নোটিশ

শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মুহব্বত ও আত্ম-ত্যাগ

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : “তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে এমন কি সমস্ত মানুষের চাইতে বেশী প্রিয় হব । (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নিজের জীবন থেকে বেশী মুহব্বত করার প্রকৃত নজীর দেখিয়েছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ । নিম্নে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো-

(১) হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ছিদ্দীকে আকবর হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করার অনুমতি প্রার্থনা করেন । প্রথমে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দেননি। পরে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বারংবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে সমমত হন । হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কা‘বা গৃহে হাজির হয়ে খুৎবা আরম্ভ করেন। খুৎবা শুরু হতেই চতুর্দিক থেকে কাফিররা উনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাফিররা তাঁকে এমন মারধর করে যে, উনার চেহারা এবং নাক, কান মুবারক সবকিছু রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। অমানুষিক নির্যাতনে তিনি বেহুশ হয়ে যান । এ খবর শুনে বনী তায়েমের লোক এসে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নিয়ে যান । অনেকেরই ধারণা ছিল যে, তিনি আর বাঁচবেন না । সন্ধ্যা পর্যন্ত হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অচেতন অবস্থায় ছিলেন । সন্ধ্যার সময় উনার হুশ হওয়ার পর সর্ব প্রথম কথা এই ছিল ‘‘আমার প্রিয় নবীজী কি অবস্থায় আছেন ?’’ উপসি'ত লোকজন বলল, যাঁর জন্য এ অবস্থা, জ্ঞান শক্তি আসার পর সেই নবীর নাম ! এটা শুনে সকলেই চলে গেল । উনার মাতা উম্মুল খায়র কিছু খানা তৈরী করে খেতে বললেন, কিন' নবী প্রেমিক হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ঐ একই কথা ‘‘আমার প্রিয় নবীজীর অবস্থা কি ? তিনি কেমন আছেন ? তিনি কি ভাল আছেন ?’’ উনার মা বললেন, ‘‘বাবা, আমি জানি না তিনি কি অবস্থায় আছেন ?’’ তিনি বললেন, ‘‘উমরের ভগ্নী উম্মে জামিলের নিকট গিয়ে জেনে আসুন ।’’ মা ছেলের দু:খ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে উম্মে জামিলের নিকট গিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হালত জিজ্ঞাসা করলেন । হযরত উম্মে জামিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, ‘‘হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল আছেন এবং দারে আরকামে আছেন ।’’ হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘‘আল্লাহ পাকের কসম ! আমি ঐ পর্যন্ত কিছু খাব না, পানও করব না, যে পর্যন্ত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাক্ষাত না পাই ।’’ কসম শুনে উনার মা বাধ্য হয়ে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে দারে আরকামে নিয়ে আসেন । প্রিয় নবীজীকে দেখে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন এবং সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও কাঁদতে লাগলেন । হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘‘হুযূর ! ইনি আমার মা, আমার মাকে ঈমানের দাওয়াত দিন এবং হিদায়েতের জন্য দোয়া করুন । সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত দিলেন এবং দোয়া করলেন । সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঈমান কবুল করে মুসলমান হয়ে গেলেন। (সুবহানাল্লাহ) (মাসিক আল-বাইয়্যিনাত শরীফ ১০৫/১৩৯)

(২) হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে : উহুদের জিহাদে যখন মুসলমানগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্নিকটে মাত্র বার জন লোক ছিলেন । হযরত তায়ালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তন্মধ্যে একজন । অত:পর তাঁদেরকে মুশরিকগণ আক্রমণ করল । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন : এদের বিরুদ্ধে কে অগ্রসর হবে ? হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন : আমি । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তুমি নও । অত:পর এক ব্যক্তি বলল : আমি অগ্রসর হব । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : হ্যাঁ । সে ব্যক্তি মুশরিকদের সাথে জিহাদ করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন । অত:পর মুশরিকরা অগ্রসর হচ্ছিল । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন : এদের বিরুদ্ধে কে অগ্রসর হবে? হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুণরায় বললেন: আমি। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি নও । আনছারদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি উঠে বললেন : আমি । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : হ্যাঁ । এভাবে এগার জন শহীদ হওয়ার পর যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, এদের বিরুদ্ধে কে অগ্রসর হবে, হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন : আমি । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : হ্যাঁ । অত:পর হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিহাদ করতে লাগলেন । তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দিকে নিক্ষিপ্ত তীর সমূহ নিজের হাতে ও শরীরের উপর গ্রহণ করছিলেন । এতে উনার হাত ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেল । অত:পর তিনি একটি অনুচ্চ শব্দ উচ্চারণ করলেন । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : যদি তুমি বলতে, ‘‘বিসমিল্লাহ’’ তবে ফেরেশ্‌তাগণ তোমাকে উর্দ্ধে আরোহণ করে নিয়ে যেতেন, আর লোকেরা তা দেখতে পেত । অত:পর মুশরিকরা ফিরে গেল । হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন : উহুদের জিহাদে আঘাতে আঘাতে আমার সর্ব শরীর জখম হয়ে যায়, এমনকি আমার লজ্জাস্থানও জখম হয় । (সিয়ারু আলামিন্‌ নুবালা, নাসাঈ শরীফ)

উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন উহুদের জিহাদের কথা স্মরণ করতেন, বলতেন : এ দিনটি ছিল হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দিন। তিনি বলেন: আমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম, উনার দাঁত মুবারক ভেঙ্গে গেছে, চেহারা মুবারক মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে । উনার পবিত্র গন্ডদেশে শিরস্ত্রাণের দু’টি কড়া প্রবেশ করেছে, এবং (এ সব স্থান থেকে) প্রচূর রক্তক্ষরণ হয়েছে । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : “তোমাদের সাথীর খোঁজ নাও, এতে তিনি হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দিকে ইঙ্গিত করলেন । অত:পর আমরা উনার খোঁজে এসে তাঁকে একটি গর্তে পেলাম । দেখতে পেলাম, উনার শরীরে প্রায় সত্তরের অধিক বর্শার আঘাত, তীরের আঘাত এবং তরবারীর আঘাত রয়েছে এবং উনার আঙ্গুল কেটে গেছে । অত:পর আমরা এ অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে উনার শুশ্রুষা করলাম। (হায়াতুছ ছাহাবা, ১ম খন্ড, পৃ: ৪১৩) (৩) একদিন আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দরবার শরীফে এক ব্যক্তি এসে হাযির হলেন এবং বললেন : ইয়া রসূলাল্লাহ্‌, ইয়া হাবীবাল্লাহ্‌, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! কিছু দিন পর আমার মেয়ের বিয়ে কিন' আমি অনেক গরীব, আমার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার মত আমার কোন সামর্থ নেই । দয়া করে আপনি আমাকে কিছু সাহায্য করুন । যখন সে লোকটি আল্লাহ পাক-উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এ কথা বললেন, তখন তিনি বললেন : হে ব্যক্তি, তুমি এক কাজ কর, এই যামানার যিনি ধনী ব্যক্তি এবং আমার জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত উছমান যুন্‌ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে গিয়ে আমার কথা বলবে, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি। তিনি যেন তোমাকে সাহায্য করেন। তখন সেই ব্যক্তি হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দরবারে এসে হাযির হলেন এবং তিনি সেখানে পৌঁছে দেখতে পেলেন হযরত উছমান যুন্‌ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এক ব্যবসার শরীকদের কাছ থেকে এক পয়সার হিসাব বুঝে নিচ্ছেন । তখন সে ব্যক্তি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন, যে ব্যক্তি এক পয়সার হিসাব নিতে পারেন সে ব্যক্তি আমাকে কিভাবে সাহায্য করবেন ? এই কথা চিন্তা করে তিনি হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দরবার ত্যাগ করলেন এবং আবার গিয়ে হাযির হলেন আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দরবার শরীফে। সে ব্যক্তি হাযির হয়ে বললেন : ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমি হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট গিয়েছিলাম । সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম তিনি কোন এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক পয়সার হিসাব বুঝে নিচ্ছেন । এবং লোকটি বললেন : যিনি এক পয়সার হিসাব নেন, তিনি কিভাবে দান করতে পারেন ? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : হে ব্যক্তি ! তুমি উনার কাছে গিয়ে আমার কথা বলো, তাহলে তিনি তোমাকে সাহায্য করবেন । তখন সেই ব্যক্তি আবার হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দরবারে হাযির হলেন এবং বললেন: হে জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত উছমান যুন্‌ নুরাাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ! আমাকে আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আপনি যেন আমাকে কিছু সাহায্য করেন । তখন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন : হে ব্যক্তি, আপনি এক কাজ করুন । আপনি অমুক পাহাড়ে গিয়ে দাঁড়ান, সেখানে কিছুক্ষণ পর দেখতে পাবেন সেই পাহাড়ের পিছন দিক থেকে আমার একটি উটের কাফেলা আসছে এবং সকল উটের পিঠের উপর বোঝাই করা সমপদ রয়েছে । সেখান থেকে আপনার যতটুকু ইচ্ছে ততটুকু সমপদ আপনি নিয়ে যান । সে ব্যক্তি হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কথা অনুযায়ী সেই পাহাড়ে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং ঠিক কিছুক্ষণ পর দেখা গেল সেই পাহাড়ের পিছন দিক থেকে বিরাট এক উটের কাফেলা আসছে এবং সমস্ত উটের পিঠে বোঝাই করা সমপদ রয়েছে । অত:পর উক্ত বিরাট কাফেলা সেই ব্যক্তির সম্মুখে আসল । তখন সেই ব্যক্তি হাত উঁচু করে সেই উটের কাফেলাটিকে থামিয়ে দিল । তখন সেই কাফেলার যিনি সর্দার ছিলেন তিনি বললেন : হে ব্যক্তি ! তুমি কেন এই উটের কাফেলাটিকে থামিয়ে দিলে ? তখন সেই ব্যক্তি জবাব দিল : হে কাফেলার সর্দার ! আমাকে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পাঠিয়েছেন, এই উটের কাফেলা থেকে আমার যে উটটি পছপ হয় সে উটটিই যেন সম্পদসহ নিয়ে যাই । এ কথা শুনে কাফেলার সর্দার বললেন । ঠিক আছে, আপনার যে উটটি পছন্দ হয় সে উটটি সমপদসহ নিয়ে যান । তখন সে ব্যত্তি সবার সামনের সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচাইতে বেশী সমপদ বোঝাই করা উটটিকে পছন্দ করলেন । তখন সেই কাফেলার সর্দার বললেন : হে ব্যক্তি ! আপনাকে এই উটটি দেয়া যাবে না । কেননা, উটের নিয়ম হলো, সামনের উট যেদিকে যায় পিছনের উটগুলোও তার পিছনে পিছনে সেদিকে যায় । সেজন্য কাফেলার সর্দার সে ব্যক্তিকে সামনের উটটিকে দিতে চাচ্ছেন না । তখন দু’জনে মিলে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে গিয়ে হাযির হলেন এবং কাফেলার সর্দার বললেন : হে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ! আপনি কি এই ব্যক্তিকে আমাদের কাফেলা থেকে যে কোন একটি উট সম্পদসহ নিয়ে যেতে বলেছেন ? তখন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন : হাঁ, আমি বলেছি । তখন সেই কাফেলার সর্দার বললেন : হে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! ঐ ব্যক্তি আমাদের কাফেলার সর্ব প্রথম উটটিকে পছন্দ করেছেন । এখন যদি এই ব্যক্তিকে সেই উটটি দেয়া হয় তাহলে সমস্ত উট এবং সমস্ত সম্পদও চলে যাবে । তাহলে আমাদের কিছুই থাকবে না । তখন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল এবং তিনি বললেন : হে কাফেলার সর্দার ! তুমি কি জান, ঐ ব্যক্তিকে কে আমার নিকট পাঠিয়েছেন ? তিনি হলেন, সরওয়ারে দো’জাহান, নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । কাজেই এই ব্যক্তি তো শুধু আমার উট ও সম্পদ চেয়েছে । হে কাফেলার সর্দার, তুমি শুনে রাখ এবং জেনে রাখ, এই ব্যক্তি যদি আমাকেও চায় তাহলে আমি হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকেও উনার সঙ্গে চলে যেতে হবে । (সুবহানাল্লাহ্‌) তখন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নির্দেশে সে ব্যক্তি কাফেলার এক হাজার উট খাদ্য শস্যসহ সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন । হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুহব্বতে এ ভাবে তাঁদের জান-মাল সবকিছু কুরবানী করে দিয়েছিলেন । (মাসিক আল বাইয়্যিনাত-১০৫/১৪০)

(৪) হযরত ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্‌সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবুকের জিহাদের জন্য রওয়ানা হওয়ার কিছুদিন পর বনু সালিম গোত্রের হযরত আবূ খায়ছামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রচন্ড গরমের মধ্যে একদিন উনার পরিবারের নিকট ফিরে আসেন । ফিরে এসে তিনি দেখলেন যে, উনার দুই স্ত্রী (গৃহ সংলগ্ন) একটি বাগানে দুইটি ছায়াপূর্ণ স্থান (নিকুঞ্জ) তৈরী করেছেন । উভয়ই তাঁদের নিজ নিজ স্থানটিকে পানি ছিঁটিয়ে শীতল করে রেখেছেন, উনার জন্য ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করে রেখেছেন এবং উনার জন্য খাদ্যও প্রস্তুত করে রেখেছেন । তিনি বাগানে প্রবেশ করে ছায়া-পূর্ণ স্থান দু’টির দরজায় এসে দাঁড়ালেন এবং উনার দুই স্ত্রী কি কি করেছেন তার প্রতি লক্ষ্য করলেন । অত:পর তিনি বললেন : হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছেন প্রখর রৌদ্রে ও গরম বাতাসের মধ্যে, আর আবূ খায়ছামা থাকবে শীতল ছায়ায়, ঠান্ডা পানি পান করবে, সুস্বাদু খাদ্য খাবে এবং সুপরী রমণীর সাথে স্থায়ী সমপদের মধ্যে আরামে থাকবে ! এটা কি ন্যায়সঙ্গত হবে ? আল্লাহ পাক-উনার কসম ! আমি তোমাদের একজনেরও ছায়াপূর্ণ নিকুঞ্জে প্রবেশ করব না । আমি ফিরে গিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে মিলিত হব । সুতরাং আমার জন্য পূণরায় সফরের সামগ্রী প্রস্তুত কর । সেই মতে উনার দুই স্ত্রী উনার জন্য সফরের সামগ্রৗী প্রস্তুত করে দিলেন। অত:পর তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার অন্বেষণে বের হলেন এবং তাবুকে তিনি যেখানে অবস্থান করছিলেন সে স্থানের নিকটবর্তী হলেন । প্রথমে দূর থেকে লোকেরা তাঁকে দেখে বলতে লাগলেন : এই যে রাস্তায় এক আরোহী আমাদের দিকে আসছে ! হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন : আবূ খায়ছামা হও ! (একটু পরেই) ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন : ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আল্লাহ পাক-উনার কসম ! তিনি আবূ খায়ছামাই। অত:পর তিনি সম্মুখে এসে বাহন থেকে অবতরণ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম দিলেন । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন : হে আবূ খায়ছামা ! তোমার জন্য ইহা উত্তম হয়েছে । অত:পর তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সব বিষয় খুলে বললেন । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন : কল্যাণকর কাজ করেছ । অত:পর তিনি উনার জন্য কল্যাণের দোয়া করলেন । (মুসলিম শরীফ, উসুদুল গাবা)

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্‌সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মুহব্বতের এরূপ আরো শত সহস্র ঘটনা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে । তাঁরা নিজেদের ধন-সমপদ, পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র, ভাই-বোন এমনকি নিজের জীবনের চাইতেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশী মুহব্বত করতেন ।