আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা সমপর্কে ইরশাদ করেন, “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত : যে ব্যত্তি শরীয়তের সঠিক তরীকা অনুসরণ করতে চায়, তার উচিত যারা অতীত হয়েছেন, তাঁদেরকে, অর্থাৎ আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রিয় ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণ করা । তাঁরা উমমতের মধ্যে সর্বোত্তম, আত্মার দিক দিয়ে তাঁরা অধিক পবিত্র, ইল্মের দিক দিয়ে গভীর, তাঁরা লোক দেখানো আমল করা হতে মুক্ত । আল্লাহ পাক তাঁদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথী হিসাবে মনোনীত করেছেন । সুতরাং, তাঁদের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত, শান-শওকত সমপর্কে অবগত হও এবং তাঁদের কথা ও কাজের অনুসরণ কর এবং যথা সম্ভব তাঁদের সিরত-ছুরতকে গ"হণ কর, কারণ তাঁরা হিদায়েত ও ‘‘সিরাতুল মুস্তাকীম’’-এর উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত । (মিশকাত শরীফ পৃ:৩২)
“হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে, অতি শীঘ্রই আমার উমমত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে । একটি দল ব্যতীত বাহত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দল কোন্টি ? হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথের উপর যারা কায়েম থাকবে । অর্থাৎ তারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল । (তিরমিযী শরীফ) অপর এক হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে : “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, বাহাত্তরটি দল হবে জাহান্নামী, আর একটি দল হবে জান্নাতী । আর সে দলটিই হজে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত । (আহমদ, আবু দাউদ)
এ সমপর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত । হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার বেছাল (ওফাত) শরীফের পরে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সমপর্কে আমি আল্লাহ পাককে জিজ্ঞাসা করেছি । আল্লাহ পাক আমাকে বললেন : হে হাবীব, নিশ্চই আপনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আমার নিকট তারকা সমতূল্য । কারো আলোর চেয়ে কারো আলো বেশী, তবে প্রত্যেকেরই আলো আছে । সুতরাং তাঁদের যে কোন ইখতিলাফকে যারা আঁকড়ে ধরবে, তারা হিদায়েত পেয়ে যাবে । কারণ তাঁদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট হিদায়েত হিসাবে গণ্য । অত:পর রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ (প্রত্যেকেই) তারকা সদৃশ, তাঁদের যে কেউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে । অর্থাৎ তাঁদের যে কাউকে, যে কোন ব্যক্তি, যে কোন বিষয়ে অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি সে বিষয়েই হিদায়েত লাভ করবে বা হিদায়েতের উপর থাকবে ।
অতএব, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, যাঁদের প্রতি আল্লাহ পাক সন'ষ্ট এবং উনার রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সন্তুষ্ট, যাঁদেরকে আল্লাহ পাক জান্নাতী বলে কুরআন শরীফে ঘোষণা করেছেন, যাঁদের পথ ও মত অনুসরনকারীরাও নাযাতপ্রাপ্ত, যাঁদেরকে আল্লাহ পাক অগাধ জ্ঞানের অধিকারী করেছেন, যাঁদের যুগকে সর্বোত্তম যুগ হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যাঁদের অভাবনীয় ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে পরবর্তী উমমত সহজেই পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম পেয়েছে, সেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মর্যাদা-মর্তবা সমপর্কে অনেকেই বেখবর । অনেকেই আবার তাঁদের সমালোচনায় মুখর । তারা তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে, তাঁদেরকে সত্যের মাপকাঠি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় । উপরন্ত তাঁদেরকে নাকিছ ও অপূর্ণ বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকে (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক) ।
অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি মুহব্বত রাখা, তাঁদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ । তাঁদের ইত্তেবা বা অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব । আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাঁদেরকে কষ্ট দেয়া, সমালোচনা করা, নাকিছ বা অপূর্ণ বলা সমপূর্ণ কুফরী । এটাই আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বা বিশ্বাস । এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা গোম্রাহীর নামান্তর।
পৃষ্ঠাসমূহ
- যামানার ইমাম
- আজকের ক্বওল শরীফ
- সুন্নাহ শরীফ
- মুসলিম নির্যাতন
- বাতিল ফিরকা
- চিকিৎসা সহায়তা
- প্রথম-পাতা
- ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে যুক্তিহীন বিতর্কের অবসান
- বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক আইন
- সামরিক প্রযুক্তি
- আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও নানা শাখা-প্রশাখা
- মুসলমানদের সামনে চ্যালেঞ্জ
- সন্তানদের শিক্ষাদান পদ্ধতি
- পবিত্র আল-বাইয়্যিনাত শরীফ উনার সূচী মুবারক
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সকলে আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও।’ (সূরা ইমরান-৭৯)