নোটিশ

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১১

ছাহিবুল উলুওয়ি, ছাহিবুল ফাদ্বীলাহ, ছাহিবুদ দারাজাহ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই হচ্ছেন সকল মর্যাদা, মর্তবা এবং সম্মানের উৎস।




وما ارسلنك الا رحمة للعلمين
অর্থ: “আমি আপনাকে সারা আলমের জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি।” (সূরা আম্বিয়া : আয়াত শরীফ ১০৭)
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যে যতো সংশ্লিষ্ট সে ততো মর্যাদাবান হতে পেরেছে। নিম্নে সংক্ষিপ্ত কিছু দৃষ্টান্ত দেয়া হলো-



উম্মতে হাবীবী:
উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি হয়েছে একমাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে। এজন্য অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উম্মতে হাবীবী হওয়ার জন্য আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রার্থনাও করেছিলেন। যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সকলের দোয়ায় কবুল হয়েছে। (মাযহারী, খাযিন, বাগবী)

উনার সংশ্লিষ্ট নাম মুবারক:
আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন ‘ইয়া মুহম্মদ’ এবং ‘ইয়া আহমদ’ বলে ডাক দিবেন। তখন যে সমস্ত ব্যক্তির নাম মুহম্মদ ও আহমদ থাকবে তারা সবাই মাথা উঠাবেন। আল্লাহ পাক বলবেন: তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এর সাথে যাদের নাম সংশ্লিষ্ট তাঁদের সকলকে আমি ক্ষমা করলাম। (হাক্বীক্বতে হাবীবী মীলাদে আহমদী)

নাম মুবারক চুম্বন:
বনী ইসরাঈলের এক ইহুদী ব্যক্তি দুইশ বৎসর হায়াত পেয়েছিলেন। জীবনে অনেক গুনাহ করেছিলেন। যার কারণে লোকজন উনাকে পছন্দ করতোনা। কিন্তু তিনি একদিন তাওরাত কিতাব খুলে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক পড়ে চুম্বন করেছিলেন। যার বদৌলতে আল্লাহ পাক তিনি তার জীবনের সমস্ত গুনাহ-খতা ক্ষমা করে জহান্নাম হারাম করে জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন এবং তৎকালীন যামানার জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দিয়ে উনার গোসল, কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (হিলয়াতুল আওলিয়া)

সুন্নতসমূহের মর্যাদা:
যে ব্যক্তি একটি সুন্নত পালন করবে তাকে ১০০ শহীদের ছওয়াব দেয়া হবে। এরূপ অসংখ্য ফযীলত হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে। সে সমস্ত আমলসমূহ শুধুমাত্র আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণেই এতো ফযীলত ও মর্যাদা পেয়েছে। (মিশকাত, মিরকাত)

রওযা শরীফ-এর মর্যাদা:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, রওযা শরীফ অর্থাৎ যেখানে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রয়েছেন সে স্থানের মর্যাদা আরশে আ’যীমের চেয়েও লক্ষ কোটি গুণ বেশি। কারণ সে স্থানটি স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। (ফতওয়ায়ে শামী, মকতুবাত শরীফ)

মদ্বীনা শরীফ ও মক্কা শরীফ-এর মর্যাদা:
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে যে, মক্কা শরীফ-এ ১২০টি রহমত সর্বদাই বর্ষিত হয়। যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণেই। কিন্তু মদ্বীনা শরীফ-এ কতোটি রহমত বর্ষিত হয় তার সংখ্যা নির্ণয় করা হয়নি। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। তিনিই মদ্বীনা শরীফ-এ রয়েছেন। এজন্য সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দিয়েছেন যে, মদ্বীনা শরীফ-এর মর্যাদা মক্কা শরীফ থেকে লক্ষ কোটি গুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ! (মকতুবাত শরীফ ও তাফসীরসমূহ)

আরশে আ’যীমের মর্যাদা:
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মি’রাজ শরীফ-এ গেলেন আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতের জন্য তখন আরশে আ’যীমে না’লাইন শরীফ খুলে ঢুকতে ছিলেন কিন্তু আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার পায়ের ধুলি মুবারক-এর অপেক্ষায় আমার আরশ দীর্ঘদিন অপেক্ষমাণ। আপনার পায়ের ধুলি মুবারক পেলেই আমার আরশ মর্যাদায় মর্যাদাবান হবে। (তাফসীরে ত্ববারী, মাযহারী)

রবীউল আউয়াল শরীফ মাসের মর্যাদা:
প্রতিটি মাসই আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টি। তন্মধ্যে রবীউল আউয়াল শরীফ মাসের মর্যাদা সবচেয়ে ঊর্ধ্বে। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ মাসে পৃথিবীতে এসেছেন। তিনি আগমন না করলে কোনো মাসই ফযীলত পেতোনা। এজন্য অন্যান্য মাস থেকে এ মাসের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।(নি’মাতুল কুবরা, সমূহ তাফসীর)

সোমবার শরীফ-এর মর্যাদা:
এই সোমবার দিন স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগমন করেছেন বলে এই দিন সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে মর্যাদাবান হয়েছে। (সমূহ তাফসীর, মিশকাত, মিরকাত, ত্বিবী ইত্যাদি)

যমযম পানির ফযীলত:
হাদীছ শরীফ-এ যমযমের পানির অনেক ফযীলত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণেই যমযমের পানির মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। (তা’রীখে ত্ববারী, সীরাত ইত্যাদি)

কদুর মর্যাদা:
তরকারি হিসেবে বাজারে অসংখ্য তরি-তরকারি রয়েছে। কিন্তু কদু সম্পর্কে আকাঈদে নছফীতে বর্ণিত রয়েছে যে, কদুকে অপছন্দ করা কুফরী। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কদুকে পছন্দ করতেন।(ফতওয়ায়ে শামী, বুখারী, মিশকাত ইত্যাদি)

ক্বাছীদা বা কবিদের মর্যাদা:
কবিগণ কবিতার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদাকে ফুটাতে চেয়েছিলেন কিন্তু যতোটুকু ফুটাতে চেয়েছিলেন তার পরিবর্তে উনারাই ইতিহাসে সম্মানিত ও স্মরণীয় হয়ে ফুটে উঠেছেন। যেমন স্মরণীয় হয়ে আছেন হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার ক্বাছীদাসমূহ। (তাফসীর, বুখারী, মিশকাত ইত্যাদি)

মূলত আল্লাহ পাক উনার হাবীব তিনিই রহমত ও ফযীলতের ভান্ডার। উনাকে উসীলা করেই সমস্ত মাখলুক্বাত মর্যাদাবান হয়েছে। তাই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যে যতোটুকু তায়াল্লুক বা সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে তার মর্যাদা-মর্তবা ততোবেশি হবে। আর সেই তায়াল্লুক স্থাপন করতে হলে যামানার মাঝে আল্লাহ পাক উনার যিনি মূল প্রতিনিধি রয়েছেন অর্থাৎ যিনি যামানার মুজাদ্দিদ উনার ছোহবত ইখতিয়ার করতে হবে।

- মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ, বিশেষ সংখ্যা-১৪৩২ হিজরী