নোটিশ

শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৩

ইতিকাফ-এর অর্থ ও শ্রেণীবিভাগ


মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এ সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ-এর ১২৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইতিকাফ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, এবং আমি বললাম হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনাদেরকে যে, আপনারা পাক-পবিত্র রাখুন আমার ঘরকে; তওয়াফকারী, তিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীর জন্য।

বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ কিতাবুছ্ ছাওম বাবুল ইতিকাফ প্রথম পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বর্ণনা করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতিবছর রমাদ্বান শরীফ-এর শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন যতক্ষণ না মহান আল্লাহ পাক উনাকে দীদারে নিয়েছেন। অতঃপর উনার পবিত্রতম আহলিয়াগণ ইতিকাফ করেছেন।


তিরমিযী শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ ও মিশকাত শরীফ কিতাবুছ ছাওম বাবুল ইতিকাফ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে, হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক রমাদ্বান শরীফ-এর শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। কিন্তু এক বৎসর তিনি ইতিকাফ করলেন না। অতঃপর যখন পরবর্তী বছর আসলো তখন তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করলেন।

তিকাফ অর্থ: কোনো স্থানে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। শরীয়তের পরিভাষায় এর অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক বিশেষ সময় এক বিশেষ নিয়মে নিজকে মসজিদে আবদ্ধ রাখা। ইতিকাফ তিন প্রকার। যথা: (১) ওয়াজিব (২) সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়াহ (৩) মুস্তাহাব।

(১) ওয়াজিব ইতিকাফ: ইতিকাফ করার জন্য মান্নত করা হলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব।

(২) সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়াহ ইতিকাফ: রমাদ্বান শরীফ-এর শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়াহ। এ বিষয়ে আমাদের হানাফী মাযহাবের সকল ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ঐকমত্য গ্রহণ করেছেন- মহল্লার অধিবাসীদের মধ্যে কেউ তা আদায় করলে অপর লোকেরা গুনাহ হতে বেঁচে যাবে। আর কেউই না করলে সকলেই গুনাহগার হবে।

সুন্নত ইতিকাফের জন্য রমাদ্বান শরীফ-এর ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে এবং রমাদ্বান শরীফ-এর শেষ তারিখে সূর্যাস্তের পর মসজিদ হতে বের হতে হবে অর্থাৎ শাওয়ালের চাঁদ উদিত হলে তার পর বের হবে। মসজিদে অবস্থানকালে চুপ করে না থেকে নফল নামায, যিকির-ফিকির, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ পাঠ, দ্বীনী ইল্ম শিক্ষা ইত্যাদি দ্বীনি কাজ করা উচিত। পাঞ্জেগানা মসজিদ যাতে নিয়মিত জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়, সে মসজিদে ইতিকাফ করা জায়িয। তবে জুমুয়ার মসজিদে করা উত্তম। স্ত্রীলোক ইতিকাফ করতে নিয়ত করলে আপন ঘরে একটি স্থান ঘিরে নিয়ে সে স্থানে ইতিকাফ করতে পারবে।

(৩) মুস্তাহাব ইতিকাফ: ওয়াজিব ও সুন্নত ইতিকাফ ছাড়া অপরাপর ইতিকাফসমূহ মুস্তাহাব। ইহা স্বল্প সময়ের জন্যও হতে পারে।

১। ইতিকাফকালে একান্তবাস বা উহার সংশ্লিষ্ট কোনো কিছু করলে ইতিকাফ বাতিল হয়ে যাবে।
২। শরয়ী জরূরত, যথা-জুমুয়ার নামাযে শরীক হওয়া, ওযূ, গোসল, ইস্তিঞ্জা ইত্যাদি ব্যতীত মসজিদ হতে বের হলে ইতিকাফ বাতিল হয়ে যাবে। এ সকল অনুমোদিত জরূরতে বের হয়েও আবশ্যকের অতিরিক্ত দেরি করলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৩। কেহ ইতিকাফ শুরু করে কোনো কারণে ছেড়ে দিলে পরে উহা কাযা করতে হবে এবং রোযার সাথে কাযা করতে হবে।
৪। খাবার বা ওযূর পানি এনে দেয়ার কোনো লোক না থাকলে উহার জন্য এবং পেটের বায়ু ছাড়ার জন্য মসজিদ হতে বের হওয়া জায়িয আছে, তবে খুব তাড়াতাড়ি ফিরবে। (কুদুরী, শামী, তাহতাবী, বাহরুর রায়িক্ব)