নোটিশ

শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১০

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার “কবিতা প্রীতি”

কবিতা প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই কোন কোন কবিতা জ্ঞানগর্ভ (হিকমত পূর্ণ) হয়ে থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)

(শে’র) আরবী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধিমত্তা, নিপুণতা, সূক্ষ্ম জ্ঞান, পরমানু। প্রচলিত অর্থে পরিমিত ও ছন্দবদ্ধ বাক্যকে শে’র বা কবিতা বলা হয়। যাতে বক্তার মনের ইচ্ছা সীমত আকারে প্রকাশ পায়।

আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য ও সুন্দর, ভাল ও অর্থবহ কবিতা পছন্দ করতেন। কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি তাতে উৎসাহও প্রদান করতেন এবং নিজেও উনার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। অনেক বিখ্যাত কবীদের কবিতা উনার প্রিয় ও পছন্দনীয় ছিল। ছাহাবী কবি হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবিতা তিনি খুবই পছন্দ করতেন এবং উনাকে কবিতা আবৃত্তির জন্য মসজিদে নববীতে মিম্বর বানিয়ে দিয়েছিলেন এবং ফেরেশতা হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম কর্তৃক উনাকে সাহায্য করার জন্যে আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করতেন।

এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফের বর্ণনায় হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম বলেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি। হাস্‌সান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাফিরদের প্রতি তাদের হাক্বিক্বত প্রকাশ করতে কবিতা পাঠ করেছেন এতে মুসলমানদেরকে শান্তি ও পরিতৃপ্তি দান করেছেন, নিজেও পরিতৃপ্ত হয়েছেন। (মুসলিম শরীফ)

অন্যত্র আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালনি, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাঈযার দিন (যে দিন ইহুদী বনু কুরাইফা গোত্রকে অবরোধ করা হয়েছিল) হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, তুমি মুশরিকদের বিরুদ্ধে কবিতা আবৃত্তি কর তাদের হাকিক্বত প্রকাশ করে। জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম তোমার সাথে আছেন। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলতেন, তুমি আমার পক্ষ হতে কাফিরদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের জাওয়াব দাও। (এবং হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য এভাবে দোয়া করতেন) হে আল্লাহ পাক! আপনি রুহুল কুদুস দ্বারা হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সাহায্য করুন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবীয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ চলাকালে নিজের পক্ষের কবিদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, “তোমরা কুরাঈশদের প্রতি কবিতা আবৃতি কর তাদের হাকিক্বত প্রকাশ করে। কেননা, ইহা তাদের জন্যে তীরের আঘাত হতেও কঠোর আঘাত। (মুসলিম শরীফ)

কবিতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবীয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কবিতাও এক প্রকার কথা। ভাল কবিতা ভাল কথা খারাপ কবিতা খারাপ কথা। (দারে কুতনী)

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু কবিতা শুনতেনই না, কখনো কখনো তিনি নিজেও কবিতা আবৃত্তি করতেন। খন্দক খনন করার সময় একবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতে ছিলেন, “আল্লাহ পাক উনার কসম! যদি আল্লাহ তা’য়ালার হিদায়েত না হত, তবে নিশ্চয়ই আমরা হিদায়েত পেতাম না। আমরা সদকা। দিতামনা এবং নামাজও পড়তাম না। সুতরাং হে আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের উপর শান্তি নাযিল করুন, আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখী হই আমাদের অবস্থানে আমাদের সুদৃঢ় রাখুন। নিশ্চয়ই প্রথমে (কাফিরগণ) আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করেছে। যখন তারা আমাদের ফিৎনায় ফেলার ইচ্ছা করে থাকে আমরা তা আস্বীকার করি।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম, মিশকাত শরীফ)

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুপম আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আল্লাহ পাক আমাদেরকে কবিতার মধ্যে হতে যা সত্য, সুন্দর, উপকারী ও সওয়াবের কারণ শুধুমাত্র তাই গ্রহণ করত: সীমাহীন কল্যাণ ও উনার সন্তুষ্টি লাভের তৌফিক দান করুন। (আমীন)