মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ!
তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য উসীলা গ্রহণ
করো। আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি আমাকে ওয়াছিয়ত করেছেন আমি যেনো উনার পক্ষ থেকে কুরবানী করি। অতএব,
যাদের
পক্ষে সম্ভব তারা যেনো অবশ্যই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে উনার নাম মুবারক-এ
কুরবানী করে; যা কুরবানীদাতার কুরবানী কবুল হওয়ার অন্যতম উসীলা। পাশাপাশি মহান
আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের
সন্তুষ্টি লাভেরও উসীলা হবে।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও
মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম,
আওলাদে
রসূল, সাইয়্যিদুনা
ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
মহান
আল্লাহ পাক তিনি ‘সূরা কাওছার’-এর মধ্যে সামর্থ্যবান বান্দা-বান্দীকে কুরবানী
করার জন্য সরাসরি নির্দেশ প্রদান করেছেন। যেমন, মহান আল্লাহ পাক
তিনি ইরশাদ করেন, “আপনার যিনি রব তায়ালা উনার সন্তুষ্টির জন্য নামায আদায় করুন এবং
কুরবানী করুন।” আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি কুরবানীর গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে ইরশাদ করেন, “সামর্থ্য থাকার
পরও যে ব্যক্তি কুরবানী করে না, সে যেনো ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।” অর্থাৎ সামর্থ্য
থাকার পরও যারা কুরবানী করে না, তাদের উপর মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা কঠিন অসন্তুষ্ট হন। নাউযুবিল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, শরীয়তের ফায়ছালা
হলো, জিলহজ্জ
মাসের দশ, এগার, বারো অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে সাদিক হতে বারো তারিখের সূর্যাস্তের
পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিছাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ
(নিত্যপ্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা
বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। যদি
কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিছাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো
পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি
অতিরিক্ত, যার মূল্য নিছাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যারা মালিকে
নিছাব অর্থাৎ যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তাদেরকে তো অবশ্যই কুরবানীর দিন কুরবানী
করতে হবে। আর যারা মালিকে নিছাব নয় অর্থাৎ যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তবে
কুরবানী করার মতো সামর্থ্য রয়েছে তাদের জন্য কুরবানী করে দেয়াই আফযল এবং উত্তম।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যারা কুরবানী
করবে তাদের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- ওয়াজিব কুরবানী আদায় করার পর যদি সম্ভব হয়
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ
থেকে উনার নাম মুবারক-এ কুরবানী করা। যা কুরবানীদাতার কুরবানী কবুল হওয়ার একটি
অন্যতম উসীলা।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, কেউ কেউ বলে
থাকে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তা ওয়াছীয়তকৃত কুরবানীর অন্তর্ভুক্ত হবে।
কারণ তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উনার পক্ষ থেকে কুরবানী করার
জন্য ওয়াছীয়ত করেছেন।
এর জবাবে বলতে হয় যে, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনাকে যে কুরবানী করার ওয়াছীয়ত করেছেন তা উনার জন্যই খাছ ছিলো। বর্তমানে কেউ যদি
উনার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তবে তা ওয়াছীয়তকৃত কুরবানীর অন্তর্ভুক্ত হবে না। আর
উক্ত গোশত খাওয়াও জায়িয হবে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে সকল লোক
এককভাবে কুরবানী দিতে অক্ষম বা যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় অথচ তারা কুরবানীর
দিনে কিছু লোক মিলে গরু, ছাগল ইত্যাদি কিনে গোশত বণ্টন করে অথবা
হাটবাজার থেকে গোশত কিনে খেয়ে থাকে এ সকল লোকেরা যদি ইচ্ছে করে তবে তারাও কুরবানীর
ফযীলত ও ছওয়াব লাভ করতে পারে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যারা কুরবানী
দেয় না অর্থাৎ সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য করণীয় হচ্ছে- তারা হাটবাজার থেকে
গোশত না কিনে বরং কিছু লোক মিলে গরু বা ছাগল ইত্যাদি কিনে এক বা একাধিক নামে
কুরবানী করা। কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া,
বকরী,
খাসিতে
এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, গরু, মহিষ, উটে সাত নামের
বেশি দিলে কুরবানী দুরুস্ত হবে না। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর
ছাগল, দুম্বা,
ভেড়া
এক নামের বেশি নামে কুরবানী করলে কারো কুরবানী দুরুস্ত হবে না। যেমন- যদি ৪০ জন
ব্যক্তি ৪০০ টাকা করে ১৬০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে
কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও কুরবানী শুদ্ধ হবে। তদ্রূপ একটা খাসি
তিনজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরীদ করে যদি এক নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়,
তবে
সে কুরবানী শুদ্ধ হবে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, তবে স্মরণীয় যে,
যারা
শরীক হয়ে এ ধরনের কুরবানী দিবে তারা প্রত্যেকে চাইবে যে, নিজেদের নামে
কুরবানী দিতে, তখন অবশ্যই ফিতনা ও সমস্যার সৃষ্টি হবে। সেজন্য নাম দেয়ার ক্ষেত্রে
আফযল ও উত্তম তরীক্বা হচ্ছে এই যে, যদি ছাগল কিংবা গরু এক নামে কুরবানী
করা হয়, তাহলে তা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ কুরবানী করে সকল শরীক সমানভাবে গোশত বণ্টন
করে নিবে। এতে যেমন তাদের কুরবানী নিশ্চিতরূপে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে কবুল ও
মঞ্জুর হবে, সাথে সাথে তা তাদের জন্য ফযীলত, বারাকাত,
ফুয়ুজাত,
নিয়ামত,
রহমত,
মাগফিরাত,
নাযাত
সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাদের খাছ সন্তুষ্টি লাভ করার উসীলাও হবে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, জানা আবশ্যক যে,
সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল উম্মতের তরফ থেকে কুরবানী
করেছেন। সুতরাং উম্মতেরও দায়িত্ব ও কর্তব্য যে, সামর্থ্য থাকলে
উনার পক্ষ হতে কুরবানী দেয়া। মূলতঃ এ ব্যাপারে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশবাণীও পাওয়া যায়। যেমন- হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে,
মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে খাছভাবে এ নির্দেশ দিয়ে যান যে, তিনি যেনো প্রতি
বছর উনার নাম মুবারক-এ কুরবানী দেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এ সকল শরীকী কুরবানীর ক্ষেত্রে যে সকল প্রাণীতে
শুধু এক নামে কুরবানী করা যায়, তাতে অবশ্যই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ কুরবানী দেয়া উচিত
এবং তা উত্তম ও ফযীলতের কারণ বটে। কিন্তু যে সকল প্রাণীতে সাত নামে কুরবানী দেয়ার
বিধান রয়েছে, তাতে প্রথমত, এক নাম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নাম মুবারক-এ এবং বাকি ছয় নামের
মধ্যে পর্যায়ক্রমে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমায়ীল
আলাইহিস সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম, হযরত আম্বিয়া
আলাইহিমুস সালাম, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলে বাইত
আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আওলিয়ায়ে
কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নাম মুবারক থেকে ইচ্ছে মুতাবিক কুরবানী দিতে
পারে। তাহলে এতে কোনো ফিতনা পয়দা হবে না। সাথে সাথে কুরবানীর দিন মহান আল্লাহ পাক
উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে- কুরবানী করা, তাও আদায় হলো।
আর কুরবানীর বরকতময় গোশতও লাভ হলো। সাথে সাথে গুনাহর কাজ থেকেও বাঁচা হলো। আর
প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির দায়িত্ব কর্তব্য হলো- সে যেন কমপক্ষে এক নাম নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ
থেকে উনার নাম মুবারক-এ দেয়।