ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘নবীজীর জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে।’
এর জাওয়াব হলো- নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর সঠিক
তারিখ ১২ই রবীউল শরীফ সম্পর্কে যারা চু-চেরা করে থাকে তারা দু’ দিক থেকে কাফির।
প্রথমত তারা হাদীছ শরীফ-এর
বর্ণনাকে অস্বীকার করার কারণে কাফির। যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
روى ابو بكر ابن ابى الشيبة بسند الصحيح
عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس رضى الله تعالى عنهما قالا ولد رسول الله
صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول.
অর্থ: হযরত হাফিয আবূ বকর
ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ছহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন, হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত।
তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল। (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল। (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার
উপরই ইমামগণের ইজমা’ (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
(সীরাত-ই-হালবিয়াহ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব,
মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ)
দ্বিতীয়ত কালামুল্লাহ শরীফ-এ
বর্ণিত ‘নাসী’কে স্বীকার করে নেয়ার কারণে কাফির। যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ
পাক ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْرِ
يُضَلُّ بِهِ الَّذِينَ كَفَرُواْ يُحِلِّونَهُ عَامًا وَيُحَرِّمُونَهُ عَامًا لِّيُوَاطِؤُواْ
عِدَّةَ مَا حَرَّمَ اللّهُ فَيُحِلُّواْ مَا حَرَّمَ اللّهُ
অর্থ: “নিশ্চয়ই নাসী তথা মাসকে আগে পিছে করা কুফরীকে বৃদ্ধি করে থাকে।
এর দ্বারা কাফিরেরা গুমরাহীতে নিপতিত হয়। তারা (ছফর মাসকে) এক বছর হালাল করে নেয়
এবং আরেক বছর হারাম করে নেয়; যাতে আল্লাহ পাক-
উনার হারামকৃত মাসগুলোর গণনা পূর্ণ করতে পারে।” (সূরা তওবা, আয়াত শরীফ ৩৭)
অর্থাৎ জাহিলিয়াতের যুগে
কাফির, মুশরিকরা ছফর মাসকে অশুভ ও
কুলক্ষণে মনে করতো। তাই তারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক এ মাসটিকে আগে-পিছে করতো।
আরেকটি কারণ হলো, যখন তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ করার
প্রয়োজন মনে করতো বা যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো তখন তারা ছফর মাসকে আগে পিছে করে হারাম মাসের
সংখ্যা নিরূপন করতো। যা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। (তাফসীরে দুররে মানছূর)
এছাড়াও কাফির, মুশরিকরা তাদের নিজেদের স্বার্থে দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্য
বছরকে বারো মাসে গণনা না করে কোন কোন বছর দশ মাস থেকে সতের মাস পর্যন্ত গণনা করতো,
যা নাসী হিসেবে মশহুর। এর কারণে নূরে নূরে মুজাসসাম
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর তারিখ ও বার কস্মিনকালেও
মিলানো সম্ভব নয়। কারণ বিলাদত শরীফ থেকে বিদায় হজ্জ পর্যন্ত প্রায় তেষট্টি (৬৩)
বছর। এই তেষট্টি বছর যাবৎ কাফির, মুশরিকরা নাসী করেছে।
আর এই জন্যই বিদায় হজ্জের সময় খুতবাতে নূরে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাস, তারিখ, বার, স্থান সমস্ত কিছু
নতুন করে ফায়সালা করেছেন। যা বিদায় হজ্জের খুতবায় বর্ণিত রয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ
বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى بكرة رضى الله تعالى عنه قال خطبنا
النبى صلى الله عليه وسلم يوم النحر قال ان الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق الله السموات
والارض السنة انثى عشر شهرا منها اربعة حرم ثلث متواليات ذو القعدة وذوالحجة والمحرم
ورجب مضر الذى بين جمادى وشعبان وقال اى شهر هذا قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا
انه سيسميه بغير اسمه قال اليس ذا الحجة قلنا بلى قال اى بلد هذا قلنا الله ورسوله
اعلم فسكت حتى ظننا انه سيسميه بغير اسمه قال اليس البلدة قلنا بلى قال فاى يوم هذا
قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا انه سيسميه بغير اسمه قال اليس يوم النحر قلنا
بلى قال فان دماءكم واموالكم واعراضكم عليكم حرام كحرمة يومكم هذا فى بلدكم هذا فى
شهركم هذا وستلقون ربكم فيسئلكم عن اعمالكم الا فلا ترجعوا بعدى ضلالا يضرب بعضكم رقاب
بعض الا هل بلغت قالوا نعم قال اللهم اشهد فليبلغ الشاهد الغائب فرب مبلغ اوعى من سامع.
অর্থ: হযরত আবূ বাক্রা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর দিনে (দশই যিলহজ্জ) আমাদের উদ্দেশ্যে
খুতবা দান করলেন এবং বললেন, বৎসর ঘুরে এসেছে তার
গঠন অনুযায়ী, যেদিন আল্লাহ তায়ালা আসমান
ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন। বৎসর বার মাসে। তার মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। তিনটি
পর পর এক সাথে- যিলক্বদ, যিলহজ্জ ও মুহররম
এবং চতুর্থ মাস মুদ্বার গোত্রের রজব মাস যা জুমাদাল উখরা ও শা’বানের মধ্যখানে অবস্থিত। অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটি কোন্ মাস?
আমরা বললাম, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক
অবগত। অতঃপর তিনি এতক্ষণ চুপ রইলেন যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, এটি কি যিলহজ্জ নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর তিনি
বললেন, এটি কোন্ শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ পাক ও উনার
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক অবগত। অতঃপর তিনি এতক্ষণ চুপ রইলেন যাতে
আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম
করবেন। তৎপর বললেন, এটি কি পবিত্র মক্কা শহর নয়?
আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর তিনি বললেন, এটি কোন্ দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক
অবগত। অতঃপর তিনি এতক্ষণ চুপ রইলেন যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, এটি কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন তিনি
বললেন, তোমাদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান তোমাদের জন্য পবিত্র যেমন তোমাদের এই মাস,
এই শহর ও এই দিন পবিত্র। তোমরা শীঘ্রই আল্লাহ তায়ালা
উনার নিকট পৌঁছবে আর তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। সাবধান! আমার
পর তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে একে অন্যের জীবননাশ করো না। বলুন, আমি কি তোমাদেরকে (আল্লাহ তায়ালা উনার বিধান) পৌঁছাইনি?
ছাহাবায়ে কিরামগণ বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ পাক! আপনি সাক্ষি থাকুন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে এটা
পৌঁছিয়ে দেয়। কেননা, অনেক এমন ব্যক্তি
যাকে পরে পৌঁছানো হয় সে আসল শ্রোতা অপেক্ষা ও এর অধিক উপলব্ধিকারী ও হিফাযতকারী।
(বুখারী ও মুসলিম)
অতএব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর সঠিক তারিখ ১২ রবীউল আউয়াল শরীফ ব্যতীত অন্য যেসব তারিখ
ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে তা কাফিরদের নাসী তথা মাস, দিন, তারিখ পরিবর্তনের
প্রেক্ষিতে বর্ণিত রয়েছে। ফলে তা মানা বা গ্রহণ করা বা স্বীকার করা প্রত্যেকটিই কুফরীর
সামিল।