মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, তিনি চান আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে।
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য।
তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে এ মাসে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিল করা।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, “আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, তিনি চান আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে।” অর্থাৎ এ কথার অর্থ হলো মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন।
-এর বরাত দিয়ে বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধারা সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম ও উনার আওলাদদ্বয় হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মাধ্যমে বিশ্বময় জারি রয়েছে। (‘তাফসীরে ইবনে হাতেম, ইবনে কাছির, মাযহারী)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। প্রথমটি হলো, আল্লাহ পাক উনার কিতাব। যার মধ্যে রয়েছে হিদায়েত ও নূর। তোমরা কিতাবুল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধর।” তিনি কিতাবুল্লাহ-এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করলেন। অতঃপর বললেন, “দ্বিতীয়টি হলো, আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম বা (আওলাদগণ) বংশধরগণ। উনাদের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করছি। উনাদের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করছি।” (মুসলিম ও মিশকাত শরীফ)
‘তিরমিযী শরীফ’ ও ‘মিশকাত শরীফ’-এ বর্ণিত আছে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি সাইয়্যিদুনা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি, তিনি (বিদায়) হজ্জে আরাফার দিন উনার ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুতবা দান করছেন। আমি শুনেছি, তিনি খুতবায় বলেছেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন বিষয় রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি শক্তভাবে ধরে রাখো, তবে কখনো গুমরাহ হবে না। তাহলো আল্লাহ পাক উনার কিতাব ও আমার ইতরাত তথা আহলে বাইত।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, যাঁরা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের বংশের বা উনাদের আওলাদ উনারাই আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এ প্রসঙ্গে তাফসীরে আহমদ ও ইবনে কাছির-এ রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক উনার কসম। ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো মুসলমান ব্যক্তির অন্তরে ঈমান দাখিল হবে না (হাক্বীক্বীভাবে ঈমানদার হবে না) যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য আমার বংশধর হওয়ার কারণে কুরাঈশদেরকে মুহব্বত না করবে।” আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা কুরাঈশ-এর অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বতই ঈমানের অঙ্গ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার উম্মতদেরকে বলে দিন, আমি তোমাদের কাছে হিদায়েত দানের কোনো বিনিময় চাই না; তবে তোমরা আমার আহলে বাইত উনাদের (বংশধর) প্রতি সদাচরণ করবে।” (সূরা শূরা : আয়াত শরীফ ২৩)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি সিররুশ শাহাদাতাইন কিতাবের বরাত দিয়ে বলেন, আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম তথা আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খুছুছিয়ত, মর্যাদা, মর্তবা, বৈশিষ্ট্য ও ফযীলত সম্পর্কে অন্য হাদীছ শরীফ-এ রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমার আওলাদগণ উনাদের উদাহরণ হলো- হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায়। যে তাতে প্রবশে করেছে (অর্থাৎ যে আমার আওলাদ উনাদেরকে মুহব্বত করেছে) সেই নাজাত পেয়েছে।”
‘মুসনাদু আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি’ ও ‘মিশকাত শরীফ’-এ বর্ণিত আছে, হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি কা’বা শরীফ-এর দরজা ধরে বলেছেন, আমি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, সাবধান! আমার আহলে বাইতগণ উনারা হলেন তোমাদের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার নৌকার মতো। যে তাতে আরোহণ করবে, সে নাজাত পাবে। আর যে তা হতে পশ্চাতে থাকবে সে ধ্বংস হবে।”
আহলে বাইত তথা আওলাদে রসূলগণ উনাদের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তারকারাজী আসমানের নিরাপত্তা দানকারী আর আমার বংশধর বা আওলাদগণ উনারা যমীনের নিরাপত্তা দানকারী। সুতরাং যখন আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম বা আওলাদগণ উনারা (দুনিয়া থেকে) চলে যাবেন তখন দুনিয়াবাসী সকলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।” (আহমদ, মিরকাত, হাশিয়ায়ে মিশকাত/৫৭৩)
‘মুসলিম শরীফ’ ও ‘মিশকাত শরীফ’-এ বর্ণিত আছে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “একদা ভোর বেলায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একখানা কালো বর্ণের পশমী নকশী কম্বল শরীর মুবারক-এ জড়িয়ে বের হলেন। এমন সময় হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি সেখানে আসলে তিনি উনাকে কম্বলের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম আসলে উনাকেও হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার সাথে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম তিনি আসলে উনাকেও তাতে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসলে উনাকেও তার ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরআন শরীফ-এর এই আয়াত শরীফখানা তিলাওয়াত করলেন, “হে আমার আহলে বাইত! আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রেখে পবিত্র করার মতো পবিত্র করবেন।”
অন্য হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছেন তার জন্য আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। আর আমাকে মুহব্বত করো আল্লাহ পাক উনার সন'ষ্টি লাভ করার জন্য। আর আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার সন'ষ্টি লাভের জন্য।” সেজন্যই অতীতের সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ওলীআল্লাহ উনারা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে প্রাণ উজাড় করে মুহব্বত করেছেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, এ সম্পর্কে ইমামুল আইম্মাহ, ইমামুল আ’যম, হাকিমুল হাদীছ হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারক-এর একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একবার তিনি একস্থানে বসে স্বীয় ছাত্রদেরকে দর্স দিচ্ছিলেন। দর্স প্রদানরত অবস্থায় তিনি কিছুক্ষণ পর পরই দর্স বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন। যখন দর্স শেষ হলো, তখন ছাত্ররা প্রশ্ন করলো, “হে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি! বেয়াদবী ক্ষমা করবেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আপনি বারবার দর্স বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন, এর পিছনে কি কারণ রয়েছে?” উত্তরে তিনি বললেন যে, “তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে, আমাদের দরসগাহের পাশেই কিছু ছোট ছেলেরা দৌড়াদৌড়ি করছিলো। তন্মধ্যে অমুক ছেলেটি বার বার আমার নিকটবর্তী হলেই আমি দাঁড়িয়ে যেতাম।” ছাত্ররা জানতে চাইলো, সেই ছোট ছেলেটি আপনার নিকটবর্তী হলে কেনো দাঁড়িয়ে যেতেন? তখন ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন যে, “দেখ, সেই ছেলেটি আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর। উনার সাথে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক-এর সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য যখনই তিনি আমাদের দর্সগাহের নিকটবর্তী হয়েছেন তখনই আমি উনার সম্মানার্থে দাঁড়িয়েছি। কেননা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম ও সম্মান প্রদর্শন করা ঈমানের অঙ্গ তথা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মূলকথা হলো- মুহররমুল হারাম মাস আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করার মাস। তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে খাছ করে এ মাসে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করে ও উনাদের ছানা-ছিফত বর্ণনা করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিল করা।
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য।
তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে এ মাসে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিল করা।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, “আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, তিনি চান আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে।” অর্থাৎ এ কথার অর্থ হলো মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন।
-এর বরাত দিয়ে বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধারা সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম ও উনার আওলাদদ্বয় হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মাধ্যমে বিশ্বময় জারি রয়েছে। (‘তাফসীরে ইবনে হাতেম, ইবনে কাছির, মাযহারী)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। প্রথমটি হলো, আল্লাহ পাক উনার কিতাব। যার মধ্যে রয়েছে হিদায়েত ও নূর। তোমরা কিতাবুল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধর।” তিনি কিতাবুল্লাহ-এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করলেন। অতঃপর বললেন, “দ্বিতীয়টি হলো, আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম বা (আওলাদগণ) বংশধরগণ। উনাদের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করছি। উনাদের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করছি।” (মুসলিম ও মিশকাত শরীফ)
‘তিরমিযী শরীফ’ ও ‘মিশকাত শরীফ’-এ বর্ণিত আছে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি সাইয়্যিদুনা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি, তিনি (বিদায়) হজ্জে আরাফার দিন উনার ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুতবা দান করছেন। আমি শুনেছি, তিনি খুতবায় বলেছেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন বিষয় রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি শক্তভাবে ধরে রাখো, তবে কখনো গুমরাহ হবে না। তাহলো আল্লাহ পাক উনার কিতাব ও আমার ইতরাত তথা আহলে বাইত।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, যাঁরা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের বংশের বা উনাদের আওলাদ উনারাই আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এ প্রসঙ্গে তাফসীরে আহমদ ও ইবনে কাছির-এ রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক উনার কসম। ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো মুসলমান ব্যক্তির অন্তরে ঈমান দাখিল হবে না (হাক্বীক্বীভাবে ঈমানদার হবে না) যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য আমার বংশধর হওয়ার কারণে কুরাঈশদেরকে মুহব্বত না করবে।” আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা কুরাঈশ-এর অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বতই ঈমানের অঙ্গ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার উম্মতদেরকে বলে দিন, আমি তোমাদের কাছে হিদায়েত দানের কোনো বিনিময় চাই না; তবে তোমরা আমার আহলে বাইত উনাদের (বংশধর) প্রতি সদাচরণ করবে।” (সূরা শূরা : আয়াত শরীফ ২৩)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি সিররুশ শাহাদাতাইন কিতাবের বরাত দিয়ে বলেন, আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম তথা আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খুছুছিয়ত, মর্যাদা, মর্তবা, বৈশিষ্ট্য ও ফযীলত সম্পর্কে অন্য হাদীছ শরীফ-এ রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমার আওলাদগণ উনাদের উদাহরণ হলো- হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায়। যে তাতে প্রবশে করেছে (অর্থাৎ যে আমার আওলাদ উনাদেরকে মুহব্বত করেছে) সেই নাজাত পেয়েছে।”
‘মুসনাদু আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি’ ও ‘মিশকাত শরীফ’-এ বর্ণিত আছে, হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি কা’বা শরীফ-এর দরজা ধরে বলেছেন, আমি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, সাবধান! আমার আহলে বাইতগণ উনারা হলেন তোমাদের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার নৌকার মতো। যে তাতে আরোহণ করবে, সে নাজাত পাবে। আর যে তা হতে পশ্চাতে থাকবে সে ধ্বংস হবে।”
আহলে বাইত তথা আওলাদে রসূলগণ উনাদের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তারকারাজী আসমানের নিরাপত্তা দানকারী আর আমার বংশধর বা আওলাদগণ উনারা যমীনের নিরাপত্তা দানকারী। সুতরাং যখন আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম বা আওলাদগণ উনারা (দুনিয়া থেকে) চলে যাবেন তখন দুনিয়াবাসী সকলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।” (আহমদ, মিরকাত, হাশিয়ায়ে মিশকাত/৫৭৩)
‘মুসলিম শরীফ’ ও ‘মিশকাত শরীফ’-এ বর্ণিত আছে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “একদা ভোর বেলায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একখানা কালো বর্ণের পশমী নকশী কম্বল শরীর মুবারক-এ জড়িয়ে বের হলেন। এমন সময় হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি সেখানে আসলে তিনি উনাকে কম্বলের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম আসলে উনাকেও হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার সাথে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম তিনি আসলে উনাকেও তাতে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসলে উনাকেও তার ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরআন শরীফ-এর এই আয়াত শরীফখানা তিলাওয়াত করলেন, “হে আমার আহলে বাইত! আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রেখে পবিত্র করার মতো পবিত্র করবেন।”
অন্য হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছেন তার জন্য আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। আর আমাকে মুহব্বত করো আল্লাহ পাক উনার সন'ষ্টি লাভ করার জন্য। আর আমার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার সন'ষ্টি লাভের জন্য।” সেজন্যই অতীতের সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ওলীআল্লাহ উনারা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে প্রাণ উজাড় করে মুহব্বত করেছেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, এ সম্পর্কে ইমামুল আইম্মাহ, ইমামুল আ’যম, হাকিমুল হাদীছ হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারক-এর একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একবার তিনি একস্থানে বসে স্বীয় ছাত্রদেরকে দর্স দিচ্ছিলেন। দর্স প্রদানরত অবস্থায় তিনি কিছুক্ষণ পর পরই দর্স বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন। যখন দর্স শেষ হলো, তখন ছাত্ররা প্রশ্ন করলো, “হে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি! বেয়াদবী ক্ষমা করবেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আপনি বারবার দর্স বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন, এর পিছনে কি কারণ রয়েছে?” উত্তরে তিনি বললেন যে, “তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে, আমাদের দরসগাহের পাশেই কিছু ছোট ছেলেরা দৌড়াদৌড়ি করছিলো। তন্মধ্যে অমুক ছেলেটি বার বার আমার নিকটবর্তী হলেই আমি দাঁড়িয়ে যেতাম।” ছাত্ররা জানতে চাইলো, সেই ছোট ছেলেটি আপনার নিকটবর্তী হলে কেনো দাঁড়িয়ে যেতেন? তখন ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন যে, “দেখ, সেই ছেলেটি আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর। উনার সাথে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক-এর সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য যখনই তিনি আমাদের দর্সগাহের নিকটবর্তী হয়েছেন তখনই আমি উনার সম্মানার্থে দাঁড়িয়েছি। কেননা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম ও সম্মান প্রদর্শন করা ঈমানের অঙ্গ তথা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ
উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি তিরমিযী শরীফ, মুস্তাদরাকে হাকিম শরীফ ইত্যাদি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের উদ্ধৃতি
দিয়ে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। কেননা
তিনি তোমাদেরকে নিয়ামতরাজির মাধ্যমে অনুগ্রহ করে থাকেন। আর তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার
মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক পেতে হলে,
সন্তুষ্টি-রেযামন্দি পেতে হলে আমাকে মুহব্বত করো।
আর তোমরা আমার মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক পেতে হলে,
সন্তুষ্টি-রেযামন্দি পেতে হলে আমার হযরত আহলে বাইত
শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মূলকথা হলো- মুহররমুল হারাম মাস আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করার মাস। তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে খাছ করে এ মাসে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করে ও উনাদের ছানা-ছিফত বর্ণনা করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিল করা।