নোটিশ

বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৪

ছলাত-খুতবা না থাকলেও ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ পবিত্র ঈদের দিন, উপরন্তু সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ

ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘ঈদে মীলাদুন নবীছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি ঈদ হতো এবং সকল ঈদের সেরা ঈদ হতো, তবে এখানে ছলাত থাকতো, খুতবা থাকতো। ছলাত ডবল হতো, খুতবা ডবল হতো। কিন্তু এখানে ছলাত, খুতবা নেই।নাঊযুবিল্লাহ!

এর জাওয়াব হলো:- পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু সাইয়্যিদুল আইয়াদ অর্থাৎ সকল ঈদের সেরা ঈদ সেহেতু এ ঈদে এমন ছলাত রয়েছে যেই ছলাত শুধু ডবলই নয় বরং দায়িমী ছলাত। এ ছলাত শুরু হয়েছে সৃষ্টির শুরু থেকে এবং এটা জারী থাকবে অনন্তকাল ধরে। কারণ এ ছলাত স্বয়ং আল্লাহ পাক পড়েন। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এবং উনার ফেরেশতারা নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে ছলাত পড়েন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার শানে ছলাত পড়ো এবং সেই সাথে যথাযথ সম্মানে সালামও পেশ করো।” (সূরা আহযাব, আয়াত শরীফ ৫৬)



উক্ত আয়াত শরীফ-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক মুমিন-মুসলমানদের জন্য এ ছলাত পড়া ফরয-ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এমনকি এ ছলাত অন্য ইবাদতসমূহের মধ্যেও পড়ার হুকুম রয়েছে। বিশেষ করে দোয়া বা মুনাজাতকে বলা হয়েছে ইবাদতের মগজ।

যেমন হাদীছ শরীফ-এর ইরশাদ হয়েছে-
الدعاء مخ العبادة.
অর্থ: দোয়া হলো ইবাদতের মগজ বা সারবস্তু।
আর সেই দুয়া বা মুনাজাত ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত উনার শানে ছলাত পড়া না হবে। সুবহানাল্লাহ!

যেমন হাদীছ শরীফ-এর বর্ণিত রয়েছে-
عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال ان الدعاء موقوف بين السماء والارض لايصعد منها شىْء حتى تصلى على نبيك.
অর্থঃ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই দুয়া আসমান ও যমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ না করবে ততক্ষণ তোমার কোন দুয়াই আল্লাহ পাক-এর নিকট পৌঁছবেনা।

তাইসীরুল উছূলকিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
الدعاء موقوف بين السماء والارض لا يصعد حتى يصلى على النبى صلى الله عليه وسلم. صلوا على اول الدعاء واوسطه واخره.
অর্থঃ দুয়া আসমান ও যমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত দুয়া উপরে উঠে না বা কবুল হয় না। সুতরাং তোমরা দুয়ার শুরুতে, মধ্যখানে ও শেষে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করো।

অতএব, এ ছলাতের গুরুত্ব কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একইভাবে এ ঈদে এত বিশাল ও এত ব্যাপক খুতবা রয়েছে, যে খুতবা (হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার আলোচনা, প্রশংসা, মর্যাদা-মর্তবা, ফযীলত, ছানা-ছিফত) ক্বিয়ামত পর্যন্ত বর্ণনা করা হলেও তা শেষ হবে না। সুবহানাল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে 
মহান আল্লাহ পাক নিজেই ইরশাদ করেন-
ورفعنا لك ذكرك.
অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার আলোচনা বা খুতবাকে বুলন্দ করেছি।’ (সূরা আলাম নাশরাহ, আয়াত শরীফ ৪)

এবং আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে আদেশ করেছেন যে-
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا. لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا.
অর্থঃ তোমরা হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার খিদমত করো, উনাকে সম্মান করো এবং সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদাসর্বদা উনার প্রশংসা, ছানা-ছিফত, মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করো। এক কথায় উনার শানে খুতবা প্রদান করো।(সূরা ফাতহ, আয়াত শরীফ ৮-৯) সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, সব ঈদের হুকুম এক রকম নয়। যেমন ঈদুল ফিতরের বিশেষ আমল হলো ঈদের নামাযের পূর্বে ছদকাতুল ফিতর আদায় করা। আর ঈদুল আযহার বিশেষ আমল হলো ঈদের নামাযের পরে পশু কুরবানী করা। যার প্রত্যেকটি ওয়াজিব। এ দুঈদে কিন্তু রোযা রাখা হারাম। কিন্তু জুমুআর দিন ও আরাফার দিন মুসলমানদের এ দুঈদে রোযা রাখা হারাম নয় বরং অশেষ ফযীলতের কারণ। আর এ দুঈদের আমলের মধ্যে কুরবানী কিংবা ছদক্বাতুল ফিতর কোনটিই নেই। বরং জুমুআর দিনে যুহরের নামাযের পরিবর্তে কেবলমাত্র পুরুষ, বালিগ, সুস্থ, মুক্বীম ব্যক্তির জন্য মসজিদে গিয়ে খুতবাসহ নামায আদায় করতে হয়। আর মহিলাদের জন্য জুমুআর দিনে আলাদা কোন ছলাতও নেই, আবার খুতবাও নেই। আর আরাফার দিনে শুধুমাত্র যারা হজ্জে যেয়ে থাকেন তাদের জন্য ৯ই যিলহজ্জ আরাফার ময়দানে অবস্থান করাটা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। আর শুধুমাত্র হাজীগণের জন্য আরাফার ময়দানে যুহর ও আছর নামায পড়তে হয়। ঈদের দিন হওয়া সত্ত্বেও আরাফার ময়দানে আলাদা কোন ছলাত নেই। আর খুতবা শুধুমাত্র হাজীগণের জন্যই। হাজীগণ ব্যতীত দুনিয়ার কোন মুসলমানের জন্য হোক সে পুরুষ অথবা মহিলা আরাফার দিন ঈদের দিন হওয়া সত্ত্বেও আলাদা কোন ছলাতও নেই, খুতবাও নেই। আর অন্যান্যদের জন্য আরাফার দিন রোযা রাখা খাছ সুন্নত এবং অশেষ ফযীলতের কারণ।

এছাড়া হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম- উনার প্রতি খাঞ্চা নাযিলের দিনকে যে ঈদের দিন সাব্যস্ত করা হয়েছে সে ঈদ উপলক্ষে কোন খুতবা ও ছলাত (নামায) রয়েছে কি? বরং সে ঈদ উপলক্ষে কেবল খাদ্য গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ঈদ হলেই যে খুতবা ও ছলাত থাকতে হবে, তা নয়। বরং একেক ঈদের একেক হুকুম, যা আল্লাহ পাক- উনার কুদরতের অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, সাইয়্যিদুল আইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে উলামায়ে সূদের প্রদত্ত বক্তব্য চরম জিহালত ও মূর্খতা বলেই প্রমাণিত হলো।