কারবালার ঘটনা থেকে উপলব্ধি ও শিক্ষা
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম ও তাঁর সঙ্গীদের
শাহাদাতের ঘটনাবলী বিস্তারিতভাবে জানলেন। এর মধ্যে আপনারা একদিকে দেখেছেন সত্যের
ঝা-া উঁচ্চে তুলে ধরার জন্য মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোকের অপূর্ব আত্মত্যাগ, অন্যদিকে দেখেছেন যালিমশাহীর প্রচ- প্রতিরোধ।
যালিমের যুলুমের সামনে সত্য মার খেয়েছে দেখে যদি মনে করে থাকেন যে, জগতে যুলুমই সবসময় জয়লাভ করে তাহলে ভুল
করবেন। আসল চক্ষু খুলে দেখলে দেখতে পাবেন,
কারবালার
মরুভূমিতে সেদিন যালিমশাহীরই ভরাডুবি হয়েছে এবং ন্যায় দীপ্ততেজে নতুন ভঙ্গিতে
মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যালিমরা মারতে গিয়ে নিজেরাই মরেছে এবং মযলুম কাফেলা
শহীদ হয়ে অমর হয়ে আছেন।
ইবনে যিয়াদ এবং ইয়াযীদের অত্যাচারী বাহিনী চেয়েছিল, সত্যের ঝান্ডাবাহী হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস
সালাম ও তাঁর মুষ্টিমেয় সঙ্গীদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। তারা পানি বন্ধ করে
তাঁদেরকে কষ্ট দিয়েছে, তীর নিক্ষেপ করে
তাঁদের শরীর মুবারক ঝাঁঝরা করেছে, তরবারী চালিয়ে
তাঁদের শির মুবারক দ্বিখন্ডিত করেছে- তবুও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম আজও জীবিত, তাঁর সঙ্গীগণ অমর।
প্রতিটি ঘরে ঘরে আজও তাঁদের আলোচনা। প্রতিটি মানুষ তাঁদের অপূর্ব আত্মত্যাগের
কথা স্মরণ করে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে থাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে। সুদীর্ঘ দেড়
হাজার বৎসর পরেও আজ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার হক্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে
আত্মত্যাগের নজিরবিহীন দৃষ্টান্তের কথা শুনতে পাই। সমুদ্রে-স্থলে-অন্তরীক্ষে
সর্বত্রই হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হয়।
পক্ষান্তরে যালিমশাহী ইয়াযীদ কারাবালা ময়দানে জুলুম করে কি করল? দুনিয়ার মানুষের কাছে সে আজ ধিকৃত, লাঞ্ছিত,
ঘৃণিত।
মানুষ তাকে অভিশাপ দেয়, লা’নত সহকারে তার নাম উচ্চারণ করে। এতে বুঝা যায় যে, সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বে সাময়িকভাবে সত্যের
কণ্ঠস্বর যদিও রুদ্ধ হয়ে যায় কিংবা সত্যানুসারীরা মিথ্যাবাদীদের সামনে সত্য
প্রকাশে বাধাগ্রস্ত হন তবুও তাতে ভগ্নোৎসাহ হবার কারণ নেই। সত্য নিজ মহিমায়
দীপ্তিমান। তার প্রচ- তেজ দমিয়ে রাখার সাধ্য কারো নেই। একদিন না একদিন তা আপন তেজে
জ্বলে উঠবেই। আর সে এমন প্রচ- মহিমায় তার সামনে মিথ্যা ধূলিসাৎ হয়ে নিশ্চিহ্ন
হয়ে যাবে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতের মর্মান্তিক
ঘটনাটা যেভাবে ও যে পরিস্থিতিতে সংঘটিত হয়েছে, তাতে মুসলিম উম্মাহ্র জন্য যথেষ্ট শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
এ বিষাদময় ঘটনা থেকে যেসব শিক্ষা চিহ্নিত করা যায় তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ‘শাসন ক্ষমতায় যে ধরনের লোক অধিষ্ঠিত থাকে, জনগণ সে ধরনের নিরাপত্তা, ইনসাফ ও ন্যায়বিচার লাভ করে এবং সে ধরনের
যুলুমেরও শিকার হয়ে থাকে।’
শাসন ক্ষমতায় যদি খোদাভীরু, সৎ, ঈমানদার ও চরিত্রবান লোকেরা অধিষ্ঠিত থাকে, তবে জনগণের ইনসাফ পাওয়া ও যুলুম, অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়া যেমন নিশ্চিত হয়, তেমনি জনগণের নৈতিক ও চারিত্রিক উৎকর্ষও দিন
দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। পক্ষান্তরে শাসক মহল যদি দুশ্চরিত্র, দুর্নীতিবাজ ও অত্যাচারী হয়, তা হলে সমাজে যত সৎ লোকই থাক, ইনসাফ ও সততা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। এ
কারণেই ইয়াযীদের আমলে মুসলিম সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চল মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ ও ইরাক যুলুম, অত্যাচার, দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যকলাপের লীলাভূমিতে পরিণত হয়।
হিজরী প্রথম শতকের এই সময়টাতে বিপুল সংখ্যক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম জীবিত ছিলেন। যারা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সর্বোচ্চ মানের সততা ও তাক্বওয়ার
অধিকারী ছিলেন। কিন্তু অসৎ লোকদের ক্ষমতায় আরোহণের সুযোগ পাওয়ার কারণে ইসলামের
মূলনীতিগুলো বাস্তবায়িত হতে পারেনি। অথচ খিলাফতে রাশিদার আমলে ইসলামের নীতিমালা
সমাজের সকল স্তরে বাস্তবায়িত হয়েছে। খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উছমান যুন্ নূরাইন
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাসনামলে সামান্য কিছু ফিৎনা শুরু হলেও
কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা থাকায় ঐ ফিৎনা ব্যাপক ও স্থায়ী রূপ লাভ
করতে পারেনি। সুতরাং এ ঘটনার অন্যতম শিক্ষা হলো যে, সর্বপর্যায়ে খোদাভীরু, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ লোকদের শাসন কায়িমের জন্য কোশেশ করা।
পরামর্শ অর্থাৎ মজলিসে শূরা বহাল রাখা এবং কোন ক্রমেই অসৎ, ফাসিক-ফুজ্জার লোকদের হাতে ক্ষমতার চাবি-কাঠি
অর্পণ না করা।
বিশেষতঃ খিলাফতের আওতাধীন সকল স্তরের ব্যবস্থাপনাকে অমুসলিমদের প্রভাব ও
হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখা জরুরী। কেননা যারা অমুসলিম তথা ইহুদী-খ্রিস্টান-মুশরিক
ইত্যাদি প্রত্যেকেই মুসলমানদের শত্রু। তা কালামুল্লাহ শরীফ-এও ঘোষণা করা হয়েছে।
ইতিহাস সাক্ষী যে, ইয়াযীদের
খ্রিস্টান কোন কোন মতে ইহুদী উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী ইবনে যিয়াদকে কূফার
গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। যদি ইয়াযীদের খ্রিস্টান বা ইহুদী উপদেষ্টার পরামর্শ
গ্রহণ না করা হতো তাহলে ইবনে যিয়াদ গভর্নর নিযুক্ত হতো না এবং মুনাফিকরা মুনাফিকী
কার্যক্রম সংঘটিত করতে পারতো না।
সাইয়্যিদু শাবাবি আহ্লিল জান্নাহ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার
শাহাদাতের পিছনে যে কারণগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা যায় তা হলো-
১. ইয়াযীদ-এর নেতৃত্বে ইসলামী খিলাফতের যে নৈতিক ও আদর্শিক ক্ষতি ও বিকৃতি
ঘটতে যাচ্ছিল, হযরত ইমাম হুসাইন
আলাইহিস সালাম সেই বিকৃতির বিরুদ্ধে ছিলেন। ইয়াযীদের অসৎ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তিনি
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপোসহীন ছিলেন।
২. সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম প্রতিবাদে আপোসহীন হলেও
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে কারবালা প্রান্তরে হাজিরও হননি। তা সত্ত্বেও ইয়াযীদের
বাহিনী উনাকে নিষ্ঠুরভাবে শহীদ করে। তিনি মদীনা শরীফ যাওয়ার অথবা ইয়াযীদের সাথে
সাক্ষাত করার অথবা অন্য কোন দেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করা সত্ত্বেও ইয়াযীদী
বাহিনী তাঁর কোন কথায় কর্ণপাত করেনি।
৩. ফোরাত নদীর পানি অবরোধসহ নারী ও শিশুদের প্রতি চরম অমানবিক আচরণ করে কষ্ট ও
দুর্বল করে দেয়ার কারণে যে নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল, নুবুওওয়াতের এত কাছাকাছি সময়ে এমন বর্বরতা
স্বয়ং মুসলিম নামধারীদের দ্বারা ঘটতে পারে,
তা
কারো কল্পনায়ও আসেনি। বিশেষতঃ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার প্রিয় দৌহিত্রের প্রতি এ আচরণ পরবর্তী মুসলিম প্রজন্মকে নিদারুণভাবে ব্যথিত
করেছে।
৪. বহু সংখ্যক নিষ্ঠাবান ছাহাবী ও তাবিয়ীগণ বেঁচে থাকা সত্ত্বেও সাইয়্যিদুনা
হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার এই অভিযানে একেবারেই নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়াটা
মুসলিম জনমানসে আরো বেশি মর্মবেদনা ও গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।
কারবালার মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে ইয়াযীদকে দোষারোপ
করার সাথে সাথে তার পিতা যিনি জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকেও দোষারোপ করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!
এখানে একটা বিষয় মনে রাখা জরুরী যে,
আল্লাহ
পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদরের দৌহিত্র হযরত
ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামসহ আহলে বাইত-এর অন্যান্য সদস্য ও সঙ্গীগণের মর্মান্তিক
শাহাদাতে মুসলিম উম্মাহ্র অন্তর ব্যথাতুর হবে তা চরম সত্য কথা এবং এটি ঈমান
মজবুতির আলামতও বটে। কিন্তু এজন্য আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে
দোষারোপ করা কস্মিনকালেও শরীয়ত সম্মত হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ
করেন- ولاتزر
وازرة وزر اخرى ‘একজনের পাপের বোঝা
অপরজন বহন করবে না।’ (সূরা বণী
ইসরাইল-১৫)
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, "সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাকে এবং পিতার
অপরাধের জন্য সন্তানকে দায়ী করা বৈধ নয়।" কাবিলের অপরাধের জন্য হযরত আদম
আলাইহিস্ সালামকে, কেনানের অপরাধের
জন্য হযরত নূহ আলাইহিস্ সালামকে দায়ী করা যেমন বৈধ নয়, তেমনি ইয়াযীদের অপরাধের জন্য হযরত মুআবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দায়ী করাও বৈধ নয়। বরং তা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- ليغيظبهم
اللكفار ‘কাফিরেরাই ছাহাবায়ে
কিরামগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।’
(সূরা
ফাতহ্-২৯)
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
< p
class="a">عن مالك
بن انس رحمة الله عليه قال من غاظ اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر
অর্থ: ‘হযরত মালিক ইবনে আনাস
আলাইহিস সালাম বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরামগণের প্রতি যে ব্যক্তি
বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির।’ (নাসীমুর রিয়াদ্ব)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن ابي
سعيد الخدرى رضي الله تعالي عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ¬¬¬
لاتسبوا اصحابى فلو ان احدكم انفق مثل احد ذهبا ما بلغ مد احدهم ولا نصيفه
অর্থ: হযরত আবু সায়ীদ খুদুরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
তোমরা
আমার ছাহাবায়ে কিরামগণকে গাল-মন্দ বা দোষারোপ করো না। যদি তোমাদের কেউ উহুদ
পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করো, তবুও ছাহাবায়ে কিরামগণের এক মুদ বা অর্ধ মুদ
গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে না।’ (বুখারী শরীফ)
.
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن عويمر
بن ساعدة رضي الله تعالى عنه انه صلى الله عليه و سلم قال ان الله اختارنى واختار
لى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والـملئكة
والناس اجمعين ولايقبل الله منهم صرفا وعدلا
অর্থ: হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত
রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক আমাকে মনোনীত করেছেন এবং
আমার ছাহাবায়ে কিরামগণকে মনোনীত করেছেন এবং তাঁদের মধ্য থেকে আমার কার্য
সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও
বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি তাঁদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তার প্রতি আল্লাহ পাক উনার, ফেরেশ্তা ও মানুষ সকলেরই লা’নত। এবং তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত আল্লাহ পাক কবুল করবেন না।’ (তবারানী,
হাকিম)
যারা সাইয়্যিদুনা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে
তারা মূলতঃ তাঁর সুমহান মর্যাদা সম্পর্কে নেহায়েতই জাহিল বা অজ্ঞ।
হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীগণের মধ্যে একজন বিশেষ শ্রেণীর ছাহাবী, যাঁকে উলুল আযম্ বা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী বলা
হয়। তিনি ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, কাতিবীনে ওহীর সদস্য, হাদীছ শরীফ-এর রাবী, ফক্বীহ্ ইত্যাদি মর্যাদার অধিকারী। তাঁর
ইল্মের পূর্ণতা, হিদায়েতের উপর
প্রতিষ্ঠিত থাকা, তাঁর দ্বারা
লোকদের হিদায়েত লাভ, কিতাব শিক্ষাদান
এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ব্যাপারে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার নিকট দুআ করেছেন।
যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ام
حرام رضى الله تعالى عنها انها سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول اول جيش من
امتى يغزون البحر قد اوجبوا
অর্থ: হযরত উম্মু হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছন, আমার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে
তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।’ (বুখারী শরীফ)
হযরত ইমাম তাবারী আলাইহিস সালাম বলেন,
"হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ২৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র
যুদ্ধের মাধ্যমে কাবরাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কাবরাস তিনিই বিজয় করেন।"
হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম
মর্যাদা হলো- তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইনসাফগার খলীফা। তাঁর ন্যায় বিচার ও ইনসাফ
সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
জান্নাতের
সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী
ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-
ما رايت
احدا بعد عثمان اقضى بحق من صاحب هذا الباب
‘আমার দৃষ্টিতে
হযরত উছমান যুন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, এরপর হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কেউ নেই।’
এক ব্যক্তি বিশিষ্ট ফক্বীহ্্ হযরত মুয়াফা ইবনে ইমরান আলাইহিস সালাম আলাইহিকে
জিজ্ঞেস করলো, ন্যায় বিচারের
দিক দিয়ে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয
আলাইহিস সালাম আলাইহি-এর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ?
একথা
শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন,
"হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সাথে কোন প্রকার
ক্বিয়াস করা যাবে না। হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তো হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী, কাতিবে ওহী ও আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আমীন’ (আমানতদার)।" আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক আলাইহিস সালাম
আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে,
"হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয আলাইহিস সালাম
শ্রেষ্ঠ? জবাবে তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার কসম! হযরত মুআবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন,
তখন
ঘোড়ার নাকে যে ধূলোবালিগুলো প্রবেশ করতো,
সে
ধূলোবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয আলাইহিস সালাম হতে বহুগুণে
শ্রেষ্ঠ।"
সুতরাং, এত সব মর্যাদা ও মর্তবার
পরও যারা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, উনাকে নাক্বিছ বলে গালি দেয়, তাদের জন্যে হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফ্ফাযী
আলাইহিস সালাম আলাইহি-এর কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেন-
من يكون
يطعن فى معاوية فذلك كلب من كلاب الحاوية
‘যে ব্যক্তি হযরত
মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে উনাকে গালি
দেয়, নাক্বিছ বলে, সমালোচনা করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে একটি কুকুর।’ (নাসীমুর রিয়াদ্ব)
উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
শুধু ছাহাবীই ছিলেন না বরং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ও খলীফা ছিলেন। সুতরাং হযরত মুআবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুসহ সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে সাবধানে
কথা বলতে হবে। মূলতঃ তাঁদের সকলের প্রতিই সুধারণা পোষণ করতে হবে, মুহব্বত করতে হবে এবং তাঁদেরকে অনুসরণ-অনুকরণও
করতে হবে। কেননা তাঁরা হলেন দ্বীনের ইমাম এবং নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন।
অনেকে ইয়াযীদকে খলীফা নিযুক্ত করার কারণে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুআবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে বলে যে, তিনি খিলাফতের পরিবর্তে রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে
গেছেন। নাঊযুবিল্লাহ।
মূলতঃ যারা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে রাজতন্ত্র ও রাজবংশের
প্রতিষ্ঠাতারূপে চিহ্নিত করতে চায় প্রকৃতপক্ষে তারা চরম শ্রেণীর জাহিল। কারণ
রাজবংশ বা রাজতন্ত্র ইসলামের অনেক পূর্বকাল থেকেই চলে আসছে। যা আমরা হাদীছ শরীফ-এ
দেখতে পাই যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম রোম, পারস্য, আবিসিনিয়া, চীন, মালাবার, গুজরাট ইত্যাদির সম্রাট বা রাজাদের নিকট ইসলাম
গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে দূত মারফত পত্র পাঠিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ‘রাজতন্ত্র’ অর্থ হলো- ‘রাজ’ অর্থ ‘রাজা’, আর ‘তন্ত্র’ অর্থ ‘নিয়ম-নীতি’। যিনি রাজা হন
সাধারণতঃ তিনি তার নিজস্ব মনগড়া নিয়ম-নীতিই তার কর্তৃত্বাধীন এলাকায় প্রণয়ন বা
বাস্তবায়ন করে থাকেন, তাকেই রাজতন্ত্র
বলে। আর ‘রাজবংশ’ বলতে ‘রাজার বংশকে‘ বুঝানো হয়।
অথচ হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেও রাজা ছিলেন না এবং
অন্য কাউকেও রাজা মনোনীত করেননি। বরং তিনি স্বয়ং নিজের, উনার পরিবার, উনার সমাজ এবং তাঁর কর্তৃত্বাধীন সমগ্র এলাকার উপর
কুরআন-সুন্নাহ’র বিধানই জারি বা
বাস্তবায়ন করেছিলেন, যাকে ‘খিলাফত আলা মিন্হাজিন্ নুবুওওয়াহ্’ বলা হয়।
মূলতঃ তাঁর খিলাফত পূর্ববর্তী খলীফাগণেরই অনুরূপ ছিল এবং তাঁর খলীফা হওয়ার
বিষয়টি ছিলো স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার ভবিষ্যদ্বাণীর ফসল।
হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজেই বর্ণনা করেন, আমি একদা আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে ছিলাম। তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে
বললেন, "হে মুআবিয়া! কখনো
যদি তোমার হাতে জনগণের কর্তৃত্বভার আসে তখন তাদের প্রতি ইনছাফ করো।" হযরত
মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
"আমি তখনই নিশ্চিত হলাম যে, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত কথা বাস্তবায়িত হবেই।"
আর সত্যিই তিনি প্রথমে দু’খলীফা হযরত উমর
ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উছমান যুন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে আমীরে শু’বা বা প্রাদেশিক
গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। অতঃপর চতুর্থ খলীফা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাহাদাতের পর প্রায় ছয় মাস তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র
হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খিলাফত পরিচালনা করেন। অতঃপর তিনি
ষষ্ঠ খলীফা হিসেবে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এই শর্তে খিলাফত
দেন বা মনোনীত করেন যে, "আপনার পর আমি অথবা
আমার ভাই হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম অর্থাৎ দু’জনের একজন হায়াতে থাকলে আমাদেরকে খিলাফত ফিরিয়ে দিতে হবে।"
অতঃপর ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাহাদাতের সময় তিনি তাঁর
ছোট ভাই হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামকে নছীহত করেন যে, "দেখুন,
খিলাফতের
জন্যেই আমাদের পিতা শহীদ হয়েছেন, আমিও শহীদ হচ্ছি, সুতরাং আপনি আর খিলাফতের যিম্মাদারী নিবেন না।
আপনি দ্বীনি তা’লীম-এর কাজে
নিয়োজিত থাকুন, হযরত মুআবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অন্য যাকে ভাল মনে করেন তাকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ
করে যাবেন।"
হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রদত্ত শর্ত মুতাবিক হযরত
মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খলীফা মনোনীত হয়ে সঠিকভাবে খিলাফত পরিচালনা
করেন এবং পরবর্তিতে খিলাফত পরিচালনার যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে তাঁর ছেলেকে খলীফা
মনোনীত করেন।
অতএব, এটা অবশ্যই সত্য যে, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তাঁর ছেলে ইয়াযীদকে যখন খলীফা নিযুক্ত করেন তখন ইয়াযীদ ভাল ছিল। কিন্তু
মুনাফিকদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে পরবর্তিতে ইয়াযীদ গুমরাহ হয়ে যায়।
অতএব, কেউ যদি ছেলের বদ আমলের
কারণে পিতাকে দোষারোপ করে অর্থাৎ ইয়াযীদের জন্য বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুআবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে তবে তা সম্পূর্ণরূপে কুফরী হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
ولاتزر
وازرة وزر اخرى
‘একজনের গুনাহ্র
বোঝা অন্যজন বহন করবে না।’ (সূরা বণী ইসরাঈল-১৫)
এখন পিতার পর ছেলে খলীফা হলে যদি রাজতন্ত্র ও রাজবংশ প্রতিষ্ঠাকারী হয় তাহলে
তো দেখা যায় আল্লাহ পাকই রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকারী হয়ে যান।
নাঊযুবিল্লাহ।
কারণ আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালাম যিনি ছিলেন
খলীফাতুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার খলীফা এবং তাঁর বিদায়ের পর তাঁর ছেলে হযরত
সুলাইমান আলাইহিস্ সালামকে আল্লাহ পাক সারা পৃথিবীর খলীফা নিযুক্ত করেন।
এছাড়া হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পর উনার ছেলে হযরত ইমাম
হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও তো খলীফা নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাই বলে কি হযরত
আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে রাজতন্ত্র ও রাজবংশ জারি হয়েছে? নাঊযুবিল্লাহ।
মূলতঃ আল্লাহ পাক, হযরত নবী-রসূল
আলাইহিমুস্ সালাম, হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম,
হযরত
আউলিয়ায়ে কিরাম আলাইহিস সালাম আলাইহিম কেউই রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা
নন। যদি কেউ উল্লিখিত কাউকে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বলে তবে সেটা হবে তাঁর প্রতি
প্রকাশ্য তোহমত এবং কুফরীর শামীল।
অতএব, সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হলো
যে, হযরত মুআবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রাজতন্ত্র কিংবা রাজবংশ কোনটিরই প্রতিষ্ঠাতা নন বা
ছিলেন না।
হযরত ইমাম যাহাবী আলাইহিস সালাম বলেছেন,
কারবালার
শাহাদাতের ঘটনা অতঃপর মদীনা শরীফ আক্রমণের পর ইয়াযীদের বিরুদ্ধে প্রচ- গণবিদ্রোহ
সংঘটিত হয়। তার আয়ুও ছিল খুব কম। মাত্র তিন বছর কর্তৃত্ব করার পর সে ৪০ বছর
বয়সে মারা যায়। বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার
শহীদকারীদের কেউই আল্লাহ পাক উনার গযব থেকে রক্ষা পায়নি। লা’নতে পরে কেউ নিহত হয়েছে এবং কেউ এমন কষ্টদায়ক অবস্থার
শিকার হয়েছে যে, মৃত্যুও তার চেয়ে
অনেক ভাল ছিলো।
হযরত ইমাম ইবনুল জাওযী আলাইহিস সালাম বলেছেন: "হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস
সালাম উনার শহীদকারীদের সকলেই কোন না কোন প্রকারে দুনিয়াতেই শাস্তি পেয়েছে। কেউ
নিহত হয়েছে, কেউ অন্ধ হয়ে
গেছে। আর ক্ষমতাসীনরা অল্প সময়েই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে।"
বিশিষ্ট তাফসীরবিদ হযরত ইবনে কাছীর আলাইহিস সালাম বলেন: "হযরত ইমাম
হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতের পর যে সকল দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার বর্ণনা
ইতিহাসে পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগই
সত্য। উনার শহীদকারীদের প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে আযাব ভোগ করেছে। অনেকে কঠিন
রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অধিকাংশই উন্মাদ হয়ে মরেছে।"
আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে যখন মুখতার সাকাফী কূফার শাসক হলেন, তখন তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার
শাহাদাতে অংশগ্রহণকারীদেরকে এবং উনার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া বাহিনীতে
যোগদানকারীদেরকে বেছে বেছে হত্যা করেন। এমনকি একদিনেই তিনি এ ধরনের দুইশ’ চল্লিশ ব্যক্তিকে হত্যা করেন। আমর বিন হাজ্জাজ
হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারী ছিলো। সে কূফা থেকে পালিয়েও বাঁচতে
পারেনি। মুখতার সাকাফীর লোকদের হাতে নিহত হয়েছে। মুখতার সাকাফীর লোকেরা পাপিষ্ঠ
সিমারকে হত্যা করে তার লাশ কুকুরকে খাইয়ে দিয়েছেন।
হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারীদেরকে মুখতারের কাছে আনা হতো এবং
তিনি তাদেরকে অত্যন্ত কষ্টদায়ক পদ্ধতিতে হত্যা করার নির্দেশ দিতেন। কাউকে জ্যান্ত
আগুনে পুড়িয়ে মারতেন। কাউকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে রেখে দিতেন এবং ছটফট করে করে
মরে যেতো। খাওলী বিন ইয়াযীদ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মাথা মুবারক
কাটার চেষ্টা করেছিল। মুখতার তাকে হত্যা করে তার লাশ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। ইবনে
যিয়াদও মুখতারের সেনাপতি আল আশতারের হাতে নিহত হয় এবং তার মস্তকও মুখতারের কাছে
পাঠানো হয়। ইবনে যিয়াদের বাহিনীর অধিনায়ক আমর বিন সা’দকে এবং তার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হযরত ইমাম
হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারীদের যারা পালিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছে, মুখতার সাকাফী তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে ও
জ্বালিয়ে দেন। হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার কণ্ঠনালীতে তীর নিক্ষেপকারী
হাসিন বিন নুমাইরও তার হাতে নিহত হয়। ইবনে যিয়াদ ও আমর বিন সা’দ-এর মাথা কেটে মুখতার সাকাফী হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস
সালাম উনার ছেলে হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম-এর কাছে প্রেরণ করলে হযরত
ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম সিজদায় চলে যান এবং বলেন, ‘আল্লাহ পাক উনার শোকর, যিনি আমার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ
নিয়েছেন।" মোট কথা, হযরত ইমাম হুসাইন
আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্রে অংশ গ্রহণকারী প্রত্যেককেই আল্লাহ
পাক ধ্বংস করে দেন।
কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
ومن يقتل
مؤمنا متعمدا فجزاءه جهنم
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন
মু’মিনকে কতল করে সে
জাহান্নামী।’ (সূরা নিসা-৯৩)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن عبد
الله بن مسعود رضي الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم سباب
المسلم فسوق وقتاله كفر
অর্থ: ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলমানকে গালি
দেয়া ফাসিকী আর কতল করা কুফরী।’ (বুখারী ও মুসলিম
শরীফ)
কাজেই, সাধারণ মু’মিন মুসলমানকে কতল করা যদি কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ
হয় তাহলে আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার, সাইয়্যিদু শাবাবি
আহ্লিল জান্নাহ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামসহ আহলে বাইত-এর অন্যান্য সম্মানিত সদস্য
ও সঙ্গীগণকে যারা শহীদ করেছে তাদের ফায়সালা কি হবে? তা বলার অপেক্ষা রাখে না, তারা সকলেই কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী।
আহলে বাইতগণের প্রতি মুহব্বত ঈমানের অঙ্গ আর বিদ্বেষ পোষণ কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
স্বয়ং আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-
قل
لااسئلكم عليه اجرا الا المودة فى القربى
অর্থ: ‘হে হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতদেরকে বলুন,
আমি
তোমাদের নিকট নুবুওওয়াতের দায়িত্ব পালনের জন্য কোন প্রতিদান চাই না। তবে আমার
নিকটজন তথা আহলে বাইত, তাঁদের প্রতি
তোমরা সদাচরণ করবে।’ (সূরা শূরা-২৩)
হাদীছ শরীফ-এ আহলে বাইত ও আওলাদে রসূলগণ-এর অপরিসীম ফযীলত-মর্যাদা-মর্তবার কথা
বর্ণিত রয়েছে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম আহলে বাইত-এর বিশিষ্ট
ব্যক্তিত্ব। উনার সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- রঈসুল মুহাদ্দিছীন হযরত
আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস
সালাম উনার সাথে চলাচল করতেন, উঠাবসা করতেন। কোন
এক প্রসঙ্গে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বলেছিলেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এটা শুনে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হলেন এবং বিষয়টা
ফায়সালার জন্য উনার পিতা যিনি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন উনাকে
জানালেন যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস
সালাম আমাকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে
গোলাম’। খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, বেশ ভালো কথা। তুমি যখন ফায়ছালা চাচ্ছো, তাহলে মুখের কথায় তো হবে না। এটা লিখিত আনতে
হবে, কাগজে-কলমে থাকতে হবে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইমাম হুসাইন
আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে বললেন,
হে
হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম! আপনি যে আমাকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’ এটা লিখিত দিতে হবে। আমি খলীফার কাছে
ব্যাপারটা পেশ করেছি। তিনি বললেন ঠিক আছে,
অসুবিধা
নেই। আমি লিখিত দিব। সত্যিই তিনি একটা কাগজে লিখে দিলেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। সেটা নিয়ে পেশ করা হলো খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর বিন খত্তাব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে। তিনি বললেন, ঠিক আছে, আমি এর ফায়ছালা
করবো। বিষয়টি নিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সকলেই
চিন্তিত হলেন। তাঁরা চিন্তিত হলেন যে,
হযরত
উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জালালী তবিয়তের, তিনি ইনছাফগার হিসেবে মশহুর, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী,
নবীদের
পরে দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব।
একদিকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম,
আরেকদিকে
হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সকলেই চিন্তিত হলেন, বিষয়টি কীভাবে ফায়ছালা করা হবে? হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু ইনছাফ করে থাকেন, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম
বিচার করে থাকেন। তিনি কী বিচার করবেন?
নির্দিষ্ট
স্থান, সময়, দিন,
তারিখ
সব ঘোষণা করা হলো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম,
হযরত
তাবিয়ীনে কিরাম যাঁরা ছিলেন সকলেই সেখানে জমা হয়ে গেলেন যে, কী ফায়ছালা করা হয় সেটা জানার জন্য।
এদিকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উপস্থিত হলেন। তিনি যখন উপস্থিত
হলেন, হযরত উমর ফারূক্ব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে তা’যীম-তাকরীম করে
একটা সম্মানিত স্থানে বসালেন। আর হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু যখন আসলেন, উনাকেও বসতে
বললেন। লোকজন সকলেই উপস্থিত। বিচারের নিদিষ্ট সময় যখন উপস্থিত হলো, খলীফাতুল মুসলিমীন তাঁর পকেট থেকে কাগজটা বের
করে বললেন যে, একটা কাগজ আমার
কাছে পেঁৗঁছানো হয়েছে, এ কাগজের মধ্যে
লিখিত রয়েছে ‘গোলামের ছেলে
গোলাম’। কাগজটা দিয়েছেন আমার
ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে- হযরত ইমাম
হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বলেছেন- ‘গোলামের ছেলে
গোলাম’।
এ বিষয়ে ফায়ছালার জন্য এ কাগজটা আমার নিকট পেশ করা হয়েছে। তখন হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা
করলেন, এটা কি আপনি লিখেছেন? তিনি বললেন যে, হ্যাঁ। এটা আমার লিখিত, আমি বলেছি এবং লিখেছি। যখন জিজ্ঞাসা করা হলো, জবাব নেয়া হলো। বিষয়টা সবাইকে জানানো হলো যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন
এবং লিখেছেন। এটা লোকজন শুনলেন। তখন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু বললেন যে, এটা এখন ফায়ছালা
করা হবে। সকলেই শুনে তো স্তব্ধ হয়ে গেলেন। মনে হয়েছে যেন বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে
গেছে, সকলেই একদৃষ্টিতে খলীফাতুল
মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার দিকে চেয়ে রয়েছেন। এটা তিনি কীভাবে ফায়ছালা করেন, এটার কী ফায়ছালা রয়েছে?
হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঘোষণা করলেন, এই যে কাগজটা যার মধ্যে লিখিত রয়েছে, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। অর্থাৎ আহলে বাইত-এর যিনি অন্যতম ব্যক্তিত্ব হযরত ইমাম
হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি আমার ছেলেকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এর অর্থ হচ্ছে
খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন তিনি হচ্ছেন গোলাম আর তাঁর ছেলে হচ্ছে ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এর ফায়ছালা
হচ্ছে- আপনারা সকলেই সাক্ষী থাকুন,
আমি
আমার যিন্দিগীর অনেক সময় অতিবাহিত করেছি,
পূর্ববর্তী
কুফরী যিন্দিগী বাদ দিয়েছি, আমার অতীতের
স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যা ছিল সেটা আমি ত্যাগ করেছি, শরীয়তের নির্দেশবহির্ভূত স্ত্রী ছিল তাদেরকেও
ত্যাগ করেছি আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার সন্তুষ্টির জন্য। আমার চাওয়া এবং পাওয়ার বিষয় এটাই ছিল যে, আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি এবং আল্লাহ পাক
উনার হাবীব-এর সন্তুষ্টি। আল্লাহ পাক যতটুকু দিয়েছেন ততটুকু পাওয়া হয়েছে। তবে
আমার একটা লিখিত দলীল প্রয়োজন ছিল,
যে
লিখিত দলীলের আমি প্রত্যাশা করেছিলাম। আজকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এটা
লিখিত দিয়েছেন। এখন থেকে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম আমি উনাদের গোলাম।
কাজেই, আমি ইন্তিকাল করলে এই
কাগজখানা আমার কাফনের ভিতরে, আমার সিনার উপর
রেখে দিবেন। এটা আমার ওছীয়ত। আমি ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক উনার
হাবীব-এর কাছে আরজু করবো যে, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! আপনার যিনি লখতে জিগার হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনি আমাকে লিখিত
দিয়েছেন যে, ‘আমি গোলাম’। কাজেই, আমার আমল যা-ই
রয়েছে কমপক্ষে এই দলীলের খাতিরে আমাকে গোলাম হিসেবে কবুল করা হোক। সুবহানাল্লাহ!
উনি যখন এটা ফায়ছালা করলেন, হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং তাবিয়ীনে কিরাম আলাইহিস সালাম আলাইহিম
যাঁরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন সকলেই লা-জাওয়াব হয়ে গেলেন।
মূলতঃ এ ঘটনাটির মাধ্যমে যে বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে তা হলো- আল্লাহ
পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি লাভ
করতে হলে প্রত্যেক উম্মতের জন্য দায়িত্ব হলো আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলগণ-এর
প্রতি সুধারণা পোষণ করা, উনাদেরকে মুহব্বত
করা ও সম্মান-ইজ্জত করা।