সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ
শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার মুবারক তাজদীদ আন
নাযীরু, আন নাজমুছ ছাক্বিবু, আন নূরুম মুজাসসামু, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিনই হচ্ছে
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদু ঈদে আকবর এবং তা পালন করা
জিন ইনসান তো অবশ্যই বরং কুল কায়িনাতের জন্য ফরয আর এই মুবারক তাজদীদই হচ্ছে
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক তাজদীদ।
محمد رسول ا لله
অর্থ: “হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।” (সূরা ফাতহ : আয়াত শরীফ ২৯)
আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ ফরমান,
وما محمد الا رسول
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি রসূলুল্লাহ ব্যতীত আর কিছুই নন।” (সূরা আলে ইমরান
: আয়াত শরীফ ১৪৪)
আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ করেন-
ارسلت الى الخلق كافة
অর্থ: “আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্যে রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” (মুসলিম শরীফ)
হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু আমাদেরই রসূল
নন; বরং
তিনি আল্লাহ পাক ব্যতীত সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামসহ সমস্ত মাখলুকাতের রসূল।
সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ পাক উনার পরেই হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার মাক্বাম। তিনি শুধু আল্লাহ পাক নন। এছাড়া বাকি সমস্ত মর্যাদা-মর্তবার
অধিকারী তিনি। সুবহানাল্লাহ!
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হচ্ছে- কোনো ব্যক্তি যদি
কিয়ামত পর্যন্ত শুধু لا اله الا
الله “লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহ” পড়ে তারপরেও সে ঈমানদার হতে পারবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত না “মুহম্মদুর
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” না পড়বে।
বেহেশতের দরজায়, গাছের পাতায় পাতায়, হুর-গেলমানদের
কপালে কপালে কুদরতীভাবে সোনালী হরফে লিখা রয়েছে-
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম” এই কালিমা শরীফ শুধু উম্মতে হাবীবী তথা আমাদের জন্যই খাছ নয়;
বরং
সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত মাখলুকাতের, এমনকি সমস্ত
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও কালিমা শরীফ হচ্ছে এই কালিমা শরীফ।” সুবহানাল্লাহ!
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে হাবীবুল্লাহ হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। হাদীছে কুদছী শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে “আমি (আল্লাহ
পাক) গুপ্ত ভাণ্ডার ছিলাম। যখন আমার মুহব্বত হলো- আমি প্রকাশ পাই, তখন আমি মাখলুক
তথা আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করলাম।”
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে “আল্লাহ পাক
সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন।” আল্লাহ পাক যদি
স্বীয় হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি না করতেন, তাহলে কোনো
কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এই সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে- আল্লাহ পাক হযরত
আদম আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন “আমি যদি আমার
হাবীব, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হযরত মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না।” (মুসতাদরেকে
হাকীম)
হাদীছে কুদসী শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক
স্বীয় হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে বলেন, “আপনি যদি সৃষ্টি
না হতেন, তাহলে আমি জান্নাত সৃষ্টি করতাম না।”
অন্যত্র ইরশাদ করেন- “আপনি যদি সৃষ্টি না হতেন তাহলে আমি
জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না।”
অন্যত্র ইরশাদ করেন “আপনি যদি না হতেন তাহলে আমি আসমান সৃষ্টি করতাম
না।”
অন্যত্র ইরশাদ করেন- “যদি আপনি সৃষ্টি না হতেন, তাহলে আমি আমার
রুবূবিয়াত প্রকাশ করতাম না।” সুবহানাল্লাহ!
এমনকি কাউকে কোনো নুবুওওয়াত, কোনো রিসালত
দেয়া হতো না বা প্রকাশ পেতো না যতোক্ষণ পর্যন্ত না আপনার প্রতি ঈমান আনা হতো।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে “রোযাদারের জন্য
দুটি খুশি বা ঈদ। একটা হচ্ছে ইফতার করার সময়। আর একটা আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতের
সময়।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
হাদীছ শরীফ-এ জুমুয়ার দিন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে “(এটি জুমুয়ার
দিন) এমন একটি দিন যাকে আল্লাহ পাক ঈদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।” (ইবনে মাজাহ)
হাদীছ শরীফ-এ আরাফার দিনকেও ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু
লুবাবাতা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, জুমুয়ার দিন
সকল দিনের সাইয়্যিদ এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও
সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক উনার নিকট
অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে-
(১) এ দিনে আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি
করেছেন
(২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন
(৩) এ দিনে তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন
(৪) এ দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে
(৫) এ দিন এমন একটি সময় রয়েছে যে সময় দোয়া কবুল হয়
কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে “আয় আমাদের রব
আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের জন্য আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) একটি খাঞ্চা নাযিল
করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি আমাদের জন্য, আমাদের
পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি
নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয়ই আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। আল্লাহ
পাক বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে
খাঞ্চা নাযিলের দিনকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি
তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি জগতের অপর কাউকে দিবো না।” (সূরা মায়িদা : আয়াত শরীফ ১১৪, ১১৫)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার আগমন ও
বিছাল শরীফ-এর দিন হওয়ার কারণে জুময়ার দিন যদি ঈদের দিন হয় এবং তা ঈদুল ফিতর ও
ঈদুল আযহার দিন থেকেও সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ হয়, আরফার দিন যদি
ঈদের দিন হয়, রোযাদারের জন্য যদি ইফতারের সময় ঈদ হয়, খাঞ্চা নাযিলের
কারণে খাঞ্চা নাযিলের উক্ত দিনটি যদি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং উনার উম্মতের
জন্য খুশির দিন হয় এবং সে দিনকে খুশির দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির
যোগ্য হতে হয়; তাহলে যিনি সৃষ্টি না হলে আল্লাহ পাক আসমান-যমীন, আরশ-কুরসী,
লওহ,
কলম,
জামাদাত-শাজারাত-হাজারাত,
জিন-ইনসান
কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না, কোনো নবী-রসূল সৃষ্টি হতেন না, হযরত আদম
আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনারাও সৃষ্টি হতেন না। রোযা, নামায, যাকাত এমনকি খোদ
দ্বীন ইসলামের অজুদ মুবারক খুঁজে পাওয়া যেতো না, শুধু তা-ই নয়
স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার রুবূবিয়াতকেও প্রকাশ করতেন না, তাহলে সেই
হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস
সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই
দিন যে তারিখে এই দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনলেন, সেই ১২ই রবীউল
আউয়াল শরীফ-এর দিন কি ঈদের দিন হবে না, অন্যান্য ঈদের
চেয়ে শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাবান ও ফযীলতপূর্ণ হবে না এবং সমস্ত মাখলুকাতের জন্য তা পালন
করা ফরয-ওয়াজিব হবে না?
অবশ্যই অবশ্যই সেই দিন ঈদের দিন হবে, সকল ঈদের সেরা
ঈদ তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদু ঈদে
আ’যম,
সাইয়্যিদু
ঈদে আকবর হবে এবং তা পালন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য তো অবশ্যই এমন কি
সমস্ত মাখলুকাতের জন্য ফরয-ওয়াজিব হবে। আর তা পালন না করলে কঠিন শাস্তিতে
গ্রেফতার হতে হবে।
আর এটাই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম
রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার
সর্বশ্রেষ্ঠ তাজদীদ মুবারক। আর এই মুবারক তাজদীদ-ই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ
তাজদীদ মুবারক। কেননা অন্যান্য মুজাদ্দিদগণ উনাদের তাজদীদসমূহ দ্বীন ইসলামের সাথে
সম্পৃক্ত। আর এই মুবারক তাজদীদ স্বয়ং দ্বীন ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আল্লাহ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক-এর সাথে
সম্পৃক্ত। যিনি না হলে খোদ দ্বীন ইসলামের অজুদ মুবারক পাওয়া যেতো না। আল্লাহ পাক
উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক-এর
মর্যাদা, বুযুর্গী, সম্মান অন্যান্য তাজদীদসমূহের তুলনায় অনেক
বেশি। আর এর তাজদীদকারী সুমহান মুজাদ্দিদ উনার মর্যাদা, সম্মান, বুযুর্গীও
অন্যান্য মুজাদ্দিদ উনাদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এই তাজদীদ মুবারক-ই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক
তাজদীদ। আর এর তাজদীদকারী মুজাদ্দিদই হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ। আর
এই জন্যই উনার দ্বারা শোভা পেয়েছে এই তাজদীদ মুবারক করা। আল্লাহ পাক আমাদের
সবাইকে সুমহান মুজাদ্দিদকে চিনার এবং উনার এই মুবারক তাজদীদকে বুঝার তাওফিক দান
করুন, কবুল
করুন, মদদ
করুন। আমীন।
- মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ বিশেষ সংখ্যা-১৪৩২ হিজরী