তথাকথিত বিশ্ব মা
দিবস উপলক্ষে
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের
উদ্যোগে গত
১১ই মে,২০০৮ ঈসায়ী
বায়তুল মোকাররম
মসজিদের দক্ষিণ
চত্বরে আয়োজিত
ওয়াজ মাহফিলের
প্রতিক্রিয়ায় গতকাল রাজারবাগ শরীফ-এ
তিনি এসব
কথা বলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ
শরীফ-এর
মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা
মুদ্দা জিল্লুহুল
আলী বলেন,
তথাকথিত মা
দিবস পালন
উপলক্ষে ওয়াজ
শরীফ-এর
আয়োজন করার
অর্থই হলো
তথাকথিত মা
দিবসকে গ্রহণ
করে নেয়া। অথচ
এ মা
দিবসের উৎপত্তি,
আদর্শ ও
সংস্কৃতি কোনটাই
মুসলমান বা
ইসলামের তরফ
থেকে নয়।
মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ
শরীফ-এর
মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা
মুদ্দা জিল্লুহুল
আলী বলেন,
ইসলামের দৃষ্টিতে
এমন কোন
কাজ করা
যাবে না
যা কাফির-মুশরিকদের সাথে
সাদৃশ্য রাখে। এজন্য
আশুরার রোযা
একদিন রাখা
নিষেধ বা
মাকরূহ।
কারণ সেদিন
ইহুদীরাও রোযা
রাখে।
মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ
শরীফ-এর
মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা
মুদ্দা জিল্লুহুল
আলী বলেন,
কোন নেক
কাজ করলেই
যে তা
ইসলামে গৃহীত
হবে তা
নয়।
কেউ যদি
ঈদের দিন
রোযা রাখে
তবে তা
হারাম হবে। মাকরূহ
ওয়াক্তে নামায
পড়লে তা
মাকরূহ হবে। মাহরাম
ব্যতীত মহিলাদের
হজ্জ ফরজ
হয় না।
মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ
শরীফ-এর
মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা
মুদ্দা জিল্লুহুল
আলী বলেন,
ওয়াজ মাহফিল
করা অবশ্যই
ভাল।
আর হক্ব
সম্পর্কে ওয়াজ
করা ভাল। কিন্তু
তাই বলে
তথাকথিত বিশ্ব
মা দিবস
পালন উপলক্ষে
ওয়াজ মাহফিল
করা জায়িয
হবে না। কারণ
তাহলে মূলতঃ
বিজাতীয় বিধর্মীয়
সংস্কৃতিকেই স্বীকৃতি দেয়া হবে।
ইসলাম অপূর্ণ
প্রতিপন্ন হবে। এবং একদিকে
ওয়াজ মাহফিল
হলে অপরদিকে
কনসার্ট, ছবি,
বেপর্দা-বেহায়াপনা
তথা বিজাতীয়
বিধর্মীয় মাতৃবোধ
ও মাতৃসম্পর্ক
বিস্তার লাভ
করবে।
ইসলামী মূল্যবোধ
ক্ষুণ্ন হবে। মুসলমানী
চেতনা দূরীভূত
হবে।
সবশেষে ইহুদী-নাছারাদের
ন্যায় মাতৃবন্ধন
আলগা হওয়ার
আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত হবে।
সব মিলিয়ে
ইসলামী ভাবধারা
বিদূরীত হবে।
তথাকথিত মা দিবস
উপলক্ষে মুজাদ্দিদে
আ’যম
মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা
মুদ্দা জিল্লুহুল
আলী-এর
বয়ান মুবারকের
সংক্ষিপ্ত ভাষ্য:
মা দিবস পালন
মূলতঃ পাশ্চাত্য
হতে আমদানিকৃত
অন্যান্য ফ্যাশনের
মতও একটি
ফ্যাশন।
থার্টি ফার্স্ট
নাইট, ভ্যালেন্টাইন
ডে’র
মত এটাও
একটি পাশ্চাত্য
সংস্কৃতি।
মুসলিম দেশসমূহ
কোন মতেই
এ সংস্কৃতি
লালন ও
পালনের প্রেক্ষাপট
নয়।
তথাকথিত মা দিবসের
প্রচারণা মূলতঃ
এটা প্রমাণ
করে যে,
আসলে মা
দিবস পালনকারীরা
মাতৃভক্তি ও ভালবাসার চেতনায় উজ্জীবিত
নয়।
তারা মাতৃভালবাসার
বন্ধনহীনতায় ভুগছে। অশান্তিতে ভুগছে। যন্ত্রণায়
দগ্ধ হচ্ছে। তার
থেকে উত্তরণ
লাভের জন্য
তারা তথাকথিত
মা দিবসে
মাতৃভক্তির চেতনায় উজ্জীবিত হবে।
অথচ ইসলাম
প্রতিটি দিনে
প্রতিটি মুহূর্তেই
মায়ের প্রতি
অগাধ ভালবাসার
প্রেরণা ও
শক্ত নির্দেশ
দেয়।
কোন মুসলমানদের জন্যই
কোন অবস্থাতেই
বিজাতীয় ও
বিধর্মীদের নিয়ম-নীতি ও তর্জ-তরীক্বা অনুসরণ-অনুকরণ করা
জায়িয নেই। যারা
জায়িয বলবে
তাদের উপর
কুফরীর ফতওয়া
বর্তাবে।
এ প্রসঙ্গে
মহান আল্লাহ
পাক ‘সূরা
আলে ইমরান’
এর ৮৫
নম্বর আয়াত
শরীফ-এ
আরো বলেন,
“যে ব্যক্তি
দ্বীন ইসলাম
ব্যতীত অন্য
কোন ধর্ম
(বিধর্মী ও
বিজাতীয়দের নিয়ম-নীতি ও তর্জ-তরীক্বা) তলব
বা অনুসরণ
ও অনুকরণ
করে, তার
থেকে তা
কখনই গ্রহণ
করা হবে
না এবং
সে পরকালে
(অবশ্যই) ক্ষতিগ্রস্তদের
অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আলে
ইমরান/৮৫)
হাদীছ শরীফ-এ
ইরশাদ হয়েছে,
হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আল্লাহ
পাক-এর
হাবীব হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ
করেন, “যে
ব্যক্তি যে
সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে সে
তাদের দলভুক্ত
এবং তার
হাশর-নশর
তাদের সাথেই
হবে।”
এ প্রসঙ্গে হিন্দুস্থানের
একটি ঘটনা
বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য।
হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ পাক-এর ওলী
ছিলেন।
যিনি ইন্তিকালের
পর অন্য
একজন বুযুর্গ
ব্যক্তি তাকে
স্বপ্নে দেখে
জিজ্ঞাসা করেন,
“হে আল্লাহ
পাক-এর
ওলী! আপনি
কেমন আছেন?”
তখন সেই
আল্লাহ পাক-এর ওলী
জাওয়াবে বলেন,
“আপাততঃ আমি
ভালই আছি,
কিন্তু আমার
উপর দিয়ে
এক কঠিন
সময় অতিবাহিত
হয়েছে যা
বলার অপেক্ষা
রাখে না।”
আমার ইন্তিকালের পর
আমাকে ফেরেশতারা
সরাসরি আল্লাহ
পাক-এর
সম্মুখে পেশ
করেন।
আল্লাহ পাক
তখন ফেরেশতাদেরকে
বলেন, “হে
ফেরেশতাগণ! তোমরা তাকে কেন এখানে
এনেছ?” ফেরেশতাগণ
বলেন, “আয়
আল্লাহ পাক!
আমরা তাকে
খাছ বান্দা
হিসেবে আপনার
সাথে সাক্ষাৎ
করানোর জন্য
নিয়ে এসেছি।”
এটা শ্রবণ করে
আল্লাহ পাক
বললেন, “তাকে
এখান থেকে
নিয়ে যাও,
তার হাশর-নশর হিন্দুদের
সাথে হবে। কেননা
সে পূজা
করেছে।”
আল্লাহ পাক-এর
ওলী বলেন,
এটা শুনে
আমি ভয়
পেয়ে গেলাম
এবং ভয়ে
আমার সমস্ত
শরীর কাঁপতে
লাগল।
তখন আমি
আল্লাহ পাক-এর নিকট
আরজু পেশ
করলাম, “আয়
আল্লাহ পাক!
আমার হাশর-নশর হিন্দুদের
সাথে হবে
কেন? আমি
তো সব
সময় আপনার
এবং আপনার
হাবীব হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর
ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত
নাফরমানি করিনি
আর পূজা
করার তো
প্রশ্নই উঠেনা। কারণ
আমি কখনও
মন্দিরের আশ-পাশ দিয়েও
হাঁটিনি।”
তখন আল্লাহ পাক
বললেন, “তুমি
পূজা করেছে। তুমি
সেই দিনের
কথা স্মরণ
কর, যেদিন
হিন্দুস্তানে হোলি পূজা হচ্ছিল।
তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নিচে সমস্ত
গাছ-পালা,
তরু-লতা,
পশু-পাখি,
কীট-পতঙ্গ
সবকিছুকে রং
দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায়
তোমার সামনে
দিয়ে একটি
গর্দভ যাচ্ছিল
যাকে রং
দেয়া হয়নি। তখন
তুমি পান
চিবাচ্ছিলে। তুমি সেই গর্দভের
গায়ে এক
চিপটি পানের
রঙীন রস
নিক্ষেপ করে
বলেছিলে, হে
গর্দভ! আজ
হোলি পূজার
দিন।
তোমাকে তো
কেউ রং
দেয়নি তাই
আমি তোমাকে
রং দিয়ে
দিলাম।
এটা কি
তোমার পূজা
করা হয়নি?
তুমি কি
জান না,
আমার হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি
যে সম্প্রদায়ের
সাথে মিল
রাখে, সে
তাদের অন্তর্ভুক্ত
এবং তার
হাশর-নশর
তাদের সাথে
হবে।
সুতরাং এখন
তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের
সাথে হওয়া
উচিত।”
যখন আল্লাহ পাক
এ কথা
বললেন, তখন
আমি লা-জাওয়াব হয়ে
গেলাম এবং
ভীত-সন্ত্রস্ত
হয়ে, কাকুতি-মিনতি করে,
রোনাজারি করে
বললাম, “আয়
আল্লাহ পাক!
আমি এটা
বুঝতে পারিনি
আর আমাকে
কেউ এটা
বুঝিয়েও দেয়নি। এছাড়া
আমার অন্তরও
সাড়া দেয়নি। কাজেই
আমাকে দয়া
করে ক্ষমা
করে দিন।” কিছুক্ষণ
পর আল্লাহ
পাক বললেন,
ঠিক আছে,
“তোমাকে অন্যান্য
আমলের কারণে
ক্ষমা করা
হলো।”
ব্রিটেনেই প্রথম শুরু
হয় মা
দিবস পালনের
রেওয়াজ।
প্রতি বছর
মে মাসের
চতুর্থ রোববারকে
মাদারিং সানডে
হিসেবে পালন
করা হতো
ব্রিটেনে।
এটা সতেরো
শতকের কথা। এদিন
ব্রিটিশরা নিজ নিজ মায়ের প্রতি
শ্রদ্ধা জানাত। মায়ের
সঙ্গে সময়
দেয়া ও
মায়ের জন্য
গিফট কেনা
ছিল দিনটির
কর্মসূচিতে। এরপর আমেরিকার পশ্চিম
ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন
করা হয়
১৮৫৮ সালে। জুনের
২ তারিখকে
তারা বেছে
নিয়েছিল মা
দিবস হিসেবে।
ফিলাডেলফিয়ার অ্যানা জারভিস
১৮৬৮ সালে
গৃহযুদ্ধ আক্রান্ত
পরিবারগুলোকে একত্রিত করেছিলেন। তাদেরকে
মায়ের মমতা
দিয়ে যুদ্ধের
শোক ভোলানোর
চেষ্টা করেছিলেন
তিনি।
তখন তিনি
সবার কাছে
পরিচিত হয়েছিলেন
মা হিসেবে। ১৯০৭
সালে মে
মাসে দ্বিতীয়
রোববার মারা
যান অ্যানা
জারভিস।
১৯১৪ সালে
প্রেসিডেন্ট উড্্েরা উইলসন অ্যানার
সম্মানার্থে প্রতি মে মাসের দ্বিতীয়
রোববারকে ‘জাতীয় মা দিবস’ হিসাবে
চিহ্নিত করেন।
মুলতঃ কথিত বাবা
দিবস-মা
দিবস শয়তানের
ওয়াসওয়াসা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ
এতে ওহীর
মূল্যবোধকে অবমাননা করা হয়।
ইসলাম যে
পরিপূর্ণ তথা
কুরআন-সুন্নাহ্র বাণীই
যে অনেক
বেশি জীবন্ত
ও ফলপ্রদ
তা অস্বীকার
করা হয়। অথচ
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ
হয়েছে, “মায়ের
পদতলে সন্তানের
বেহেশ্ত
বা পিতার
সন্তুষ্টিতে খোদার সন্তুষ্টি।”
আর কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ
হয়েছে, “তোমার
পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে
ছাড়া অন্য
কারো ইবাদত
করো না
এবং পিতামাতার
সাথে সদ্ব্যবহার
কর।
তাদের মধ্যে
কেউ অথবা
উভয়েই যদি
তোমার জীবদ্দশায়
বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে
‘উহ্’ শব্দটিও
বলো না
এবং তাদেরকে
ধমক দিও
না এবং
বল তাদেরকে
শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে
ভালবাসার সাথে
দয়ার হাত
বিছিয়ে দাও
এবং বল;
হে আমার
পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম
কর।
যেমন তারা
আমাকে শৈশব
কালে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা
বণী ইসরাঈল/২৩-২৪)
“আমি মানুষকে তার
পিতা-মাতার
সাথে সদ্ব্যবহারের
জোর নির্দেশ
দিয়েছি।
তার মাতা-তাকে কষ্টের
পর কষ্ট
করে রেহেম
শরীফ-এ
ধারণ করেছে। তার
দুধ ছাড়ানো
দু’বছরে
হয়।
নির্দেশ দিয়েছি
যে, আমার
প্রতি ও
তোমার পিতা-মাতার প্রতি
কৃতজ্ঞ হও।” (সূরা
লোকমান/১৪)
এই আয়াত শরীফদ্বয়
মুসলিম সন্তানের
হৃদয়ে বাবা-মার প্রতি
যে অভূতপূর্ব
ভালবাসা, মুহব্বত,
খিদমত ও
আদব-লেহাজের
অনুভূতি তৈরি
করে; ক্বিয়ামত
পর্যন্ত অপর
কোন বাণী,
চেতনা বা
মূল্যবোধ তার
ধারকাছের অনুভূতিও
তৈরী করতে
পারবে না।
কারণ, এ হচ্ছে
ওহী।
এ ওহীর
তাছির বেমেছাল
হৃদয়গ্রাহী। যে কারণে এখনও
বিশ্বের মুসলমানগণ
বাবা-মা
কেন্দ্রিক পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ।
আর এ
বন্ধনই পশ্চিমা
সভ্যতার বল্গাহীন
জীবন থেকে
মুসলমানদের রক্ষা করছে।
কাজেই পশ্চিমা তথা
ইহুদী-খ্রিস্টানদের
নজর এই
রক্ষা কবচ
তথা মুসলমানদের
পারিবারিক বন্ধন ও মূল্যবোধ বিনষ্টকরণের
দিকে।
সেক্ষেত্রে বাবা-মার প্রতি ইসলামী
চেতনা অবলুপ্ত
করে বছরে
একদিন একটি
কার্ড আর
কিছু ফল
পাঠিয়ে বাবা-মা দিবস
সংস্কৃতি প্রচলনের
মাধ্যমেই ওরা
অনেকাংশে সফল
হবে বলে
মনে করছে। কাজেই
সচেতন মুসলমানকে
এখনই এ
বিষয়ে সঠিক
ভূমিকা নিতে
হবে।
মহান আল্লাহ
পাক রহমত
ও গায়েবী
মদদের মালিক।