামায ও তাহাজ্জুদ নামায অভিন্ন নামায নয়, যদি অভিন্ন বা একই নামায হতো, তবে তারাবীহ নামাযও জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ হতো। কারণ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে তাহাজ্জুদ নামায রমাদ্বান শরীফ মাসেও জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। মূলকথা হলো তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই নামায নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন নামায।
তৃতীয়তঃ
তাহাজ্জুদ নামায প্রথমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ফরয ছিল, পরবর্তীতে মহান আল্লাহ পাক তিনি ওহীর মাধ্যমে ওটা মানছূখ বা রদ্ করে দেন। এখন প্রশ্ন হলো তাহাজ্জুদ নামাযের ফরযের হুকুম যদি রদই হয়ে থাকে, তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেন বললেন, “আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমাদের উপর এটা ফরয হয়ে যায় কিনা।”
মূলতঃ যেটা একবার রদ্ হয়ে গেছে, পুণরায় তা ফরয হওয়ার কোনই আশঙ্কা থাকতে পারে না। সুতরাং এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামায একই নামায নয়, বরং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সাথে তারাবীহ নামায আলাদা বা পৃথক আদায় করেছেন। আর এই তারাবীহ নামায ফরয হয়ে যাওয়ারই আশাঙ্কা করেছেন।
চতুর্থতঃ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তাহাজ্জুদ নামাযের নির্দেশ কুরআন শরীফ-এর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “রাত্রের কিছু অংশ কুরআনশরীফ পাঠসহ (নামায পড়ার জন্য) জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্য আতিরিক্ত।” (সূরা বণী ইস্রাঈলঃ আয়াত শরীফ-৭৯)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, “হে বস্ত্রাবৃত, রাত্রিতে দন্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে ।” (সূরা মুযযাম্মিলঃ আয়াত শরীফ- ১-২)
আর তারাবীহ্ নামায সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই মহানআল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি তোমাদের প্রতি রমাদ্বান শরীফ মাসের রোজাকে ফরয করেছে। আর আমি তোমাদের প্রতি তারাবীহ নামাযকে সুন্নত করলাম।”
এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামায ভিন্ন ভিন্ন নামায। কারণ তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন শরীফ অর্থাৎ ওহীয়ে মাত্লু-এর মাধ্যমে এসেছে। আর তারাবীহ নামায হাদীছ শরীফ অর্থাৎ ওহীয়ে গায়রে মাত্লু-এর মাধ্যমে এসেছে। অতএব, এদিক থেকেও উভয় নামাযের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
পঞ্চমতঃ
হাদীছ শরীফ-এ তারাবীহ্ নামাযকে “قيام رمضان” বলা হয়েছে। অর্থাৎ তারাবীহ্ নামায শুধু রমাদ্বান শরীফ মাসের জন্যই খাছ বা নির্দিষ্ট। আর তাহাজ্জুদ নামাযকে “صلاة لليل” বলা হয়েছে, অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাযকে রমাদ্বান শরীফ মাসের জন্য খাছ বা নির্দিষ্ট করা হয়নি বরং সারা বছরের জন্যই খাছ বা নির্দিষ্ট।
অতএব, এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামায ভিন্ন ভিন্ন নামায।
অতএব, এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামায ভিন্ন ভিন্ন নামায।
ষষ্ঠতঃ
তাহাজ্জুদ নামাযের আদেশ মক্কা শরীফ-এ দেয়া হয়েছে, আর তারাবীহ নামাযের আদেশ মদীনা শরীফ-এ দেয়া হয়েছে।
সপ্তমতঃ
অনুসরণীয় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহ্মতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের কিতাবে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামাযকে পৃথক নামায হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন- হাম্বলী মাযহাব-এর প্রসিদ্ধ কিতাব “আল মুকান্নাত”-এ উল্লেখ আছে যে, “রমাদ্বান শরীফ মাসে ২০ রাকায়াত তারাবীহ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করবে এবং তারপর বিতর নামাযও জামায়াতে আদায় করবে। আর যদি কারো তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস থাকে, তবে বিতর তাহাজ্জুদের পর আদায় করবে।”
অতএব, যদি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই হতো, তবে আলাদাভাবে তাহাজ্জুদের কথা উল্লেখ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। সুতরাং এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, উল্লিখিত নামাযদ্বয় ভিন্ন ভিন্ন নামায। সাথে সাথে এটাও বুঝা গেল যে, ইমাম হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহ্মতুল্লাহি আলাইহি- উনার মতেও তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ ভিন্ন ভিন্ন নামায।
অষ্টমতঃ
ইমাম হযরত বুখারী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি উনারত থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে যে, “হযরত ইমাম বুখারী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি তিনি রাত্রের প্রথম ভাগে নিজ ছাত্রের সাথে তারাবীহ নামায জামায়াতে আদায় করতেন এবং তাতে একবার কুরআন শরীফ খতম করতেন। আর সেহ্রীর সময় তাহাজ্জুদ নামায একাকী আদায় করতেন।” (লুময়াতুল মাছাবীহ্)
সুতরাং যেখানে ইমাম হযরত বুখারী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি তিনি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামাযকে পৃথক নামায মনে করতেন ও পৃথক পৃথকভাবে উহা আদায় করতেন, সেখানে উক্ত নামাযদ্বয়কে একই নামায বলা মূর্খতা ও গুমরাহী বৈ কিছুই নয়।
নবমতঃ
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামায পৃথক পৃথক নামায বলেই হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহ্মতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে ও হযরত ফুক্কাহায়ে কিরাম রহ্মতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফিক্বাহের কিতাবে উক্ত নামাযদ্বয়কে পৃথক পৃথক অধ্যায় বর্ণনা বা উল্লেখ করেছেন। অতএব, যদি একই নামায হতো, তবে তো পৃথক পৃথক অধ্যায় রচনা করার কোন প্রয়োজন ছিল না। বরং একটি অধ্যায়ই যথেষ্ট ছিল। এর দ্বারা উক্ত নামাযদ্বয়ের ভিন্নতা প্রমাণিত হয়।
দশমতঃ
তাহাজ্জুদ নামাযের রাকায়াতের সংখ্যা নির্দিষ্ট রয়েছে, অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উর্দ্ধে ১৩ রাকায়াত ও নিম্নে ৭ রাকায়াত তাহাজ্জুদ পড়েছেন বিতরসহ। আর তারাবীহ নামায সম্পর্কে ৮ রাকায়াত দাবীদারদের অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তারাবীহ নামাযের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা প্রমাণিত নেই। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “আল্লামা সুবকী বলেন, রমাদ্বান শরীফ মাসে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২০ রাকায়াত তারাবীহ পড়েছেন, না কম পড়েছেন, উহা বর্ণিত নেই।” (শরহে মিনহাজ)
এখানে লক্ষণীয় যে বিষয় এই যে, তাদের উপরোক্ত বক্তব্যটি অশুদ্ধ বা ভুল, তথাপি উক্ত বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই নামায নয়, যদি একই হতো, তবে (তাদের মতে) তারাবীহ নামাযের রাকায়াতের সংখ্যা অনির্দিষ্ট হতো না বরং তাহাজ্জুদ নামাযের ন্যায় নির্দিষ্টই হতো।
উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামায কখনোই এক নামায নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন নামায। উক্ত নামাযদ্বয়কে একই নামায হিসাবে আখ্যায়িত করা মূলতঃ নিজেদের মূর্খতা ও গুমরাহীকে আরো সুস্পষ্ট করারই নামান্তর।