নোটিশ

শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১০

ক্বাছীদা শরীফ-এর প্রতি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত

“বিভ্রান্ত লোকেরাই (মিথ্যুক, অশ্লীল, কুৎস্বা বর্ণনাকারী) কবিদের অনুসরণ করে।” (সূরাতুশ শুয়ারা-২২৪)

এ আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর হযরত আব্দুল্লাহ বিন রাওহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমূখ ছাহাবী কবি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ক্রন্দনরত অবস্থায় সাইয়্যিদুনা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে উপসি'ত হয়ে আরয করেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। আমরাও তো ক্বাছীদা-কবিতা রচনা করে থাকি। এখন আমাদের কি উপায়? তখন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আয়াত শরীফ-এর শেষাংশ পাঠ করো। অর্থাৎ ‘সূরাতুশ শুয়ারা’-এর ২২৪নং আয়াত শরীফ-এ বেদ্বীনদের অনর্থক, ভ্রান্ত, উদ্দেশ্য প্রনোদিত, কু-রুচি সম্পন্ন ও শরীয়ত বিরোধী কবিতার সমালোচনা করা হয়েছে। আর ২২৭নং আয়াত শরীফ বা উক্ত সূরার শেষাংশ দ্বারা ঈমানদার ও নেককার কবিদের উত্তম, নছীহতমূলক রুচি সম্পন্ন কবিতা বা ক্বাছীদা সমূহের প্রসংশা করা হয়েছে। তথা এরূপ ঈমানদার ও নেককার কবি ও তাঁদের উত্তম, রুচি সম্পন্ন ও শরীয়তসম্মত কবিতাসমূহ যে প্রগণযোগ্য সেটাই আয়াত শরীফ-এর শেষাংশ দ্বারা বুঝানো হয়েছে।

যেমন, ‘সূরাতুশ শুয়ারা’-এর ২২৭নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তবে তাঁদের (সৎ কবিদের) কথা ভিন্ন। যারা ঈমান এনেছেন, আমলে ছলেহ তথা সৎ কর্ম করেন, আল্লাহ পাক উনার বেশী বেশী যিকির করেন এবং অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করেন। অত্যাচারীরা জানতে পারবে তাদের গস্তব্যস্থল কিরূপ?”

বিশ্ববিখ্যাত বিশুদ্ধ সর্বজনমান্য “তাফসীরুল জালালাইন শরীফ” কিতাবে উক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীর বর্ণিত রয়েছে যে,
“(তবে তাঁদের কথা ভিন্ন, যারা ঈমান এনেছেন এবং সৎ কর্ম করেন) কবিদের মধ্যে। অর্থাৎ ঈমানদার ও সৎকর্মশীল কবিদের উত্তম কবিতা গ্রহণযোগ্য।”

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, “হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই কোন কোন কবিতা (ক্বাছীদা) হিকমতপূর্ণ।” (বুখারী শরীফ)

“হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবে আ’যম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য মসজিদে নববীতে একটি মিম্বার স্থাপন করেছিলেন। তিনি এর উপর দাঁড়িয়ে ইমামুন নাবিয়্যিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে গৌরবময় ক্বাছীদা অথবা কাফিরদেরকে ভৎর্সনা করে বিদ্রুপাত্মক ক্বাছীদা পাঠ করতেন। আর ফখরে মওজুদাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, নিশ্চয় আল্লাহ পাক হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম দ্বারা সাহায্য করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে গৌরবময় ক্বাছীদা অথবা কাফিরদের প্রতি বিদ্রুপাত্মক ক্বাছীদা পাঠ করতে থাকেন।” (বুখারী, মিশকাত শরীফ)

উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রতিভাত হয় যে, ক্বাছীদা শরীফ রচনা করা, আবৃত্তি করা ও শ্রবণ করা সবই সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত এবং ফযীলতের কারণ। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও ক্বাছীদা রচনা এবং পাঠ করতেন। ক্বাছীদা শরীফ-এর প্রতি উনার মুহব্বতের অনুপম আদর্শ স্থাপন করে গেছেন।

যেমন হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, “হযরত জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, কোন এক জিহাদে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আঙ্গুল মুবারক রক্তাক্ত হয়েছিল। তখন তিনি এই ক্বাছীদা পাঠ করেছিলেন, ‘হে অঙ্গুলী! তুমি অঙ্গুলী ছাড়া আর কিছু নও। তুমি রক্তাক্ত হয়েছো বটে, তবে যা কিছু হয়েছে তা আল্লাহ পাক-এর পথেই হয়েছে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

মূলত: ক্বাছীদা শরীফ পাঠ ও শ্রবণের মাধ্যমে অন্তরের মধ্যে জযবা পয়দা হয়ে থাকে। স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে উৎসাহিত করতে। যার বর্ণনাও হাদীছ শরীফ-এ বিদ্যমান।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের জিহাদের দিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে মাটি বহন করেছেন। এমনকি উনার পেট মুবারক ধুলায় আবৃত হয়ে গেল। তখন তিনি ক্বাছীদা পাঠ করছিলেন,
(১) আল্লাহ পাক-এর কসম! যদি আল্লাহ তায়ালা উনার দয়া না হতো তাহলে আমরা হিদায়েত পেতাম না, সদকা করতাম না এবং নামাযও আদায় করতাম না।
(২) আয় আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করুন এবং আমরা যখন শত্রু দলের মোকাবিলা করি তখন আমাদের কদমগুলো মজবুত করে দিন।
(৩) নিশ্চয় কাফির দল আমাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, যখন তারা আমাদেরকে বিপর্যয়ে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করে তখন আমরা তাতে অস্বীকৃতি জনাই। রাবী বলেন তিনি (আমরা অস্বীকৃতি জানাই) বলার সময় আওয়াজ বুলন্দ করতেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

অন্য হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে, “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন। (খন্দকের জিহাদের সময়) মুহাজির ও আনসারগণ পরিখা খনন করতে এবং মাটি সরাতে লাগলেন। তখন উনারা ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতে লাগলেন, আমরা যে সব লোক যারা নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাতে জিহাদের উপর বায়াত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা বেঁচে থাকব’-তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কথার জবাব দিয়ে এই ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করলেন, “আয় আল্লাহ পাক! পরকালীন জীবনের সূখ ছাড়া পার্থিব জীবনের কোনও সূখ-স্বাচ্ছন্দ নেই, সুতরাং এছাড়া সমস্ত তাফসীরগ্রন্থ ও হাদীছ শরীফ-এ উত্তম ও শরীয়তসম্মত ক্বাছীদা বা কবিতা যে গ্রহণযোগ্য তা উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব এবং আল্লাহ পাক উনার মাহবুব ওলীগণের শানে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ ও শ্রবণ করা খাছ সূন্নতের অন্তর্ভূক্ত। এ মহান সুন্নত পালনার্থে চীশতিয়া খান্দানের মাশায়িখগণ সামা-এর মজলিস করতেন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে লুপ্তপ্রায় এ মহান সুন্নত পূণর্জাগ্রত করলেন, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউসূল আ’যম, হাবীবে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে উনার ওসীলায় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সুন্নতগুলো আদায় করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)