যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সুলতানুল নাছির, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফে পূর্ণতা অর্জনকারীগণই প্রকৃত ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া। অন্য কথায় ছুফিগণই আলিম বা ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া, কেননা একমাত্র ছুফীগণই ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফের অধিকারী।
আলিমের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, ‘আলিমুন’ শব্দটি বাবে, ‘সামিয়া-ইয়াসমাউ’ থেকে উদ্ভুত। উক্ত শব্দটি 'ইসমে-ফায়িল’ বা কর্তৃবাচক। তার লোগাতী বা আভিধানিক অর্থহলো-একজন জ্ঞানী পুরুষ। আর ইস্তিলাহী বা পারিভাষিক অর্থে- আলিম তাঁকেই বলে, যিনি দ্বীনি ইলম তথা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফের অধিকারী। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি আলিম হতে হলে প্রথমতঃ তাকে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয়টাই অর্জন করতে হবে। '
তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, আহমদ, মিশকাত শরীফ-এর বরাতে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় আলিমগণ নবী আলাইহিমুস সালামগণের ওয়ারিছ। আর নিশ্চয় নবী আলাইহিমুস সালামগণ কোন দীনার-দিরহাম রেখে যাননি। বরং ইলম রেখে গেছেন।”
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে দু’প্রকার ইলম রেখে গেছেন। অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ।
যেমন- দারিমী, বাইহাকী, দাইলামী শরীফের হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ইলম দু’প্রকার। (১) ক্বালবী ইলম (ইলমে তাছাউফ) যা উপকারী ইলম, (২) জবানী ইলম (ইলমে ফিক্বাহ) যা আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল স্বরূপ।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়ারিছস্বত্ব হিসেবে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয়টিই রেখে গেছেন। কাজেই যে উভয়টিই শিক্ষা করলো, সেব্যক্তিই নায়িবে রসূল বা হাক্বীক্বী আলিম।
হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ইমামে রব্বানী, মাহবুবে সুবহানী, কাইয়ুমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিখ্যাত কিতাব “মাকতুবাত শরীফের” বরাত দিয়ে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, “আলিমগণ নবী আলাইহিমুস সালামগণের ওয়ারিছ” এ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আলিম তাঁরাই, যাঁরা নবী আলাইহিমুস সালামগণের রেখে যাওয়া ইলমে আহকাম (ইলমে ফিক্বাহ) ও ইলমে আসরার (ইলমে তাছাউফ) উভয় প্রকার ইলমের অধিকারী। অর্থাৎ তিনিই প্রকৃত ওয়ারিছ বা স্বত্বাধিকারী। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইলমের অধিকারী, সে ব্যক্তি নবী আলাইহিমুস সালামগণের প্রকৃত ওয়ারিছ নন। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল ক্ষেত্রে অংশীদারী হওয়াকেই ওয়ারিছ বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিছ নয় গরীমের অন্তর্ভুক্ত।”
এ প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি আরো বলেন, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিশকাত শরীফের বিখ্যাত শরাহ, “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ করেন যে, মালিকী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো না, সে যিন্দিক কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলো, সে মুহাক্কিক তথা হক্বানী আলিম।”
আলিমের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি আরো বলেন, আলিম ঐ ব্যক্তি-যাঁর অন্তরে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ পাক-এর ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেননা মহান আল্লাহ পাকপবিত্র কালামে পাকে সূরা ফাতিরের ২৮ নম্বর আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় আল্লাহ পাক-এর বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহ পাককে ভয় করেন।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল হাম্বলী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, শায়খুল মুহাদ্দিসীন, হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে। তিনি এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, “যাঁর ভিতর যত বেশি খোদাভীতি রয়েছে তিনি তত বড় আলিম। তাছাড়া উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে খোলাছায়” উল্লেখ আছে যে, উক্ত আয়াত শরীফে "আলিমু” শব্দ দ্বারা কিতাবসমূহ পাঠকারী তথা দাওরা বা টাইটেল পাশকারীদেরকে বুঝানো হয়নি বরং কুরআন শরীফে বর্ণিত “আলিম” তাঁরাই, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক-এর মহিমাময় জাত ও অসীম গৌরবময় ছিফাতসমূহকে ঈমান ও মারিফতের নূরের আলোকে অবলোকন করেছেন। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয়তম ছাহাবী আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও (পূর্ববর্তী) বিলায়েতপ্রাপ্ত ও মকবুল ওলীআল্লাহগণ কিতাবী তথা দাওরা বা টাইটেল পাশ আলিম ছিলেন না। তথাপিও তাঁরা সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইলমের অধিকারী ছিলেন। অর্থাৎ তাঁরাই কুরআন শরীফে বর্ণিত প্রকৃত আলিম ছিলেন। “
সূরা ফাতিরের ২৮ নম্বর আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলিম, ইমামুল মুফাসসিরীন, হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রসিদ্ধগ্রন্থ “তাফসীরে ইবনে কাছীরের” উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত মুর্শিদ ক্বিবলামুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, “হযরত ইবনে মাসউদ, রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীছ শরীফ জানে সে ব্যক্তি আলিম নয়। রবং যাঁর মধ্যে আল্লাহ ভীতি অধিক সে ব্যক্তিই আলিম। আর আহমদ বিন ছালেহ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, অধিক রেওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলিম হওয়া যায় না। মূলতঃ ইলম হচ্ছে নুর বা জ্যোতিস্বরূপ। আল্লাহ পাক তা মানুষের অন্তকরণে দান করেন।
আলিমের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি আরো বলেন, ঐ ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইলম অনুযায়ীপরিপূর্ণ আমল করেন। যে প্রসঙ্গে দারিমী, মিশকাত, মিরকাত শরীফের হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “(আমিরুল মু’মিনীন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কা’ব ইবনুল আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলিম বা ইলমের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুনরায় জিজ্ঞেসাকরলেন, কোন জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, বিশিষ্ট তাবেয়ী, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ইমাম হাসান বছরীরহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলিম কে? তিনি জবাবে বললেন, “ ফক্বীহ বা আলিম হলেন ঐ ব্যক্তি, যিনি দুনিয়া হতেবিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুনাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ পাক-এর ইবাদতে মশগুল, পরহিযগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তাঁর অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, ছুফীগণই প্রকৃত আলিম বা ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া, কেননা একমাত্র ছুফীগণই ইলমে ফিক্বাহ ওইলমে তাছাউফের অধিকারী তথা পূর্ণতা অর্জনকারী।