নোটিশ

শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

ঈছালে ছওয়াব বা ছওয়াব রেসানীর নিয়ম

ঈছালে ছওয়াব বা ছওয়াব রেসানীর অর্থ:

ঈছালে ছওয়াব (اَيْصَالُ ثَوَابٍ) আওছালা (اَوْصَلَ) , ইউছিলু (يُوْصِلُ) ইছালান (اِيْصَالاً) আরবী শব্দ বাবে ইফয়াল (اِفْعَالٌ)হতে উদ্ভূত। ঈছাল অর্থ পৌঁছানো এবং ছওয়াব অর্থ নেকী বা পুণ্য অর্থাৎ এক কথায় বলা হয় নেকী পৌঁছানো। ছওয়াব রেসানী (ثواب رسانى) রেসানী(رسانی) , রেসানীদান (رسانى) ফারসী শব্দ হতে উদ্ভূত। ছওয়াব অর্থ নেকী বা পুণ্য এবং রেসানী অর্থ পৌঁছানো অর্থাৎ এক কথায় এর অর্থ হচ্ছে নেকী পৌঁছানো। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, অর্থগত দিক দিয়ে ঈছালে ছওয়াব এবং ছওয়াব রেসানী একই অর্থ বহন করে।
সালিকগণ নিম্নলিখিত নিয়ম অনুসারে ছওয়াব রেসানী করবে:

ছওয়াব রেসানীর নিয়ম

(১) ইস্তিগফার তিন বার- اَسْتَغْفِرُ اللَّٰهَ رَبِّ مِنْ كُلِّ ذَنۢبٍ وَّاَتُوْبُ الَيْهِ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা রব্বি মিং কুল্লি যাম্বিউঁ ওয়া আতূবু ইলাইহি।

(২) আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা (আল হামদু শরীফ) একবার।
(৩) বিসমিল্লাহসহ সূরা ইখলাছ (কুল হুয়াল্লাহ শরীফ) তিনবার।
(৪) ইশার নামাযের পরে তরীক্বার যে দুরূদ শরীফ পড়া হয়, সেই দুরূদ শরীফ পাঁচবার পড়ে নিম্নলিখিতভাবে মুনাজাত করবে।

মুনাজাত:

আয় আল্লাহ পাক, আমি যা কিছু পড়লাম, তার ছওয়াব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযওয়াজে মুতাহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম এবং উনার আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তামাম আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের খিদমতে পৌঁছে দিন এবং উনাদের ওসীলায় আপনার খাছ মারিফত ও মুহব্বত আমাদের সকলকে নছীব করুন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ণ পায়রবী করার তাওফীক দিন। আমীন!


ঈছালে ছওয়াব বা ছওয়াব রেসানী-এর আহকাম ও ফযীলতসমূহ

মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এর তৃতীয় পারা সূরা বাক্বারার ২৬১ নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللّٰهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّئَةُ حَبَّةٍ وَاللّٰهُ يُضَاعِفُ لِـمَنْ يَشَاءُ وَاللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
অর্থ: যারা মহান আল্লাহ পাক উনার পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উদাহরণ হলো সেই শস্য দানার মতো যা থেকে গজায় সাতটি শীষ, প্রত্যেকটি শীষে ১০০টি করে দানা (উৎপন্ন) হয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে চান বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রশস্ত, সর্বজ্ঞানী।
এ আয়াত শরীফ-এ দানের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। তাফসীরকারকগণ এখানে মহান আল্লাহ পাক উনার পথ বলতে সকল প্রকার নেক কাজকেই বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ কোনো নেক কাজে ধন সম্পদ দান করা বা কোনো ইবাদতের ছওয়াব দান করা, মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করার শামিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, নামায, রোযা, যিকরুল্লাহ মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করলে তাও ৭০০ গুণ বেড়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! (মুসনদে আহমদ, তাফসীরে ইবনে কাছীর)
ফিক্বাহর কিতাবে আছে, কোনো মানুষ তার জীবনের সমস্ত ফরয ও নফল ইবাদতের ছওয়াব অপরের নামে বখশিয়ে দিলে তা জায়িয হবে। (বাহারে শরীয়ত)
সুতরাং কেউ যদি তার জীবনের সমস্ত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব ইত্যাদি নেক কাজের ছওয়াবসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করে তবে তার প্রতিদানও উপরোক্ত আয়াত শরীফ মুতাবিক হবে।
এখন যদি কেউ তার নেক আমল হতে একটি ছওয়াব মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করে তবে পূর্বে বর্ণিত আয়াত শরীফ অনুযায়ী দানকারীর আমলনামায় ৭০০ গুণ অর্থাৎ ৭০০ ছওয়াব জমা হবে। আর এই প্রথমবারের ৭০০ ছওয়াব সে যদি পুনরায় দান করে, তবে দ্বিতীয়বার সে ৭০০*৭০০=৪,৯০,০০০ ছওয়াব পাবে। এভাবে বার বার দান করলে প্রতিবারে সে পূর্ণ ছওয়াবের কমপক্ষে ৭০০ গুণ বেশি প্রতিদান পেতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
এখানে লক্ষণীয় যে, আয়াত শরীফ অনুযায়ী এটা কমপক্ষের হিসাব। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা এ অপেক্ষা বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রশস্ত এবং সর্বজ্ঞানী।

দুরূদ শরীফ:


اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا نَبِيِّنَا حَبِيْبِنَا شَفِيْعِنَا مَوْلٰنَا وَسِيْلَتِىْ اِلَيْكَ وَاٰلِه وَسَلِّمْ.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا نَبِيِّنَا حَبِيْبِنَا شَفِيْعِنَا مَوْلٰنَا مَعْدَنِ الْـجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَاٰلِه وَسَلِّمْ.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا نَبِيِّنَا حَبِيْبِنَا شَفِيْعِنَا مَوْلٰنَا النَّبِىِّ الْاُمِّىِّ وَاٰلِه وَسَلِّمْ.