মাযহাবের আভিধানিক অর্থ ‘চলার পথ’।
শরীয়তের পরিভাষায় কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ তথা ফিক্বাহর অনুসরণ করতে গিয়ে যে যেই ইমাম উনার তাকলীদ বা অনুসরণ করে সে সেই ইমাম উনার মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত। মূলত প্রত্যেক ছাহাবী এবং প্রত্যেক ইমাম-মুজতাহিদ উনারা প্রত্যেকেই একটি করে মাযহাব ছিলেন। তবে তৃতীয় হিজরীতে ইজমা হয় যে, হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী- এ চারটি মাযহাবের যেকোন একটি অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সুলতানুল নাছির, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য মাযহাবের অনুসরণ করা অপরিহার্য তথা ফরয-ওয়াজিব।
তিনি বলেন, মাযহাবের উৎপত্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ থেকে শুরু হয়েছে এবং তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীনগণের মধ্যে অনেকেই মাযহাবের ইমাম ছিলেন। কেননা শুরু যামানায় অনেকেই মুজতাহিদ ছিলেন তাঁরা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ পড়ে নিজেই ইজতিহাদ করে চলতেন, কারো অনুসরণ করার প্রয়োজন ছিল না।
তিনি বলেন, হিজরী শতকের তৃতীয় শতাব্দি থেকে হানাফী (৮০-১৫০), মালিকী (৯৩ বা ৯৫-১৭৯), শাফিয়ী (১৫০-২০৪) ও হাম্বলী (১৬৪-২৪৬) মাযহাব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সর্বজন মান্য হিসেবে গৃহীত হয়। আর চতুর্থ হিজরী শতকে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয় যে, উক্ত চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব এবং তা অমান্য করা বিদয়াতী ও গোমরাহী।
‘মুছাল্লাম’ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি মুজতাহিদে মতলক্ব নয় যদিও সে আলিম, তথাপি তার জন্য তাকলীদ অর্থাৎ কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করা ফরয।” তাফসীরে আহমদীয়াত-এর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, হযরত মুল্লা জিউন রহমতু্ল্লাহি আলাইহি বলেন, “সাধারণের জন্য আলিমগণকে এবং আলিমগণের জন্য মুজতাহিদগণকে অনুসরণ করা ওয়াজিব।” তিনি আরো বলেন, “চার মাযহাবের কোন একটাকে অনুসরণ করা ওয়াজিব।” ‘জামিউল জাওয়াম’-এর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, হযরত আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যারা ইজতিহাদের (মতলক্ব) ক্ষমতা রাখে না, তাদের জন্য কোন একজন ইমামের মাযহাবকে অনুসরণ করা ওয়াজিব।”
তিনি বলেন, হযরত ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফতওয়া “কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব।”
তিনি বলেন, ফতওয়া হচ্ছে প্রত্যেকের জন্য মাযহাব চতুষ্ঠয়ের যে কোন এক মাযহাবের অনসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। অন্যথায় সে ফাসিক ও গোমরাহ হবে। এ ফতওয়ার উপর ইমাম-মুজতাহিদগণ ইজমা করেছেন। যারা মাযহাব মানে না বা মাযহাবের বিরোধিতা করে তারা বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন, ওহাবী, সালাফী, মুহম্মদী, লা-মাযহাবী, আহলে হাদীছ, রফেদান ইত্যাদি।
তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্য থেকে ইমাম বানিয়ে তার অনুসরণ-অনুকরণ করে। তাদের ইমামের আক্বীদা-আমল কুরআন-সুন্নাহর খিলাফ হলেও সেটাকেই তারা অনুসরণ করে থাকে।
তিনি বলেন, এরূপ নব উদ্ভাবিত ইমামদের সম্পর্কেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার পরে অনেক ইমাম বের হবে। তারা আমার হিদায়েতের উপর চলবে না এবং আমার সুন্নত আমল করবে না। তাদের মধ্যে এমন সকল লোক দাঁড়াবে বা পয়দা হবে যাদের দিল শয়তানের মত অথচ আকৃতিতে তারা মানুষ।” তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের বিপরীত মত-পথ পোষণ করে।
ছিহাহ ছিত্তাহ শরীফ-এর ইমামগণ সকলেই মাযহাবের অনুসরণ করেছিলেন। ছিহাহ ছিত্তাহ শরীফ-এর ইমামগণের মধ্য থেকে হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। হযরত ইমাম আবু দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখগণ হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।